মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

مشكاة المصابيح للتبريزي

২- ঈমানের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন

হাদীস নংঃ ১২৯
details icon

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - কবরের আযাব
১২৯। হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা নাজ্জার গোত্রের একটি বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর সওয়ার ছিলেন। তখন আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। সহসা খচ্চরটি লাফিয়ে উঠে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রায় মাটিতে ফেলার উপক্রম করল। দেখা গেল, সেখানে পাঁচটি অথবা ছয়টি কবর বিদ্যমান। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, এই কবরবাসীদরকে কে চিনে? এক ব্যক্তি বলল যে, আমি চিনি ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তারা কখন মারা গিয়েছে? সে বলল, শিরক-কুফরীর যুগে। তিনি (ﷺ) বললেন, এই লোকগুলো তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে সাজা ভোগ করছে। আতঙ্ক ও ভয়ে তোমরা মানুষকে কবরে দাফন করা ছেড়ে দিবে এই আশংকা না থাকলে আমি আল্লাহর দরবারে দুয়া করতাম, যেন তোমাদেরকে কবর আযাবের আওয়াজ শুনানো হয়, যা আমি শুনতে পাচ্ছি। অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা সকলে দোযখের আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। আমরা দোযখের আযাব হতে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি বললেন, তোমরা কবর আযাব হতেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তারা বললেন, আমরা কবর আযাব হতেও আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি বললেন, তোমরা জাহেরী, বাতেনী যাবতীয় ফেতনা হতে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাও। তাঁরা বললেন, আমরা (জাহেরী বাতেনী (প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ) যাবতীয় ফেতনা হতে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। পুনরায় রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, তোমরা দাজ্জালের ফেতনা হতেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তাঁরা বললেন, দাজ্জালের ফেতনা হতেও আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাচ্ছি। -মুসলিম

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ১৩০
details icon

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের আযাব
১৩০। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, মুর্দাকে যখন কবরে রাখা হয় পর তার নিকট নীল চক্ষুবিশিষ্ট কালো বর্ণের দুইজন ফিরিশতা এসে উপস্থিত হন। তাদের একজন মুনকার এবং অপরজন নাকীর। তারা মৃত ব্যক্তিকে (জীবিত করে) জিজ্ঞেস করেন, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে? সে (মু'মিন) ব্যক্তি বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আর হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন ফিরিশতাদ্বয় বলেন, আমরা পূর্বেই জানতাম যে, তুমি এই কথাই বলবে। এরপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে ও গ্রন্থে সত্তর হাত করে প্রশস্ত করা হয় এবং তথায় তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলে, আমি আমার পরিবার পরিজনদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে তাদেরকে এই সুখবর জানাতে চাই। ফিরিশতাগণ বলেন, তুমি এইস্থানে বাসর গৃহে নওসার (দুল) ন্যায় আনন্দের নিদ্রায় বিভোর থাক যাকে তার সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া কেউ জাগাতে পারে না। অতঃপর সে তার কবরে এইরূপভাবে নিদ্রাগ্ন থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে আল্লাহ পাক এই শয্যাস্থল হতে জাগিয়ে তুলবেন।
আর যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক হয়, তবে সে বলে, আমি লোকজনকে কিছু একটা বলতে শুনেছি। তাই আমিও তাদের সাথে তাই বলতাম; কিন্তু কিছু জানতাম না। তখন ফিরিশতাগণ বলেন, আমরা পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলাম যে তুমি এই ধরনের কথাই বলবে। অতঃপর যমিনকে বলা হয় তার উপর মিলে যাও। অমনি যমিন তার উপর এইরূপভাবে মিলে যাবে যাতে তার এক পাঁজরের হাড় অপর পাঁজরে ঢুকে যাবে। কবরে সে এইভাবেই সাজা ভোগ করতে থাকবে যতদিন না আল্লাহ পাক তাকে এইস্থান হতে তুলে নিবেন। -তিরমিযী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ১৩১
details icon

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের আযাব
১৩১। হযরত বারা' ইবনে আযেব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, (কবরে) মু'মিন বান্দার নিকট দুইজন ফিরিশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রতিপালক কে? সে বলে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কি? সে বলে, আমার দীন ইসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। তখন ফিরিশতাদ্বয় তাকে বলেন, তুমি তা কিভাবে বুঝতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়ে দেখে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁকে মেনে নিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, এটাই হল আল্লাহ পাকের এ কালামের মর্ম। يثبت الله الَّذين آمنُوا بالْقَوْل الثَّابِت "যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে কালেমায় শাহাদাতের উপর মজবুত রাখেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অতঃপর আসমানের দিক থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, “আমার বান্দা সত্য বলেছে; সুতরাং তার জন্য বেহেশতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তার জন্য বেহেশতের একটি দরজা খুলে দাও; সুতরাং তার জন্য একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন যে, এর ফলে তার নিকট বেহেশতের স্নিগ্ধ হাওয়া এবং বেহেশতের সুগন্ধি আসতে থাকে। আর বেহেশতের সেই দরজা হয় দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত সুপ্রশস্ত।
অপর দিকে কাফিরের মৃত্যুর বিষয় উত্থাপন করে তিনি বললেন, তারও রূহকে তার দেহের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করানো হয়। অতঃপর দুইজন ফিরিশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রভু কে? তখন সে বলতে থাকে যে, হায় হায়! আমি তো তা জানি না। পুনরায় ফিরিশতাদ্বয় জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কি? সে বলে, হায় হায়! আমি তো কিছুই জানি না। সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না। এরপর ফিরিশতারা জিজ্ঞেস করেন, এই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের মধ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না। অতঃপর আসমানের দিক হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলেছে; সুতরাং তার জন্য দোযখ হতে একটি (আগুনের) শয্যা এনে দাও এবং তাকে দোযখের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য তার কবরের সাথে দোযখের একটি দরজা খুলে দাও। রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন; সুতরাং তার প্রতি দোযখের উত্তাপ ও উত্তপ্ত হাওয়া বয়ে আসতে থাকে। তিনি বললেন, এছাড়া তার প্রতি তার কবরকে এমন সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়, যাতে তার একদিকের পাঁজর অপরদিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফিরিশতাকে মোতায়েন করা হয়। তিনি একটি লোহার হাতুড়ী নিয়ে আসেন। সেই হাতুড়ি দ্বারা কোন পাহাড়ে আঘাত করা হলে অবশ্যই তা মাটি হয়ে যায়। উক্ত ফিরিশতা তাকে এমনভাবে আঘাত করতে থাকেন, যাতে সে বিকট চীৎকার করে উঠে, যা মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত মাশরেক হতে মাগরেব পর্যন্ত সমগ্র মাখলুকই শুনতে পায়। সাথে সাথে সে কবরের মাটির সাথে মিলিয়ে যায়; আবার তাকে জীবিত করা হয়। (এভাবে একাধারে তার উপর শাস্তি চলতে থাকে)। -আহমদ, আবু দাউদ

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান