সহীহ হাদীস পেলেই মাযহাব বর্জনের কথিত দাবীর সত্যতা ইমাম আবু হানিফা থেকে প্রমাণিত আছে কি ?
প্রশ্নঃ ২৫৪২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,
এক বোন তিনি বলছিলেন যে,ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহু তা'আলা নাকি স্বয়ং নিজেই বলেছেন যে মাসআলার ক্ষেত্রে যদি আমার থেকে সঠিক ভালো ব্যাক্ষা পেয়ে থাকো তাহলে আমারটা ছুড়ে মারো। এখন কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত?আমি নিজে কখনও এমন বক্তব্য শুনিনি।আর সেই বোন বলছে যে আমার তো মাহরাম নেই সেই ক্ষেত্রে আমি কিভাবে হাক্কানী আলেমের শরণাপন্ন হবো?আশা করি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে উত্তর টা পাবো কোনো হাক্কানী আলেম থেকে।পেলে আমি সেই বোনের সাথে শেয়ার করবো ইং শা আল্লহু আযীয তারাতাড়ি উত্তর পেলে উপকৃত হবো মুহতারাম।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারামা,
প্রথমতঃ এটি ইমাম আবু হানীফার বক্তব্য হিসেবে প্রমাণিত নয়। বরং ইমাম শাফিঈ র বক্তব্য হিসেবে হাফেয যাহাবী সহ অন্যরা এনেছেন।
ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন, “যদি তোমরা আমার কোন কথা হাদীসের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদিস অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল।” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ- ১/৩৫৭)।
দ্বিতীয়তঃ 'কথা সত্য মতলব খারাপ' এর একটি সুস্পস্ট উদাহরণ এজাতীয় কথাবার্তা।
“যদি তোমরা আমার কোন কথা হাদীসের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদিস অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল।” এবং " হাদিস যখন সহীহ হবে ; সেটাই আমার মাজহাব হবে" এজাতীয় কথা কিছু ইমাম থেকে বিবৃত হয়েছে বটে, কিন্ত কী প্রসঙ্গে এসেছে তা না জেনেই মাযহাব বর্জনের অসাড় দাবী তুলে বসেন সমাজের এক শ্রেণীর ভাইবোন। তাদের আওড়ানো বুলি যদিও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ কিন্ত তাদের মতলব বড়ই খারাপ।
এজাতীয় কথাবার্তার মূল উদ্দেশ্য কী ? আর আদৌ ইমাম আবু হানীফা থেকে " হাদিস যখন সহীহ হবে ; সেটাই আমার মাজহাব হবে" এরকম কিছু প্রমাণিত আছে কিনা তা নীচের রেফারেন্স উত্তর থেকে দেখে নিন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ২৩৩১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নিচের এ কথাটা কী ঠিক,আর নিচের বইয়ের রেফারেন্স সাথে ঠিক আছে?ঈমাম আবু হানিফা রহঃ বলেন, হাদিস যেটি সহীহ : সেটাই আমার মাযহাব। দলিল: ▪ রদ্দুল মুহতার: ১/ ১৫৪ ▪মুকাদ্দিমাতু- উমাদাতুর রিয়ায়াহ: ১/১৪▪ হাশিয়াতু ইবনে আবেদীন শামী ১/ ৬৩
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারাম, إذا صح الحديث فهو مذهبي কথাটি ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা থেকে অবিচ্ছিন্ন সনদ বা সূত্রে কথাটি পাওয়া যায় নি। যদিও কোন কোন হানাফী আলেম এটি আবু হানীফার বক্তব্য বলে দাবী করেছেন।
যেরকম আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন।
এক্ষেত্রে তিনটি হাওয়ালা দেয়া হয়েছেঃ
১- রদ্দুল মুখতার: ১/ ১৫৪ (রদ্দুল মুহতার হবে) ও ৩- হাসিয়া- তু- ইবনে আবেদীখ: ১/ ৬৩ (আবিদীন হবে) একই কিতাব, যা ফাতাওয়া শামী নামে বেশী প্রসিদ্ধ।
আর ২- মুকাদ্দিমাতু- উমাদাতুর রিয়ায়াহ: ১/ ১৪ - এটা আব্দুল হাই লখনবী র, উনি রদ্দুল মুহতার থেকেই এনেছেন।
তাহলে তিনটি রেফারেন্সের সুত্র একটিই আর তা হলো রদ্দুল মুহতার।
রদ্দুল মুহতারে ইবনে আবিদীন রহঃ কথাটি সনদ ছাড়া উল্লেখ করেছেন।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1/ 67)
مطلب صح عن الإمام أنه قال: إذا صح الحديث فهو مذهبي
قلت: قد يجاب بأن الإمام لما أمر أصحابه بأن يأخذوا من أقواله بما يتجه لهم منها عليه الدليل صار ما قالوه قولا له لابتنائه على قواعده التي أسسها لهم، فلم يكن مرجوعا عنه من كل وجه، فيكون من مذهبه أيضا، ونظير هذا ما نقله العلامة بيري في أول شرحه على الأشباه عن شرح الهداية لابن الشحنة، ونصه: إذا صح
الحديث وكان على خلاف المذهب عمل بالحديث، ويكون ذلك مذهبه ولا يخرج مقلده عن كونه حنفيا بالعمل به، فقد صح عنه أنه قال: إذا صح الحديث فهو مذهبي. وقد حكى ذلك ابن عبد البر عن أبي حنيفة وغيره من الأئمة. اهـ. ونقله أيضا الإمام الشعراني عن الأئمة الأربعة.
সুতরাং, ইমাম আবু হানীফা থেকে অবিচ্ছিন্ন সনদ বা সূত্রে কথাটি পাওয়া যায়না।
আজকাল কিছু ভাইয়েরা খুব জোরেশোরে প্রচার করে থাকেন যে, হাদীস সহীহ হলেই সেটির উপর আমল করতে হবে। এ ব্যাপারে নাকি মাযহাবের ইমামগণও নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, (ইযা ছাহহাল হাদীস ফাহুয়া মাযহাবী) হাদীস যখন সহীহ হবে তা আমার মাযহাব।
উত্তর হলো,
‘সহীহ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। মুহাদ্দিসগণ এ শব্দটি বহু অর্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো, যখন এটি যঈফের বিপরীত শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়। এরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও অনেক শর্ত। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক আলেমও এর সংজ্ঞা ও শর্তের খবর রাখেন না। অথচ সাধারণ মানুষের মুখে একথা তুলে দেওয়া হয়েছে, সহীহ হাদীস অনুসারে আমল করতে হবে।
কিন্তু এই শেষোক্ত সহীহ’র কথাই যদি ধরি, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সব সহীহ হাদীসই কি আমলযোগ্য? নাকি এর জন্য আরো কোন শর্ত রয়েছে? হ্যাঁ, শর্ত অবশ্যই রয়েছে। যেমন :
১. হাদীসের বিধানটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস না হতে হবে।
২. হাদীসটি মানসুখ বা রহিত না হতে হবে। এ দুটি শর্ত সর্বজনস্বীকৃত।
৩. হাদীসটি অনুসারে সাহাবা, তাবিঈন ও মুজতাহিদ ইমামগণের আমল থাকতে হবে। আমল না থাকা রহিত হওয়ার আলামত।
ইমাম মালেক রহ. বলেছেন,
كان محمد بن أبي بكر بن عمرو بن حزم على القضاء بالمدينة فكان إذا قضى القضاء مخالفا للحديث ورجع إلى منزله قال له أخوه عبد الله بن أبي بكر وكان رجلا صالحا أي أخي قضيت اليوم في كذا كذا بكذا وكذا؟ فيقول له محمد : نعم أي أخي، فيقول له عبد الله : فأين أنت أي أخي عن الحديث أن تقضي به؟ فيقول محمد : أيهات فأين العمل يعني ما اجتمع عليه من العمل بالمدينة والعمل المجتمع عليه عندهم أقوى من الحديث
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর ইবনে আমর ইবনে হাযম (তাবিঈ) মদীনার কাযী বা বিচারক ছিলেন। তিনি যখন হাদীসের বিপরীত রায় দিতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন, তার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর: তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন: তাঁকে বলতেন, ভাইয়া! আজকে আপনি এই এই বিষয়ে এই এই রায় দিয়েছেন, তাই না? তিনি বলতেন, হ্যাঁ, ভাইয়া। আব্দুল্লাহ বলতেন, হাদীস অনুসারে রায় দিলেন না কেন ভাইয়া? মুহাম্মদ তখন বলতেন, তাহলে আমল অর্থাৎ মদীনার সর্বসম্মত আমল কোথায় যাবে? সর্বসম্মত আমল ছিল তাদের নিকট হাদীসের চেয়ে শক্তিশালী। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ১/২৮২)
ইমাম মালেক বলেছেন, والعمل أثبت من الأحاديث হাদীসের চেয়েও (মদীনায় চালু) আমল অধিক শক্তিশালী। (ইবনে আবু যায়দ আল কায়রাওয়ানী, আল জামে, পৃ. ১১৭)
প্রসিদ্ধ হাফেজে হাদীস আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী বলেছেন, السنة المتقدمة من سنة أهل المدينة خير من الحديث পূর্ব থেকে চলে আসা মদীনাবাসীদের আমল হাদীসের চেয়েও উত্তম। (প্রাগুক্ত)
মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তাব্বা ছিলেন ইমাম মালেকের শিষ্য এবং শীর্ষ হাফেজে হাদীস ও ফকীহ। ২২৪ হি. সনে তার ওফাত হয়। তিনি বলেছেন, كل حديث جاءك عن النبي صلى الله عليه وسلم لم يبلغك أن أحدا من أصحابه فعله فدعه নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যত হাদীস তোমার নিকট পৌঁছবে এবং তাঁর সাহাবীগণের কেউ তদনুযায়ী আমল করেছেন মর্মে কোন কথা তোমার নিকট পৌঁছবে না সে হাদীসগুলো ছেড়ে দাও। (আল ফাকীহ ওয়াল মুতাফাককিহ, ১/১৩২)
হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী বলেছেন,
أما الأئمة وفقهاء أهل الحديث فإنهم يتبعون الحديث الصحيح حيث كان إذا كان معمولا به عند الصحابة ومن بعدهم أو عند طائفة منهم فأما ما اتفق على تركه فلا يجوز العمل به ، لأنهم ما تركوه إلا على علم أنه لا يعمل به
ইমামগণ ও ফকীহ মুহাদ্দিসগণ সহীহ হাদীস অনুসরণ করতেন, তা যেখানে পেতেন। তবে শর্ত ছিল হাদীসটি অনুসারে সাহাবীগণের ও পরবর্তী আলেমগণের বা তাদের কোন এক জামাতের আমল থাকবে। পক্ষান্তরে যে হাদীস অনুসারে তাদের কেউ আমল করেন নি, সে হাদীস অনুসারে আমল করা ঠিক হবে না। কেননা এ অনুযায়ী আমল করা যাবে না: একথা জানেন বলেই তারা এটি ছেড়ে দিয়েছেন। (ফাযলু ইলমিস সালাম আলাল খালাফ, পৃ. ৯)
হাফেজ আবুল কাসেম আদ দারাকী ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। ৩৭৫ হি. সনে তাঁর ওফাত হয়। তাঁর নিকট কোন মাসআলা আসলে দীর্ঘ চিন্তাভাবনার পর ফতোয়া দিতেন। অনেক সময় তার প্রদত্ত ফতোয়া ইমাম শাফেয়ী ও আবু হানীফার মাযহাবের বিপক্ষে যেত। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেন, এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অমুকের সূত্রে অমুক বর্ণনা করেছেন। আর ঐ দুই ইমামের মত গ্রহণ করার চেয়ে হাদীসটি গ্রহণ করাই তো শ্রেয়। হাফেজ যাহাবী তার একথার উপর মন্তব্য করে লিখেছেন,
قلت هذا جيد لكن بشرط أن يكون قد قال بذلك الحديث إمام من نظراء هذين الإمامين مثل مالك أو سفيان أو الأوزاعي وبأن يكون الحديث ثابتا سالما من علة وبأن لا يكون حجة أبي حنيفة والشافعي حديثا صحيحا معارضا للآخر أما من أخذ بحديث صحيح وقد تنكبه سائر أئمة الاجتهاد فلا
অর্থাৎ আমি বলব, এটা ভাল। তবে শর্ত হলো এই দুই ইমামের মতো আরো যেসব ইমাম রয়েছেন, তাদের কেউ না কেউ অনুরূপ বলবেন। যেমন, মালেক, সুফিয়ান ও আওযায়ী। আরেকটি শর্ত হলো, হাদীসটি প্রমাণিত হতে হবে,সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আরেকটি শর্ত হলো, আবু হানীফা ও শাফেয়ীর দলিলটি, যা উক্ত হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে, সহীহ হাদীস হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি এমন কোন সহীহ হাদীস গ্রহণ করল, যেটি মুজতাহিদ ইমামগণের কেউ গ্রহণ করেন নি তাহলে সেটা ঠিক হবে না। (যাহাবী, সিয়ার, ১৬/৪০৪)
হাফেজ ইবনুস সালাহও সহীহ হাদীস অনুসারে আমল করার জন্য তদনুযায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণ ইমামের আমল থাকার শর্ত আরোপ করেছেন। (দ্র. আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী, ১/১১৮)
ইবনুস সালাহ’র এই বক্তব্য আলবানী সাহেবও তার সিফাতুস সালাহ গ্রন্থের টীকায় উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি, পৃ. ৩১।
উক্ত টীকায় ইমাম সুবকির যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমার নিকট হাদীস অনুসরণ করাই উত্তম, সেটি তার ব্যক্তিগত মত। আমার নিকট: কথাটি তাই নির্দেশ করে। উল্লেখ্য, মুজতাহিদ ইমামের আমল থাকার শর্ত এজন্যই আরেপ করা হয়েছে যে, উক্ত আমল নির্দেশ করে যে, হাদীসটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি। কারণ কোন হাদীস ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে যদি ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে ধরে নিতে হবে সেখানে ভিন্ন কোন হাদীস ছিল, যা এটির তুলনায় অগ্রগণ্য।
কেউ কেউ আবার কোন কোন ইমাম থেকে বর্ণিত, إذا صح الحديث فهو مذهبي কথাটি দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে খুবই ব্যস্ত। একথাটি ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা থেকে অবিচ্ছিন্ন সনদ বা সূত্রে কথাটি পাওয়া যায় নি। যদিও কোন কোন হানাফী আলেম এটি আবু হানীফার বক্তব্য বলে দাবী করেছেন। কথা যার থেকেই প্রমাণিত থাকুক, কথাটি সত্য, এটাই ইমামগণের মনের কথা ও প্রতিষ্ঠিত নীতি। কিন্তু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারকারীদের মতলব খারাপ। তার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন,
ক.
ঐ কথাটির এমন মর্মও হতে পারে, হাদীস সহীহ হলেই তার ওপর আমি আমার মত ও মাযহাবের ভিত্তি রাখি। এ হিসাবে যত মাসআলার তিনি বা তারা সমাধান দিয়েছেন, সহীহ হাদীস অনুসারেই দিয়েছেন। এ মর্ম গ্রহণ করলে মতলববাজদের মতলব পূরণ হয় না।
খ.
যারা ঐ কথাটির এই মর্ম গ্রহণ করেছেন যে, কোন সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব বলে গণ্য হবে, তারাও এর সঙ্গে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, যার কারণে মতলবওয়ালাদের মতলব সিদ্ধি হয় না। যেমন, ইমাম নববী (মৃত্যু ৬৭৬ হি.) বলেছেন,
وإنما هذا فيمن له رتبة الاجتهاد في المذهب وشرطه أن يغلب على ظنه أن الشافعي رحمه الله لم يقف على هذا الحديث أو لم يعلم صحته وهذا إنما يكون بعد مطالعة كتب الشافعي كلها ونحوه من كتب أصحابه الآخذين عنه وما أشبهها ، وهذا شرط صعب قلّ من يتصف به
অর্থাৎ এ কথাটি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যিনি তার মাযহাবে ইজতেহাদের স্তরে পৌঁছে গেছেন। তবে শর্ত হলো, শাফেয়ী রহ. হাদীসটি সম্পর্কে অবগতি লাভ করতে পারেন নি, বা তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তিনি জ্ঞান লাভ করতে পারেন নি, এ ব্যাপারে তার প্রায় নিশ্চিত জ্ঞান থাকতে হবে। আর এটা কেবল তখনই সম্ভব, যখন তিনি শাফেয়ীর সকল কিতাব, তার শিষ্যগণের কিতাব ও অনুরূপ আরো কিছু অধ্যয়ন করবেন। এটি একটি কঠিন শর্ত যা খুব কম ব্যক্তির মধ্যেই পাওয়া যায়। (আল মাজমু, ১/১০৪)
হাফেজ আবু আমর ইবনুস সালাহ (মৃত্যু ৬৪৩ হি.) বলেছেন,
وليس هذا بالهين ، فليس كل فقيه يسوغ له أن يستقل بالعمل بما يراه حجة من الحديث
অর্থাৎ এ কাজ অত সহজ নয়। যে কোন ফকীহ এমনটি করতে পারেন না যে, তিনি নিজে যে হাদীসকে প্রামাণ্য জ্ঞান করবেন সে অনুযায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে আমল করবেন। (আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী, ১/১১৮)
হাফেজ আবু শামা রহ. বলেছেন,
ولا يتأتى النهوض بهذا إلا من عالم معلوم الاجتهاد وهو الذي خاطبه الشافعي بقوله : إذا وجدتم حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم على خلاف قولي فخذوا به ودعوا ما قلت ، وليس هذا لكل أحد الخ
এটা এমন আলেমের কাজ, যার ইজতিহাদ করার যোগ্যতা সর্বজনবিদিত। এ ধরনের আলেমকেই শাফেয়ী বলেছিলেন, ‘তোমরা যখন আমার মতের বিপরীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস পাবে, তখন সেটি গ্রহণ করবে আর আমার মতটি ছেড়ে দেবে।’ এটা সকলের জন্য নয়। (আছারুল হাদীস আশ শরীফ, পৃ. ৭০)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃত্যু ৮৫২ হি.) বলেছেন,
إن محل العمل بهذه الوصية ما إذا عرف أن الحديث لم يطلع عليه الشافعي ، أما إذا عرف أنه اطلع عليه وردّه أو تأوله بوجه من الوجوه فلا.
এই ওসিয়তটি মেনে চলার ক্ষেত্র হলো, যখন জানা যাবে শাফেয়ী উক্ত হাদীস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। পক্ষান্তরে যদি জানা যায়, তিনি তা জানতেন, কিন্তু গ্রহণ করেন নি কিংবা এর কোন ব্যাখ্যা পেশ করেছেন, তখন ওসিয়তটি অনুসারে চলা যাবে না। (ফাতহুল বারী, হা. ৭৩৯)
ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী রহ. ইমাম শাফেয়ীর উক্ত কথাটির ব্যাখ্যায় একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকাই রচনা করে ফেলেছেন। সেখানে তিনি হাফেজ ইবনুস সালাহ ও ইমাম নববীর উল্লিখিত বক্তব্য উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, هذا تبيين لصعوبة هذا المقام حتى لا يغترّ به كل أحد এই জটিল ক্ষেত্রের এটই বিশ্লেষণ, যাতে কেউ উক্ত কথার দ্বারা ধোঁকায় না পড়ে। (আছারুল হাদীস আশ শরীফ, পৃ. ৬৮)
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে বলেছেন,
ولا يخفى أن ذلك لمن كان أهلا للنظر في النصوص ومعرفة محكمها من منسوخها
একথা কারো অজানা নয় যে, এটা একমাত্র সেই ব্যক্তির জন্য, যিনি কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে ও তার মধ্যে কোনটি মানসুখ (রহিত) আর কোনটি মুহকাম (রহিত নয়) সে সম্পর্কে গভীর দৃষ্টির অধিকারী। (১/৬৮)
আল্লামা ইবনে আবেদীন তার ফতোয়া দানের মূলনীতি বিষয়ক ‘শারহু উকুদি রাসমিল মুফতী’ গ্রন্থেও উপরোক্ত কথা উল্লেখ করেছেন। তবে সেখানে তিনি আরো একটি শর্ত যোগ করেছেন। তিনি বলেছেন,
وأقول أيضا : ينبغي تقييد ذلك بما إذا وافق قولا في المذهب ، إذ لم يأذنوا في الاجتهاد فيما خرج عن المذهب مما اتفق عليه أئمتنا ، لأن اجتهادهم أقوى من اجتهاده ، فالظاهر أنهم رأوا دليلا أرجح مما رآه حتى لم يعملوا به.
অর্থাৎ আমি আরো বলছি, ঐ কথাটি এই শর্তে গ্রহণ করতে হবে যে, হাদীসটি যেন হানাফী মাযহাবের কোন একটি কওল বা মতের মোয়াফেক হয়। কেননা আমাদের ইমামগণ যে বিষয়ে একমত হয়েছেন, সে বিষয়ে মাযহাবের বাইরে ইজতিহাদ করার কোন অনুমতি আলেমগণ দেন নি। কারণ তাদের ইজতিহাদ অবশ্যই ঐ ব্যক্তির ইজতিহাদের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। সুতরাং এটাই স্পষ্ট যে, তাঁরা নিশ্চয়ই এমন কোন দলিলপ্রমাণ পেয়েছেন, যা ঐ ব্যক্তির প্রাপ্ত দলিলের চেয়ে মজবুত। ফলে তারা তদনুযায়ী আমল করেছেন। (দ্র. পৃ. ১১৮)
উল্লিখিত শর্তাবলির সারসংক্ষেপ হলো :
১.
হাদীসটি ইমামগণের নিকট পৌঁছে নি: এ মর্মে নিশ্চিত জ্ঞান থাকতে হবে। এর জন্য ইমামগণের ও তাদের শিষ্যগণের রচিত গ্রন্থাবলি পরিপূর্ণ অধ্যয়ন ও অনুসন্ধান করতে হবে।
২.
যে ব্যক্তি ইমামগণের মত ছেড়ে ঐ সহীহ হাদীস অনুসারে আমল করবেন তাকে মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেম হতে হবে।
৩.
হানাফী মাযহাবের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা ও তার বড় বড় শিষ্যগণের কারো মতের সঙ্গে হাদীসটি মিলতে হবে।
এসব শর্ত উপেক্ষা করে যে কেউ যদি তার নিজের বিচার-বিবেচনায় কোন সহীহ হাদীসকে কোন ইমামের মাযহাব আখ্যা দিতে যান, তাহলে ইমামগণের প্রতিষ্ঠিত ও পরীক্ষিত মাযহাব মানুষের হাতের খেলনায় পরিণত হবে। একজন একটি সহীহ হাদীস পেয়ে বলবেন, এটাই ইমামগণের মাযহাব।
আরেকজন এর বিপরীত আরেকটি সহীহ হাদীস পেয়ে বলবেন, এটাই ইমামগণের মাযহাব। একজন একটি হাদীসকে সহীহ মনে করে ইমামগণের মাযহাব আখ্যা দেবেন।
অন্যজনের দৃষ্টিতে হাদীসটি সহীহ না হওয়ায় তিনি বলবেন, না, এটা ইমামগণের মাযহাব নয়। কারণ, অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই জানেন, অনেক হাদীসের সহীহ হওয়া না হওয়া নিয়ে হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। এমনিভাবে একজন বললেন, এ সহীহ হাদীসই ইমামগণের মাযহাব।
আরেকজন বলবেন, আরে এ হাদীসের বিশুদ্ধতা তো ইমামগণের জানা ছিল। তারা তো এটাকে মানসুখ বা রহিত বলে বিশ্বাস করতেন। তাই এটা তাদের মাযহাব নয়।
এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের অবস্থা হবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
একথাগুলো যে শুধু কল্পনাপ্রসূত ও যুক্তিনির্ভর তা নয়, অতীতে বাস্তবেই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার এমন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা, যারা নিজ নিজ যুগের শীর্ষ মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন। কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো :
১.
ইবনে আবুল জারুদ: যিনি ইমাম শাফেয়ীর শিষ্য ছিলেন: ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফকীহ আবুল ওয়ালীদ নিশাপুরী দুজনই একটি সহীহ হাদীস পেয়ে দাবী করলেন, এটাই ইমাম শাফেয়ীর মাযহাব। কিন্তু হাফেজ ইবনুস সালহ ও ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী এসে বললেন, এই হাদীস যে সহীহ, ইমাম শাফেয়ী তা জানতেন। কিন্তু তিনি এটাকে মানসুখ বা রহিত মনে করতেন বিধায় এর উপর আমল করেন নি। সুতরাং এটা তার মাযহাব হতে পারে না। (দ্র. আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী, ১/১১৮; আছারুল হাদীস আশ শরীফ, পৃ. ৬৮)
২.
ইমাম আবু মুহাম্মদ আল জুআয়নী ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। ইমাম বায়হাকীর সমসাময়িক ও মুজতাহিদ পর্যায়ের ফকীহ আলেম। তিনি একটি কিতাব প্রকাশ করতে চাইলেন, যেখানে ইমাম শাফেয়ীর ঐ কথার সূত্র ধরে তাঁর জানামতে অনেক সহীহ হাদীস একত্রিত করলেন এবং দাবী করলেন, এগুলোই ইমাম শাফেয়ীর মাযহাব। কিন্তু ইমাম বায়হাকীসহ অনেকে তার দাবী খ-ন করে প্রমাণ করেছেন, তিনি যেসব হাদীসকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন, তার মধ্যে অনেকগুলোই এমন রয়েছে যা সহীহ নয়। (দ্র. যাহাবী কৃত, মানাকিবু আবী হানীফা ওয়া সাহিবাইহি’র টীকা, পৃ. ৬৩-৬৪)
৩.
আবুল হাসান কারাজী ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী বড় ফকীহ ও মুহাদ্দিস। তিনি একটি হাদীসকে সহীহ ভেবে দাবী করলেন, এটাই ইমাম শাফেয়ীর মাযহাব। ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকীও বেশ কিছুদিন তার কথামত আমল করেছেন। পরে ইমাম সুবকীর ভুল ভাঙল। তিনি আবার পূর্বের আমলের দিকে ফিরে গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত পূর্বের আমলের উপরই বহাল ছিলেন। (দ্র. আছারুল হাদীস, পৃ. ৬৮)
৪.
আবু শামা আল মাকদিসী ছিলেন ইমাম নববীর উস্তাদ ও শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী একজন মুজতাহিদ আলেম। তিনি বুখারী শরীফের একটি হাদীস পেয়ে দাবী করলেন, এটাই ইমাম শাফেয়ীর মাযহাব। কিন্তু ইমাম নববী ও তাকিউদ্দীন সুবকী তার দাবী নাকচ করে দিলেন। শুধু তাই নয়, ইমাম নববী ইমাম শাফেয়ীর মতের পক্ষে বুখারী শরীফেরই অন্য একটি হাদীস ও মুসলিম শরীফের একটি হাদীস পেশ করলেন। (দ্র. আছারুল হাদীস, পৃ. ৭১, ৭২)
লক্ষ করুন, এত বড় বড় বিদ্যাসাগর ও শীর্ষ মুহাদ্দিসগণ যেখানে হোঁচট খেয়েছেন, সেখানে বর্তমানের লোকদের উপর কতটুকু ভরসা রাখা যায়! পূর্ববর্তীদের জ্ঞানভাণ্ডার তো বর্তমানকালের লোকদের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশি সমৃদ্ধ ছিল।
(দলীলসহ নামাযের মাসায়েল, মাওলানা আব্দুল মতীন দামাত বারাকাতুহুর লিখিত বই থেকে উত্তরটি গৃহিত হয়েছে)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
প্রশ্নঃ ৯৮৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম, লা মাজহাবীগণ(আহলে হাদীস) একটি অভিযোগ করে যে,ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান কম? তিনি নাকি কোনো সহিহ হাদীস জানতেন না,তিনি যা হাদীস জানে সেগুলো নাকি যঈফ?এটার বিষয়ে আমি জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
وعليكم السلام و رحمة الله
মুহতারাম,
মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ হাফি. লিখিত নিম্নের প্রশ্নোত্তর সম্বলিত প্রবন্ধ টি আপনার জন্য।
ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাফিযুল হাদীসও ছিলেন : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
প্রশ্ন : আমরা জানি যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ইসলামী শরীয়তের অনেক বড় ইমাম ছিলেন। এ কারণেই আমরা তাঁর নির্দেশনামত কুরআন-সুন্নাহর বিধি বিধানের উপর আমল করি। কিন্তু কদিন আগে আমার এক বন্ধু বললেন, জনৈক আহলে হাদীস তাকে বলেছেন, ‘আবু হানীফা হাদীস ও সুন্নাহর আলিম ছিলেন না। তিনি না হাফিযুল হাদীস ছিলেন, না হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ছিকা ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
একথা শুনে আমি খুব আশ্চর্য হলাম। কারণ তিনি যখন হাফিযুল হাদীসও ছিলেন না, হাদীসশাস্ত্রে পারদর্শীও ছিলেন না, এমনকি হাদীসের বিষয়ে ছিকাও ছিলেন না তখন তার তাকলীদ করা কীভাবে বৈধ হবে? আমরা তো তাকলীদ এজন্যই করি, যাতে কুরআন কারীম এবং হাদীস-সুন্নাহর উপর আমাদের আমল নির্ভুল হয়।
আমার ধারণা, ঐ আহলে হাদীস ভাইয়ের কথা ঠিক নয়। কারণ মুসলিম উম্মাহর ফিকহ-ফতোয়ার একজন ইমাম হাদীস-সুন্নাহর বিষয়ে অজ্ঞ হবেন তা কী করে হয়? ফিকহ ও ফতোয়ার মূল ভিত্তিই তো কুরআন-সুন্নাহ।
এখন আমার আবেদন, হাদীসের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর অবস্থান সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য সরবরাহ করবেন এবং এ বিষয়ে আরবী-উর্দূ কিছু কিতাবের নামও জানাবেন।
আরো আবেদন, ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর জীবনীর উপর বাংলা ভাষায় একটি সমৃদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ প্রস্ত্তত করে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন।
উত্তর : আপনার এ কথা ঠিক যে, ফিকহ ও ফতোয়ার একজন ইমাম হাদীস ও সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া অসম্ভব। এ তো সাধারণ বুদ্ধির কথা। আপনি যে ঐ আহলে হাদীস ব্যক্তির কথা শোনামাত্র সংশয়গ্রস্ত হননি; বরং সাধারণ বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছেন এজন্য আপনাকে মোবারকবাদ। ইমাম আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে ঐ ব্যক্তি যা বলেছে তা সম্পূর্ণ অবাস্তব। আল্লাহ তাআলা তাকে হেদায়াত দান করুন এবং ইমামগণের প্রতি কুধারণা পোষণের ব্যাধি থেকে মুক্তি দান করুন।
বাস্তবতা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাদীসের অনেক বড় আলিম ছিলেন। তিনি হাফিযুল হাদীসও ছিলেন এবং হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ছিকা ও নির্ভরযোগ্যও ছিলেন।
উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহের সর্বসম্মত মূলনীতি এই যে, উম্মাহর ইমামগণের বিষয়ে এই প্রশ্নই ভুল যে, ‘কে তাদেরকে ছিকা বলেছে’। কারণ, এ ধরনের প্রশ্ন তো হয় সাধারণ রাবীদের ক্ষেত্রে, ইমামগণের ক্ষেত্রে নয়। কারণ ইমামগণের বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা; বরং উম্মাহর ইমামের মর্যাদায় উপনীত হওয়া তো এক দুই ব্যক্তির স্বীকৃতির দ্বারা নয় ইজমা ও তাওয়াতুর (তথা ঐকমত্য ও ব্যাপক বর্ণনা) দ্বারা প্রমাণিত।
দুইটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি :
এক. ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাদীসেরও ‘হাফিয’ ছিলেন।
এটি একটি বাস্তবতা, যার অনেক দলীল আছে। এখানে শুধু একটি বিষয় নিবেদন করছি। তা এই যে, মুসলিম উম্মাহর হাফিযুল হাদীসগণের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার অধিকাংশই এখন মুদ্রিত ও প্রকাশিত। এগুলোর কোনো একটি গ্রন্থ আপনি হাতে নিন। তাতে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা পাবেন। যেমন :
১. তাযকিরাতুল হুফফায, শামসুদ্দীন আযযাহাবী (৭৪৮হি.)
যাহাবী রাহ. এই কিতাবের শুরুতে লিখেছেন-
هذه تذكرة بأسماء مُعَدلي حملة العلم النبوي، ومن يرجَع إلى اجتهادهم في التوثيق والتضعيف والتصحيح والتزييف.
অর্থাৎ এ গ্রন্থে ইলমে নবুওয়াতের ঐ বিশ্বস্ত ধারক-বাহকগণের আলোচনা রয়েছে, যাদের সিদ্ধান্ত ও গবেষণার শরণাপন্ন হতে হয় ছিকা ও যয়ীফ রাবী নির্ণয় এবং সহীহ ও যয়ীফ হাদীস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে।’
এরপর যাহাবী রাহ. এ গ্রন্থের খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১৬৮-এ ইমাম আবু হানীফা রাহ-এর আলোচনা লিখেছেন। আলোচনার শিরোনাম-‘আবু হানীফা আল-ইমামুল আযম’
(أبو حنيفة الإمام الأعظم)
২. আল মুখতাসার ফী তবাকাতি উলামাইল হাদীস, শামসুদ্দীন ইবনু আব্দিল হাদী (৭৪৪হি.)
এর কিছু অংশ মুদ্রিত। এর হস্তলিখিত পান্ডুলিপি জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় সংরক্ষিত আছে।
৩. আত তিবয়ান লিবাদীআতিল বায়ান আন মাওতিল আ’য়ান, শামসুদ্দীন ইবনু নাসিরুদ্দীন (৮৪২হি.)
এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি মদীনা মুনাওয়ারার ঐতিহাসিক কুতুবখানা মাকতাবা আরিফ হিকমত-এ সংরক্ষিত আছে।
৪. তবাকাতুল হুফফায, জামালুদ্দীন ইবনুল মিবরাদ (৯০৯হি.)
এ কিতাব থেকে মুহাদ্দিস আবদুল লতীফ সিদ্দিকী রাহ. ‘‘যাববু যুবাবাতিদ দিরাসাত আনিল মাযাহিবিল আরবাআতিল মুতানাসিবাত’’ গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা উদ্ধৃত করেছেন।
৫. ‘‘তবাকাতুল হুফফায’’, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (৯১১হি.)
৬. ‘‘তারাজিমুল হুফফায’’, মুহাম্মাদ ইবনে রুসতম আল হারিছি আলবাদাখশী
এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি নদওয়াতুল উলামা লাখনৌতে রয়েছে। এই পুরো আলোচনার জন্য হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী রাহ.-এর কিতাব ‘‘মাকানাতুল ইমামি আবী হানীফাতা ফিল হাদীস’’ (পৃ. ৫৮-৬৮) পাঠ করুন। ওখানে আরো তথ্য রয়েছে। উপরোক্ত তথ্যগুলোও ওখান থেকে নেওয়া হয়েছে ।
দুই. ইমাম আবু হানীফা ‘হাফিযুল হাদীস’ হওয়া একটি সহজ সত্য
দ্বিতীয় যে বিষয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি তা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ‘সুন্নতে মুতাওয়ারাছা’ এবং হাদীস ও আছারের হাফিয হওয়া এমন এক সহজ স্বাভাবিক বাস্তবতা, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ ঐতিহাসিক সত্য এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ফিকহ ও ফতোয়ার প্রথম সংকলক। আর এ তো বলাই বাহুল্য যে, শরীয়তের এই সকল বিধান তিনি ফিকহের কিতাব থেকে সংকলন করেননি। কারণ ফিকহের প্রথম সংকলকই তো তিনি। তাহলে এই সকল বিধান তিনি কোথা থেকে সংকলন করেছেন? নিশ্চয়ই সুন্নতে মুতাওয়ারাছা, আছারে সাহাবা ও ফতওয়ায়ে তাবেয়ীন থেকে। তাহলে তাঁর উপরোক্ত সকল বিষয়ের হাফিয হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।
এখানে ঐ ঘটনাটি উল্লেখ করা সমীচীন মনে হচ্ছে, যা মুয়াফফাক আলমক্কী রাহ. (৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. থেকে, আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ বলেন-
كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.
‘আমরা আবু হানীফা রাহ.-এর সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক।
এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আবু ইসমা যা বলেছেন তার সারকথা এই যে, ‘ইমাম রাহ. সত্য বলেছেন। সত্যি তিনি ছিলেন কুফার মনীষীগণের কাছে সংরক্ষিত ইলমের ধারক। শুধু তাই নয় (হাদীস আছার এবং কুরআন-সুন্নাহর) অন্যান্য শহরের অধিকাংশ ইলমেরও তিনি ধারক ছিলেন। এর প্রমাণ পেতে চাইলে তাঁর কিতাবসমূহ দেখ, তাঁর সঙ্গীদের কাছে সংরক্ষিত তাঁর বর্ণনাসমূহ দেখ, কিতাবুস সালাত থেকে শুরু করে এক একটি অধ্যায় এবং প্রতি অধ্যায়ের এক একটি মাসআলা পাঠ করতে থাক, তাহলেই দেখতে পাবে, কীভাবে তিনি হাদীস ভিত্তিক জবাব দিয়ে চলেছেন এবং চিন্তা কর, হাদীস ও সালাফের আছারের সাথে তার জবাবসমূহ কত সামঞ্জস্যপূর্ণ।’’
এরপরও আপনি যদি প্রশান্তির জন্য ‘হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফার অবস্থান’ সম্পর্কে বিস্তারিত ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে নিম্মোক্ত কিতাবসমূহ পাঠ করতে পারেন।
বলাবাহুল্য যে, এখানে শুধু নমুনা হিসেবে কয়েকটি কিতাবের নাম লেখা হচ্ছে। এ বিষয়ের সকল রচনাবলির তালিকা দেওয়া তো কোনো সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের দ্বারা সম্ভব নয়।
১. ‘‘ইমাম আযম আওর ইলমে হাদীস’’, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী সিদ্দীকী কান্ধলভী।
২. ‘‘মাকামে আবু হানীফা’’, মাওলানা সরফরায খান সফদর
৩. কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা-এর বিভিন্ন ভূমিকা। যেমন :
ক. মুফতী মাহদী হাসান শাহাজাহানপুরী রাহ.-এর ভূমিকা (কালাইদুল আযহার)
খ. মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রাহ.-এর ভূমিকা (ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ)-এর রেওয়ায়েতের উপর)
গ. মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.-এর ভূমিকা (উর্দু, আররহীম একাডেমী, করাচী থেকে প্রকাশিত)
৪. মুসনাদে ইমাম আযম-এর ভূমিকা, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.
৫. ‘‘মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফিল হাদীস’’, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী (১৪২০হি.)
৬. ‘‘আল-ইমাম আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহুল মুহাদ্দিসুন’’, আল্লামা যফর আহমদ উছমানী রাহ. (১৩৯৪ হি.)
৭. ‘‘উকূদুল জুমান ফী মানাকিবিল ইমামিল আযম আবু হানীফাতান নু’মান’’, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আসসালেহী আশ-শাফেয়ী (৯৪২হি.)
৮. সিয়ারু আলামিন নুবালা, শামসুদ্দীন আযযাহাবী রাহ. (৭৪৮হি.) খন্ড : ৬; পৃষ্ঠা : ৩৯০-৪০৩
৯. আল ইনতিকা ফী ফাযাইলিছ ছালাছাতিল ফুকাহা (মালিক ইবনু আনাস ওয়া মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস আশ-শাফেয়ী, ওয়া আবী হানীফা) ইবনু আব্দিল বার আলমালেকী (৩৬৩হি.)
১০. ‘‘ফাযাইলু আবী হানীফা ওয়া আখবারুহূ ওয়া মানাকিবুহু’’, আবুল কাসিম ইবনু আবিল আওয়াম (৩৩৫হি.)
এ বিষয়ে আরো কিতাবের নাম জানতে চাইলে ‘‘উকূদুল জুমানের’’ শুরুতে আল্লামা আবুল ওয়াফা আফগানী রাহ.-এর ভূমিকা অবশ্যই পাঠ করুন। তদ্রূপ ইমাম আবু আব্দিল্লাহ আল-হুসাইন ইবনে আলী আস-সাইমুরী (৪৩৬ হি.)-এর কিতাব- ‘আখবারু আবী হানীফাতা ওয়া আসহাবিহী’, যা আফগানী রাহ.-এর তাহকীকে ছাপা হয়েছে, এর ভূমিকাও পাঠ করতে পারেন।
মারকাযুদ দাওয়াহ-এর দারুত তাসনীফ থেকে এ বিষয়ে একাধিক কিতাব প্রকাশের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন আছে। তবে আলকাউসারে একটি ধারাবাহিক লেখা অতি শীঘ্রই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
ওয়াসওয়াসাঃ ইমাম আবূ হানীফা রহঃ জঈফ রাবী ছিলেন?
মুসলিম বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ রিজালশাস্ত্রের ইমামদের সংকলিত শুধু ১০টি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি। যা এসব ভ্রান্ত ওয়াসওয়াসাকে বাতিল করতে এবং জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির মনকে প্রশান্ত করতে যথেষ্ট হবে বলে মনে করি।
১
ইমাম যাহাবী রহঃ। আহলে ইলম বলতেই যারা তার নাম জানেন বিখ্যাত জারাহ তাদীলের ইমাম হিসেবে। জারাহ তাদীল সম্পর্কিত একাধিক কিতাবের সংকলক। এই ইমাম যাহাবী রহঃ হাফীজুল হাদীস সম্পর্কিত একটি কিতাব সংকলন করেছেন।
হাফীজুল হাদীস কি? ইলমে হাদীস বিষয়ে সম্মক অবগত প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন যে, হাফীজুল হাদীস ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি হাদীসের রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয় ময়দানে পারদর্শী এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ।
হাফীজুল হাদীসদের আলোচনামূলক ইমাম যাহাবী রহঃ এর উক্ত গ্রন্থটির নাম “তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ”। উক্ত গ্রন্থে হাফেজ যাহাবী রহঃ ইমাম আজম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যা স্পষ্টরূপে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে হাফেজ যাহাবী রহঃ হাফীজুল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যেখানে তিনি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করেছেন। সম্বোধন শুরু করেছেন “ইমাম আজম” বলে। সংক্ষিপ্ত উক্ত পরিচিতিতে প্রশংসাসূচক অসংখ্য বক্তব্য উদ্ধৃত করলেও কোথাও একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি। বরং সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, “আমি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মানাকেব ও ফযীলত সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র পুস্তকও রচনা করেছি। {তাযকিরাতুল হুফফাজ, রাবী নং-১৬৩,
আহলে ইলমদের জন্য তাযকিরাতুল হুফফাজের উক্ত ইবারতগুলো উদ্ধৃত করে দিচ্ছি-
163- 10/ 5 ع- أبو حنيفة الإمام الأعظم فقيه العراق النعمان بن ثابت بن زوطا التيمي مولاهم الكوفي: مولده سنة ثمانين رأى أنس بن مالك غير مرة لما قدم عليهم الكوفة رواه ابن سعد عن سيف بن جابر أنه سمع أبا حنيفة يقوله. وحدث عن عطاء ونافع وعبد الرحمن بن هرمز الأعرج وعدي بن ثابت وسلمة بن كهيل وأبي جعفر محمد بن علي وقتادة وعمرو بن دينار وأبي إسحاق وخلق كثير. تفقه به زفر بن الهذيل وداود الطائي والقاضي أبو يوسف ومحمد بن الحسن وأسد بن عمرو والحسن بن زياد اللؤلؤي ونوح الجامع وأبو مطيع البلخي وعدة. وكان قد تفقه بحماد بن أبي سليمان وغيره وحدث عنه وكيع ويزيد بن هارون وسعد بن الصلت وأبو عاصم وعبد الرزاق وعبيد الله بن موسى وأبو نعيم وأبو عبد الرحمن المقري وبشر كثير وكان إماما ورعا عالما عاملا متعبدا كبير الشأن لا يقبل جوائز السلطان بل يتجر ويتكسب.
قال ضرار بن صرد: سئل يزيد بن هارون أيما أفقه: الثوري أم أبو حنيفة؟ فقال: أبو حنيفة أفقه وسفيان أحفظ للحديث. وقال ابن المبارك: أبو حنيفة أفقه الناس. وقال الشاقعي: الناس في الفقه عيال على أبي حنيفة. وقال يزيد: ما رأيت أحدًا أورع ولا أعقل من أبي حنيفة. وروى أحمد بن محمد بن القاسم بن محرز عن يحيى بن معين قال: لا بأس به لم يكن يتهم ولقد ضربه يزيد بن عمر بن هبيرة على القضاء فأبى أن يكون قاضيا. قال أبو داود رحمه الله: أن أبا حنيفة كان إماما.
وروى بشر بن الوليد عن أبي يوسف قال: كنت أمشي مع أبي حنيفة فقال رجل لآخر: هذا أبو حنيفة لا ينام الليل, فقال: والله لا يتحدث الناس عني بما لم أفعل, فكان يحيي الليل صلاة ودعاء وتضرعا. قلت: مناقب هذا الإمام قد أفردتها في جزء. كان موته في رجب سنة خمسين ومائة1 رضي الله عنه.
أنبأنا ابن قدامة أخبرنا بن طبرزد أنا أبو غالب بن البناء أنا أبو محمد الجوهري أنا أبو بكر القطيعي نا بشر بن موسى أنا أبو عبد الرحمن المقرئ عن أبي حنيفة عن عطاء عن جابر أنه رآه يصلي في قميص خفيف ليس عليه إزار ولا رداء قال: ولا أظنه صلى فيه إلا ليرينا أنه لا بأس بالصلاة في الثوب الواحد.
ইমাম যাহাবী রহঃ যেখানে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে হাফীজুল হাদীস হিসেবে গণ্য করছেন। তার প্রশংসার উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেই সাথে তাযকীরাতুল হুফফাজে অসংখ্য প্রশংসাসূচক বক্তব্য এনেছেন। কিন্তু কোথাও একটি শব্দও সমালোচনা হিসেবে উপস্থিত হিসেবে উপস্থিত করেননি। তার ব্যাপারে এমন জুলুমানা কথা মিথ্যুক ছাড়া আর কে বলতে পারে?
২
প্রখ্যত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তার প্রসিদ্ধতম জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “তাহযীবুত তাহযীব” এ কোন একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে সমালোচনামূলক উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি ইমাম আজম সম্পর্কে প্রশংসা ও মানাকেব বর্ণনা করার পর স্বীয় বক্তব্যকে এই দুআর উপর শেষ করেছেন,
مناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدا فرضي الله تعلى عنه واسكنه الفردوس آمين
ইমাম আবূ হানীফার মর্যাদাতো অনেক, এর বদলায় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন। {তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং-৮১৭}
৩
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ স্বীয় গ্রন্থ “তাকরীবুত তাহজীব” এও একটি বাক্য ইমাম আজম রহঃ এর ব্যাপারে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি।
৪
রিজাল শাস্ত্রের বড় ইমাম সফিউদ্দীন খাজরাজী রহঃ তার “খুলাসাতু তাহযীবু তাহযীবিল কামাল” নামক গ্রন্থে ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে শুধু ফাযায়েল ও মানাকেবই লিখেছেন। একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি।
৫
রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থ তাহযীবু তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল লিজযাহাবীতেও একটি বাক্যও ইমাম আজম সম্পর্কে সমালোচনামূলক নেই।
৬
ইমাম আব্দুল গনী মাকদিসী রহঃ এর লেখা জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “আলকামাল ফী আসমায়ির রিজাল” এও একটি বাক্য সমালোচনামূলক উল্লেখ করা হয়নি।
৭
ইমাম আবুল হাজ্জাজ আলমিজ্জী রহঃ এর জারাহ তাদীল গ্রন্থ “তাহযীবুল কামাল” এর মাঝে কোথাও ইমাম সাহেব সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়নি।
৮
ইমাম নববী রহঃ তার জারাহ তাদীল গ্রন্থ “কিতাবু তাহযীবুল আসমায়ি ওয়াল লুগাত” এ সাত পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম সাহেব রহঃ এর হালাত ও প্রশংসা লিখলেও একটি বাক্য দিয়েও সমালোচনা করেননি।
৯
ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন আসআদ আলইয়ামেনী ইয়াফেয়ী রহঃ ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে হালাত ও মানাকেব তার স্বীয় গ্রন্থ “কিতাবু মিরআতিল জিনান ওয়া ইবরাতিল ইয়াকজান” এ উল্লেখ করলেও একটি সমালোচনা বাক্য বলেননি। বরং উল্টো তারীখে বাগদাদে উল্লেখিত খতীব বাগদাদীর সমালোচনা ঠিক নয় মর্মে ইংগিতও করেছেন।
১০
ফক্বীহ ইবনুল আব্বাদ আলখলীলী রহঃ স্বীয় গ্রন্থ “শাজারাতুজ যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব’ এ ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে শুধু হালাত ও মানাকেবই লিখেছেন, জারাহমূলক একটি বাক্যও নিঃসরণ করেননি।
জারাহ তাদীলের প্রসিদ্ধ ও মান্যবর ইমামগণ যেখানে ইমামে আজম রহঃ সম্পর্কে একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি, সেখানে ইমাম সাহেবকে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব বলা অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যুকদের ধোঁকা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন