সওয়াবের আশায় সাহাবায়ে কেরাম রা. আমল করেননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫১
সওয়াবের আশায় সাহাবায়ে কেরাম রা. আমল করেননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫১
সাহাবায়ে কেরাম রা. সওয়াবের আশায় ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনায় পাগলপাড়া ছিলেন। নেকি অর্জনের তাঁরা প্রতিযোগীতা করতেন বলে অসংখ্য হাদিসও রয়েছে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তারা লিখেছে, রাসুলুল্লাহর নিকট থেকে সরাসরি ইসলাম শিক্ষার ফলে তাদের আকীদা অর্থাৎ লক্ষ্য ছিল সঠিক, এক ও অভিন্ন। তারা ইসলামের কোন কাজই উদ্দেশ্য না বুঝে কেবল সওয়াবের আশায় করতেন না, সবকিছুর উদ্দেশ্য তাদের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ছিল। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৫৮ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়–সাহাবায়ে কেরাম শুধু সওয়াবের আশায় কোনও আমল করেননি। ইসলাম কী বলে? সওয়াব বা নেকি অর্জনের জন্য সাহাবায়ে কেরাম রা. প্রতিযোগীতা করতেন। হযরত উমার রা. বলেন, أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَتَصَدَّقَ فَوَافَقَ ذَلِكَ عِنْدِي مَالاً فَقُلْتُ الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ إِنْ سَبَقْتُهُ يَوْمًا قَالَ فَجِئْتُ بِنِصْفِ مَالِي فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا أَبْقَيْتَ لأَهْلِكَ. قُلْتُ مِثْلَهُ وَأَتَى أَبُو بَكْرٍ بِكُلِّ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ " يَا أَبَا بَكْرٍ مَا أَبْقَيْتَ لأَهْلِكَ. قَالَ أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ قُلْتُ وَاللَّهِ لاَ أَسْبِقُهُ إِلَى شَيْءٍ أَبَدًا রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুকের যুদ্ধের প্রাক্কালে) আমাদেরকে দান-খাইরাত করার হুকুম করেন। সৌভাগ্যক্রমে ঐ সময় আমার সম্পদও ছিলো। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোনও দিন আবু বকরকে ডিঙ্গাতে পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ। উমার রা. বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমার পরিবার -পরিজনদের জন্য তুমি কী বাকি রেখে এসেছো? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বকর রা. তার সমস্ত মাল নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, হে আবু বকর, তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি বাকি রেখে এসেছো? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, কখনও আমি কোনও প্রসঙ্গে আবু বকরকে ডিঙ্গাতে পারবো না। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৩৬৭৫ উক্ত হাদিস থেকে জানতে পারলাম, সাহাবায়ে কেরাম রা. নেকি অর্জনের জন্য কেমন প্রতিযোগীতা করতেন। তাছাড়া কিয়ামতের ময়দানে নেকি বা সওয়াব হবে সফলতা ও বিফলতার অন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। মহান আল্লাহ বলেন, وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ এবং সে দিন (আমলসমূহের) ওজন (করার বিষয়টি) একটি অকাট্য সত্য। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে কৃতকার্য। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই তো সেই সব লোক, যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে সীমালংঘন করে নিজেদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। –সুরা আরাফ : ৮-৯ উক্ত আয়াতের তাফসীরে এসেছে, قال حذيفة وعبد الله بن مسعود وغيرهما من الصحابة: يحشر الناس يوم القيامة ثلاثة أصناف: فمن رجحت حسناته على سيئاته بواحدة دخل الجنة، ومن رجحت سيئاته على حسناته بواحدة دخل النار، ومن استوت حسناته وسيئاته فهو من أهل الأعراف হুযাইফা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং অন্যান্য সাহাবীরা বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে তিন শ্রেণীতে একত্রিত করা হবে। যাদের নেক আমল তাদের পাপের চেয়ে এক ভাগ বেশি হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যাদের পাপ নেকির চেয়ে এক ভাগ বেশি হবে, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং যাদের নেক আমল এবং পাপ সমান হবে, তারা আরাফবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। –তাফসীরে জাওযিয়্যাহ, খ. ৩ পৃ. ১২৩ সাহাবীদের থেকে এই ব্যাখ্যা আসার পরও ‘সাহাবায়ে কেরাম রা. সওযাব বা প্রতিদানের আশায় আমল করেননি’ এমন বক্তব্য গর্হিত ও সর্বৈব মিথ্যা।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৩১৯