আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৭৬০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত জীবন বীমা কি এবং জীবন বীমা করা কি ইসলামে যায়েজ আছে ???

১৯ ডিসেম্বর, ২০২১
XCH২+GQ২

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





না, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম একটি লেনদেন। ওআইসির শাখা সংস্থা “আর্ন্তজাতিক ফিকহ একাডেমি” এবং সৌদীআরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা “উচ্চ উলামা পরিষদ” সহ বিশ্বের নির্ভরযোগ্য সকল প্রতিষ্ঠান ও অধিকাংশ ফকীহ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সকল ধরণের বানিজ্য বীমাই হারাম। চাই তা সম্পদের বীমা হোক বা জীবনের বীমা। উলামায়ে কিরাম এর একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। আমরা তন্মধ্য হতে এখানে কয়েকটি উল্লেখ করছি-

(১) এতে সুস্পষ্ট সুদ পাওয়া যায়। যেহেতু এতে যে পরিমাণ অর্থ জমা দেয় হয় বিনিময়ে তার চেয়ে অনেক বেশি গ্রহণ করা হয়। আর শরীয়তের পরিভায়ায় সরাসরি আর্থিক লেনদেনে কমবেশি মুনাফা চুক্তিকেই তো সুদ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ারা পরিষ্কার ভায়ায় সুদ হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,

وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

অর্থাৎ: ‘আর আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় তথা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)

(২) এতে ধোকা ও ঝুঁকি বিদ্যমান। যেহেতু বীমাকারীর একথা জানা নেই যে, সে কী পরিমাণ অর্থ দিবে আর কী পরিমাণ গ্রহণ করবে? এমনও হতে পারে যে, বীমা করার কিছুদিনের মধ্যেই সে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হলো। তখন বীমা প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্তানুযায়ী বিশাল অর্থ দিতে বাধ্য হবে। আবার এমনও হতে পারে যে, সারাজীবন তার কোনো দুর্ঘটনাই ঘটলো না। তাহলে এক্ষেত্রেও বীমাকারীকে সকল কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। অথচ সে জীবিত অবস্থায় এর কিছুই পাবে না; বরং মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশরা পাবে। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَيْعِ الْحَصَاةِ وَعَنْ بَيْعِ الْغَرَرِ.

অর্থাৎ: ‘রাসূল (সা.) পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে (আরবে প্রচলিত বিশেষ এক ধরণের বিক্রয় পদ্ধতি) ও প্রতারণামূলক লেনদেন থেকে নিষেধ করেছেন।’ (সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ৩৮৮১)

(৩) এতে জুয়া বিদ্যমান। যেহেতু বীমাকারী কখন মারা যাবে আর সে কতো টাকা পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর শরীয়তের পরিভাষায় অনিশ্চিত লেনদেনকেই জুয়া বলে। আল্লাহ তায়ালা জুয়াকে শয়তানের কর্ম বলে অভিহিত করেছেন এবং এ থেকে বিরত থাকার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থাৎ: ‘হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসবই শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যেনো তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা মায়েদা : ৯০)

(৪) এতে যুলুম পাওয়া যায়। যেহেতু কোনো বীমাকারী প্রয়োজনবশতঃ হলেও কিস্তি দিতে অপারগ হওয়ায় এটা বাতিল করতে চাইলে প্রতিষ্ঠান তার সমুদয় অর্থ রেখে দেয়, যা সুস্পষ্ট যুলুম ও অমানবিক। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ

অর্থাৎ: ‘হে মুমিনগণ, তোমরা এক অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’ (সূরা নিসা : ২৯)

(৫) এতে মানুষকে বিক্রয়লদ্ধ পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতেু এতে মানুষের মৃত্যু বা দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে চুক্তি করা হয়, সেহেতু এতে মানুষকে একপ্রকার পণ্য হিসেবে মূল্যায়িত করা হয়। অথচ মানুষ সম্মান ও মর্যাদাসম্পন্ন এক জাতি, যা কিছুতেই বিক্রয়যোগ্য হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا

অর্থাৎ: নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাইল ,৭০)

এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে, যার কারণে উলামায়ে কিরাম সর্বসম্মতভাবে এটাকে নাজায়েয ও হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। মূল কথা হলো, মানুয়ের রিযিকের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে। এ কথার উপর সকল মুমিনের বিশ্বাস রাখা একান্ত জরুরি। এর বিপরীত লাইফ ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে মৃত্যু পরবর্তী পরিবার খুব ভালোভাবে চলতে পারবে এ দৃঢ় বিশ্বাস অন্তরে লালন করে এ রকম হারাম একটি ব্যবস্থাপনা করে যাওয়া শুধু গোনাহই না; বরং শিরকের অর্ন্তভুক্ত। তাই এ থেকে সবার বেচেঁ থাকা একান্ত জরুরি।

ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এতে কেউ জড়িয়ে পড়ার নিজের ভুল বুঝতে পারলে আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তওবা করতঃ সঙ্গে সঙ্গে তাকে এ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। সম্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে জমাকৃত অর্থ তুলে ফেলবে। একান্ত তুলতে সক্ষম না হলে যখন বীমা প্রতিষ্ঠান তাকে সমুদয় টাকা প্রদান করবে তখন শুধু নিজের আসল টাকা রেখে বাকী লভ্যাংশ গরীব-মিসকীনদের মাঝে সওয়াবের নিয়ত ব্যতীরেকে দান করে দিবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন