আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

শাতিমে রাসূলের শাস্তি কি?

প্রশ্নঃ ১০১৩৯০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শাতিমে রাসূলের শাস্তি কি জানালে ভালো হয়।

১ মে, ২০২৫
FXRW+২M৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কেউ যদি কোন রাষ্ট্র বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে তাহলে তার শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড । রাষ্ট্র তার প্রজার উপর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারে কোনো আপত্তি হয় না। অথচ একজন প্রজার উপর একটি রাষ্ট্রের অধিকার সামান্যই। রাষ্ট্র তাকে সৃষ্টি করতে পারে না। পিতার ঔরস থেকে মাতৃ-উদরে প্রজনন, গর্ভধারণ ও ভূমিষ্ঠ থেকে জীবনের শেষ অবধি যখন যেমন আহার্য, যখন যেমন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিমিত হয়ে বেড়ে ওঠা প্রয়োজন- এর কোনোটাই রাষ্ট্র দিতে পারে না। মৌলিক বিচারে রাষ্ট্রের তেমন অবদান না থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের বিদ্রোহীদের শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ড হতে পারে, এবং সেটা যদি নৃশংসতা বা অমানবিকতা না হয়, তাহলে যে রব তাকে সৃষ্টি করল, অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব প্রদান করল, শুরু-শেষ জীবনের সবকিছুই যিনি সর্বোত্তম উপায়ে প্রস্তুত করলেন, সেই মহান রবের বিরুদ্ধাচারণের শাস্তি কেন মৃত্যুদন্ড হবেনা? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণের দ্বারা যেমন রাষ্ট্রদ্রোহি হয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ, রাসূল ﷺ ও ধর্মের বিরুদ্ধাচারণের দ্বারাও ধর্মদ্রোহিতে পরিণত হয়। আল্লাহ তাআ’লা, রাসূল ﷺ ও ধর্মের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিরুদ্ধাচারণ যেমন ধর্মদ্রোহিতা ঠিক তেমনি আল্লাহ, রাসূল ﷺ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বলা-লিখা ও আচরণে অসম্মান, কটুক্তি প্রদর্শন করাও ধর্মদ্রোহিতা। সে ধর্মদ্রোহি। সমগ্র জাহানের কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। মানবতার দুশমন সে পাক্কা বেঈমান। আর এ ধর্মদ্রোহিতা জঘন্য এবং মারাত্মক অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড।

নাস্তিকতা এক বিষয় আর ধর্মকে কটাক্ষ করা, প্রিয় রাসূল রাসূল ﷺ কে গালি দেয়া, কটুক্তি করা, অশ্লিলভাবে উপস্থাপন করা ভিন্ন বিষয়। রাসূল ﷺ কে যারা গালি দেয়, অপমানিত করে, অসম্মানজনক কথা বলে বা লিখে, সে মুরতাদ। সে তওবা না করলে হত্যার মাধ্যমে তার শাস্তি নিশ্চিত করা ইসলামের বিধান। পবিত্রতম রাসূলের যে কুৎসা রটায় এমন নাফরমানের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার থাকে না।

কুরআনুল কারীমে ধর্মদ্রোহীর শাস্তি:
কুরআনুল কারীম ধর্মদ্রোহীর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন ভাবে উল্লেখ হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য অভিশম্পাত করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক শাস্তি।’ [সূরা আহযাব; আয়াত ৫৭]

তার পরবর্তী আয়াতে এসব অভিশপ্তদের শাস্তি বর্ণনা করা হচ্ছে, ‘অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে গ্রেফতার করা হবে এবং হত্যা করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারেও এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।’ [সূরা আহযাব; আয়াত ৬১ -৬২]

‘এছাড়াও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এটাতো হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।’ [সূরা মায়েদা আয়াত ৩৩] এক্ষেত্রে তারা যদি যথার্থ তওবা করে নেয়, তাহলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। অন্যথায় তাদের উপযুক্ত শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড।

কুরআনের আরও একটি আয়াত, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘সুতরাং তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই হয়ে যাবে। যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বিধানাবলী এভাবেই বিশদ বর্ণনা করি। আর তারা যদি চুক্তি সম্পন্ন করার পর নিজেদের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের নিন্দা করে তবে কুফরের এসকল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ করবে। বস্তুত এরা এমন লোক যাদের প্রতিশ্রুতির কোন মূল্য নেই।’ [সুরা তওবা; আয়াত ১১-১২]

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এ আয়াত দলিলরুপে বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি ইসলাম বা কুরআনের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করে,অথবা রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে মন্দ কথা বলে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে। [মাহাসিনুত তাওয়ীল -৫/১৪২]

হাদীসে বর্ণিত গোস্তাখে রাসূলের শাস্তি:
অসংখ্য হাদীসেও বিবৃত হয়েছে এসব ধর্মদ্রোহী গোস্তাখদের শাস্তি বর্ণনায়।
হযরত ইকরিমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হযরত আলী রাঃ এর কাছে ধর্মত্যাগীদের উপস্থিত করা হল। তখন তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেললেন। এ সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, যদি আমি হতাম, তাহলে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূল ﷺ এর এ নিষেধাজ্ঞার কারণে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি দিওনা। বরং আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ, আল্লাহর নবী রাসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ধর্ম পাল্টায় তাকে হত্যা কর। [সহীহ বুখারী ৬৫২১]

হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত, ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়। তখন রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক। আর যদি তওবা না করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। [সুনানে দারা কুতনী হাদীস নং ১২১]

জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, উম্মে মারওয়ান নামের এক মহিলা মুরতাদ হয়ে গেলে রাসূল ﷺ আদেশ দেন, তার কাছে ইসলাম পেশ করা হোক। যদি সে ফিরে আসে তাহলে ভাল, নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। [সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং ১৬৬৪৩]

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর, আর যে সাহাবীকে গালি দেয় , তাকে বেত্রাঘাত কর।’ [জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬]

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন বলেন, ‘কাব বিন আশরাফের ব্যাপারে কে আছো? কেননা, সে আল্লাহর রাসূল কে কষ্ট দেয়।’ তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চান আমি তাকে হত্যা করি ? তিনি বললেন হ্যাঁ। [সহীহ বুখারী , হাদীস নং ৩৮১১]

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ।

তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সে সময় একজন এসে বলল যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল ﷺ বললেন, ‘তাকে হত্যা কর।’ [সহীহ বুখারী; হাদীস নং ১৭৪৯]

ইবনে খাতালকে কেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যার নির্দেশ দিলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন লোকটি রাসূল ﷺ কে গালাগালি করত। [ফাতহুল বারী ২/২৪৮]

ইবনে খাতালের দুই বাদি ছিল, যারা রাসূল ﷺ সম্পর্কে কুৎসামূলক গান গাইতো। রাসূল ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন তাদেরকেও হত্যা করার নির্দেশ দেন। [আসাহহুস্ সিয়ার-২৬৬]

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, এক ইহুদী মহিলা রাসূল ﷺ কে গালাগাল করত, মন্দ কথা বলত। তখন এক ব্যক্তি তার গলা চেপে ধরে, ফলে সে মারা যায়। তখন রাসূল ﷺ তার হত্যার বদলে হত্যাকে অগ্রহণীয় সাব্যস্ত করেছেন। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৬৪]

রাসূল ﷺ এর ওফাতের পর ইয়ামেন ও নজদে মুরতাদ হওয়ার ফিতনা প্রবল আকার ধারণ করে। অনেক লোক মুসায়লামাতুল কাজ্জাব ও সাজ্জাহের নবুওয়ত মেনে মুরতাদ হতে থাকে। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ ইরতিদাদের এ ফিতনা খুবই কঠোর হস্তে দমন করলেন। হযরত ইকরিমা বিন আবী জাহাল রা. কে সেখানে পাঠানোর সময় আদেশ করলেন, আমান থেকে হাজরামাওত এবং ইয়ামান পর্যন্ত যত মুরতাদ পাবে সবাইকে হত্যা কর। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; ৫/৩৬৩]

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রা. এর খেলাফতকালে মুসাইলামাতুল কাজ্জাব, ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ধর্মান্তরের এই ফেতনাকে ধ্বংস করতে গিয়ে প্রায় বারশত সাহাবায়ে কেরাম শাহাদাত বরণ করেন। হযরত সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ রহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রা. উম্মে কিরফাকে মুরতাদ হওয়ার অপরাধে হত্যা করেন। [সুনানে দারা কুতনী; হাদীস নং-১১০]

বিস্তারিত পড়ুন,
https://muslimbangla.com/article/403

والله اعلم بالصواب

শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন