বিবাহ পড়ানোর সঠিক নিয়ম
প্রশ্নঃ ১৯৮৫৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম: আমার দুটা প্রস্ন
১ -বিবাহ পড়ানোর সঠিক নিয়ম
২- মহরে ফাতেমি কি
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমে শরয়ী নীতিমালা মেনে পাত্রি দেখবেঃ
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أبي هريرة، قال: كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنظرت إليها؟»، قال: لا، قال: «فاذهب فانظر إليها، فإن في أعين الأنصارشيئا»
তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশে বসা ছিলাম।একব্যক্তি এসে বলল, আমি আনসারি এক মহিলাকে বিয়ে করতে চাই।রাসূলুল্লাহ বললেন,তুমি কি পাত্রী দেখেছো?তিনি বললেন,না।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,যাও গিয়ে পাত্রী দেখে আসো।কেননা আনসারীদের চোখে নীল বা এ জাতীয় কিছু থাকে।
(সহীহ মুসলিম-১৪২৪)
পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।
পাত্রী দেখার মূলনীতির মধ্যে অন্যতম কিছু মূলনীতি হলোঃ
★মুবাহ বিষয় ব্যতীত অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না।
★মহিলা নরম ভাষায় কথা বলবে না।
★মোহরানা ঠিক করে বিবাহ করবে।
বিবাহের খুতবা দেওয়া হবে।
মেয়ের পক্ষ থেকে তার পিতা বা অন্য কেউ শুধু বিবাহের অনুমতি নিয়ে এসে ওকিল হয়ে সে (অথবা সে অন্য কাউকে এই দায়িত্ব দিলে সে) ২ জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে সাক্ষীদের সামনে পাত্রকে মেয়ের পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবে,পাত্র সাক্ষীদের সামনে একবার কবুল বলবে।
,
তাহলেই বিবাহ হয়ে যাবে।
,
ছেলের বাসায় ওলিমা করা সুন্নাত।
মেয়ের বাসায় এসবের আয়োজন করার নজির নেই।
,
তবে কাহারো চাপে নয়,বরং নিজ সন্তুষ্টি চিত্তে যদি তারা দাওয়াতের আয়োজন করে,তাহলে তা জায়েজ আছে।
হাদীস শরীফে এসেছে
عن أنس بن مالک رضي اللّٰہ عنہ أن النبي صلی اللّٰہ علیہ وسلم رأی علی عبد الرحمٰن بن عوف أثر صفرۃ، فقال: ما ہذا؟ قال: إني تزوجت امرأۃ علی وزن نواۃ من ذہب، قال بارک اللّٰہ لک أولم ولو بشاۃ۔ (مشکاۃ المصابیح ۲۷۷)
রাসুল সাঃ বলেন ,,,, তুমি বকরি দিয়ে হলেও ওলিমা করো।
অন্যত্রে এসেছে
عن أبي ہریرۃ رضي اللّٰہ عنہ قال: الولیمۃ حق وسنۃ، فمن دُعِيَ فلم یجب فقد عصی اللّٰہ ورسولہ۔ (مجمع الزوائد ۴؍۵۲)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, ওলিমা সুন্নাত।
,
★কোনো গান বাজনা বাজাবেনা,অনৈসলামীক কোনো কাজ করা যাবেনা।
নারী পুরুষ দের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবে,সকলেই যেনো পর্দার বিধান মেনেই বিবাহ আসতে পারে,সেই জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
,
উলামায়ে কেরামগন
বিবাহ শাদীতে কিছু কুপ্রথা ও কতিপয় কুসংস্কার হিসেবে যেগুলো উল্লেখ করেছেন,সেগুলো অবশ্যই বর্জনীয়।
,
১) মেয়ের ইযিন (অনুমত) আনার জন্য ছেলেপক্ষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে, শরীয়াতের দৃষ্টিতে এর কোন প্রয়োজন নেই।
এতে পর্দা বিধান খেলাফ হলে তাহা হারাম।
,
২) বিবাহের সময় অনেকে বর-কনের দ্বারা তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করিয়ে থাকে (একবার বললেই হবে) এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয়, শরীয়াতে এর কোন ভিত্তি নেই।
৩) ইজাব কবূলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে বর যে সালাম করে থাকে তারও কোন ভিত্তি নেই।
৪) ঝগড়া-ফাসাদের আশংকা থাকা সত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে জরুরী মনে করা হয়। অথচ এ সম্পর্কিত হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন। (বিশৃঙ্খলা না হলে সমস্যা নেই)।
★বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর যবরদস্তী করে আদায় করে থাকে এটা না জায়েয।
★ অনেক জায়গায় গেইট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া হয় এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা গর্হিত কাজ।
★খাওয়া দাওয়া শেষে কনে পক্ষের লোকেরা বরের হাত ধোয়ায়। পরে হাত ধোয়ানো বাবদ টাকা দাবী করে। অনেক জায়গায় এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এটা একেবারেই অনুচিত। মূলতঃ এসব হিন্দুয়ানী প্রথা। দীর্ঘদিন যাবত হিন্দুদের সাথে বসবাস করার কারণে আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারগুলি অনুপ্রবেশ করেছে।
★বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে যৌতুকের বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটাও অন্যায় ও নির্লজ্জতার কাজ।
★বিবাহ করে আনার পর শ্বশুর বাড়ীতে নববধূকে বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবলা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং নববধূর চেহারা সকলকে দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব করা জায়েয নেই।
অনেক জায়গায় মেয়ের বিয়ের আগের দিন আর কোথাও মেয়ে শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ-মিষ্টি ইত্যাদি পাঠানো হয়ে থাকে। কোথাও এটাকে চৌথি বলা হয়। এটাও বিজাতীয় নাজায়েয প্রথা।
,
তবে চাপে নয়,বরং সন্তুষ্টি চিত্তে পাঠাইলে সেটি জায়েজ।
,
★ ঈদের সময় বা অন্য কোন মৌসুমে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার প্রথা অনেক জায়গায় চালু আছে। আবার অনেক জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে জামাইকে এবং তার ভাই-বোনদেরকে কাপড়-চোপড় দেয়ার প্রথা আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, ঋণ করে হলেও তা দিতে হয়। এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়, তাই এসব বর্জনীয়।
,
তবে চাপে নয়,বরং সন্তুষ্টি চিত্তে পাঠাইলে সেটি জায়েজ।
,
★ আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠানে বেগানা মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে নিজেকে বিকশিত করে একত্রিত হতে দেখা যায় এবং যুবক যুবতীদের অবাধ মেলা-মেশা করতেও দেখা যায়। এধরনের বেপর্দা আর বেহায়াপনার কারণে উক্ত মজলিসে উপস্থিত নারী পুরুষ সকলেই গুনাহগার হবে।
★বিবাহ উপলক্ষে গান-বাজনা, ভিডিও, ভিসিআর ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছে। আর কোন কোন এলাকায় তো যুবতী তরুণী মেয়েরা একত্রিত হয়ে নাচ গানও করে থাকে। শরীয়াতের দৃষ্টিতে এসব হারাম ও নাজায়েয।
★আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠান মানেই গুনাহের ছড়াছড়ি। এমন এমন গুনাহ্ সেখানে সংঘটিত হয় যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছবি তোলা ও ভিডিও করা। শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন প্রাণীর ছবি তোলা চাই ক্যামেরার মাধ্যমে হোক কিংবা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক বা অংকন করা হোক সবই হারাম।
★ বিবাহের পরে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে মেয়ের বাড়ীতে পাড়া-প্রতিবেশী মেয়েরা একত্রিত হয়, আর বরকে অন্দর মহলে এনে সকলে মিলে হৈ হুল্লা করে তার মুখ দর্শন করে। মেয়েরা হাসি মজাক করে বিভিন্ন উপায়ে নতুন দুলাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আর নির্লজ্জ হাসি তামাশায় মেতে উঠে। এধরনের বেপর্দেগী শরীয়াতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
★ অনেক জায়গায় প্রথা চালু আছে যে, নববধূকে বর নিজে বা তার ভগ্নীপতি অথবা তার ছোট ভাই পালকী বা গাড়ী থেকে নামিয়ে কোলে করে ঘরে নেয়। তারপর উপস্থিত মহল্লাবাসীর সামনে নববধূর মুখ খুলে দেখানো হয়। এ সকল কাজ হারাম এবং নাজায়েয।
★আমাদের সমাজে এংগেজমেন্টের যে রীতিনীতি ইসলাম তা সমর্থন করেনা, যা এক ধরনের বিধর্মীদের প্রথা। (বিবাহের পূর্বে কথাবার্তার দিন কনের হাতে আংটি পরানো)।
★ইসলামে কুলক্ষন বলতে কিছু নেই আর কুলক্ষন ভাবা শিরক।
তাই কোনো কুলক্ষন আছে বলে মানা যাবেনা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
ওস্তাদ, জামিয়া সাঈদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা, কেরানীগঞ্জ
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১১৭৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বিয়েতে দেনমহোর কী পরিমান ঠিক করতে হবে এই মাসআলাটা একটু বলবেন?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন –
“আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে। [সূরা আন-নিসাঃ৪]
তবে এ ব্যাপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণভাবে দেনমোহর কম ধার্য করাই মুস্তাহাব।
রাসূল (সাঃ) বলেন –“সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প” [মুসনাদু আহমাদ; হাসান সানাদে]
এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)
দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক।
বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।”-মিশকাত শরিফ
দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত।
দেনমোহর যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) বলেন, ‘’আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উপবিষ্ট ছিলাম’’। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করলাম, আপনি আমাকে গ্রহণ করুন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) কিছুই বললেন না।
মহিলাটি এরূপ তিনবার বলল, কিন্তু তিনবারই রাসূল (সাঃ) চুপ থাকলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন আপনি যদি গ্রহন না করেন তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নিকট কি মহিলাকে দেনমোহর দেওয়ার মত কিছু আছে? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার বাড়ি থেকে খোঁজ করে একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসো। কিন্তু তিনি তাও আনতে পারেনি। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন আমার ঐ ঐ সূরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সা.) বললেন, মহিলাকে ঐ সূরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।
উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহিলাকে দেনমোহর প্রদান করা অত্যাবশ্যক।
দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ
সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত, “এবং নারীদের মধ্যে সধবা নারী ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, দেনমোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ।
দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমান হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণকেই দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।
দেনমোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমান হল মোহরে ফাতেমি।
মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাঃ-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা রাঃ-এর মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ৪/৩৫০)।
বিবাহের সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম।
০১ দিরহাম=৩.০৬১৮ গ্রাম।
১০*৩.০৬১৮= ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা।অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা।
এটা হলো প্রত্যেক মহিলার জন্য শরীয়তের পক্ষ্য থেকে সর্বশেষ নির্ধারিত মহর।যাকে শরীয়তের হক বলা হয়ে থাকে।এর চেয়ে কম মহর নির্ধারণ করা যাবে না।
১০দিরহামের কম মহরের উপর স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকলেও শরীয়ত স্বামীর উপর মহরে মিছিল ওয়াজিব করবে।
উল্লেখ্য যে, হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, ২০ মিছকাল স্বর্ণ বা ২০০ দিরহাম রূপা কারো নিকট থাকলে তার উপর যাকাত ফরয হয়।এবং হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,হযরত ফাতেমা রাযি এর মহর ছিলো ৫০০দিরহাম।
প্রশ্ন জাগে যে,বর্তমান বৃটিশ হিসাব পদ্ধতিতে ১মিছকাল সমান কত গ্রাম বা ভড়ি, এবং ১দিরহাম সমান কত গ্রাম বা ভড়ি।
এ সম্পর্কে জানতে নিচের আলোচনা গুলো গুরুত্ব সহকারে আমাদেরকে বুঝতে হবে।
মিছকাল/দিনার এবং দিরহামে হিসাব সহ স্বর্ণ রূপায় যাকাতের বৃটিশ পদ্ধতির হিসাব।
(এক)
(ক)
১মিছকাল/দিনার =৪.২৫গ্রাম
২০মিছকাল। =(৪.২৫*২০)
=৮৫গ্রাম।
(খ)
১দিরহাম =২.৯৭৫গ্রাম
২০০দিরহাম। =(২.৯৭৫*২০০)
=৫৯৫গ্রাম।
(গ)
মহরে ফাতেমী ছিলো,৫০০দিরহাম
১দিরহাম =২.৯৭৫গ্রাম
=(২.৯৭৫*৫০০)
=১৪৮৭.৫গ্রাম
(দুই)
(ক)
১১.৩৩৩গ্রাম। = ১ভড়ি
সুতরাং যাকাতের জন্য
স্বর্ণের নেসাব হবে=(৮৫÷১১.৩৩৩)
=৭.৫ভড়ি
এবং
রূপার নেসাব হবে =(৫৯৫÷১১.৩৩৩)
=৫২.৫ভড়ি
এবং
মহরে ফাতেমী হবে=(২.৯৭৫*৫০০)
=১৩১.২৫৩ভড়ি
এই হিসাব ছিলো,
১ভড়ি=১১.৩৩৩গ্রাম হিসেবে।
সুতরাং যদি বর্তমানে
১ভড়ি=১০.০০গ্রাম হয়ে থাকে,
তাহলে ১৪৮৭.৫গ্রাম সমান ১৪৮.৭৫ভড়ি হবে।
হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা (রাঃ) তাদের সন্তানদের বিয়েতে দেনমোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমান দেনমহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর কারনে তা পারেননি।
সুরা নিসার ৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে” (সূরা নিসা-৪)”।
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে।
তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না।
আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে দেনমোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই দেনমোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ।
অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে দেনমোহর স্ত্রীর হক যা অবশ্যই স্বামীকে প্রদান করতে হবে এবং খুশি মনে প্রদান করতে হবে। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন দয়া বা দান নয় বরং স্ত্রীর পাওনা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন