আল ক্বাসাস

সূরা নং: ২৮, আয়াত নং: ২৫

তাফসীর
فَجَآءَتۡہُ اِحۡدٰىہُمَا تَمۡشِیۡ عَلَی اسۡتِحۡیَآءٍ ۫ قَالَتۡ اِنَّ اَبِیۡ یَدۡعُوۡکَ لِیَجۡزِیَکَ اَجۡرَ مَا سَقَیۡتَ لَنَا ؕ فَلَمَّا جَآءَہٗ وَقَصَّ عَلَیۡہِ الۡقَصَصَ ۙ قَالَ لَا تَخَفۡ ٝ۟ نَجَوۡتَ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ

উচ্চারণ

ফাজাআতহু ইহদা-হুমা-তামশী ‘আলাছ তিহইয়া-ইন, কা-লাত ইন্না আবী ইয়াদ‘ঊকা লিইয়াজঝিয়াকা আজরামা-ছাকাইতা লানা- ফালাম্মা-জাআহূওয়া কাসসা ‘আলাইহিল কাসাসা কা-লা লা-তাখাফ নাজাওতা মিনাল কাওমিজ্জালিমীন।

অর্থ

মুফতী তাকী উসমানী

কিছুক্ষণ পর সেই দুই নারীর একজন লাজুক ভঙ্গিমায় হেঁটে হেঁটে তার কাছে আসল। ১৭ সে বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। ১৮ সুতরাং যখন সে নারীদ্বয়ের পিতার কাছে এসে পৌঁছল এবং তাকে তার সমস্ত বৃত্তান্ত শোনাল, তখন সে বলল, কোন ভয় করো না। তুমি জালেম সম্প্রদায় হতে মুক্তি পেয়ে গিয়েছ।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানী

১৭. যদিও উপকার করার পর তার প্রতিদান আনতে যাওয়াটা ভদ্রতা ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিপন্থী, বিশেষত হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মত একজন মহান রাসূলের পক্ষে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি গেলেন এজন্য যে, তিনি এটাকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একটি অনুগ্রহ মনে করেছিলেন, তিনি তো একটু আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন, হে প্রতিপালক! তোমার পক্ষ হতে আমার প্রতি যে অনুগ্রহই বর্ষিত হবে আমি তার কাঙ্গাল। এ নারীর নিমন্ত্রণ তো সে অনুগ্রহ বর্ষণেরই পূর্বাভাষ। তিনি ভেবেছিলেন, এ নিমন্ত্রণ দ্বারা এ জনপদের একজন সম্মানিত লোকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে গেল। বোঝাই যাচ্ছে তিনি একজন শরীফ ও বুযুর্গ লোক। কেননা উপকারী বিদেশীকে ডেকে আনার জন্য তিনি কন্যাকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এ নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। করলে তা নাশুকরী এবং সেই আবদিয়াত ও দাসত্ববোধের পরিপন্থী হবে, যাতে উজ্জীবিত হয়ে তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। এমনও তো হতে পারে, এই মহান ব্যক্তির কাছে উপযুক্ত কোন পরামর্শ পাওয়া যাবে, যা এই বিদেশ বিভূঁইয়ে বড় কাজে আসবে। সুতরাং তিনি দাওয়াত গ্রহণ করে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ইবনে আসাকিরের এক বর্ণনায় আছে আবু হাযিম (রহ.) বলেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন সেখানে পৌঁছলেন, হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম তাঁর সামনে খাবার পেশ করলেন, কিন্তু তিনি বললেন, আমি এর থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাই। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, কেন? আপনার কি ক্ষুধা নেই? হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ক্ষুধা আছে বটে, কিন্তু আমার সন্দেহ আমি যে মেষপালকে পানি পান করিয়ে দিয়েছিলাম, এটা হয়ত তারই প্রতিদান। আমি সে প্রতিদান নিতে রাজি নই। কেননা আমি সে কাজ করেছিলাম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আর আমি এভাবে যে কাজ করি তার কোন বিনিময় গ্রহণ করি না, হোক না তা দুনিয়া ভর্তি সোনা। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ তাআলার কসম! বিষয়টা সে রকম নয়। বরং এটা অতিথিসেবা। এটা আমাদের বংশীয় রেওয়াজ যে, মেহমান আসলে আমরা তার সেবা-যত্ন করে থাকি। এ চরিত্র আমরা পুরুষানুক্রমে পেয়েছি। এ কথায় হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আশ্বস্ত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে খেতে বসে গেলেন (রূহুল মাআনী, পূর্বোক্ত বরাতে)। এ বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের কন্যা যে বলেছিলেন, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি আমাদের যে কাজ করে দিয়েছেন, তার বিনিময় দেওয়ার জন্য, এটা ছিল তার নিজ ধারণাপ্রসূত। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম নিজে এরূপ কথা বলেননি।
﴾﴿
সূরা আল ক্বাসাস, আয়াত ৩২৭৭ | মুসলিম বাংলা