প্রশ্নঃ ১৭৮৬১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু,
রমজান মাসে আমরা দেখে থাকি অনেক মসজিদে ভিডিও ওয়াজ ছেরে থাকে। এমনকি ভিডিও ওয়াজ তারা মসজিদে দেখে।
একজন খুব পরিচিত বক্তাকে বলতে শুনলাম যেটা মসজিদের বাইরে দেখা যায়েজ সেটা মসজিদের ভিতরে দেখাও যায়েজ।
অথচ প্রাণীর ছবি তো এরকম এক জিনিস যেটা ঘরে থাকলে ঘরেও রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আর মসজিদ তো আরো অনেক দামি ঘর।
আমার প্রশ্ন হলো মসজিদের ভিতরে ভিডিও ওয়াজ বা অন্য কোন প্রাণীর কোন ভিডিও দেখা জায়েজ আছে কিনা?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০২৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো বর্তমান যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ইমু মেসেনজার হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি এগুলাতে ছবি আপলোড করা কি ঠিক জায়েজ আছে এই বেপারে ইসলাম কি বলে? বর্তমানে দেখা যায় বড় বড় আলেম উলামায়ে কেরাম মুফতি মুহাদ্দিস বড় বড় স্কলাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড করে থাকে আবার তার ফতোয়া দেয় ছবি আপলোড করা হারাম, আশা করি প্রশ্নটি বুঝতে পেরেছেন। এখন আমাদের করনীয় কি? ছবি আপলোড করা না এই সিস্টেম টা বয়কট করা।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ছবি, প্রতিচ্ছবি, মূর্তি, ডিজিটাল ছবি ভিডিও ইত্যাদির চারটি পর্যায় রয়েছে।
১. প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য, ত্রিমাত্রিক ছবি।
যেকোনো উদ্দেশ্যেই হোক, কোনো অবস্থাতেই প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য ও ত্রিমাত্রিক ছবির বৈধতা ইসলামে নেই।
(নিষ্প্রাণ বস্তুর ভাস্কর্য সন্দেহাতীতভাবে জায়েয।)
২. প্রাণীর স্থিরচিত্র, (ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বস্তু যেমন কাগজ, কাপড়, দেয়াল ইত্যাদিতে) অঙ্কিত ছবি।
বহুসংখ্যক হাদীসের আলোকে এসব ছবি হারাম, নাজায়েয।
তবে বিশেষ প্রয়োজনে যেমন আইডি কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির প্রয়োজনে জরুরত পূরণের ঐ গণ্ডির মধ্যে ছবি অঙ্কন করা, তোলা ও সংরক্ষণ করা নাজায়েয নয়।
(নিষ্প্রাণ বস্তুর ছবি তোলা শোপিস হিসেবে দেয়ালে বা আলমারিতে সংরক্ষণ করা সন্দেহাতীতভাবে জায়েজ।)
৩. প্রাণীর ডিজিটাল ছবি ভিডিও।
প্রাণীর ডিজিটাল ছবি হার্ডডিস্ক বা মেমরিতে থাকা পর্যন্ত এইসব ছবির ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দুইটি মতামত রয়েছে।
ক. কিছুসংখ্যক ওলামাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল:
এসব ছবিও (হাদীসে উল্লেখিত) হারাম ও নাজায়েযের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ইচ্ছে করলে এখান থেকে ছবি প্রিন্ট করা যায়।
খ. পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি, আরব বিশ্বসহ বর্তমান যুগের বহুসংখ্যক ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি হল:
প্রাণীর ডিজিটাল ছবি ঢালাওভাবে জায়েয নয়। আবার সম্পূর্ণ নাজায়েযও নয়। ছবি ও ভিডিওর বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্যের বিচারে ডিজিটাল ছবি ভিডিও জায়েয হবে। আবার নাজায়েযও হতে পারে। তারা ডিজিটাল ছবি ভিডিওকে اجتهادي (ইজতিহাদী) বিষয় সাব্যস্ত করেন।
ডিজিটাল ছবি একদিক থেকে আয়নায় দেখা যাওয়া প্রতিচ্ছবির মত। যেহেতু এসব ছবি সরাসরি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য নয়। এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল ও ডিসপ্লে আবশ্যক। ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি দেখানোর জন্য আয়না যেমন সামনে থাকতে হবে, ডিজিটাল ছবি দৃশ্যমান করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল লাগবে। তাই এসব ছবি আয়নার প্রতিচ্ছবির মত।
এই আলোকে এসব ছবি তারা জায়েয মনে করেন।
যেসব ব্যক্তিদেরকে (গাইরে মাহরাম) এবং ব্যক্তিদের যেসব দৃশ্য (সতর) সরাসরি দেখা জায়েয নয়, ছবি ভিডিওতেও সেসব ব্যক্তিদেরকে এবং ব্যক্তির সেসব দৃশ্যকে দেখা জায়েয নয়।
অন্যভাবে বললে এভাবে বলা যাবে, যা-কিছু সরাসরি দেখা নাজায়েয, ডিজিটাল ছবি ভিডিওতেও তা নাজায়েয।
সুতরাং অন্যায় অশ্লীলতা কোন অবস্থাতেই দেখা জায়েয নয়, ডিজিটাল ছবি ভিডিওতেও তা দেখা জায়েয নয়। এসবের ছবি-ভিডিও ধারণ করাও জায়েয নয়।
৪. পানি, আয়না ইত্যাদিতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিবিম্ব।
আয়নার ছবি জায়েয। এব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
তবে আয়নার ছবি দেখার বিষয়ে মাসআলা হলো, যাদেরকে (মাহরাম) সরাসরি দেখা বৈধ এবং যাদের যেসব দৃশ্য
(হতর ছাড়া বাকি সব) সরাসরি দেখা অবৈধ নয়, আয়নাতেও তাদেরকে এবং তাদের সেসব দৃশ্য দেখা যাবে।
(আয়নাতে গায়রে মাহরামকে দেখা যাবে না। মাহরাম ব্যক্তিদের সতর দেখা যাবে না।)
____
প্রশ্নোক্ত বড় বড় আলেম ওলামাদের সামাজিক যোগাযোগে ছবি-ভিডিও আপলোডের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, আল্লাহর বান্দাদের হিদায়াতের উদ্দেশ্যে যদি তারা ওয়াজ নসিহত মূলক কোন ছবি-ভিডিও আপলোড করেন, তবে সেসব ছবি-ভিডিও নাজায়েয বলা উচিত হবে না।
কিন্তু যারা অযথাই শুধু ফটোশুট করেন, ফলোয়ারদের সামনে নিজেদের বিভিন্ন অবস্থা- রেস্টুরেন্টে খাওয়া, পার্ক/উদ্যানে/সী বীচে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদী দেখিয়ে বেড়ান সেগুলো কিছুতেই শরীয়তের প্রয়োজনের ক্ষেত্র নয়। কাজেই সেগুলো আলেম হোক ননআলেম হোক সকালের জন্যই পরিহার করা আবশ্যক।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন