অট্টহাসি দিলে কবিরা গুনাহ হয়?
প্রশ্নঃ ১২৫৫১৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অট্টহাসি দিলে কি কবিরা গুণাহ হবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার প্রশ্নটি শিষ্টাচার ও চরিত্রগঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে এনেছে। ইসলাম কেবল নামায ও রোযার ধর্ম নয়, বরং এটি আমাদের চলাফেরা, কথা বলার ধরন, এমনকি হাসির আদবও সুস্পষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছে।
হাদীসের আলোকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন। কখনো কখনো, মুচকি হাসির চেয়ে সামান্য বেশি, কিন্তু অট্টহাসির চেয়ে কম হাসতেন। অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্রে, যেমন কোনো বিস্ময়কর ঘটনার সময়, দাঁত সামান্য প্রকাশ পেত। এতে তিনি মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস অনুসরণ করতেন।
'আব্দুল্লাহ ইবন হারিস ইবন জায (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর চাইতে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি আর কাউকে দেখিনি। আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, হাদীস নং: ২২৭
এমনকি খুশিময় বা আনন্দঘন মুহূর্তে তিনি মৃদু হাসতেন, পবিত্র দন্তমালা সামান্য প্রকাশ পেত, কিন্তু কখনো উচ্চস্বরে বা অট্টহাসি দিয়ে হাসতেন না। কারণ, অতিরিক্ত হাসি গম্ভীরতা ও মর্যাদার পরিপন্থী।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
"আমি কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে এত বেশি হাসতে দেখিনি যে তাঁর মুখ এতটা খুলে যেত এবং আমি তাঁর তালু বা মাড়ি পর্যন্ত দেখতে পেতাম; বরং অধিকাংশ সময় তাঁর হাসি ছিল কেবল মৃদু হাসির মধ্যে সীমাবদ্ধ।"
আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, হাদীস নং: ২২৯
তাঁর সাহাবীগণও হাসতেন; তবে তাঁদের অন্তরে ঈমানের দৃঢ়তা পাহাড়ের চেয়েও মহান ছিল।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত হাসি মাকরূহ বা নিন্দনীয়, কারণ এটি হৃদয়কে মৃত করে দেয় এবং ইসলামিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
(হাশিয়াতুল বুখারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৯০০)
অতএব, মুসলমানের জন্য উচিত কথোপকথন বা আনন্দঘন মুহূর্তে মৃদু হাসিতে সীমাবদ্ধ থাকা, যেমনটি আমাদের প্রিয় নবী ﷺ-এর সুন্নত। এতে থাকে নম্রতা, শালীনতা ও ভদ্রতার সৌন্দর্য, এবং মুখে ফুটে ওঠে ইমানি মাধুর্য। এতে কোনো কবিরাহ গুনাহের আশঙ্কা নেই।
শরঈ দলীল:
عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ مَا حَجَبَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُنْذُ أَسْلَمْتُ، وَلاَ رَآنِي إِلاَّ تَبَسَّمَ فِي وَجْهِي.
وَلَقَدْ شَكَوْتُ إِلَيْهِ أَنِّي لاَ أَثْبُتُ عَلَى الْخَيْلِ، فَضَرَبَ بِيَدِهِ فِي صَدْرِي وَقَالَ " اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا ".
https://muslimbangla.com/hadith/5660
: فکان صلی اللہ علیہ وسلم في أکثر أحوالہ یتبسم وکان یضحک في بعض الأحوال أعلی من التبسم وأقل من القہقہة وکان في النادر عند إفراط التعجب بدوٴ النواجذ جاریا في ذلک علی عادة البشر․․․ وکان أصحابہ أیضًا یضحکون والإیمان في قلوبہم أعظم من الجبل وأما المکروہ منہ فہو الإکثار من الضحک فإنہ یمیت القلب وذلک ہو مذموم․ (حاشیة بخاري: ۲/۹۰۰)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন