কসম ভঙ্গ হয়েছে বারবার, কাফফারা কীভাবে হবে?
প্রশ্নঃ ১১১৭০৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুফতি সাহেব দেশের বাইরে থাকা এক বন্ধুর প্রশ্ন এটি। একটু দ্রুতো জবাব পেলে ভাল হবে. গুনাহ থেকে বাচার আশায় ২ বছর আগে সে একটি কসম করে। কসম টা হচ্ছে, "আমি আল্লাহ এর নামে কসম করছি যে, আমি বর্তমান বা ভবিষ্যৎ এই গুনাহটি যতবার করব, প্রত্তেকবার তার জন্য ৩ টি করে রোজা রাখবো." কিন্তু সে এই গুনাহ ছাড়তে পারে না. এবং সে ভুলে গিয়েছিল এই কসম এর ব্যাপারে অনেক সময় ধরে. যার ফলে বর্তমান এ যখন তার স্মরণ হয়, ত্খ্ন সে দেখে যে তার জিম্মায় ১২০০ এর মত রোজা বাকি আছে এই গুনাহ এর কারণে। কিন্তু এত রোজা তার জন্ম রাখা সম্ভব না. এমন প্রশ্ন হচ্ছে,
১। সে চাচ্ছে ৬০০ রোজা সে রাখবে, এবং বাকি রোজাগুলো সে প্রত্যেক রোজার জন্ম সদ্কা ফিতিরের পরিমাণ অর্থ দান করবে যদিও তার জন্ম এটি অনেক কষ্ট সাধ্য বেপার। উনি এই কাজটি করতে পারবে কি না?
২. সে জানতে চায় যে আমাকে দিয়ে সে বাংলাদেশে এই অর্থ দিতে পারবে কি না? কেননা সেখানকার সদ্কা ফিততের পরিমাণ ৪ লাখ টাকা সমান অর্থ হয়ে যায় রোজার হিসাব করলে। যেটি তার জন্য দেওয়া অসম্ভব। তাই সে বাংলাদেশে এখানকার পরিমাণ অনুযায়ী টাকাটা দিতে চান ।
৩. এই অবস্থা থেকে কি তার তওবা করার কোন উপায় আছে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধানের ব্যাপারে নিজের খেয়াল খুশি মতো মন্তব্য বা শর্ত আরোপ করা উচিত নয়। কোন গুনাহ থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে ওই গুনাহ করা হলে নিজের উপর রোজা, সদাকাহ অথবা অন্য কোন ইবাদত চাপানো মান্নতের পর্যায়ে। কিন্তু এটাকে আজীবনের জন্য বারবার চাপিয়ে নেওয়া, যতবার করবে ততবার দায় চাপানো উচিত নয়।
আপনার বন্ধু মাসআলা না জানার কারণে কিংবা আবেগের বশে নিজের উপর শর্ত আরোপ করেছেন, এরপর যতবার ওই গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন ততবারই তার মান্নত ভঙ্গ হয়েছে। যার ফলে কসম ভঙ্গের যেই কাফফারা সেটা তার উপর আপতিত হয়েছে। এখন এই কাফফারাগুলো আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি দয়াশীল। বান্দার সাধ্যের বাহিরে কোন আমল বান্দার উপরে চাপান না।
لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَہَا ؕ
আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না।
—আল বাকারা - ২৮৬
প্রশ্নে আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন, আপনার বন্ধু যদি এখন এতগুলো (১২০০) রোজার দায়ে আবদ্ধ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার সাধ্যের বাহিরে কোন কিছু করতে হবে না। তিনি সাধ্য অনুযায়ী কসম ভঙ্গের কাফফারা দিবেন। অবশিষ্ট কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনা বাক্যে তাওবাহ করে মাফ চাইবেন। ভবিষ্যতে যেন তার দ্বারা ওই গুনাহ না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ হুশিয়ারি অবলম্বন করবেন।
কসম ভঙ্গের কাফফারা:
১০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খাইয়ে দেয়া।
অথবা ১০ জন মিসকীনকে একজোড়া করে কাপড় দেয়া।
অথবা একটি গোলাম/বান্দী আজাদ করা। (বর্তমানে যেহেতু গোলাম বান্দির প্রচলন নেই, তাই এটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।)
উপরোক্ত আমলগুলো করতে না পারলে তিনদিন রোজা রাখবে।
১. যে কয়টি রোজা তার পক্ষে কাফফারা হিসেবে রাখা সম্ভব হয়, সে কয়টাই রাখবে। প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, আপনার বন্ধু ৬০০ রোজা রাখার ব্যাপারে হিম্মত করছেন, তাহলে তিনি সে কয়টাই রাখবেন। (এই ৬০০ রোজা রাখতে নূন্যতম দুই বছর সময় প্রয়োজন)
অবশিষ্ট রোযাগুলো রাখতে অপারগতার জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে তাওবাহ করে মাফ চাইবে।
২. কসম ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে তিনটি রোজা রাখতে হয়, ফিদিয়া নয়।
৩. (প্রসঙ্গ মাসআলা) যিনি যেই দেশে অবস্থান করছেন, তার সদকাতুল ফিতির সেই দেশের মূল্য অনুযায়ী দিতে হয়। আমেরিকা ইংল্যান্ডে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তি বাংলাদেশ সদাকাতুল ফিতর দিতে চাইলে তার স্থানীয় মূল্য হিসেবে বাংলাদেশে দিবে।
===
তাওবার উপরে অটল অবিচল থাকার জন্য:
১. যেসব পরিবেশে এবং যাদের সংস্রবে গেলে এই গুনাহ বারবার হয়ে যায়, সে পরিবেশ ও সে সাথীদেরকে এড়িয়ে চলুন।
২. সর্বদা দুরুদ শরীফ ও ইস্তিগফার পড়তে থাকুন।
৩. অন্যায় থেকে বিরত থাকার জন্য, নেক কাজের শক্তি-সাহস ও হিম্মতের জন্য বেশি বেশি পড়ুন -
لَا حَولَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ العَلِيِّ العَظِيمِ
লা-হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম।
৪. গুনাহের পতি মনের আকর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি পড়ুন-
اَللّٰهُمَّ أَلْهِمْنِيْ رُشْدِيْ وَ أَعِذْنِيْ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ
আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আইযনী মিন শাররি নাফসী।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া
খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন