মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
২৫- স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১১ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ৪৬১৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৩। হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: যদি তোমাদের কেহ এমন স্বপ্ন দেখে যাহা সে খারাপ মনে করে, তখন সে যেন নিজের বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে। আর আল্লাহর কাছে তিনবার শয়তান হইতে পানাহ্ চায় এবং স্বপ্ন দেখার সময় যেই পাঁজরে শায়িত ছিল, যেন সেই পাজর পরিবর্তন করিয়া লয়। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৪। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন : যমানা নিকটবর্তী হইলে মু'মিনদের স্বপ্ন মিথ্যা হইবে না। আর মু'মিনদের স্বপ্ন নবুওতের ছয়চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। বস্তুত যেই জিনিস নবুওতের অংশ হয়, উহা কখনো মিথ্যা হইতে পারে না। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ) বলেন, আমি এই কথা বলি যে, স্বপ্ন তিন প্রকার হইয়া থাকে। প্রথমত, মনের খেয়াল বা কল্পনা। দ্বিতীয়ত, শয়তানের পক্ষ হইতে ভীতি প্রদর্শন। আর তৃতীয়ত, আল্লাহর পক্ষ হইতে সুসংবাদ প্রদান। সুতরাং কেহ কোন অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখিলে তাহা অন্যের নিকট যেন না বলে এবং তখনই উঠিয়া যেন নামায পড়ে। ইবনে সীরীন আরও বলেন, নবী (ছাঃ) স্বপ্নে (গলদেশে) শৃঙ্খল পরা অবস্থা দেখাকে অপছন্দ করিতেন। অবশ্য (পায়ে ) শিকল পরা অবস্থা দেখাকে পছন্দ করিতেন। আর বলা হয় যে, (অর্থাৎ, স্বপ্নের তা'বীরও ব্যাখ্যাদানকারীগণের অভিমত হইল,) শিকল পরার অর্থ হইল, দ্বীনের উপর অবিচল থাকা। —মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৫। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীসটি হযরত কাতাদাহ, ইউনুস, হুশায়ম এবং আবু হেলাল হযরত ইবনে সীরীনের মাধ্যমে আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইউনুস বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস “পায়ে বেড়ি পরা" স্বপ্ন দেখার কথাটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণিত। (অর্থাৎ, ইহা তাঁহার নিজের কথা নহে।) ইমাম মুসলিম বলেন, আমি জানি না উক্ত বাক্যটি হাদীসের অংশ নাকি ইবনে সীরীনের নিজস্ব অভিমত। অন্য এক রেওয়ায়তেও অনুরূপ মন্তব্য উল্লেখ রহিয়াছে। আর স্বপ্নে "গলদেশে শৃঙ্খল পরা দেখা আমি পছন্দ করি না”। হইতে শেষ পর্যন্ত (মূল হাদীসের অংশ নহে; বরং) হাদীসের সাথে সংযুক্ত করা হইয়াছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৬। হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসিয়া বলিল, আমি স্বপ্নে দেখিয়াছি, আমার মাথা কাটিয়া ফেলা হইয়াছে। বর্ণনাকারী বলেন, তাহার কথা শুনিয়া নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসিলেন এবং বলিলেন, শয়তান যখন তোমাদের কাহারো সাথে ঘুমের মধ্যে তামাশা করে, তখন উহা কোন মানুষের কাছে বর্ণনা করা উচিত নহে। —মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৭। হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুমের ঘোরে যেভাবে স্বপ্ন দেখে—এক রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখিলাম, যেন আমি আমার সাহাবাগণ সমেত ওকবা ইবনে রাফে' (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থিত। তখন আমাদের সম্মুখে কিছু তাজা পাকা খেজুর (রোতাব) হাযির করা হইল। যাহাকে রোতাব ইবনে তার বলা হয়। (ইহা এক বিশেষ ধরনের খেজুরের নাম।) সুতরাং আমি ইহার এই তা'বীর করিয়াছি যে, (رافع) নামে ইঙ্গিত রহিয়াছে) দুনিয়াতে আমার ও আমার সঙ্গীদের মর্যাদা বুলন্দ হইবে এবং (عقبة নামের মধ্যে ইঙ্গিত রহিয়াছে যে,) আমাদের পরকাল হইবে সুখময় আর (طاب শব্দে ইঙ্গিত রহিয়াছে যে,) আমাদের দ্বীন হইল সর্বোত্তম ধর্ম। মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৮। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, একদা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আমি স্বপ্নে দেখিয়াছি, আমি মক্কা হইতে এমন এক ভূ-খণ্ডের দিকে হিজরত করিতেছি যেখানে খেজুর গাছ রহিয়াছে। (তা'বীর হিসাবে) আমার ধারণা হইল যে, ইহার দ্বারা ইয়ামামা বা হিজরের দিকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে। কিন্তু পরে প্রকাশ পাইল, উহা মদীনা মোনাওয়ারা, যাহার নাম ইয়াসরেব। আমি স্বপ্নে ইহাও দেখিতে পাইলাম যে, আমি তলোয়ার নাড়াইতেছি। এমন সময় উহার মধ্যখান দিয়া ভাঙ্গিয়া গেল। আর উহার তা'বীর "ওহোদ যুদ্ধে মুসলমানদের উপর নামিয়া আসা বিপর্যয়" দ্বারা প্রকাশ পাইল। অতঃপর আমি পুনরায় তলোয়ার নাড়া দিলাম, তখন দেখিলাম, উহা পূর্বাপেক্ষা আরও উত্তম হইয়া গিয়াছে। উহার তা'বীর যাহা আল্লাহ্ তা'আলা পরবর্তী সময়ে দান করিয়াছেন (মক্কা) বিজয় এবং মুসলমানদের সম্মিলিত শক্তি। মোত্তাঃ

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬১৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৯। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: একদা আমি ঘুমে ছিলাম, (স্বপ্নে) পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হইল। আর আমার হাতে দুইটি সোনার বালা রাখা হইল যাহা আমার নিকট বড়ই অস্বস্তিকর বোধ হইল। (কেননা, পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম। এমতাবস্থায় আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হইল যেন আমি বালা দুইটিতে ফুঁক মারি। সুতরাং আমি ফুঁক দিলাম,সাথে সাথে উভয়টি উড়িয়া গেল। আমি দুইটি বালার তা'বীর করিয়াছি দুইজন মিথ্যাবাদী দ্বারা, যে দুইজনের মাঝখানে আমি রহিয়াছি। তাহাদের একজন সানআবাসী আর অপরজন ইয়ামামাবাসী। -মোত্তাঃ
অন্য বর্ণনায় রহিয়াছে, ইহাদের একজন মুসায়লেমা, সে ইয়ামামার অধিবাসী। অপরজন হইল (আসওয়াদ আনাসী, সে হইল সানআর অধিবাসী। মেশকাত গ্রন্থকার বলেন, এই হাদীস বুখারী মুসলিমে আমি পাই নাই। তবে জামেউল উসুলের প্রণেতা ইহা তিরমিযী শরীফ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
অন্য বর্ণনায় রহিয়াছে, ইহাদের একজন মুসায়লেমা, সে ইয়ামামার অধিবাসী। অপরজন হইল (আসওয়াদ আনাসী, সে হইল সানআর অধিবাসী। মেশকাত গ্রন্থকার বলেন, এই হাদীস বুখারী মুসলিমে আমি পাই নাই। তবে জামেউল উসুলের প্রণেতা ইহা তিরমিযী শরীফ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬২০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬২০। আনসারী মহিলা হযরত উম্মে আলা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (রাঃ)-এর জন্য একটি প্রবহমান পানির ঝর্ণা দেখিতে পাইলাম এবং উক্ত ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলিলাম। তখন তিনি বলিলেনঃ উহা তাহার আমল। (কিয়ামত পর্যন্ত) উহা তাহার জন্য জারী থাকিবে। —বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬২১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬২১। হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, তিনি ফজরের নামায শেষে প্রায়শ আমাদের দিকে মুখ করিয়া বসিতেন এবং জিজ্ঞাসা করিতেন, তোমাদের কেহ আজ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখিয়াছে কি ? বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের কেহ কোন স্বপ্ন দেখিয়া থাকিলে সে তাহার নিকট বলিত। আর তিনি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক উহার তা'বীর বয়ান করিতেন। যথারীতি একদিন সকালে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের কেহ (আজ রাত্রে) কোন স্বপ্ন দেখিয়াছে কি? আমরা আরয করিলাম, না। তখন তিনি বলিলেনঃ কিন্তু আমি দেখিয়াছি, অদ্য রাত্রে দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসিল এবং তাহারা উভয়ে আমার হাত ধরিয়া একটি পবিত্র ভূমির দিকে (সম্ভবত উহা শাম বা সিরিয়ার দিকে) লইয়া গেল। দেখিলাম, এক ব্যক্তি বসিয়া আছে আর অপর এক ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশি হাতে দাঁড়ানো। সে উহা উক্ত বসা ব্যক্তির গালের ভিতরে ঢুকাইয়া দেয় এবং উহার দ্বারা চিরিয়া গর্দানের পিছন পর্যন্ত লইয়া যায়। অতঃপর তাহার দ্বিতীয় গালের সহিত অনুরূপ ব্যবহার করে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হইয়া যায়। আবার সে (প্রথমে যেভাবে চিরিয়া ছিল,) পুনরায় তাহাই করে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কি? তাহারা উভয়ে বলিল, সামনে চলুন। সম্মুখের দিকে চলিলাম। অবশেষে আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে আসিয়া পৌঁছিলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ হইয়া শুইয়া রহিয়াছে, আর অপর এক ব্যক্তি একখানা ভারী পাথর লইয়া তাহার মাথার কাছে দাড়াইয়া আছে। সে উহার আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিতেছে। যখনই সে পাথরটি নিক্ষেপ করে (মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া) উহা গড়াইয়া দূরে চলিয়া যায়। তখন সেই লোকটি পুনরায় পাথরটি তুলিয়া আনিতে যায়, সে ফিরিয়া আসার পূর্বে ঐ ব্যক্তির মাথাটি পূর্বের ন্যায় ঠিক হইয়া যায় এবং পুনরায় সে উহা দ্বারা তাহাকে আঘাত করে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কি ? তাহারা উভয়ে বলিল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইলাম। অবশেষে একটি গর্তের নিকট আসিয়া পৌঁছিলাম যাহা তন্দুরের মত ছিল। উহার উপরি অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। উহার তলদেশে আগুন প্রজ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠিত, তখন উহার ভিতরে যাহারা রহিয়াছে তাহারাও উপরে উঠিয়া আসিত এবং উক্ত গর্ত হইতে বাহিরে পড়িয়া যাওয়ার উপক্রম হইত। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা স্তিমিত হইত তখন তাহারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলিয়া যাইত। উহার মধ্যে রহিয়াছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কি ? তাহারা উভয়ে বলিল, সামনে চলুন। সুতরাং আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইলাম এবং একটি রক্তের নহরের নিকট আসিয়া পৌঁছিলাম। দেখিলাম, উহার মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়াইয়া আছে এবং নহরের তীরে একজন লোক দণ্ডায়মান। আর তাহার সম্মুখে রহিয়াছে প্রস্তরখণ্ড। নহরের ভিতরের লোকটি যখন উহা হইতে বাহির হওয়ার উদ্দেশ্যে কিনারার দিকে অগ্রসর হইতে চায়, তখন তীরে দাড়ানো লোকটি ঐ লোকটির মুখের উপর লক্ষ্য করিয়া পাথর নিক্ষেপ করে এবং সেই লোকটিকে ঐ স্থানে ফিরাইয়া দেয় যেখানে সে ছিল। মোটকথা, লোকটি যখনই বাহিরে আসার চেষ্টা করে, তখনই তাহার মুখের উপর পাথর মারিয়া সে যেখানে ছিল পুনরায় সেখানে ফিরাইয়া দেয়। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কি? সঙ্গীদ্বয় বলিলেন, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হইয়া শ্যামল সুশোভিত একটি বাগানে পৌঁছিলাম। বাগানে ছিল একটি বিরাট বৃক্ষ। আর উক্ত বৃক্ষটির গোড়ায় উপবিষ্ট ছিলেন একজন বৃদ্ধ লোক এবং বিপুল সংখ্যক বালক। ঐ বৃক্ষটির সন্নিকটে আরেক ব্যক্তিকে দেখিতে পাইলাম, যাহার সম্মুখে রহিয়াছে আগুন, যাহাকে সে প্রজ্বলিত করিতেছে। ইহার পর আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে ঐ বৃক্ষের উপরে আরোহণ করাইল এবং সেখানে তাহারা আমাকে বৃক্ষরাজির মাঝখানে এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করাইল যে, এইরূপ সুন্দর ও মনোরম ঘর আমি আর কখনো দেখি নাই। উহার মধ্যে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। অনন্তর তাহারা উভয়ে আমাকে সেই ঘর হইতে বাহির করিয়া বৃক্ষের আরও উপরে চড়াইল এবং এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করাইল যাহা প্রথমটি হইতে সমধিক সুন্দর ও উত্তম। ইহাতেও দেখিলাম, কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অনন্তর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বলিলাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাত্রে অনেক কিছু ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখাইলেন। এখন বলুন, আমি যাহাকিছু দেখিয়াছি উহার তাৎপর্য কি? তাহারা উভয়ে বলিল, হ্যাঁ, (আমরা তাহা জানাইব।) ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখিয়াছেন সাঁড়াশি দ্বারা যাহার গাল চিরা হইতেছিল, সে মিথ্যাবাদী, সে মিথ্যা বলিত এবং তাহার নিকট হইতে মিথ্যা রটান হইত। এমন কি, উহা সারা দেশে ছড়াইয়া পড়িত। অতএব, তাহার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হইতে থাকিবে, যাহা করিতে আপনি দেখিয়াছেন। আর যে ব্যক্তির মস্তক পাথর মারিয়া ঘায়েল করিতে দেখিয়াছেন, সে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলা যাহাকে কোরআন শিক্ষা দিয়াছিলেন, কিন্তু সে কোরআন হইতে গাফেল হইয়া রাত্রে ঘুমাইত এবং দিনেও উহার নির্দেশ মোতাবেক আমল করিত না। সুতরাং তাহার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণই করা হইবে, যাহা আপনি দেখিয়া ছেন। আর (আগুনের) তন্দুরে যাহাদিগকে দেখিয়াছেন তাহারা হইল যেনাকার (নারী-পুরুষ)। আর ঐ ব্যক্তি যাহাকে (রক্তের) নহরে দেখিয়াছেন, সে হইল সুদখোর। আর ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তি যাহাকে একটি বৃক্ষের গোড়ায় উপবিষ্ট দেখিয়াছেন, তিনি হইলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। তাহার চতুষ্পার্শ্বের শিশুরা হইল মানুষের সন্তানাদি। আর যেই লোকটিকে অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করিতে দেখিয়াছেন, সে হইল দোযখের দারোগা মালেক। আর প্রথম যে ঘরটিতে আপনি প্রথমে প্রবেশ করিয়াছিলেন, উহা (বেহেশতের মধ্যে) সর্বসাধারণ মু'মিনদের গৃহ। আর এই ঘর যাহা পরে দেখিয়াছেন উহা শহীদদের ঘর। আর আমি হইলাম জিবরাঈল এবং ইনি হইলেন মীকাঈল। এবার আপনি মাথাটি উপরের দিকে তুলিয়া দেখুন। তখন আমি মাথাটি তুলিয়া দেখিলাম, যেন আমার মাথার উপরে মেঘের মত কোন একটি জিনিস রহিয়াছে। অপর এক রেওয়ায়তে আছে, একের পর এক স্তবকবিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কোন জিনিস দেখিলাম। তাঁহারা বলিলেন, উহা আপনারই বাসস্থান। আমি বলিলাম, আমাকে সুযোগ দিন আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তাঁহারা বলিলেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, যাহা আপনি এখনো পূর্ণ করেন নাই। আপনার যখন নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হইবে, তখন আপনি আপনার বাসস্থানে প্রবেশ করিবেন। বুখারী আর “মদীনায় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্ন", এই বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি 'হারামিল মদীনা' অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬২২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৬২২। হযরত আবু রাযীন উকায়লী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ মু'মিনের স্বপ্ন নবুওতের ছয়চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আর স্বপ্ন অন্যকে বলার পূর্ব পর্যন্ত উড়ন্ত পাখীর পারের মধ্যে ঝুলিতে থাকে। (অর্থাৎ, উহার কোন স্থায়িত্ব নাই,) আর যখনই উহা কাহারো নিকট বর্ণনা করা হয়, তখন উহা বাস্তবায়িত হইয়া যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, নবী (ﷺ) ইহাও বলিয়াছেন যে, কোন বন্ধু অথবা জ্ঞানী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাহারো কাছে স্বপ্নের কথাটি প্রকাশ করিও না। – তিরমিযী, আর আবু দাউদের রেওয়ায়তের মধ্যে আছে, নবী (ﷺ) বলিয়াছেন, স্বপ্নের তা'বীর না দেওয়া পর্যন্ত পাখীর পায়ে ঝুলিতে থাকে। আর যখনই উহার তা'বীর দেওয়া হয়, তখন উহা বাস্তবায়িত হইয়া যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, নবী (ﷺ) এই কথাও বলিয়াছেন যে, কোন বন্ধু অথবা কোন জ্ঞানী (অর্থাৎ, তা'বীর সম্পর্কে জ্ঞাত) ব্যতীত অন্য কাহারো কাছে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করিও না।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ৪৬২৬

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৪৬২৬। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সবচাইতে নিকৃষ্টতম অপবাদ হইল, কাহারও নিজ চক্ষুদ্বয়কে এমন জিনিস দেখানো, যাহা উহারা দেখে নাই। —বুখারী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান