মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

مشكاة المصابيح للتبريزي

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন

হাদীস নংঃ ৫৯৬৫
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৫। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যেই রোগে ইনতেকাল করিয়াছেন, সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বলিয়াছিলেন, হে আয়েশা! খায়বরে (বিষ-মিশ্রিত) যেই খাদ্য আমি খাইয়াছিলাম, আমি সর্বদা উহার যন্ত্রণা অনুভব করি। আর এখন মনে হইতেছে, আমার শিরাগুলি সেই বিষের ক্রিয়ায় ফাটিয়া যাইতেছে। —বুখারী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৬৬
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ইনতেকালের সময় নিকটবর্তী হয়, তখন তাঁহার গৃহে অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)ও ছিলেন। এই সময় নবী (ﷺ) বলিলেনঃ আস, আমি তোমাদের জন্য একটি (স্মরণ) লিপি লিখিয়া দিয়া যাই, যাহাতে তোমরা ইহার পর কখনও গোমরাহ না হও। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উপর এখন রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হইয়া পড়িয়াছে। (কাজেই এই সময় তাহাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নহে) আর তোমাদের কাছে কোরআন মজীদ রহিয়াছে, সুতরাং আল্লাহর কিতাবই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। এই নিয়া গৃহে উপস্থিত লোকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল এবং তাহারা বিতর্কে লিপ্ত হইয়া পড়িলেন। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বলিলেন, কাগজ-কলম লইয়া আস, যেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়া দেন। আবার কেহ সেই কথাই বলিলেন, যাহা হযরত ওমর (রাঃ) বলিয়াছেন। অতঃপর যখন হৈ চৈ এবং মতবিরোধ চরমে পৌঁছিল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তোমরা আমার নিকট হইতে উঠিয়া যাও। (অধস্তন বর্ণনাকারী) উবায়দুল্লাহ্ বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস [(রাঃ) অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে] বলিতেন, ইহা একটি বিপদ, চরম বিপদ, যাহা লোকদের মতবিরোধ ও শোরগোলের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এবং তাঁহার অসিয়ত লিখিয়া দেওয়ার ইচ্ছার মধ্যে অন্তরাল হইয়া দাঁড়াইল।
আর সুলায়মান ইবনে আবু মুসলিম আহওয়ালের রেওয়ায়তে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলিলেন, হায় বৃহস্পতিবার! কতই বেদনাদায়ক বৃহস্পতিবার! এই কথা বলিয়া তিনি এমনভাবে কাঁদিতে লাগিলেন যে, তাঁহার অশ্রুতে নীচের বালু-কংকর পর্যন্ত ভিজিয়া গিয়াছিল। (সুলায়মান বলেন,) আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, হে ইবনে আব্বাস! বৃহস্পতিবার দিনের ব্যাপারটি কি ? তিনি বলিলেন, এইদিন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর রোগ-যন্ত্রণা খুব বাড়িয়া গিয়াছিল। তখন তিনি বলিয়াছিলেন, অস্থিখণ্ড (লিখার উপকরণ) লইয়া আস, আমি তোমাদের জন্য এমন লিপি লিখিয়া দিব, যাহার পর তোমরা কখনও গোমরাহ হইবে না। তখন লোকেরা কলহে লিপ্ত হইল। অথচ নবীর সম্মুখে কলহ করা সমীচীন ছিল না। এই সময় কেহ কেহ বলিলেন, তাঁহার অবস্থা কেমন? তবে কি তিনি প্রলাপ করিতেছেন ? তাঁহাকে জিজ্ঞাসা কর। কেহ কেহ তাহাকে বারবার জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। সেই সময় তিনি বলিলেন, আমাকে ছাড়িয়া দাও, আমাকে আমার অবস্থায় থাকিতে দাও। আমি যেই অবস্থায় আছি, তাহা ঐ অবস্থা হইতে অনেক উত্তম, যেইদিকে তোমরা আমাকে ডাকিতেছ। অতঃপর তিনি তাহাদিগকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিলেন। (এক) মুশরিকদিগকে আরব উপদ্বীপ হইতে বহিষ্কার করিবে। (দুই) আমি যেইভাবে প্রতিনিধিদলকে সসম্মানে পুরস্কৃত করিতাম, (আমার পরে) সেইভাবে তাহাদিগকে পুরস্কৃত করিবে। আর ইবনে আব্বাস (রাঃ) তৃতীয়টি হইতে নীরব থাকেন, অথবা তিনি বলিয়াছেন; কিন্তু আমি (সুলায়মান) তাহা ভুলিয়া গিয়াছি। সুফিয়ান বলেন, ইহা সুলায়মানের কথা। — মোত্তাঃ

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৬৭
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৭। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওফাতের পর একদিন হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে বলিলেন, চল; আমাদের সাথে, উম্মে আয়মনের কাছে যাই এবং তাঁহার সাথে সাক্ষাৎ করি, যেইভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁহার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করিতেন। (হযরত আনাস বলেন,) আমরা তাঁহার খেদমতে পৌছিলে তিনি কাঁদিতে লাগিলেন। তখন তাঁহারা উভয়ে উম্মে আয়মনকে বলিলেন, কাঁদিতেছ কেন? তুমি কি জান না, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্য আল্লাহ্ পাকের নিকট যাহাকিছু আছে, তাহাই উত্তম? জওয়াবে উম্মে আয়মন বলিলেন, আমার কাদার কারণ ইহা নহে যে, আমি জানি না যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্য আল্লাহ্ পাকের কাছে যাহা আছে, তাহাই উত্তম; বরং আমি এই জন্য কাঁদিতেছি যে, আসমান হইতে ওহী আসার সিলসিলা চিরতরে বন্ধ হইয়া গিয়াছে। এই কথা শুনিয়া তাঁহাদের অন্তরও বিগলিত হইয়া গেল, ফলে তাঁহারাও উম্মে আয়মনের সাথে কাঁদিতে লাগিলেন। —মুসলিম

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৬৮
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৮। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁহার অন্তিম রোগের সময় একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম, তখন তিনি তাঁহার মাথায় একখানা কাপড় বাঁধা অবস্থায় বাহির হইয়া আমাদের সম্মুখে আসিলেন এবং সরাসরি মিম্বরে গিয়া বসিলেন। আর আমরাও তাঁহার অনুসরণে নিকটে গিয়া বসিলাম। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ আমি সেই মহান সত্তার কসম করিয়া বলিতেছি, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ। নিশ্চয় আমি আমার এই স্থান হইতে হাউযে কাউসার দেখিতে পাইতেছি। তারপর বলিলেন, আল্লাহর কোন এক বান্দার সম্মুখে দুনিয়া ও উহার সাজসজ্জা উপস্থিত করা হয়; কিন্তু সে পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়। হযরত আবু সাঈদ বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর এই কথাটির তাৎপর্য হযরত আবু বকর (রাঃ) ব্যতীত আর কেহই বুঝিতে পারেন নাই। সাথে সাথে তাঁহার চক্ষুদ্বয় হইতে অশ্রু প্রবাহিত হইতে লাগিল এবং তিনি কাঁদিয়া দিলেন। অতঃপর বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! বরং আমরা আমাদের পিতা-মাতা ও আমাদের জান-মালসমূহ আপনার জন্য উৎসর্গ করিতেছি। হযরত আবু সাঈদ বলেন, তারপর তিনি মিম্বর হইতে নামিয়া আসিলেন এবং এ যাবৎ আর কখনও তিনি উহার উপর দাঁড়ান নাই। — দারেমী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৬৯
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৯। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন সূরা নাযিল হইল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হযরত ফাতেমাকে ডাকিয়া বলিলেনঃ আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া হইয়াছে। এই কথা শুনিয়া ফাতেমা কাঁদিয়া দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তুমি কাদিও না। কেননা, আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই প্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হইবে। তখন ফাতেমা হাসিলেন। হযরত ফাতেমার এই অবস্থা দেখিয়া নবী (ﷺ)-এর কোন এক বিবি জিজ্ঞাসা করিলেন, হে ফাতেমা ! আমরা প্রথমে একবার তোমাকে দেখিলাম কাঁদিতে। আবার পরে দেখিলাম হাসিতে (ইহার হেতু কি)? উত্তরে ফাতেমা বলিলেন, প্রথমে তিনি আমাকে বলিয়াছেন, “তাহাকে তাহার মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া হইয়াছে।” ইহা শুনিয়া আমি কাঁদিয়া ফেলি। অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, “তুমি কাঁদিও না। কারণ, আমার পরিবারের মধ্য হইতে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হইবে।” এই কথা শুনিয়া আমি হাসিলাম। আর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, যখন আল্লাহর সাহায্য আসিয়াছে এবং মক্কাও বিজিত হইয়াছে এবং ইয়ামনবাসীগণ (ইসলাম গ্রহণ করিয়া) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে আসিয়াছে, তাহারা কোমল অন্তরের অধিকারী, ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে রহিয়াছে। — দারেমী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৭০
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৭০। হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা তিনি বলিলেন, হায় আমার মাথা (ব্যথায় আমি মরণাপন্ন)। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ যদি ইহা (অর্থাৎ, তোমার মৃত্যু) ঘটিয়া যায়, আর আমি বাচিয়া থাকি, তাহা হইলে (চিন্তার কোন কারণ নাই,) আমি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করিব এবং তোমার জন্য দো'আ করিব। তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলিলেন, হায় আফসোস! আল্লাহর কসম! আমার তো মনে হইতেছে, আপনি আমার মৃত্যুই কামনা করিতেছেন। আর যদি তাহাই ঘটে, তাহা হইলে তো আপনি সেইদিনের শেষাংশে আপনার অন্য কোন বিবির সাথে রাত্রি যাপন করিবেন। তখন নবী (ﷺ) বলিলেন, (নিজের মাথা ব্যথা এবং মৃত্যুর আলোচনা বাদ দাও ;) বরং আমার মাথা (আরও অধিক)। [অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন,] আমি সিদ্ধান্ত করিয়াছিলাম অথবা বলিয়াছেন, আমি ইচ্ছা করিয়াছিলাম কোন লোক পাঠাইয়া আবু বকর ও তাঁহার পুত্র (আব্দুর রহমান)-কে ডাকাইয়া আনিব এবং তাহাদিগকে (খেলাফত সম্পর্কে) অসিয়ত করিয়া যাইব, যেন লোকেরা বলিতে না পারে (অমুক ব্যক্তি খেলাফতের বেশী হকদার।) অথবা কেহ যেন আশা না করিতে পারে (আমিই খেলাফতের অধিক উপযোগী); কিন্তু পরে আমি ভাবিলাম, আল্লাহ্ তা'আলাই (আবু বকর ব্যতীত অন্যের খেলাফত) গ্রহণ করিবেন না। আর ঈমানদারগণও তাহা মানিয়া লইবে না। অথবা তিনি বলিয়াছেন, আল্লাহ্ তা'আলাই প্রতিহত করিবেন এবং ঈমানদারগণও গ্রহণ করিবে না। —বুখারী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৭১
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৭১। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বাকী' নামক কবরস্থানে এক জানাযায় শামিল হওয়ার পর আমার কাছে ফিরিয়া আসিলেন। তখন আমাকে তিনি এমন অবস্থায় পাইলেন যে, আমি মাথা বেদনায় আক্রান্ত। আর আমি বলিতেছি, হায়। ব্যথায় আমার মাথা গেল। (আমার অবস্থা দেখিয়া) তিনি বলিলেনঃ না; বরং হে আয়েশা! আমি মাথা ব্যথায় অস্থির হইয়া পড়িয়াছি। আর ইহাতে তোমার ক্ষতিই বা কি ? যদি তুমি আমার আগে মরিয়া যাও, তাহা হইলে আমি তোমাকে গোসল করাইব, কাফন পরাইব, তোমার নামাযে জানাযা পড়িব এবং আমি তোমাকে দাফন করিব। (এই কথা শুনিয়া) আমি বলিলাম, আল্লাহর কসম! আমি যেন আপনাকে এমন অবস্থায় মনে করিতেছি, আপনি আমার শেষকৃত্য সম্পাদন করিয়া আমার হুজরায় ফিরিয়া আসিবেন এবং আপনার কোন এক বিবির সাথে সেইখানে রাত্রি যাপন করিবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মৃদু হাসিলেন। (হযরত আয়েশা বলেন,) ইহার পর হইতেই তাঁহার সেই রোগের সূচনা হইল, যেই রোগে তিনি ইনতেকাল করিয়াছেন। — দারেমী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৭২
details icon

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৭২। হযরত জা'ফর ইবনে মুহাম্মাদ তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, একদা কোরাইশী এক ব্যক্তি তাঁহার (মুহাম্মাদের) পিতা আলী ইবনে হোসাইনের নিকট আসিল। তখন আলী ইবনে হোসাইন (আগত লোকটিকে উদ্দেশ্য করিয়া) বলিলেন, আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করিব? লোকটি বলিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আবুল কাসেম (ﷺ) হইতে হাদীস বর্ণনা করুন। তখন আলী ইবনে হোসাইন (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন রোগাক্রান্ত হইলেন, তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁহার কাছে আসিয়া বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে আপনার খেদমতে পাঠাইয়া আপনার হাল অবস্থা জানিতে চাহিয়াছেন। অথচ আপনার অবস্থা সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ্) আপনার চাইতে অধিক অবগত আছেন। তবুও তিনি জানিতে চাহিয়াছেন, আপনি এখন নিজের মধ্যে কিরূপ অনুভব করিতেছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ হে জিবরাঈল! আমি নিজেকে ভারাক্রান্ত পাইতেছি এবং নিজের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করিতেছি। (ইহার পর সেইদিন জিবরাঈল চলিয়া গেলেন।) আবার দ্বিতীয় দিন আসিয়া বিগত দিনের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, আর নবী (ﷺ)ও প্রথম দিনের মত জওয়াব দিলেন। (এইদিনও জিবরাঈল চলিয়া গেলেন।) পুনরায় জিবরাঈল তৃতীয় দিন আসিলেন এবং নবী (ﷺ)-কে প্রথম দিনের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, আর তিনিও প্রথম দিনের মত একই উত্তর দিলেন। এই (তৃতীয়) দিন জিবরাঈলের সঙ্গে আসিলেন 'ইসমাঈল' নামে আর একজন ফিরিশতা। তিনি ছিলেন এমন এক লক্ষ ফিরিশতার সর্দার, যাহাদের প্রত্যেকই (স্বতন্ত্রভাবে ) এক এক লক্ষ ফিরিশতার সর্দার। সেই ফিরিশতাও নবী (ﷺ)-এর নিকটে আসিবার অনুমতি চাহিলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) জিবরাঈলকে তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। (ইহার পর প্রবেশের অনুমতি দিলেন।) অতঃপর জিবরাঈল নবী (ﷺ)-কে বলিলেন, এই যে মালাকুল মউত (আযরাঈল)। ইনিও আপনার নিকটে আসিবার অনুমতি চাহিতেছেন। তিনি আপনার পূর্বে কখনও কোন মানুষের কাছে যাইতে অনুমতি চান নাই এবং আপনার পরেও আর কখনও কোন মানুষের নিকট আসিতে অনুমতি চাহিবেন না। অতএব, তাহাকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করুন। তখন নবী (ﷺ) তাহাকে অনুমতি দিলেন, তখন তিনি নবী (ﷺ)-কে সালাম করিলেন এবং বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে আপনার খেদমতে পাঠাইয়াছেন। আপনি যদি আমাকে আপনার রূহ কবয করিবার অনুমতি বা নির্দেশ দেন, তাহা হইলে আমি আপনার রূহ কবয করিব। আর যদি আপনি আপনাকে ছাড়িয়া দিতে আমাকে নির্দেশ দেন, তাহা হইলে আমি আপনাকে ছাড়িয়া দিব (অর্থাৎ, রূহ কবয করিব না)। তখন নবী (ﷺ) বলিলেন, হে মালাকুল মউত! আপনি কি এমন করিতে পারিবেন ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি এইভাবেই নির্দেশিত হইয়াছি। আর আমি ইহাও আদিষ্ট হইয়াছি যে, আমি যেন আপনার নির্দেশ মানিয়া চলি বর্ণনাকারী বলেন, এই সময় নবী (ﷺ) হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের দিকে তাকাইলেন, তখন জিবরাঈল বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্ তা'আলা আপনার সাক্ষাৎলাভের জন্য একান্তভাবে উদ্‌গ্রীব। তখনই নবী (ﷺ) মালাকুল মউতকে বলিলেন, যেই জন্য আপনি আদিষ্ট হইয়াছেন, তাহাই কার্যে পরিণত করুন, অতঃপর তিনি তাহার রূহ কবয করিয়া ফেলিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইনতেকাল করেন এবং একজন সান্ত্বনাদানকারী আসেন, তখন তাঁহারা গৃহের এক পার্শ্ব হইতে এই আওয়াজ শুনিতে পাইলেন। “হে আহলে বায়ত! আপনাদের প্রতি আল্লাহর তরফ হইতে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক। আল্লাহর কিতাবে প্রত্যেকটি বিপদের সময় সান্ত্বনা ও ধৈর্যের উপাদান রহিয়াছে। আল্লাহ্ প্রত্যেক ধ্বংসের উত্তম বিনিময়দানকারী এবং প্রত্যেক হারান বস্তুর ক্ষতিপূরণদানকারী। সুতরাং তোমরা একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করিয়া চল এবং তাঁহার কাছেই সর্বময় কল্যাণের কামনা কর। কারণ, প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত যে সওয়াব হইতে বঞ্চিত।” অতঃপর হযরত আলী বলিলেন, তোমরা কি জান এই সান্ত্বনাবাণী প্রদানকারী লোকটি কে? ইনি হইলেন, হযরত খিযর আলাইহিস সালাম। —বায়হাকী তাঁহার দালায়েলুন নবুওত গ্রন্থে।

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ৫৯৭৩
details icon

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের পর দীনার-দিরহাম, বকরী উট কিছুই রাখিয়া যান নাই। আর কোন কিছুর অসিয়তও করেন নাই। —মুসলিম

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান