গাফলতির জীবন থেকে বের চাই
প্রশ্নঃ ৮৫৩২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সময় ব্যবস্থাপনাটা ঠিকভাবে করতে পারি না। দেখা যায় প্রায়ই দ্বীনি ব্যপারে গাফিলতি করি। আবার কখনও  দ্বীনের কাজে বেশি মনোযোগী হলে পড়াশোনায় মারাত্মক গাফিলতি করি। পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করাটা আবশ্যক হয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখছি স্মার্টফোন আমাকে ব্যবহার করছে। সব মিলিয়ে খুবই অনিয়মের জীবন যাপন করছি। খাবার-ঘুম-শরীরচর্চা সব দিকেই অনিয়ম। শুনেছি, হাশরের ময়দানে সময়ের হিসাব নেওয়া হবে। তাই এই অনিয়মের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনার পরামর্শ চাচ্ছি। 
*২২ বছরের যুবক হিসেবে আমার ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটানো উচিত? একটি বাস্তবসম্মত নমুনা পেশ করলে খুবই উপকৃত হতাম। 
*আমার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই। দৃষ্টি, শ্রবণ, অন্তঃকরণের হেফাযতের জন্য কি আ'মাল করতে পারি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
নিজেকে নিজে ঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য আপনি প্রথমত হক্কানী-রাব্বানী, সুন্নাতের উপর আমলকারী এমন একজন আলেমে দ্বীনকে নির্বাচন করুন, যার মধ্যে (স্বাদেক্বীন) অর্থাৎ সত্যবাদিতার গুণ রয়েছে, যিনি কোরআন-হাদিস সম্পর্কে পারদর্শী হওয়ার সাথে সাথে বর্তমান যুগ সম্পর্কে সচেতন, যিনি উত্তম আখলাকের অধিকারি, যাকে দেখলে আপনার পরকালের কথা স্মরণ হয়। এমন একজন আলেমের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তার সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন, আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো থেকে শুরু করে সব বিষয়গুলো তার সাথে শেয়ার করুন, তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, তার পরামর্শানুযায়ি কাজ করুন। এতে করে অনেক ফায়দা হবে। ইনশাল্লাহ ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৪৭৭৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বয়স ১৮,, আমি একটা চাকরি করি,,তবে মানসিক শান্তি নাই আমার ভিতর,চাকরিতে শুধু জরিমানা করতেই চলেছি,,বেতন এর থেকে জরিমানা বেশি,কাজে কোনো মনো যোগী হতে পারছিনা,, তাছাড়া একটা হারাম রিলেশনে ছিলাম,,সেখানে ব্যার্থ হয়ে জীবনে মনে হচ্ছে অবেক কষ্ট পাইছি,,তাকে ভুলতেও পারছিনা,,সব কিছু বাদ দিয়ে হারাম থেকে হালাল পথে আসতে চাই,,।আমি কিভাবে এখন মানসিক শান্তি পাবো,,এই মুহুর্তে আমার মানসিক শান্তির খুব দরকার।নামাজের সময় আজান দিলেও আমার মন অনেক নষ্ট হয়ে গেছে,,মসজিদে যেতে মন চাই না,,একসময় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম,,কিভাবে না জানি খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে গেছি,,,আমি কুরআন পড়াও ভুলে গেছে,,সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাই,,আমার জীবনের সমস্ত গুনাহ কে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে চাই।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কবুল করুন। পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন এবং হেদায়াতের ওপর অটল-অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
হেদায়াত লাভের প্রথম উপায় হলো, আল্লাহ তায়ালার কাছে হেদায়াত চাইতে হবে। কুরআনুল কারিমের প্রথম সুরা (সুরাতুল ফাতিহায়) আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন,
اِہۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন। এছাড়াও কুতরআন
হজরত আবু যর আল গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর কাছে থেকে বর্ণনা করেন-
يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إلَّا مَنْ هَدَيْته، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ
‘হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। (মুসলিম-৬৩৩৮)
দ্বিতীয়ত সমস্ত গুনাহ বর্জন করে আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান অনুসারে চলতে হবে। আর তার সঠিক রাস্তা হলো, কোনো আল্লাহ ওয়ালাকে নিজের জীবনের রাহবার বানিয়ে নেওয়া। এবং তার দেখানো পথে কুরআন সুন্নাহ আনুযায়ী আমল করা।
কেননা আত্মশুদ্ধি (রুহের চিকিৎসা) ছাড়া মানুষের জীবনে সফলতা এবং প্রকৃত হেদায়াত আসতে পারে না। এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ ( التوبة: ١١٩ )
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।
আলহামদুলিল্লাহ ঢাকায় অনেক আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ আলেম (রূহানি চিকিৎসক) আছেন। আপনি অবশ্যই তাঁদের কারো সাথে সম্পর্ক করুন। তাদের মজলিসে যাতায়াত করুন। ইনশাআল্লাহ এই রোগ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
এর জন্য আপনি শায়েখ মাহমুদুল হাসান হাফি. (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা), ঢালকা নগরের শায়খ আব্দুল মতিন বিন হুসাইন সাহেব, মুফতি জাফর আহমাদ সাহেব (গেন্ডারিয়া) মাওলানা তৈয়ব আশরাফ হাফি. (যাত্রাবাড়ী) মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন হাফি. (আকবর কমপ্লেক্স মিরপুর-১) মুফতি মুশতাকুন্নবী. (কুমিল্লা) মুফতি আবু সাঈদ (ফরিদাবাদ) মুফতি মানসুরুল হক সাহেব (মোহাম্মাদপুর) এবং উত্তরায় আছেন প্রফেসর হামিদুর রহমান সাহেবসহ যে কোনো একজনকে বেছে নিতে পারেন
মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী হাফিজাহুল্লাহ-এর বয়ানগুলো শোনুন। নিরবে নিবৃতে হযরতের বয়ানগুলো শোনুন। দিল দিয়ে শোনুন। ইনশাআল্লাহ আপনার জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এজাতীয় ওয়াসওয়াসা দূর হবে। সম্ভব হলে একদিন হুজুরের সাথে সাক্ষাত করুন। প্রতি ইংরেজি মাসের শেষ শনিবার তার মাদরাসায় ইসলাহী মাহফিল হয়। সারা দেশ থেকে আল্লাহ প্রেমিকগণ হাজির হন। আপনিও শরীক হতে চেষ্টা করুন। তার লিখিত ইসলাহী বইগুলো পড়ুন। রকমারীতে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী সাহেবের মাদরাসা ঠিকানা: দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড নেমে অটো রিক্সায় বা লোকাল মাইক্রোতে করে সুধন্যপুর মাদরাসা। ঢাকা হয়ে যেতে চাইলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আগে বেলতলী নেমে রাস্তা পার হয়ে রিক্সা/সি এন জিতে সুধন্যপুর মাদরাসা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
