ভালো মার্কেটিংয়ের করে কোনো পণ্য সাধারন বাজার মূল্যের চেয়ে ৩/৪ গুন বেশি দামে বিক্রি করা
প্রশ্নঃ ৪৬১১০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোনো কিছু মজুদ না করে শুধুমাত্র ভালো মার্কেটিং করে যদি আমি কোনো পন্য সাধারন বাজার মূল্যের চেয়ে 3- 4 গুন বেশি দামে বিক্রয় করি তাইলে কি নাজায়েজ হবে?
১৮ নভেম্বর, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ফতোয়া:-১
ইসলামী শরীয়তে ক্রেতা বিক্রেতার পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের বৈধতা নিবদ্ধ করেছে এবং মুনাফার ক্ষেত্রে কোনো পরিমাণ বা সীমা নির্ধারণ করেনি। বরং বিষয়টি ক্রেতা বিক্রেতার সন্তুষ্টি এবং “উরফ” বা স্থানীয় প্রচলনের উপর ছেড়ে দিয়েছে।
পারস্পরিক সম্মতিতে উভয়ে মুনাফা অর্জনের যেকোন হার নির্ধারণ করতে পারে। তবে ইসলামের শিক্ষা হল মানুষের প্রতি সদয় হওয়া, কারও অপারগতার বা সংকটের সুযোগ না নেওয়া। তাই এতটুকু মুনাফা নেওয়া উচিত যাতে বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতার স্বার্থও অন্তর্ভুক্ত থাকে। পণ্য কিনে তিনিও যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হন।
মুসনাদে আহমাদে আছে,
"عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ اَنَّ رَجُلًا جَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اﷲِ سَعِّرْ! فَقَالَ: بَلْ أَدْعُو، ثُمَّ جَاءَ هُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اﷲِ سَعِّرْ! فَقَالَ: بَلْ اﷲُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ، وَإِنِّي لَاَرْجُو أَنْ أَلْقَی اﷲَ وَلَيْسَ لِأَحَدٍ عِنْدِي مَظْلَمَةٌ". ( ٢/ ٣٣٧، رقم الحديث: ٣٤٥٠، ط: موسسة قرطبة مصر)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! (জিনিসের) মূল্য নির্ধারণ করে দিন! তিনি বললেনঃ “না” আমি দোয়া করে দিব।, অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ! নামিয়ে দেয় এবং বাড়িয়ে দেন। এবং আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করতে চাই যে, আমি কারো ওপর জুলুম করিনি।" (2/337, হাদিস নম্বর: 3450, কুরতুবা ফাউন্ডেশন, মিসর)
দুরারুল হুক্কাম ফি শরহি মাজাল্লাতিল আহাকাম গ্রন্থে আছে,
الثمن المسمى هو الثمن الذي يسميه ويعينه العاقدان وقت البيع بالتراضي سواء كان مطابقاً للقيمة الحقيقية أو ناقصاً عنها أو زائداً عليها". فقط واللہ اعلم ( درر الحكام في شرح مجلة الأحكام ، المادة 153)
নির্ধারিত মূল্য হলো, ওই মূল্য যাতে ক্রয় বিক্রয়ের সময় ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে, সন্তুষ্টচিত্তে সম্মত হয়। চাই সেটা বস্তুর বাজারদরের সমান হোক বা বেশী হোক অথবা কম হোক।
https://muslimbangla.com/masail/38079
https://www.banuri.edu.pk ফতোয়া নং 144106200390
ফতোয়া:-২
অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্য-শস্য বা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য অধিক পরিমাণে আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ.
যে ব্যক্তি (প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী) আটকে রাখে সে গুনাহগার। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬০৫
ফকীহগণ বলেন, উপরোক্ত হাদীস এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাতে মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য গুদামজাত করে আটকে রাখার দরুন বাজারে সংকট সৃষ্টি হয় এবং মানুষ অভাব অনটনের শিকার হয় এবং দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের গুদামজাত করা নাজায়েয। সরকারের কর্তব্য এ ধরনের গুদামজাতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে তাদের পণ্য বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করা।
আর যদি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী জমা করে রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ের হয়, মানুষের ক্ষতি ও অনটনের আশঙ্কা না থাকে এবং বাজারে ঐ পণ্যের সঙ্কট দেখা না দেয় তাহলে এ জাতীয় সাধারণ গুদামজাত করা নাজায়েয নয়।
আলজামেউস সাগীর পৃ.৪৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২
উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আশা করছি উপরিউক্ত ফতোয়া দুটির মাধ্যমে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন যে, যদি সেই পণ্যগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু না হয় এবং সেগুলো গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্য না হয় এবং এর কারণে মানুষের নিত্যদিনে সঙ্কটের মুখোমুখী হতে না হয় তাহলে এজাতীয় পণ্য গুদামজাত করা এবং অধিক মূল্যে বিক্রি করাও জায়েজ আছে। যেহেতু আপনার উদ্দেশ্য মার্কেটিং করে বেশী দামে বিক্রি করা। তো এতেও না জায়েজের কিছু নেই।
والله اعلم بالصواب
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১