বহুতল ভবনের কোনো ফ্লোরকে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করার বিধান
প্রশ্নঃ ১২৪২১৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বহুতল ভবনের কোন একটি তলা মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা হলে উক্ত ওয়াকফ শরীয়াহ সম্মতভাবে বিশুদ্ধ হবে কি? দলিলের আলোকে বিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
১.হানাফী ফিকহের জাহেরুর রিওআয়াহ্ এর বর্ণনা অনুসারে, শরঈ মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত হলো, জমিটি মসজিদের জন্য ওয়াকফ হতে হবে। মসজিদের জমিনের মাটির নীচ থেকে আকাশ পর্যন্ত পুরো জায়গা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফ করে দিতে হবে। মসজিদের ওপরে কিংবা নিচের কোনো অংশেই কারো ব্যক্তি মালিকানা থাকবে না। তবে, আল্লামা রাফেঈ (রহ.) বিষয়টিকে আরও সাধারণীকরণ করে বলেছেন যে যদি উপরের বা নীচের অংশ মসজিদের জন্য ওয়াকফ নাও হয় বরং মুসলমানদের সাধারণ ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত হয় এবং তা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না হয়, তাহলে এই পদ্ধতি মসজিদটিকে শরঈ মসিজদ হতে বাধা দেয় না।
২. ইমাম আবু ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) এর অভিমত যে, যেসব স্থানে বহুতল ভবন রয়েছে, যেখানে মসজিদের জন্য স্থায়ী জায়গা পাওয়া কঠিন, যদি সেখানে একটি মেঝে (ফ্লোর) মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃৃত হয় এবং উপরের এবং নীচের উভয় অংশেই জনবসতি থাকে, তাহলে ওয়াফকৃত অংশটি মসজিদ হিসেবে গণ্য হতে কোনো বাঁধা নাই।
৩. এছাড়াও, তিন ইমাম, হযরত ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর মতে, শরঈ মসজিদ হওয়ার জন্য কোনো স্থানের উপরের এবং নীচের তলা মসজিদ হওয়া বা মসজিদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা আবশ্যক নয়। বরং, যদি মাঝের তলা মসজিদের জন্য ওয়াকফ হয়, এবং উপরের এবং নীচের উভয় তলা অথবা তাদের একটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটি মসজিদটিকে শরঈ মসজিদ হতে বাধা দেয় না।
৪. বর্তমান যুগে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জমির উচ্চমূল্যের কারণে, বহুতল আবাসিক ভবন এবং শপিংমলের প্রবণতা বাড়ছে। এই বহুতল ভবনগুলিতে, সাধারণত নামাজের জন্য উপযুক্ত স্থান সংরক্ষিত থাকে। তবে কোনও স্থানকে এমনভাবে ওয়াকফ করা এবং মসজিদে পরিণত করা সম্ভব নয় যাতে উপরের এবং নীচের তলা উভয়ই মসজিদ হয় অথবা মসজিদের উদ্দেশ্যে ওয়াকফ থাকবে। কিংবা মুসলমানদের ধর্মীয় প্রয়োজনের জন্য ওয়াকফ করে দিবে। এই ধরণের সংকীর্ণতার ক্ষেত্রে, প্রয়োজনের তাগিতে নিম্নলিখিত শর্তগুলি বিবেচনা করে, সাহেবাইন (ইমাম আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ রাহ.দ্বয়) থেকে বর্ণিত মত অনুসারে, মনে হয় যে, যদি বহুতল ভবনের একটি মেঝে বা নির্দিষ্ট অংশ মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা হয়, এবং এই মসজিদের উপরের এবং নীচের ফ্লোর কিংবা যেকোনো একটি ফ্লোর যদি ওয়াকফকৃত নাও হয়, তবুও এটিকে শরঈ মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে, মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যেসব মুসলিম দেশে প্রচুর পরিমাণে স্থায়ী মসজিদ রয়েছে -এবং এটি মুসলিম দেশসমূহের একটি নির্দশন এবং ঔতিহ্যও বটে- সেখানে স্থায়ী মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা এবং এবং জামাতে নামাজের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে কোনও অবহেলা করা উচিত নয়।
আর বহুতল ভবনের এই অবকাশ কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন অনন্যোপায় অবস্থা হয়। যেখানে কাছাকাছি কোনও স্থায়ী মসজিদ নেই বা যেখানে বহুতল ভবনের মুসল্লিদের ওঠা-নামায় অসুবিধা হয়।
অমুসলিম দেশগুলোতে যেখানে স্থায়ী মসজিদের সংখ্যা খুবই নগণ্য এবং যেগুলো আছে সেগুলো যথেষ্ট দূরত্বে রয়েছে, এই বিধানটি সেখানে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
তরে তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হল;
১. বহুতল ভবনে সংরক্ষিত স্থানটি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দিতে হবে।
২. এই অবকাশ এমন স্থানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যেখানে উপরের এবং নিচের তলা ওয়াকফ করা কঠিন হবে।
৩. মসজিদের জন্য যে অংশটি ওয়াকফ করা হচ্ছে তা মসজিদের মর্যাদার জন্য আইনি সুরক্ষা প্রদান করা আবশ্যক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ মসজিদ ছাড়া অন্য কোনও কাজে বা উদ্দেশ্যে এই জায়গাটি ব্যবহার করতে না পারে।
৪. আইনি নথিতে স্পষ্ট করে বলা থাকতে হবে যে এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়। ক্রয়বিক্রয় করা যাবে না। এমনকি ভবিষ্যতে, যদি পুরো ভবনটি বিক্রি করা হয়, তাহলে মসজিদটি বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না, এবং এর জন্য কোনও বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না। বরং, এটি আগের মতোই মসজিদ থাকবে। মালিককে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা ফ্লোর বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৫. আর যদি ভবনটি কখনও ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে অন্যান্য ফ্ল্যাট এবং দোকানের মালিকদের যে জমির অধিকার থাকবে মসজিদকে তার অধিকার থাকবে। এবং পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে মসজিদের ফ্লোরটি পূর্ববর্তী মসজিদের মতোই থাকবে। অথবা যদি সরকার কোনও বৈধ কারণে ভবনটি ভেঙে ফেলে, তাহলে এই মসজিদটিও একইভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে যেভাবে অন্যান্য মালিকদের সরকার ক্ষতিপূরণ দিবে। যদি প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে অন্য কোথাও মসজিদ তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে একটি মসজিদ তৈরি করতে হবে। আর যদি প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে অন্য কোথাও মসজিদ তৈরি করা সম্ভব না হয় তাহলে ইমাম আবু ইউসুফ (রা.)-এর দ্বিতীয় মতানুসারে সেই অর্থ নিকটতম মসজিদে দান করা হবে।
এবং যতক্ষণ না ওপরোক্ত শর্ত অনুসারে সেই ফ্লোরটি ওয়াকফ করা না হবে, ততক্ষণ এটি একটি সাধারণ নামাজ ঘর হিসেবেই থাকবে। সেক্ষেত্রে শরঈ মসজিদের বিধিনিষেধ তার ওপর জারি হবে না। তাতে ইতিকাফ করাও সহিহ হবে না। উপরোক্ত শর্তাদী পুরণ করলে সেখানে শরঈ মসজিদের বিধিবিধান জারি হবে এবং তাতে ইতিকাফ করাও সহিহ হবে।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 355)
(ويزول ملكه عن المسجد والمصلى) بالفعل و (بقوله جعلته مسجدا) عند الثاني (وشرط محمد) والإمام (الصلاة فيه)
(قوله: والمصلى) شمل مصلى الجنازة ومصلى العيد قال بعضهم: يكون مسجدا حتى إذا مات لا يورث عنه وقال بعضهم: هذا في مصلى الجنازة، أما مصلى العيد لا يكون مسجدا مطلقا، وإنما يعطى له حكم المسجد في صحة الاقتداء بالإمام، وإن كان منفصلا عن الصفوف وفيما سوى ذلك فليس له حكم المسجد، وقال بعضهم: يكون مسجدا حال أداء الصلاة لا غير وهو والجبانة سواء، ويجنب هذا المكان عما يجنب عنه المساجد احتياطا. اهـ.
الهداية في شرح بداية المبتدي (3/ 20)
قال: "ومن جعل مسجدا تحته سرداب أو فوقه بيت وجعل باب المسجد إلى الطريق، وعزله عن ملكه فله أن يبيعه، وإن مات يورث عنه" لأنه لم يخلص لله تعالى لبقاء حق العبد متعلقا به، ولو كان السرداب لمصالح المسجد جاز كما في مسجد بيت المقدس. وروى الحسن عنه أنه قال: إذا جعل السفل مسجدا وعلى ظهره مسكن فهو مسجد؛ لأن المسجد مما يتأبد، وذلك يتحقق في السفل دون العلو. وعن محمد على عكس هذا؛ لأن المسجد معظم، وإذا كان فوقه مسكن أو مستغل يتعذر تعظيمه. وعن أبي يوسف أنه جوز في الوجهين حين قدم بغداد ورأى ضيق المنازل فكأنه اعتبر الضرورة. وعن محمد أنه حين دخل الري أجاز ذلك كله لما قلنا.
قال: "وكذلك إن اتخذ وسط داره مسجدا وأذن للناس بالدخول فيه" يعني له أن يبيعه ويورث عنه؛ لأن المسجد ما لا يكون لأحد فيه حق المنع، وإذا كان ملكه محيطا بجوانبه كان له حق المنع فلم يصر مسجدا، ولأنه أبقى الطريق لنفسه فلم يخلص لله تعالى "وعن محمد أنه لا يباع ولا يورث ولا يوهب" اعتبره مسجدا، وهكذا عن أبي يوسف أنه يصير مسجدا؛ لأنه لما رضي بكونه مسجدا ولا يصير مسجدا إلا بالطريق دخل فيه الطريق وصار مستحقا كما يدخل في الإجارة من غير ذكر.
المبسوط للسرخسي (12/ 94)
ال: (وإن بنى على منزله مسجدا، وسكن أسفله، أو جعله سردابا، ثم مات: فهو ميراث). وكذلك إن جعل أسفله مسجدا، وفوقه مسكنا؛ لأن المسجد ما يحرز أصله عن ملك العباد، وانتفاعهم به على قياس المسجد الحرام، وذلك غير موجود فيما اتخذه - حين استثنى العلو أو السفل لمنفعة نفسه -. وعن محمد قال: إن جعل السفل مسجدا: جاز، وإن جعل العلو مسجدا دون السفل: لا يجوز؛ لأن المسجد ما له قرار، وتأبيد في السفل دون العلو. وعن الحسن بن زياد - رحمه الله - أنه إذا دخل العلو مسجدا، والسفل مستغلا للمسجد فهذا يجوز - استحسانا -. وعن أبي يوسف أن ذلك كله جائز، رجع إليه حين قدم بغداد، ورأى ضيق المنازل بأهلها فجوز أن يجعل العلو مسجدا دون السفل والسفل دون العلو، وهو مستقيم على أصله، وقد بينا أنه يوسع في الوقف فكذلك في المسجد.
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 357)
وإذا جعل تحته سردابا لمصالحه) أي المسجد (جاز) كمسجد القدس (ولو جعل لغيرها أو) جعل (فوقه بيتا وجعل باب المسجد إلى طريق وعزله عن ملكه لا) يكون مسجدا(وله بيعه ويورث عنه) خلافا لهما
(كما لو جعل وسط داره مسجدا وأذن للصلاة فيه) حيث لا يكون مسجدا إلا إذا شرط الطريق زيلعي. .
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 357)
قوله: وإذا جعل تحته سردابا) جمعه سراديب، بيت يتخذ تحت الأرض لغرض تبريد الماء وغيره كذا في الفتح وشرط في المصباح أن يكون ضيقا نهر (قوله أو جعل فوقه بيتا إلخ) ظاهره أنه لا فرق بين أن يكون البيت للمسجد أو لا إلا أنه يؤخذ من التعليل أن محل عدم كونه مسجدا فيما إذا لم يكن وقفا على مصالح المسجد وبه صرح في الإسعاف فقال: وإذا كان السرداب أو العلو لمصالح المسجد أو كانا وقفا عليه صار مسجدا. اهـ. شرنبلالية.
قال في البحر: وحاصله أن شرط كونه مسجدا أن يكون سفله وعلوه مسجدا لينقطع حق العبد عنه لقوله تعالى {وأن المساجد لله} [الجن: 18]- بخلاف ما إذا كان السرداب والعلو موقوفا لمصالح المسجد، فهو كسرداب بيت المقدس هذا هو ظاهر الرواية وهناك روايات ضعيفة مذكورة في الهداية. اهـ. .
المحيط البرهاني في الفقه النعماني (6/ 207)
وعن أبي يوسف أنه أجاز أن يكون الأسفل مسجداً والأعلى ملكاً؛ لأن الأسفل أصل عن محمد أنه حين دخل الري ورأى ضيق الأمكنة جوز ذلك.
احسان اللہ شائق عفا اللہ عنہ
دارالافتاء جامعة الرشید کراچی
۲ جمادی الاولی ١۴۴۴ھ
واللہ سبحانہ وتعالی اعلم
مجیب
احسان اللہ شائق
مفتیان
سیّد عابد شاہ صاحب / محمد حسین خلیل خیل صاحب
https://almuftionline.com/2011/09/16/8118/
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন