প্রশ্নঃ ৩৮৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। নামাযের বিধানে তো রয়েছে কাঁধের সাথে কাঁধ, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কাতারে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু বর্তমানের করোনা মহামারীতে ডো দূরে দূরে দাঁড়ায় সামাজিক দূরত্ব মেনে। সেক্ষেত্রে কি নামাজ হবে?
বিতর সালাতের সহীহ নিয়ম কোনটি? আমাদের দেশে যে ৩য় রাকাআতে আল্লাহু আকবর বলে হাত তুলে দোয়া কুনুত পড়ার প্রচলন আছে অনেকে তো সেটাকে ভুল নিয়ম বলে দাবি করে.
তাশাহুদে শাহাদাত আঙ্গুল উঠানোর নিয়ম কি? অনেক জায়গায় দেখি "লা ইলাহা" বলার সময় আঙ্গুল উঠাতে বলে আবার অনেক জায়গায় বলে সালামের আগ পর্যন্ত আগুল উঠিয়ে অনবরত নাড়াতে বলে। সঠিক নিয়ম কোনটি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. নামাজের কাতারে মিলে মিলে দাঁড়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। বিপরীতে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ। আপনি বিবেচনা করুন, কাকে মানবেন?
বাস্তবতা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। যারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছে, তারা সবাই নিরাপদ থেকেছে? আর যারা নামাযের কাতারে এসে মিশে মিশে দাঁড়িয়েছে তারা সবাই আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে? (আল্লাহ হিফাযত করুক)
তাহলে কেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের সাথে উপহাস করা?
أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرِ بْنِ نَافِعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا بَهْزُ بْنُ أَسَدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «اسْتَوُوا. اسْتَوُوا. اسْتَوُوا، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ خَلْفِي كَمَا أَرَاكُمْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ»
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ তোমরা বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও, বরাবর হয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ। আমি তোমাদের দেখছি আমার পেছন থেকে যেভাবে আমি তোমাদের দেখছি আমার সম্মুখ থেকে।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৮১৩
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبَانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ " .
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমরা (সালাতের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে। পরস্পর কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি (ফাঁকা) জায়গাতে শাইত্বান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৬৭
২. বিতিরের সালাত এক সঙ্গে তিন রাকাত সহীহ হাদীসের আলোকে সাব্যস্ত। শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ক্বুনুত পড়াও সহীহ হাদীসে প্রমাণিত।
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ، كَانَ يَقْرَأُ فِي الْأُولَى بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَفِي الثَّانِيَةِ بِقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَفِي الثَّالِثَةِ بِقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ، فَإِذَا فَرَغَ، قَالَ عِنْدَ فَرَاغِهِ: «سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ»، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يُطِيلُ فِي آخِرِهِنَّ
উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত তিন রাকআত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” দ্বিতীয় রাকআতে “কূল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” , তৃতীয় রাকাতে “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন এবং রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন। যখন সালাত শেষ করতে যেতেন তখন তিনি শেষ পর্যন্ত তিনবার (.......আরবী.......) পড়তেন।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৬৯৯
৩. সালাতের মধ্যে যথাসম্ভব স্থির থাকার জন্য নির্দেশ এসেছে। অযথা নাড়াচাড়া নামাজের মূল অবস্থার সঙ্গে খাপ খায় না।
আত্তাহিয়াতুর সময় শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। এরপর নাড়াচাড়া করা অযথা নড়াচড়া মধ্যেই পড়ে।
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَعِيلُ وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُعَاوِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ رَأَى رَجُلًا يُحَرِّكُ الْحَصَى بِيَدِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: لَا تُحَرِّكِ الْحَصَى وَأَنْتَ فِي الصَّلَاةِ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ، وَلَكِنِ اصْنَعْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ، قَالَ: وَكَيْفَ كَانَ يَصْنَعُ؟ قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى، وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ الَّتِي تَلِي الْإِبْهَامَ فِي الْقِبْلَةِ، وَرَمَى بِبَصَرِهِ إِلَيْهَا أَوْ نَحْوِهَا، ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ»
---
[حكم الألباني] حسن صحيح
আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাতে থাকা অবস্থায় তার হাত দ্বারা পাথরের টুকরা নাড়ছে। তার সালাত শেষ হলে তাকে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তুমি সালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কেননা, তা শয়তানের কাজ, বরং তুমি ঐরুপ কর যেরুপ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করতেন। সে ব্যক্তি বলল, তিনি কি করতেন? আবদুল্লাহ (রাঃ)তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রাখলেন। আর তা ঐ আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করলেন যা বৃদ্ধা আঙ্গুলির নিকটবর্তী (অর্থাৎ তর্জনি আঙ্গুল দ্বারা) আর তার দৃষ্টি তার প্রতি রাখলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরুপই করতে দেখেছি।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১১৬০
হাদিসের মান: হাসান সহিহ
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন