মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৭ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৫৯৩৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৯। হযরত যায়দ ইবনে আরকামের কন্যা উনাইসা তাঁহার পিতা যায়দ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, একবার যায়দ অসুস্থ হইয়া পড়িলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁহাকে দেখাশুনা করিতে আসিলেন। হুযূর বলিলেনঃ তোমার এই রোগ তোমার জন্য তেমন আশংকাজনক নহে। তবে তখন তোমার কি অবস্থা হইবে, যখন আমার ওফাতের পরও তুমি বাঁচিয়া থাকিবে এবং সেই সময় দৃষ্টিশক্তি হারাইয়া ফেলিবে ? তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর নিকট ইহার প্রতিদানের আশা করিব এবং সবর করিব। নবী (ﷺ) বলিলেন, তবে তো তুমি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। উনাইসা বলেন, নবী (ﷺ)-এর ওফাতের পর তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছিলেন। আবার কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাঁহাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরাইয়া দিলেন। ইহার পর তিনি ইনতেকাল করেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪০

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪০। হযরত উসামা ইবনে যায়দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যেই ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে, যাহা আমি বলি নাই, সে যেন জাহান্নামে তাহার বাসস্থান নির্ধারণ করিয়া লয়। হুযুরের এই উক্তি এই প্রসঙ্গে ছিল যে, একদা তিনি এক ব্যক্তিকে (কোথাও) পাঠাইলেন, সে তথায় গিয়া রাসূলুল্লাহর পক্ষ হইতে মিথ্যা কথা বলিল। ইহা জানিতে পারিয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহার উপর বদ দো'আ করিলেন। ইহার পর তাহাকে এমতাবস্থায় মৃত পাওয়া যায় যে, তাহার পেট ফাটা এবং (দাফনের পর) মাটি তাহাকে গ্রহণ করে নাই। —হাদীস দুইটি বায়হাকী দালায়েলুন নবুওত গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪১। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট আসিয়া খাদ্য চাহিল। তিনি তাহাকে অর্ধ অসক পরিমাণ যব দিলেন। উহা হইতে সেই ব্যক্তি, তাহার স্ত্রী ও তাহাদের মেহমান সর্বদা খাইতে থাকে। অবশেষে একদিন সে উক্ত যবগুলি মাপিয়া দেখিল। ফলে উহা নিঃশেষ হইয়া গেল। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে আসিয়া ঘটনাটি জানাইল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ যদি তুমি উহা না মাপিতে, তাহা হইলে তোমরা উহা হইতে হামেশা খাইতে পারিতে এবং (আমার দেওয়া) যবগুলি পূর্ববৎ থাকিয়া যাইত। — মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪২। হযরত আসেম ইবনে কুলাইব (রঃ) তাঁহার পিতা হইতে, তিনি (কুলাইব) জনৈক আনসারী ব্যক্তি হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলিয়াছেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় গেলাম। পরে আমি দেখিলাম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কবরের কাছে উপস্থিত হইয়া কবর খননকারীকে নির্দেশ দিয়া বলিতেছেন, পায়ের দিকে (কবরকে আরও প্রশস্ত কর। মাথার দিকে আরও প্রশস্ত কর। অতঃপর দাফন কাজ শেষ করিয়া হুযূর (ﷺ) বাড়ীতে ফিরিয়া আসিলে মৃত ব্যক্তির (বিধবা) স্ত্রীর পক্ষ হইতে এক লোক আসিয়া নবী (ﷺ)-কে খানার দাওয়াত দিল। হুযূর (ﷺ) দাওয়াত মঞ্জুর করিলেন এবং তাঁহার সঙ্গে আমরাও খাইতে গেলাম। তাঁহার সম্মুখে খাদ্য আনা হইলে তিনি উহাতে হাত রাখিলেন, অতঃপর লোকেরাও হাত বাড়াইয়া খাইতে শুরু করিল। এই সময় আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দিকে তাকাইয়া দেখিলাম, তিনি গোশতের একটি গ্রাসকে মুখের ভিতরে রাখিয়া নাড়াচাড়া করিতেছেন। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ আমি ইহাকে এমন একটি বকরীর গোশত বলিয়া অনুভব করিতেছি, যাহা উহার মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা হইয়াছে। তখন মহিলাটি (হুযুরের সন্দেহ জানিতে পারিয়া) একজন লোক পাঠাইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। বকরী খরিদ করিবার জন্য আমি এক ব্যক্তিকে নাকী' বাজারে পাঠাইয়াছিলাম। উহা এমন একটি জায়গা, যেখানে ভেড়া, বকরী ও দুম্বা ইত্যাদি বিক্রয় হয়; কিন্তু তথায় কোন ভেড়া-বকরী পাওয়া যায় নাই। অতঃপর আমার একজন প্রতিবেশীর নিকট পাঠাইলাম। সে নিজের জন্য একটি বকরী খরিদ করিয়াছিল। আমি এই বলিয়া লোক পাঠাইয়াছিলাম, সে যেই মূল্যে বকরীটি খরিদ করিয়াছে, ঠিক সেই মূল্যেই বকরীটি যেন আমার জন্য পাঠাইয়া দেয়, কিন্তু সেই ব্যক্তিকে পাওয়া যায় নাই। অতঃপর আমি তাহার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠাইলাম। তখন তাহার স্ত্রী আমার জন্য বকরীটি পাঠাইয়া দিয়াছে (ইহা সেই বকরীরই গোশত)। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাকে বলিলেন, এই খাদ্যগুলি কয়েদীদিগকে খাওয়াইয়া দাও। –আবু দাউদ ও বায়হাকী দালায়েলুন নবুওত গ্রন্থে

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪৩। হযরত হেযাম ইবনে হেশাম তাঁহার পিতার মাধ্যমে তাঁহার দাদা হোবাইশ ইবনে খালেদ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, হোবাইশ ছিলেন উম্মে মা'বাদের ভাই। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন মক্কা হইতে বহিষ্কৃত হইলেন, তখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করিলেন। তাঁহার সঙ্গে ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ) ও আবু বকরের আযাদকৃত গোলাম আমের ইবনে ফুহাইরা এবং পথ-প্রথদর্শক আব্দুল্লাহ্ আল-লাইসী। পথ অতিক্রমকালে তাঁহারা উম্মে মা'বাদের দুই তাবুর নিকটে পৌঁছিলেন। তাঁহারা উম্মে মা'বাদ হইতে গোশত এবং খেজুর খরিদ করিতে চাহিলেন, কিন্তু তাহার কাছে ইহার কিছুই পান নাই। মূলত সেই সময় লোকেরা অনাহার ও দুর্ভিক্ষে লিপ্ত ছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁবুর এক পার্শ্বে একটি বকরী দেখিতে পাইলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, হে উম্মে মা'বাদ ! এই বকরীটির কি হইয়াছে ? সে বলিল, ইহা এতই দুর্বল যে, দলের বকরীগুলির সাথে যাওয়ার মত শক্তি নাই। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহাতে কি দুধ আছে? উম্মে মা'বাদ বলিল, বেচারী নিজেই বিপদগ্রস্তা, সুতরাং দুধ দিবে কিভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ তুমি কি আমাকে এই অনুমতি দিবে যে, আমি উহার দুধ দোহন করি? উম্মে মা'বাদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলিল, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হউক! আপনি যদি উহার স্তনে দুধ দেখিতে পান, তাহা হইলে উহা দোহন করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বকরীটিকে কাছে আনাইলেন, তারপর বকরীটির স্তনে হাত বুলাইলেন এবং বিসমিল্লাহ্ পড়িয়া উম্মে মা'বাদের জন্য তাহার বকরীর ব্যাপারে ( বরকতের) দো'আ করিলেন। তখন বকরীটি দোহনের জন্য নিজের রান দুইটি প্রশস্ত করিয়া হুযূর (ﷺ)-এর সম্মুখে দাঁড়াইয়া জাবর কাটিতে লাগিল। এইদিকে দুধ দোহনের জন্য নবী (ﷺ) এত বড় একটি পাত্র চাহিলেন, যাহা দ্বারা একদল লোক তৃপ্তির সহিত পান করিতে পারে। প্রবাহিত ঢলের মত তিনি উহাতে দুধ দোহন করিলেন, এমন কি উহার উপর ফেনাও জমিয়া গেল। অতঃপর তিনি উম্মে মা'বাদকে পান করিতে দিলেন। সে পরিতৃপ্ত হইয়া পান করিল। পরে তিনি সঙ্গীদিগকে পান করাইলেন, তাহারাও পরিতৃপ্তি লাভ করিলেন এবং সকলের শেষে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিজে পান করিলেন। ইহার অল্পক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দ্বিতীয়বার দোহন করিলেন, এমন কি সেই পাত্রটি এইবারও দুধে পরিপূর্ণ হইয়া গেল। অতঃপর তিনি সেই দুধ উম্মে মা'বাদের নিকট রাখিয়া দিলেন। [যেন তাহার স্বামীও নবী (ﷺ)-এর মু'জেযাকে প্রত্যক্ষ করিতে পারে] এবং উম্মে মা'বাদের পক্ষ হইতে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করিয়া তাঁহারা সম্মুখের দিকে রওয়ানা হইলেন । —শরহে সুন্নাহ্। আর ইবনে আব্দুল বার্র এস্তিআব গ্রন্থে এবং ইবনে জাওযী আল-ওয়াফা কিতাবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং অত্র হাদীসটির মধ্যে আরও কিছু ঘটনা রহিয়াছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৪। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদা হযরত উসাইদ ইবনে হুযায়র ও আব্বাদ ইবনে বিশর (রাঃ) তাহাদের কোন এক প্রয়োজনে দীর্ঘ রাত্র পর্যন্ত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত কথাবার্তা বলিতে থাকেন। রাত্রটি ছিল ঘোর অন্ধকার। অতঃপর যখন তাহারা (বাড়ীর উদ্দেশ্যে) রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হইতে রওয়ানা হইলেন, এই সময় তাহাদের প্রত্যেকের হাতে ছোট এক একটি লাঠি ছিল। পথে বাহির হওয়ার পর তাহাদের একজনের লাঠিটি প্রদীপের ন্যায় আলো দিতে লাগিল। আর তাহারা সেই লাঠির আলোয় পথ চলিতে থাকেন। অতঃপর যখন তাহাদের উভয়ের পথ পৃথক পৃথক হইল, তখন অপরজনের লাঠিটিও আলোকিত হইয়া উঠিল। অবশেষে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন লাঠির আলোয় নিজেদের বাড়ীতে পৌঁছিয়া গেলেন। বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৫৯৪৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৪৫। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, ওহুদ যুদ্ধ সমাগত হইলে আমার পিতা (আব্দুল্লাহ্) রাত্রের বেলায় আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, আমার মনে হয়, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে যাঁহারা নিহত হইবেন, আমিই হইব তাহাদের মধ্যে প্রথম নিহত ব্যক্তি এবং একমাত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত তোমার চাইতে প্রিয় ব্যক্তি আর কাহাকেও আমি রাখিয়া যাইতেছি না। আর আমি ঋণগ্রস্ত। সুতরাং আমার ঋণগুলি পরিশোধ করিয়া দিবে এবং তোমার বোনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করিবে। জাবের বলেন, পরের দিন সকাল হইলে দেখিলাম, তিনিই প্রথম শহীদ ব্যক্তি এবং তাঁহাকে অন্য আরেক ব্যক্তির সাথে একই কবরে দাফন করিলাম। -বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান