বাবরি চুল রাখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স আছে?
প্রশ্নঃ ১৩১৬৪৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বাবরি চুল রাখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স আছে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাই, বাবরি চুল রাখার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তবে যদি কোনো কম বয়সী ছেলের ক্ষেত্রে লম্বা চুল রাখার কারণে ফিতনার আশঙ্কা থাকে, তাহলে এমন অবস্থায় কম বয়সী ছেলেদের জন্য লম্বা চুল রাখা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে যখন ফিতনার কোনো আশঙ্কা না থাকে, তখন লম্বা চুল রাখা বৈধ। লম্বা চুল রাখা নিজে নিজেই সুন্নত। তবে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্যণীয় যে, যখন লম্বা চুল রাখাবে, তখন তা সুন্নত পদ্ধতি অনুযায়ী রাখতে হবে। পুরুষদের জন্য চুল রাখার তিনটি সুন্নতী বা মাসনুন পদ্ধতি রয়েছে,
১. কানের লতি পর্যন্ত।
২. কানের লতি ও কাঁধের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
৩. কাঁধ পর্যন্ত।
অতএব, যদি কেউ চুল লম্বা রাখতে চায়, তাহলে তার জন্য এই তিন পদ্ধতির যেকোনো এক পদ্ধতিতে চুল লম্বা রাখার অনুমতি আছে। তবে পুরো মাথার চুল সমান রাখা জরুরী। মাথার কিছু অংশের চুল বড় রেখে কিছু অংশের চুল ছোট করে রাখা যাবে না।
তবে পুরুষের জন্য এমনভাবে চুল লম্বা করা জায়েয নয়, যাতে নারীদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায়। তদ্রূপ, মেয়েদের মতো চুলের পনিটেল (পুনি অর্থাৎ চুলের পুঁটি / চুলের বেণী না করে একগুচ্ছ করে বাঁধা) বানানোও বৈধ নয়।
"حدثنی محمد، قال: أخبرنی مخلد، قال: أخبرنی ابن جریج، قال: أخبرنی عبیداللہ بن حفص، أن عمر بن نافع أخبرہ، عن نافع مولی عبد اللہ، أنہ سمع ابن عمر رضي الله عنهما یقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم ینهى عن القَزَع.... الحدیث".
(صحیح البخاری،باب القزع، رقم الحدیث: 5920)
"كان رسول الله صلى الله عليه وسلم مربوعا) هو بمعنى قوله في الرواية الثانية ليس بالطويل ولا بالقصير قوله (عظيم الجمة إلى شحمة أذنيه) وفي رواية ما رأيت من ذي لمة أحسن منه وفي رواية كان يضرب شعره منكبيه وفي رواية إلى أنصاف أذنيه وفي رواية بين أذنيه وعاتقه قال أهل اللغة الجمة أكثر من الوفرة فالجمة الشعر الذي نزل إلى المنكبين والوفرة مانزل إلى شحمة الأذنين واللمة التي ألمت بالمنكبين قال القاضي والجمع بين هذه الروايات أن ما يلي الأذن هو الذي يبلغ شحمة أذنيه وهو الذي بين أذنيه وعاتقه وما خلفه هو الذي يضرب منكبيه قال وقيل بل ذلك لاختلاف الأوقات فإذا غفل عن تقصيرها بلغت المنكب وإذا قصرها كانت إلى أنصاف الأذنين فكان يقصر ويطول بحسب ذلك والعاتق ما بين المنكب والعنق وأما شحمة الأذن فهو اللين منها في أسفلها وهو معلق القرط منها وتوضح هذه الروايات رواية إبراهيم الحربي كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فوق الوفرة ودون الجمة قوله في حديث البراء."
(, شرح النووی على مسلم, كتاب الفضائل ،باب صفة شعره صلي الله عليه وسلم و صفاته و حليته، ج: 15 ،ص: 92، ط: دار إحياء التراث العربي)
"(كان شعره دون الجمة وفوق الوفرة) وفي حديث الترمذي وغيره فلا يجاوز شعره شحمة أذنيه إذا هو وفره أي جعله وفرة فالمراد أن معظم شعره كان عند شحمة أذنه وما اتصل به مسترسل إلى المنكب والجمة شعر الرأس المتجاوز شحمة الأذن إذا وصل المنسكب كذا في الصحاح في حرف الميم وفيه في باب الراء المتجاوز من غير وصول وفي النهاية ما سقط على المنكبين ولعل مراده بالسقوط التجاوز وفي القاموس الوفرة ما سال على الأذن أو جاوز الشحمة قال أبو شامة: - وقد دلت صحاح الأخبار على أن شعره إلى أنصاف أذنيه وفي رواية يبلغ شحمة أذنيه وفي أخرى بين أذنيه وعاتقه وفي أخرى يضرب منكبيه ولم يبلغنا في طوله أكثر من ذلك وهذا الاختلاف باعتبار اختلاف أحواله فروى في هذه الأحوال المتعددة بعدما كان حلقه في حج أو عمرة وأما كونه لم ينقل أنه زاد على كونه يضرب منكبيه فيجوز كون شعره وقف على ذلك الحد كما يقف الشعر في حق كل إنسان على حد ما ويجوز أن يكون كانت عادته أنه كلما بلغ هذا الحد قصره حتى يكون إلى أنصاف أذنيه أو شحمة أذنيه لكن لم ينقل أنه قصر شعره في غير نسك ولا حلقه ولعل ما وصف به شعره من الأوصاف المذكورة كان بعد حلقه له عمرة الحديبية سنة ست فإنه بعد ذلك لم يترك حلقه مدة يطول فيها أكثر من كونه يضرب منكبيه فإنه في سنة سبع اعتمر عمرة القضاء وفي ثمان اعتمر من الجعرانة وفي عشر حج اه(ت في الشمائل د عن عائشة)".
(فيض القدير للمناوی, حرف الكاف ،باب كان و هي الشمائل الشريفة،ج: 5، ص :74، ط: المكتبة التجارية الكبرى
دار الإفتاء : جامعہ علوم اسلامیہ علامہ محمد یوسف بنوری ٹاؤن, فتویٰ نمبر : 144403102354
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, দারুল কুরআন আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা
মুহাম্মদপুর, ঢাকা
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০৬৭৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কতটুকু পর্যন্ত বাবরি চুল রাখা সুন্নত? অনেকে বলেন কান পর্যন্ত অনেকে বলেন কাঁধ পর্যন্ত পরিপূর্ণ সীমানা কতটুকু জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
রাসূল সাঃ সর্বদাই বাবরী রেখেছেন। তাই বাবরী রাখা রাসূল সাঃ এর সুন্নত।
বাবরী তিনি কিভাবে রাখতেন? এ বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-
১. ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল।
২. লিম্মা তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা।
৩. জুম্মা তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল।
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4185)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল ঘাড়ের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}
عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ: «لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4183)
হযরত বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাঃ থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩}
হজ্ব শেষে চুল কামানো, আর অন্য সময় উপরোক্ত তিন পদ্ধতির বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত। আর কোন পদ্ধতির চুল রাখার কোন বর্ণনা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়।
তাই বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত। অন্য কোন পদ্ধতি রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত বলা যাবে না।
হ্যাঁ, হযরত আলী রাঃ সহ আরো কিছু সাহাবী থেকে চুল কামিয়ে ফেলা প্রমাণিত। যা চুল কামানোকে জায়েজ প্রমাণিত করে। কিন্তু এটি রাসূল সাঃ এর সুন্নত বলা যাবে না। সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত বলা যাবে।
চুল রাখার ক্ষেত্রে একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল, মাথার এক পাশের চুল কামিয়ে ফেলা, আরেকদিকের চুলকে রেখে দেয়া। এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ তথা হারাম। তাই এ পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ নয়।
আর কোন পদ্ধতির জায়েজ বা নাজায়েজের কোন কথা পরিস্কার ভাষায় হাদীসে বর্ণিত হয়নি। বা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই উপরোক্ত নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাদ দিয়ে যেকোন পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ। যেমন সমস্ত মাথার চুল সমান করে কাটা। বা সামনে খানিক বড় পিছনে ছোট। বা একদিকে বড় আরেক দিকে ছোট ইত্যাদি পদ্ধতি যতক্ষণ না কোন বিধর্মীর অনুসরণে করা না হবে ততক্ষণ তা নাজায়েজ বলার কোন সুযোগ নেই।
তবে এক্ষেত্রে অন্য সকল বিষয়ের মত চুল রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হল, চুলের কাটিং যেন কোন ফাসিক বা কাফির তথা বিধর্মী কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ না হয়। যদি কোন কাফের বা ফাসিকের সাথে সাদৃশ্য রেখে চুল রাখা হয় তাহলে তা জায়েজ হবে না।
যেমন কোন বিধর্মী খেলোয়ারের হেয়ার স্টাইল নকল করে তার মত চুলে স্টাইল করা ইত্যাদি।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ القَزَعِ»، وَالْقَزَعُ: أَنْ يُحْلَقَ رَأْسُ الصَّبِيِّ فَيُتْرَكَ بَعْضُ شَعْرِهِ (سنن ابى داود، رقم الحديث-4193)
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কুযা করতে নিষেধ করেছেন। “কুযা” বলা হয়, বাচ্চার মাথার একাংশ কামিয়ে ফেলা, আরেকাংশের চুল না কামানো। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৩}
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَتْ لِي ذُؤَابَةٌ، فَقَالَتْ لِي أُمِّي: لَا أَجُزُّهَا، «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمُدُّهَا، وَيَأْخُذُ بِهَا» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4197)
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাথায় চুলের খোঁপা ছিল। আমার মা বলেন, আমি তা কাটবো না। কেননা, রাসূল সাঃ তা ধরে লম্বা করতেন এবং কাছে টেনে নিতেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৭}
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন