মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ৯০
আযান ও ইকামতের বর্ণনা
৯০। হযরত ইবনে বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে হাযির হলেন এবং তাঁকে চিন্তাযুক্ত দেখতে পেলেন। এ ব্যক্তি (আনসারী) ধনী ও সম্পদশালী ছিলেন। দরিদ্র লোকজন তাঁর বাড়িতে জমা হতো। তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে চিন্তাযুক্ত দেখে সেখান থেকে চলে গেলেন। পানাহার ত্যাগ করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও তাঁর নিকট আগত লোকজন ছেড়ে তিনি মহল্লার মসজিদে দিয়ে নামায পড়া আরম্ভ করেন। এ অবস্থায় তাঁর তন্দ্রা এসে যায় এবং স্বপ্নে দেখেন যে, কোন একজন ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, তুমি কি জান রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কেন চিন্তিত হয়েছেন? তিনি বললেন না। তখন আগন্তুক বলল, এ আযানের ব্যাপারে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন? তুমি তাঁর কাছে যাও এবং বল, তিনি যেন হযরত বিলাল (রাযিঃ)-কে আযান দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাঁকে এভাবে আযান শিক্ষা দিলেন الله اكبر الله اكبر (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার) দু'বার করে চারবার। اشهد ان لا اله الا الله দু'বার। اشهد ان محمد رسول الله দু'বার। حي على الصلاة দু'বার। حي على الفلاح দু'বার। অতঃপর তাকে একইভাবে ইকামত শিক্ষা দেন এবং আযানের শেষে قد قامت الصلاة - قد قامت الصلاة - الله اكبر - الله اكبر - لا اله الا الله সংযোগ করেন।
(বর্ণনাকারী বলেন) যেভাবে বর্তমানের লোকজন আর্যান ও ইকামত দিয়ে থাকে। অতঃপর এ আনসারী (নাম আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ ইবনে আব্দে রাব্বিহ) মসজিদ থেকে বের হয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দরজায় গিয়ে বসেন ইতিমধ্যে হযরত আবু বকর (রাযিঃ) সেখানে আগমণ করেন। আনসারী তাঁকে বললেন : আমার জন্য একটু অনুমতি প্রার্থনা করুন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ)-ও এ স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বর্ণনা করেন। অতঃপর আনসারীকে অনুমতি দেওয়া হলো। তখন আনসারী প্রবেশ করলেন এবং স্বপ্নে যা দেখেছিলেন, তা বর্ণনা করলেন। তখন নবী (ﷺ) বলেন: হযরত আবু বকর (রাযিঃ)-ও অনুরূপ স্বপ্নের কথা আমার নিকট বর্ণনা করেছে। অতঃপর তিনি (ﷺ) হযরত বিলাল (রাযিঃ)-কে এভাবে আযান দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
অন্য এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, আনসারদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আগমণ করেন এবং তাঁকে চিন্তিত দেখতে পান। এ ব্যক্তি লোকজনের সাথে রাতে আহার করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এ অবস্থা দেখে তিনি আহার পরিত্যাগ করে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে থাকেন। এ অবস্থায় তাঁর তন্দ্রা এসে যায় এবং তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলে, তুমি কি জান রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন? তিনি বললেন না। ঐ ব্যক্তি বলল, এ আযানের কারণেই। তুমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট গিয়ে বল, তিনি যেন হযরত বিলাল (রাযিঃ)-কে আযান দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাঁকে এভাবে আযান শিক্ষা দিলেন: الله اكبر (আল্লাহু আকবার) দু'বার করে চারবার।। اشهد ان لا اله الا الله (আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) দু'বার اشهد ان محمد رسول الله (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ) দু’বার। حي على الصلاة (হাইয়্যা আলাস সালাহ) দু'বার। حي على الفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) দু'বার। الله اكبر الله اكبر - لا اله الا الله (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
অতঃপর এভাবে ইকামত শিক্ষা দিলেন। সর্বশেষ قد قامت الصلاة (কাদাকা-মাতিস সালাতু) দু'বার। (বর্ণনাকারী বলেন) যেভাবে বর্তমানে লোকজন আর্থান ও ইকামত দিয়ে থাকে। এরপর আনসারী সাহাবী তন্দ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে নবী (ﷺ)-এর ঘরের নিকট এসে দরজায় বসে পড়েন। এ সময় হযরত আবু বকর (রাযিঃ) আগমণ করেন। আনসারী বললেনঃ আমার জন্য একটু অনুমতি প্রার্থনা করুন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) ভিতরে প্রবেশ করে আনসারীর স্বপ্নের মতই তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আযানের কথা বর্ণনা করেন। এরপর আনসারী প্রবেশ করলেন এবং যা কিছু স্বপ্নে দেখেছেন, তা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এ আযান আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি বলেনঃ হযরত বিলাল (রাযিঃ)-কে নির্দেশ দাও সে যেন এরূপ আযান প্রদান করে।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ: أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ مَرَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَآهُ حَزِينًا، وَكَانَ الرَّجُلُ إِذَا طَعِمَ يَجْتَمِعُ إِلَيْهِ، فَانْطَلَقَ حَزِينًا بِمَا رَأَى مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَتَرَكَ طَعَامَهُ وَمَا كَانَ يَجْتَمِعُ إِلَيْهِ، وَدَخَلَ مَسْجِدَهُ يُصَلِّي، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ نَعَسَ، فَأَتَاهُ آتٍ فِي النَّوْمِ، فَقَالَ: " هَلْ عَلِمْتَ حُزْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَهُوَ لِهَذَا التَّأْذِينِ، فَأْتِهِ فَمُرْهُ أَنْ يَأْمُرَ بِلَالًا أَنْ يُؤَذِّنَ لِلَّهِ، فَعَلَّمَهُ الْأَذَانَ: اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ مَرَّتَيْنِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مَرَّتَيْنِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ مَرَّتَيْنِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ مَرَّتَيْنِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ مَرَّتَيْنِ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، ثُمَّ عَلَّمَهُ الْإِقَامَةَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَقَالَ فِي أُخْرَى: قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ كَأَذَانِ النَّاسِ وَإِقَامَتِهِمْ، فَأَقْبَلَ الْأَنْصَارِيُّ، فَقَعَدَ عَلَى بَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَرَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: اسْتَأْذِنْ لِي، وَقَدْ رَأَى مِثْلَ ذَلِكَ، فَأَخْبَرَ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ اسْتَأْذَنَ الْأَنْصَارِيُّ، فَدَخَلَ فَأَخْبَرَ بِالَّذِي رَأَى، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَدْ أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ مِثْلَ ذَلِكَ، فَأَمَرَ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِذَلِكَ "، وَفِي رِوَايَةٍ: " أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ مَرَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَآهُ حَزِينًا، وَكَانَ الرَّجُلُ ذَا طَعَامٍ يُعَشَّى، فَانْصَرَفَ لِمَا رَأَى مِنْ حُزْنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَرَكَ طَعَامَهُ، فَدَخَلَ مَسْجِدَهُ يُصلِّي، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ نَعَسَ، فَأَتَاهُ آتٍ فِي النَّوْمِ، فَقَالَ لَهُ: تَدْرِي مَا أَحْزَنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: هُوَ النِّدَاءُ، فَأْتِهِ بِأَنْ يَأْمُرَ بِلَالًا، قَالَ الرَّجُلُ: فَعُلِّمَ الْأَذَانَ: اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ مَرَّتَيْنِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مَرَّتَيْنِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ مَرَّتَيْنِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ مَرَّتَيْنِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ مَرَّتَيْنِ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، ثُمَّ علَمَّهُ الْإِقَامَةَ كَذَلِكَ، ثُمَّ قَالَ فِي آخِرِهِ: قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةِ مَرَّتَيْنِ كَأَذَانِ النَّاسِ وَإِقَامَتِهِمْ، فَاسْتَنْبَهَ الْأَنْصَارِيُّ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَلَسَ بِالْبَابِ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ: اسْتَأْذِنْ لِي، فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ، فَأَخْبَرَ أَبُو بَكْرٍ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِ ذَلِكَ، ثُمَّ دَخَلَ الْأَنْصَارِيُّ، فَأَخْبَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالَّذِي رَأَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَدْ أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ: مُرْ بِلَالًا بِمِثْلِ ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আযান ও ইকামত নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা এ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে আযানের মধ্যে সমস্ত বাক্য 'দু'-দু'বার এবং ইকামতে قد قامت الصلاة ব্যতীত সমস্ত বাক্য এক-একবার। এছাড়া তিনি আযানে ترجيع করার পক্ষে মত পোষণ করেন। অর্থাৎ প্রথমবারে দু’শাহাদতকে (আশহাদু
আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্) নীচু আওয়াযে দু'বার আদায় করতে হবে, অতঃপর উচ্চঃস্বরে দু বার মোট চারবার। একবার একবার (افراد) ইকামত বলা সম্পর্কে হযরত ইমাম শাফিঈ (র)-এর মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীস : أَمَرَ بِلَالًا أَنْ يَشْفَعَ الْأَذَانَ وَيُوتِرَ الْإِقَامَةَ اِلَّا الْاِقَامَة “হযরত বিলাল (রা)-কে নির্দেশ দিলেন যেন তিনি আর্যানে প্রতিটি বাক্য দু'বার এবং একামতে একবার করে উচ্চারণ করেন।" কিন্তু قد قامت الصلاة এর ترجيع সম্পর্কে তিনি স্বীয় মাযহাবের স্বপক্ষে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হযরত আবূ মাহযুরা (রা)-এর হাদীস পেশ করেছেন। এ হাদীসে আবূ মাহযুরা (রা) বলেনঃ হুযূর (সা) তাঁকে আযানের তালিম দিয়েছেন এবং ترجيع করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমাম মালিক (র) ترجيع ও افراد উভয়ের পক্ষে মত পোষণ করেছেন। কিন্তু তিনি قد قامت الصلاة -এর মধ্যে افراد (একবার)-এর মতামত পেশ করেছেন। তিনি ترجيع ও افراد - এর প্রমাণ হিসেবে হযরত আবূ মাহযুরা (রা) এবং হযরত আনাস (রা)-এর হাদীস পেশ করেছেন। তবে افراد সম্পর্কে হযরত আনাস (রা)-র ঐ রিওয়ায়েতটি গ্রহণ করেছেন যাতে الاقامة শব্দটি নেই। কিন্তু অন্য একটি সনদের দ্বারা বুখারী শরীফে ঐ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমদ (র) করার স্বপক্ষে মত পোষণ করেন নি।
ইমাম আবূ হানীফা (রা) ترجيع ও افراد কোনটির পক্ষেই মত পোষণ করেননি; বরং তাঁর মতে আযান ও ইকামতের প্রতিটি বাক্য দু'বার করে বলতে হবে। শুধু তাকবীরের বাক্য চারবার বলতে হবে। তিনি উভয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ ইবনে আবদে রাব্বিহ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন, যা ترجيع ও افراد - উভয়কে বাতিল করে থাকে। আবূ দাউদ শরীফে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বিস্তারিত ইবনে আবী শায়বা সহীহ সনদের দ্বারা এক রিওয়ায়েত বর্ণনা করেন বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ (রা) হুযূর (সা)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বলেন : আমি এক ব্যক্তিকে সবুজ চাদর পরিধান করা অবস্থায় দেখি। তিনি দেওয়ালের উপর দাঁড়িয়ে দু'বার দু’বার প্রতিটি বাক্য উচ্চারণ করে আযান ও ইকামত দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আসার (اثار) মুতাওয়াতির পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, হযরত বিলাল (রা) মৃত্যু পর্যন্ত আযান ও ইকামতে প্রতিটি বাক্য দু'বার করে আদায় করতেন। চতুর্থত, হযরত আবূ মাহযূরা (রা)-এর এ হাদীস ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মাযহাবের জন্য শক্তিশালী দলীল। কেননা হযরত আবূ মাহযূরা (রা) ও অন্যান্যদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এ বিস্তারিত হাদীসটিকে রহিত (منسوخ) মানতে হবে। কারণ একটি বিষয় একবার তালীম দেওয়ার ফলে এটা পৃথক সুন্নত হিসেবে গণ্য হতে পারে না এবং তা কোন মাযহাব হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।
উপরোক্ত আলোচনা ছিল افراد সম্পর্কে। এবার ترجيع সম্পর্কে আলোচনা প্রয়োজন। ترجيع সম্পর্কে আবূ মাহযূরা (রা)-এর হাদীসের বিপরীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ (রা)-এর হাদীস রয়েছে যা মূলনীতি ও দলীল এবং বিশুদ্ধতার কারণে খন্ডন করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়তঃ আবু দাউদ, নাসাঈ, দারিমী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর (রা)-এর বর্ণিত হাদীসে আযানের শব্দ দু’বার বলে উল্লেখ রয়েছে। তৃতীয়তঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)-এর প্রিয় মুয়াযযিন হযরত বিলাল (রা)-এর আযান এ বিষয়ে শক্তিশালী দলীল। কেননা তাঁর আযানে তারজী (ترجيع) ছিল না। রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর দ্বিতীয় মুয়াযযিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা)-এর আযানেও তারজী' ছিল না। এমনিভাবে কুবা মসজিদের মুয়াযযিন হযরত সা'দ (রা)-এর আযানেও তারজী' ছিল না। সুতরাং এ সম্মানিত ব্যক্তিদের কার্যক্রম কিভাবে সুন্নত বিরোধী হবে? তবে হযরত আবূ মাহযূরা (রা) হয়ত প্রথম কালেমায়ে শাহাদাত আস্তে বলেছেন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁকে দ্বিতীয়বার উচ্চস্বরে বলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, এটা সুন্নতে পরিণত হয়েছে। আল্লামা তাহাবী (র) এই মত প্রকাশ করেছেন। এছাড়া উক্ত বিষয়ে আরো শক্তিশালী দলীল হলো এই যে, হযরত আবু মাহযুরা (রা)-এর হাদীস অন্য এক কারণেও তারজী'র প্রমাণ বহন করে না। কেননা এটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে যুক্ত ছিল। ইবনে জাওয়ী বলেন হযরত আবূ মাহযুরা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাই হুযুর (সা) তাঁকে কালেমায়ে শাহাদাত বার বার তালীম দিয়েছেন, যাতে এ কালেমা তাঁর অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং তাঁর মুশরিক সাথীদের সামনে বার বার পাঠ করেন। কিন্তু তিনি মনে করেছেন এ অতিরিক্ত কালেমা আযানের অংশ। তাই সংখ্যা বর্ণনার সময় উনিশ শব্দ গণনা করেছেন। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে প্রতীয়মান হয় যে, আযানের জন্য حي على الصلاة এবং حي على الفلاح বার বার উচ্চারণের অধিক প্রয়োজন। কিন্তু এই শব্দসমূহ যেহেতু পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হয়নি, সুতরাং অন্যান্য শব্দসমূহ কেন বার বার উচ্চারিত হবে। অন্যদিকে এটা লক্ষণীয় যে, ইকামত আযানেরই প্রতিধ্বনি। যদি আযান অনুপস্থিত ব্যক্তিদের আহ্বানের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে উপস্থিত ব্যক্তিদের আহ্বানের জন্য বিবেক এ বলে যে, আযান ও ইকামত একই ধরনের হতে হবে। ইকামতে যেহেতু তারজী' নেই, সুতরাং আযানেও না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৯০ | মুসলিম বাংলা