প্রশ্নঃ ১১৮৪২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,১. হযরত মোহাম্মদ স কে সৃষ্টি না করলে পৃথিবীর কোনো কিছুই সৃষ্টি করত না একথা সঠিক কি না জানতে চাই? এ বিষয়ে দেওবানদ ফতোয়া বোর্ড কি বলে আর কওমি আলেমদে এ বিষয়ে কি মত?
২. তাবলিকের কোন কোন কাজগুলো ভুল আছে জানতে চাই?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভালোবাসা ইমানের দলিল। কোনো ব্যক্তির অন্তরে যদি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে কিছুতেই সে ইমানদার হতে পারবে না। রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা শুধু ভালোবাসাই নয় বরং তাঁর জন্য জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতা সম্পন্ন মোহাব্বত আমাদের হৃদয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এই ভালোবাসাকে পুঁজি করে পথভ্রষ্ট বক্তব্য দেওয়ারও কোনো সুযোগ নাই। অথবা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হওয়ার কোনো দরকার নেই। এ ধরনের বক্তব্য সত্যিকার অর্থে হেদায়েত থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত একটি বক্তব্য।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সা. নিজেও এ ধরনের কথা বলেননি বা সাহাবারাও তাঁদের বক্তব্যের কোথাও এজাতীয় কথা বলেননি।
কাজেই আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা যদি রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই ডাহা মিথ্যা-বানোয়াট কথা। এ কথা যদি হাদিসের নামে বলা হয়, তাহলে এটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতি। আর এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেয়। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে।
আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আরো স্পষ্ট করেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করব।’
আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহু রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এটা প্রকাশ করলেন ফেরেশতাদের কাছে যে, ‘আমি আদমকে সৃষ্টি করছি। আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করছি।’ এভাবে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা সৃষ্টির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন, বেহুদা-অনর্থক সৃষ্টি করেছেন—ব্যাপারটা এমন নয়। এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, যা তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং তা নিজেদের আবিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। নিজেদের গবেষণা থেকে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর তৌহিদকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সেটি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কোথাও এ কথা বলেন নাই যে, এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য, অথবা মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এগুলো আমরা নিজেরাই আবেগ দিয়ে তৈরি করে নিয়ে কিছু সংখ্যক লোক পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসাকে পুঁজি করে ভালোবাসার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
এজাতীয় বক্তব্য ও বিশ্বাস থেকে আল্লাহ তায়ালা অমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
এপ্রসংঙ্গে নিচের রেফারেন্স উত্তরটিও দেখতে পারেন।
## আপনার চোখে কোনো ভুল ধরা পড়লে সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৭০৩৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা অনেক সময় অনেকের মুখে শুনি যে রাসুল (সাঃ) কে সৃষ্টি না করলে আসমান জমিন কনো কিছু সৃষ্টি করতেন না এটা কি সত্যি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রচলিত এই কথাটি হাদীসে কুদসী হিসেবে লোকমুখে প্রসিদ্ধ।
তবে কথাটি নবীজীর হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। এটা একটা জাল বর্ননা। এব্যপারে হাদীস বিশেষজ্ঞরা একমত।
অতএব, এটা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নয়তো নবীজীর নামে মিথ্যাচারের অভিযোগে আল্লাহ তাআলার সামনে দন্ডিত হতে হবে।
নবীজীর আযমত - মুহাববত প্রকাশের জন্য জাল বর্ননার আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে ইমামুল হাদীস উস্তাদুল আসাতিযা হযরত আব্দুল মালেক সাহেবের দাঃ বাঃ প্রচলিত জাল হাদীস পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৮ দেখা যেতে পারে।
তথ্য সুত্র:
রিসালাতুল মাওযুআত-৯, তাযকিরাতুল মাওযূআত-৮৬, আলমাসনু-১৫০, কাশফুল খাফা-২/১৬৪, আল লাউলউল মারসূ-৬৬, আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআ-২/৪১০, আল বূসীরী মাদেহুর রাসূলিল আযম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-৭৫}
' لولاک لما خلقت الأفلاک، قال الصغاني: موضوع وأقول: لکن معناه صحیح، وإن لم یکن حدیثاً'۔ ( کشف الخفاء ۲/۱۴۸، الموضوعات الکبری /۷۰)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন