‘‘ফাসেলু কো তাকাল্লুফ’’ উর্দূ গজলটির সবুজ গম্বুজ দেখলে সেজদায় পড়ে যাওয়া’’ কথাটি কি সঠিক?
প্রশ্নঃ ১২১৪৪৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, উর্দু গজল 'ফাসলু কো তাকাল্লু'এই গজলের একটা জায়গায় বলা যে সবুজ গম্বুজ দেখা মাত্রই সেজদা দিয়ে দিবে ও আরেকটা জায়গায় বলা সবুজ গম্বুজ দেখা মাত্রই বন্দেগীর ধরন পাল্টে যাবে। আমার প্রশ্ন হলো এখানে কি এই কথা গুলো সঠিক বলেছে ইসলাম শরিয়ত অনুযায়ী?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুক। আপনি যে সংগীতটির কথা বলেছেন তা কবি ইকবাল (রাহি.) এর কবিতা।
প্রিয় ভাই! কবিরা কখনও শাব্দিক অর্থে কবিতা বলেনা
কবি যখন কবিতা রচনা করেন, তিনি কেবল শব্দের সমাহার তৈরি করেন না;
তিনি আসলে ‘‘অন্তরের ভাষা’’, ‘‘আত্মার প্রতিধ্বনি’’ এবং ‘‘অদৃশ্য অনুভবের ব্যাখ্যা’’ প্রকাশ করেন।
তাঁর উচ্চারিত শব্দগুলো কানে ধ্বনি হিসেবে ধরা পড়ে বটে,
কিন্তু তার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এক গভীর অনুভূতির নদী,
যা কেবল হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায় যুক্তি দিয়ে নয়।
কবিতা কখনও শাব্দিক অর্থে কবিতা নয়। শব্দগুলো কেবল বাহ্যিক আবরণ।
আসল কবিতা লুকিয়ে থাকে সেই ভাব, সেই ব্যথা, সেই অনুভবের গভীরে,
যা কবি নিজেও অনেক সময় পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
‘‘সত্যিকারের কবি কখনও শব্দে আটকে থাকেন না, তিনি শব্দের ওপারে দেখতে পান ‘‘অর্থের আলো’’ আর ‘‘অর্থের অন্ধকার’’। তাঁর কবিতা একদিকে প্রকাশ, অন্যদিকে গোপন।
তাঁর ভাষা সরল মনে হলেও, তার গভীরে লুকিয়ে থাকে এক অনন্ত নীরবতা।
সুফি দৃষ্টিকোণ থেকে
সুফি কবিরা যেমন: আল্লামা রুমি (রহ.), আল্লামা শেখ সাদী (রহ.), হাফিয শেরাযি (রহ.), ফারিদ উদ্দিন আত্তার (রহ.), খাজা আজিজুল হাসান মাজযুব (রহ.) প্রমুখগণ তাঁদের কবিতাও শাব্দিক অর্থে কেবল প্রেম বা সৌন্দর্যের বর্ণনা নয়।
তাদের ‘প্রেমিকা’ মানে আল্লাহর সত্তা, তাদের ‘মদ’ মানে আত্মিক উন্মাদনা, তাদের ‘মেহফিল’ মানে আল্লাহর নিকটতার অনুভব। অজ্ঞ লোক সেই কবিতাকে দুনিয়ার প্রেম ভেবে ভুল করে,
কিন্তু আসলে তা রুহানিয়াতের সুর।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত কবিতায়
১. যখনই সবুজ গম্বুজের ছায়া দৃষ্টিগোচর হবে”
কবি ইকবালের চোখে সবুজ গম্বুজ মানে শুধু গম্বুজ নয়, এটি রাসূল ﷺ-এর সান্নিধ্যের প্রতীক, তাঁর জীবন্ত স্মৃতি, তাঁর ভালোবাসার ছায়া।
যখনই সেই গম্বুজ চোখে পড়ে, তার অন্তরের সব নিয়ম, সব আনুষ্ঠানিকতা, সব সংযম গলে যায়। হৃদয় ভরে ওঠে অশ্রুতে, জবান থেমে যায় নামাজের সাধারণ শব্দে, আর আত্মা ডুবে যায় এক অনির্বচনীয় শ্রদ্ধা ও মমতায়।
২. বদলে যায় ইবাদতের রীতি-নীতি”
এখানে কবি ইকবাল (রহ.) বোঝাতে চেয়েছেন
নবীর ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যা ইবাদতকে আনুষ্ঠানিকতা থেকে অনুভূতির ইবাদতে রূপ দেয়।
মানুষ যখন প্রিয় নবীর ﷺ ভালোবাসায় সিক্ত হয়,
তখন তার সিজদা আর কেবল শরীরের বাঁক নয়
বরং আত্মার নত হওয়া।
তখন নামাজে কেবল শব্দ থাকে না, থাকে চোখের অশ্রু, আত্মার সাড়া, হৃদয়ের আহ্বান।
কবি ইকবাল (রহ.) বলতে চান
যখন নবীর স্মৃতি জেগে ওঠে হৃদয়ে, তখন ইবাদতের রূপ বদলে যায়; নিয়ম নয়, তখন রাজত্ব করে ভালোবাসা।
ভালোবাসার কেন্দ্র ও কবি ইকবালের দাওয়াত:
এই কবিতায় কবি ইকবাল আসলে এক অনন্ত বার্তা দিচ্ছেন যে,
‘‘নবীর প্রতি ভালোবাসা যে হৃদয়কে আন্দোলিত করে না,
তার ইবাদত হয়তো নিখুঁত, কিন্তু প্রাণহীন।”
তিনি চান, (সেখানে মক্কা-মদিনায়) মুসলমান যেন আবার নবীর ভালোবাসায় দীপ্ত হয়,
যেন তার নামাজ, রোজা, দাওয়াত সবকিছু নবীর ﷺ স্মৃতির উষ্ণতায় আলোকিত হয়।
إنّ العشق قد بلغ به حالة الفناء في المعشوق ، فأصبح بذلك عاشقاً لذاته . يقول العزالي في وصف تلك الحال : “ العارفون - بعد العروج إلى سماء الحقيقة - اتفقوا على أنهم لم يروا في الوجود إلا الواحد الحقّ . ولكن منهم من كان له هذه الحال عرفاناً علمياً ، ومنهم من صار له ذلك حالًا ذوقياً . وانتفت عنهم الكثرة بالكلية ، واستغرقوا بالفردانية المحضة ، واستوفيت فيها عقولهم ، فصاروا كالمبهوتين فيه ، ولم يبق فيهم متسع لا لذكر غير اللَّه ولا لذكر أنفسهم أيضاً . فلم يكن عندهم إلا اللَّه ، فسكروا سكراً دفع دونه سلطان عقولهم ، فقال أحدهم : “ أنا الحق “ ، وقال آخر : “ سبحاني ، ما أعظم شاني ! “ وقال آخر : “ ما في الجبة إلا اللَّه “ . وكلام العشاق في حال السكر يطوى ولا يُحكى . فلما خفّ عنهم سكرهم ، ورُدّوا إلى سلطان يالعقل الذي هو ميزان اللَّه في أرضه ، عرفوا أنّ ذلك لم يكن حقيقة الاتحاد ، بل شبه الاتحاد . . “ ( مشكاة الأنوار ، ص 57 ، الدار القومية للطباعة والنشر ، القاهرة ، 1964 )
شُروح وَدرَاسَات الأبيات من 1565 - 1910
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন