প্রবন্ধ
একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে (১৩তম পর্ব) – পুষ্টিকর সুন্নাহ
সারাদিনে কত কিছুই খাই। পান করি। তারপরও শরীরে শক্তি পাই না। শরীর দুর্বল দুর্বল লাগে। কাজেকর্মে উৎসাাহ আসে না। এত খাবার যায় কোথায়? খাবারের একটা প্রভাব শরীরে অনুভব করব না? সুফল ভোগ করব না?
এসবের মূল কারণ বরকতহীনতা। নবীজি শিক্ষা দিয়ে গেছেন, আমরা যেন খাবারের পর, বরকতের দু‘আ করা করি।
الْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ، وَالْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ
কাফের খাবার খায় সাতপেটে, মুমিন খাবার গ্রহণ করে একপেটে।
(ইবনে উমার রা.। মুসলিম)
মি‘আন (مِعًى) অর্থ নাড়িভুঁড়ি। কাফেরের খাবারে বরকত থাকে না। সেজন্য বলা হয়েছে, তার খাবার সাতটা ভুঁড়িতে চলে যায়। মুমিনের খাবার একটা পেটেই থাকে। কথাটা রূপকার্থে বলা হয়েছে। সব মুমিনের খাবারেও কিন্তু সমান বরকত হয় না। দু‘আ পড়া আর না-পড়ার কারণে বরকতেও তারতম্য এসে যায়।
খাবারে বরকত আনতে হলে, খাবারের পর আল্লাহ তা‘আলার কাছে বরকতের দু‘আ করতে হবে। নবীজি এমনটাই শিখিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, দুধ পান করার পরেও বরকতের দু‘আ করতে শিখিয়েছেন। ইবনে আব্বাস চমৎকার ভঙ্গিতে শিক্ষাটা তুলে ধরেছেন,
-একদিন আমি আর খালিদ বিন ওয়ালিদ নবীজির সাথে মুলাকাত করতে গেলাম, আম্মাজান মায়মুনার বাসায়। আপ্যায়নের জন্যে একপাত্র দুধ আনা হল। আমি বসেছি নবীজির ডানে। খালিদ বিন ওয়ালিদ বামে। নবীজি দুধ পান করলেন। আমাকে বললেন,
الشَّرْبَةُ لَكَ، فَإِنْ شِئْتَ آثَرْتَ بِهَا خَالِدًا
এবার পানের পালা (নিয়ম হিশেবে) তোমার। তবে তুমি চাইলে স্বার্থত্যগ (ঈসার) করে, পালাটা খালিদকে ছেড়ে দিতে পারো।
-আপনার মুখছোঁয়া অবশিষ্ট খাবারের ক্ষেত্রে আমি ঈসার করতে আগ্রহী নই (مَا كُنْتُ أُوثِرُ عَلَى سُؤْرِكَ أَحَدًا)।
নবীজি তারপর মূল শিক্ষাটা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
مَنْ أَطْعَمَهُ اللَّهُ الطَّعَامَ فَلْيَقُلْ
আল্লাহ তা‘আলা যাকে খাবার খাওয়ান, সে যেন (খাবারের পর) বলে,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ
আল্লাহুম্মা, এ-খাবারে আমাদেরকে বরকত দান করুন। এর চেয়েও উত্তম খাবার আমাদেরকে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
নবীজি আরও বলেছেন,
وَمَنْ سَقَاهُ اللَّهُ لَبَنًا فَلْيَقُلْ
আল্লাহ তা‘আলা কাউকে দুধ পান করালে সে যেন বলে,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
আল্লাহুম্মা, এ দুধপানে আমাদেরকে বরকত দান করুন। বরকত বাড়িয়ে দিন।
নবীজি আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকতার দায়িত্ব দিয়েই তাকে পাঠানো হয়েছে। দু’টি সুন্নাহ একসাথে পেয়ে গেছি।
১: খাবারের পরের সুন্নাহ।
২: দুধপান পরবর্তী সুন্নাহ।
উভয় সুন্নাতই বরকত বৃদ্ধিকারী। পাশাপাশি আল্লাহর যিকির। দুনিয়া ও আখেরাত। নবীজির প্রতিটি সুন্নাতেই দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের উপকার নিহিত থাকে। দু‘আ দু’টির প্রকাশ ভঙ্গিতে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতার একটা ভাবও ফুটে উঠেছে। শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতার পুরষ্কার কী হবে সেটা কুরআন কারীমেই আছে,
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ
এক: মেহমান আগে খাওয়া শুরু করবে, মেযবান পরে, এটা জরুরী নয়। নবীজি সা. আগে দুধ পান করেছেন।
দুই: পালাধর্মী খাবারে, একজন খাওয়ার পর ডানদিকের জনকে খেতে দেবে।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
মিলাদ-কিয়াম এর শরঈ বিধান
...
টুপি পরিধান করার কোন প্রমাণ কি হাদীস বা আছারে সাহাবায় নেই?
...
কাবলাল জুমআ চার রাকাত ; একটি দালিলিক পর্যালোচনা
একজন সম্মানিত আলিমের একটি কথা, যিনি রিয়াদ থেকে পি.এইচ.ডি করেছেন এবং এখন এদেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ...
নিজের যিন্দেগীতে ফাতেমী সুন্নত যিন্দা করুন
...

মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন