মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৭
আসরের নামায কাযা হওয়া সম্পর্কে হুঁশিয়ারী
৮৭। হযরত ইবনে বুরায়দা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আসর নামায আদায় করার ব্যাপারে জলদি কর।
অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত বুরায়দা আসলামী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আসর নামায় (সময় অনুযায়ী) শীঘ্র আদায় কর।
অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত বুরায়দা আসলামী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : মেঘলা দিনে আসর নামায জলদি আদায় কর। কারণ যার আসর নামায বাদ পড়ে যায় (আদায় না করা অবস্থায়), আর সূর্য অস্ত যায়, তাহলে এরূপ ব্যক্তির আমল ধ্বংস হয়ে যায়।
عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَكِّرُوا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: عَنْ بُرَيْدَةَ الْأَسْلَمِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَكِّرُوا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فِي يَوْمِ غَيْمٍ، فَإِنَّ مَنْ فَاتَتْهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে আসর নামাযের প্রতি গুরুত্ব এবং এর সঠিক ও উপযুক্ত সময়ের ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে কি মতানৈক্য রয়েছে, তা আলোচনা করা হয়েছে। আসর নামায কারো মতে জলদি আদায় করা মুস্তাহাব এবং কারো মতে বিলম্ব করা উত্তম। ইমাম আহমদ (র), ইমাম শাফিঈ (র) এবং ইমাম মালিক (রা)-এর মতে আসর নামায জলদি অর্থাৎ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উচিত। ইমাম আবূ হানীফা (র) বিলম্ব করার পক্ষে মত পোষণ করেছেন। উভয় মতামতের স্বপক্ষে মওকুফ ও মরফূ (موقوف و معروف) হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ হানীফা (র) উভয় মতামতের হাদীস একত্র করে জলদি (تعجيل) সম্পর্কিত হাদীস মেঘলা দিনের সাথে এবং বিলম্বের (تاخير) হাদীস মেঘবিহীন পরিষ্কার দিনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। تعجيل সম্পর্কে হযরত বুরায়দা আসলামীর হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে তিনি এভাবে যুক্তি দিয়েছেন যে, মেঘলা দিনে মেঘের কারণে নামায করো হওয়ার আশংকা থাকে তাই নামায কাযা হয়ে সওয়াব থেকে বঞ্চিত না নামায আদায় করা । বিলম্বে নামায আদায়ের ব্যাপারে তিরমিযী শরীফে হযর (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হুযুর (সা) যোহর নামায তোমাদের থেকে জলদি করে আদায় করতেন। এ হাদীস আসরের নামায় বিলম্ব করার প্রতি ইঙ্গিত করে।
تعجيل
(জলদি) সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত আছে, তা হলো (مبهم) অস্পষ্ট। এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে تعجيل এর প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথবা এসব হলো محتمل যা ইমাম আবু হানীফার মাযহাব تاخير এর ব্যাখ্যা করে থাকে। যেমন হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, হুযূর (সা) আসর নামায আদায় করতেন। এরপর কোন বাতি মদীনা শহর থেকে বাইরে যেত এবং সূর্য তখন আকাশে অনেক উপরে থাকত। সত্য হলো এই যে, এর দ্বারা ওয়াক্ত নির্ধারিত হয় না। অথবা রাফে ইবনে খাদীজ (রা)-এর বর্ণনায়, তিনি বলেছেন আমরা হুযুর (সা)-এর সাথে আসর নামায আদায় করে পশু যবেহ করে তা বন্টন করতাম এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আমরা গোশত রান্না করে খেতাম। এখানে পশু যবেহ করা এবং বন্টন করার পর রান্না করে যাওয়া কোন চূড়ান্ত বিষয়ের প্রমাণ নয়। কেননা এ ধরনের কাজ খুব দ্রুত শেষ করা যায় আবার ধীরেও করা যায়। অথবা তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত (সা) এমন সময় আসর নামায আদায় করতেন যখন সূর্যের আলো তাঁর হুজরার (ঘর) উপর পতিত হতো। এখানে উল্লেখ্য যে, স্থান ও কালের পরিবর্তনে ছায়া উঁচু-নীচু হয়ে থাকে। অথবা ঐ সমস্ত হাদীস, যাতে আসর নামায় এমন সময় আদায়ের কথা বলা হয়েছে, যখন সূর্যের আলো শুভ্র ও উজ্জ্বল থাকে। এ হাদীসে ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতানুযায়ী বিলম্বের সমর্থন পাওয়া যায়। কেননা তিনিও تاخير -এর দ্বারা এ অর্থ গ্রহণ করে থাকেন যে, মাকরূহ ওয়াক্তের পূর্বে সূর্যের আলো উজ্জ্বল থাকে, হলুদ আকার ধারণ না করে, তখন আসর নামায আদায় করতে হবে। ইমাম মুহাম্মদ (র) মুয়াত্তা নামক হাদীস গ্রন্থে বলেন আমাদের মতে সূর্যের আলো যখন উজ্জ্বল থাকে, হলুদ আকার ধারণ না করে, আসর নামাযে এরূপ বিলম্ব করা উত্তম। সুতরাং এ বিষয়ে আবূ দাউদ শরীফে আলী ইবনে শায়বান (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস এর চূড়ান্ত ফয়সালা করে দিয়েছে। অতঃপর এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। হাদীসটি হলো এই:
قدمنا على رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة فكان يؤخر الصلاة ما دامت الشمس بيضاء نقية
- আমরা যখন মদীনায় হুযূর (সা)-এর খিদমতে আগমণ করি, তখন আসর নামায় বিলম্ব করে আদায় করা হতো। তখন সূর্যের আলো উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকত।
এ হাদীস ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মাযহাবের পূর্ণ সমর্থন করে।
تعجيل
(জলদি) সম্পর্কিত হাদীসসমূহের উদ্দেশ্যে হলো এই যে, যেহেতু আসর নামাযের ওয়াক্ত খুবই সংক্ষিপ্ত এবং এতে কিছু মাকরূহ সময় রয়েছে, তাই নামায় যাতে মাকরূহ না হয়। এরপ সূর্যের আলো উজ্জ্বল থাকতেই নামায আদায় করতে হবে। । ব্যাপারে গাফিল হলে নামার কাযা হওয়ার আশংকা বিদ্যমান থাকে। শুধু ও আশংকার কারণেই আসর জলদি আদায়ের কথা বলা হয়েছে। নতুবা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতই আসর নামাযের সঠিক ওয়াক্ত।
এছাড়া মুত্তাকীদের জন্য এখানে একটি নেক উদ্দেশ্য হলো এই যে, যদি আসর নামায় বিम করা হয়, তাহলে এর পূর্বে নফল আদায় করে অনেক সওয়াব হাসিলের সুযোগ পাওয়া যায়, কিন্তু জলদি আদায় করা হলে এ সুযোগ থাকে না। কেননা আসর নামাযের পর কোন নফল নামায় জায়েয নেই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৮৭ | মুসলিম বাংলা