لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَۃً لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الۡیَہُوۡدَ وَالَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا ۚ وَلَتَجِدَنَّ اَقۡرَبَہُمۡ مَّوَدَّۃً لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّا نَصٰرٰی ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّ مِنۡہُمۡ قِسِّیۡسِیۡنَ وَرُہۡبَانًا وَّاَنَّہُمۡ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী
৬৩. অর্থাৎ খ্রিস্টানদের মধ্যে বহু লোক দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত। তাই তাদের অন্তরে সত্য গ্রহণের মানসিকতা বেশি। অন্ততপক্ষে মুসলিমদের প্রতি তাদের শত্রুতা অতটা উগ্র পর্যায়ের নয়। কারণ দুনিয়ার মোহ এমনই এক জিনিস, যা মানুষকে সত্য গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। এর বিপরীতে ইয়াহুদী ও মুশরিকদের ভেতর দুনিয়ার মোহ বড় বেশি। তাই তারা প্রকৃত সত্যসন্ধানীর কর্মপন্থা অবলম্বন করে না। কুরআন মাজীদ খ্রিস্টানদের অপেক্ষাকৃত কোমলমনা হওয়ার আরও একটি কারণ বলেছে এই যে, তারা অহংকার করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের অহংবোধও সত্য গ্রহণের পথে বাধা হয়ে থাকে।
খ্রিস্টানগণকে যে বন্ধুত্বে মুসলিমদের নিকটবর্তী বলা হয়েছে, তারই একটা ফল ছিল এই যে, মক্কার মুশরিকদের সর্বাত্মক জুলুমে যখন মুসলিমদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন বহু মুসলিম হাবশায় চলে যায় এবং বাদশাহ নাজাশীর আশ্রয় গ্রহণ করে। নাজাশী তো বটেই, হাবশার জনগণও তখন তাদের সাথে অত্যন্ত সম্মানজনক ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করেছিল। মক্কার মুশরিকগণ নাজাশীর কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে আবেদন জানিয়েছিল, তিনি যেন তাঁর দেশ থেকে মুসলিম শরণার্থীদেরকে বের করে দেন ও তাদেরকে মক্কা মুকাররমায় ফেরত পাঠান, যাতে মুশরিকগণ তাদের উপর আরও নির্যাতন চালাতে পারে। নাজাশী তখন মুসলিমদেরকে ডেকে তাদের বক্তব্য শুনেছিলেন। তাতে তাঁর কাছে ইসলামের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে তিনি যে মুশরিকদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাই নয়; বরং তারা যে উপহার-উপঢৌকন পেশ করেছিল, তাও ফেরত দিয়েছিলেন।
প্রকাশ থাকে যে, এ স্থলে কেবল সেই সকল খ্রিস্টানদেরকেই মুসলিমদের বন্ধুমনস্ক বলা হয়েছে, যারা নিজ ধর্মের প্রকৃত অনুসারী এবং সেমতে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকে আর অহংকার-অহমিকা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখে। বলাবাহুল্য, এর অর্থ এ নয় যে, সব যুগের খ্রিস্টানরাই এ রকম হবে। সুতরাং ইতিহাসে এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে, যাতে খ্রিস্টান জাতি মুসলিম উম্মাহর সাথে নিকৃষ্টতম আচরণ করেছে।