যারা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মনে করে না তাদের হুকুম
প্রশ্নঃ ১১৬৪৯৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, অনেক লোককে দেখা যায় তারা বলে আমরা শুধু কুরআন-হাদীস মানি এর বাহিরে অন্য কিছু মানি না। তাদের এই কথা দ্বারা বুঝা যায় তারা সাহাবায়ে কেরামকে মানে না। তাদের হুকুম কি হবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সাহাবায়ে কেরামগণ সত্যের মাপকাঠি। সত্যের মাপকাঠি বলতে বুঝানো হয় যে, সাহাবায়ে কেরামগণ হক ও হক্কানিয়্যাত, দ্বীন ও ঈমানের ক্ষেত্রে যে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তা দ্বীনে হক বুঝার মানদণ্ড। তারা যেভাবে দ্বীনকে বুঝেছেন, যেভাবে দ্বীনকে পালন করেছেন, সেভাবেই উম্মতে মুসলিমা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসরণে পালন করে যাবে।
দ্বীনী কোন বিষয় আসলে, উক্ত বিষয়ে সাহাবাগণ কোন অর্থে বা কিভাবে তা করেছেন, তা অনুসরণ করা উম্মতের জন্য সঠিক ও যথার্থ আমলের মূল নিক্তি হবে।
সকল সাহাবাগণই হক বা সত্যের মাপকাঠি। কুরআন ও হাদীসের মাঝে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ বিদ্যমান। যেমন-
أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ [٨:٤]
তারাই হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী। [সূরা আনফাল-৪]
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ [٢:١٣٧]
অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। [সূরা বাকারা-১৩৭]
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ [٢:١٣]
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। [সূরা বাকারা-১৩]
أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٥٨:٢٢]
তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। [সূরা মুজাদালা-২২]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلَا نَصِيفَهُ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার সাহাবীগণের সমালোচনা করো না। তোমরা আমার সাহাবীগণের সমালোচনা করবে না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ্দের সমান হবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৪০] এ হাদীস পস্কিার প্রমান করে, সাহাবাগণ আল্লাহর কাছে কত মর্যাদাবান। কত শ্রেষ্ঠ। অন্যরা উহুদ পাহাড় পরিমাণ নেক কাজ করলেও সাহাবাগণের অর্ধেক মুদ পরিমাণ নেক কাজের মুকাবিলা করতে পারে না।
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا
হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যখন আমার সাহাবীদের আলোচনা আসে, তখন [তাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে] নিজেকে বিরত রাখো। [আলমু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৪২৭]
জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এ হাদীসকে হাসান বলেছেন। [আলজামেউস সাগীর, বর্ণনা নং-৬১৩]
فقد روى هذا الحديث عن ثلاثة من الصحابة واسانيده وان كان فيها مقال كما ذكره فى فيض القدير ولكنه اعتضد بتعدد الروايات فلذالك رمز السيوطى عليه برمز الحسن وعد هذا الحيدث حسنا (احكام القرآن لمفتى شفيع-4/273)
رِيَاحُ بْنُ الْحَارِثِ، قَالَ: كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ فُلَانٍ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ وَعِنْدَهُ أَهْلُ الْكُوفَةِ، فَجَاءَ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ فَرَحَّبَ بِهِ وَحَيَّاهُ وَأَقْعَدَهُ عِنْدَ رِجْلِهِ عَلَى السَّرِيرِ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ، يُقَالُ لَهُ قَيْسُ بْنُ عَلْقَمَةَ فَاسْتَقْبَلَهُ فَسَبَّ وَسَبَّ، فَقَالَ سَعِيدٌ: مَنْ يَسُبُّ هَذَا الرَّجُلُ؟ قَالَ: يَسُبُّ عَلِيًّا، قَالَ أَلَا أَرَى أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَبُّونَ عِنْدَكَ ثُمَّ لَا تُنْكِرُ، وَلَا تُغَيِّرُ، أَنَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَإِنِّي لَغَنِيٌّ أَنْ أَقُولَ عَلَيْهِ مَا لَمْ يَقُلْ فَيَسْأَلَنِي عَنْهُ غَدًا إِذَا لَقِيتُهُ: «أَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ، وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ» وَسَاقَ مَعْنَاهُ ثُمَّ قَالَ: «لَمَشْهَدُ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْبَرُّ فِيهِ وَجْهُهُ، خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ، وَلَوْ عُمِّرَ عُمُرَ نُوحٍ»
রিয়াহ ইবনুল হারিস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি অমুক লোকের নিকট কুফার মাসজিদে বসা ছিলাম এবং তার নিকট কুফার লোকজনও উপস্থিত ছিলো। এ সময় সাঈদ ইবনু যায়িদ আমর ইবনু নুফাইল (রাঃ) এলে তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ ও সালাম জানিয়ে খাটের উপর নিজের পায়ের কাছে বসালেন। অতঃপর কায়িস ইবনু আলকামাহ নামক জনৈক কুফাবাসী এলে তাকেও অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর সে গালাগালি করতে লাগলো। সাঈদ (রাঃ) বললেন, এ ব্যক্তি কাকে গালি দিচ্ছে? তিনি বললেন, সে আলী (রাঃ)-কে গালি দিচ্ছে। তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীকে আপনার সম্মুখে গালি দিচ্ছে অথচ আপনি তাকে নিষেধ করছেন না আর থামাচ্ছেনও না!
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আমি তাঁর সম্পর্কে এমন উক্তি করা থেকে মুক্ত যা তিনি বলেননি। অতঃপর কিয়ামাতের দিন যখন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবূ বাকর (রাঃ) জান্নাতী, উমার (রাঃ) জান্নাতী। বর্ণনাকারী অতঃপর অনুরূপ অর্থের বর্ণনা করলেন এবং তিনি বললেন, তাদের কোনো একজনের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ, যে সাহচর্যে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাও তোমাদের কোনো ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ (আঃ)-এর মতো দীর্ঘ আয়ু পায়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৬৫০]
এ হাদীসে সমস্ত সাহাবাগণের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। একজন সাহাবী যিনি নবীর সাহচর্য পেয়েছেন, যদিও তার সাহচর্যে নবী সন্তুষ্ট নাও হয়ে থাকেন, তবু সেই সাহাবী সাড়ে নয়শত বছর যাবত ইবাদতকারী ব্যক্তি থেকে উত্তম।
ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمُقَامُ أَحَدِهِمْ سَاعَةً، خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ
ইবনে উমর রাঃ বলেন, তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের সমালোচনা করো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৬, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০৮২]
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «أُمِرُوا بِالِاسْتِغْفَارِ لِأَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبُّوهُمْ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ করা করা হয়েছে, অথচ লোকেরা তাদের সমালোচনা করছে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০৮৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩০২২, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৩৭১৯]
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা একথা পরিস্কার প্রমাণিত যে, সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে সমালোচনা বা খারাপ মন্তব্য নয়, বরং তাদের জন্য ইস্তিগফার এবং প্রশংসনীয় মন্তব্য করাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তামান্না ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা অনেকেই তা লঙ্ঘণ করছি। আল্লাহ হিফাযত করুন।
عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ
হযরত আত্বা রহঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীর সমালোচনা করে, তার উপর আল্লাহর লানত। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০৮৬]
হাদীসের কিতাবের মাঝে যে সনদ আছে। মুহাদ্দিসীনে কেরাম সনদের প্রতিটি রাবীদের বিষয়ে কালাম করলেও সাহাবাগণের ক্ষেত্রে জারাহ তা’দীলের কিতাবে কোন কালাম নেই। বরং সকলের ঐক্যমত্ব হলো, সকল সাহাবীগণই ন্যায়নিষ্ঠ। [মিরকাত-৫/৫১৭, উমদাতুল কারী-২/১০৫]
সুতরাং সকল সাহাবাগণই সত্যের মাপকাঠি। দ্বীন বুঝার মানদণ্ড। হকের উপর চলার আলোকবর্তিকা।
যারা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে মানে না তারা বিদআতী ও ফাসেক।
وَقَالَ الْمَيْمُونِيُّ قَالَ لِي أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ: يَا أَبَا الْحَسَنِ إِذَا رَأَيْتَ رَجُلًا يَذْكُرُ أَحَدًا مِنَ الصَّحَابَةِ بِسُوءٍ فَاتَّهِمْهُ عَلَى الْإِسْلَامِ.
মাইমুনী রহঃ বলেন, আমাকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বলেছেন, হে আবুল হাসান! যখন তুমি দেখবে কোন ব্যক্তি সাহাবাগণের মাঝে কোন সাহাবীর ব্যাপারে সমালোচনা করছে, তাহলে তুমি বুঝে নিও তার ঈমান ও ইসলামে খাদ আছে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৮, ১৪৯, ইফাবা-৮/২৬৫]
وَقَالَ الْفَضْلُ بن زياد: سمعت أبا عبد الله يسأل عَنْ رَجُلٍ تَنَقَّصَ مُعَاوِيَةَ وَعَمْرَو بْنَ الْعَاصِ أيقال له رافضي؟ فقال: إنه لم يجترئ عَلَيْهِمَا إِلَّا وَلَهُ خَبِيئَةُ سُوءٍ، مَا انْتَقَصَ أحد أحداً من الصحابة إِلَّا وَلَهُ دَاخِلَةُ سُوءٍ.
ফজল বিন যিয়াদ হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ থেকে শুনেছেন। তাকে একজন প্রশ্ন করল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এবং হযরত আমর বিন আস রাঃ এর ব্যাপারে মন্দ বলে। লোকটিকে কি রাফেজী বলা হবে?
তখন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বললেন, অন্তর কলুষিত এবং খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া সে দু’জনের প্রতি এ দুঃসাহস দেখায়নি। আর অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ কোন সাহাবীর সমালোচনা করেনি। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৮, ১৪৯, ইফাবা-৮/২৬৫]
قَالَ: مَا رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ ضَرَبَ إِنْسَانًا قَطُّ إِلَّا إِنْسَانًا شَتَمَ معاوية، فإنه ضرب أسواطاً.
ইবনুল মুবারক বলেন, মুহাম্মদ বিন মুসলিম থেকে, তিনি ইবরাহীম বিন মায়সারা থেকে তিনি বলেন, হযরত মুয়াবিয়ার সমালোচনাকারী এক ব্যক্তি ব্যতীত আমি উমর বিন আব্দুল আজীজকে কোন মানুষের গায়ে হাত উঠাতে দেখিনি। ঐ ব্যক্তিকে তিনি কয়েক ঘা চাবুক লাগিয়ে ছিলেন। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৮, ১৪৯ ইফাবা-৮/২৬৫, আলইস্তিআব-৩/৩৮৩]
وقال بعض السلف: بينما أَنَا عَلَى جَبَلٍ بِالشَّامِ إِذْ سَمِعْتُ هَاتِفًا يَقُولُ: مَنْ أَبْغَضَ الصِّدِّيقَ فَذَاكَ زِنْدِيقٌ، وَمَنْ أبغض عمر فإلى جهنم زمراً، وَمَنْ أَبْغَضَ عُثْمَانَ فَذَاكَ خَصْمُهُ الرَّحْمَنُ، وَمَنْ أبغض علياً فَذَاكَ خَصْمُهُ النَّبِيُّ، وَمَنْ أَبْغَضَ مُعَاوِيَهْ سَحَبَتْهُ الزبانية، إلى جهنم الحامية، يرمى به في الحامية الْهَاوِيَهْ
সালাফে সালেহীনদের একজন বলেন, যখন আমি শামের এক পাহাড়ে অবস্থান করছিলাম তখন এক (অদৃশ্য) ঘোষককে বলতে শুনলাম-সিদ্দীকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হল যিনদীক, ধর্মদ্রোহী। উমরের প্রতি বিদ্বেষীর ঠাঁই হল জাহান্নাম। উসমান বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন আল্লাহ। আলী বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর যে মুয়াবিয়ার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে (জাহান্নামের) ফেরেশতারা তাকে হেঁচড়ে নিয়ে যাবে। উত্তপ্ত জাহান্নামের দিকে এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে উত্তপ্ত অগ্নি গহ্ববরে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৮-১৪৯, ১৪৯-১৫০, ইফাবা-৮/২৬৫-২৬৬]
আব্দুল আজীজ বিন আহমাদ বিন হামেদ কুরাইশী রহঃ লিখেছেনঃ
فحُسن الظن والتأدب لجميعهم واجب على كل مسلم. فهذا مذهب السلف الصالح وأهل الحديث والأصول. ونسأل الله الثبات عليه.
সমস্ত সাহাবাগণের প্রতি সুধারণা রাখা এবং আদব রাখা সকল মুসলমানের উপর ওয়াজিব। সালাফে সালেহীন, আহলে হাদীস এবং আহলে উসূল (আহলে ফিক্বহ) এর এটাই মতাদর্শ। আর আমরা আল্লাহ কাছে এর উপরই অটল থাকার আর্জি জানাই। [আননাহিয়াহ আন তা’নি আমীরিল মু’মিমীনা মুয়াবিয়াহ-৬৭]
শামসুল আইয়িম্মাহ সারাখসী রহঃ লিখেনঃ
لِأَن الله تَعَالَى أثنى عَلَيْهِم فِي غير مَوضِع من كِتَابه كَمَا قَالَ تَعَالَى {مُحَمَّد رَسُول الله وَالَّذين مَعَه} الْآيَة وَرَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَصفهم بِأَنَّهُم خير النَّاس فَقَالَ خير النَّاس قَرْني الَّذين أَنا فيهم والشريعة إِنَّمَا بلغتنا بنقلهم فَمن طعن فيهم فَهُوَ ملحد منابذ لِلْإِسْلَامِ دواؤه السَّيْف إِن لم يتب
কুরআনে কারীমের একাধিক স্থানে আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর প্রশংসা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন {مُحَمَّد رَسُول الله وَالَّذين مَعَه} الْآيَة এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ইরশাদে সাহাবাগণকে খাইরুন্নাস তথা সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। আর এ লোকেরা সেই জমানার শ্রেষ্ঠ মানুষ যে জমানায় আমি নবী রয়েছি। শরীয়তে ইসলামিয়া সাহাবাগণের মাধ্যমেই বর্ণিত হয়ে আমাদের পর্যন্ত এসেছে। [অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম ইসলামী শরীয়তের বিস্তারকারী] সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে সমালোচনা করবে সে মুলহিদ এবং বে-দ্বীন। ইসলামের দিকে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। যদি সে ব্যক্তি তওবা না করে তাহলে তার একমাত্র সমাধান তলোয়ার। [উসূলে সারাখসী-২/১৩৪]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেছেনঃ
ثم أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد هؤلاء الأربعة خير الناس لا يجوز لأحد أن يذكر شيئا من مساويهم ولا يطعن على أحد منهم بعيب ولا نقص فمن فعل ذلك فقد وجب على السلطان تأديبه وعقوبته ليس له أن يعفو عنه بل يعاقبه ويستتيبه فإن تاب قبل منه وإن ثبت أعاد عليه العقوبة وخلده الحبس حتى يموت أو يراجع
চারজন খলীফায়ে রাশেদের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত সাহাবা রাঃ খাইরুন নাস। তাদের ব্যাপারে সামান্য খারাবী বর্ণনা করাও কারো জন্য জায়েজ নয়। কোন একজন সাহাবীর দোষ এবং ত্রুটি বর্ণনা করার সুযোগ নেই। যদি কোন ব্যক্তি এ কাজ করে, তাহলে শাসকের দায়িত্ব হল, তাকে শিক্ষা দেয়া এবং তাকে শাস্তি দেয়া। তাকে ক্ষমা করা যাবে না, বরং তাকে শাস্তি দিতে হবে। যদি সে তওবা করে, তাহলে তার তওবা গ্রহণ করা হবে। যদি সে তওবা না করে সমালোচনার উপর অটল থাকে, তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার আবার কড়া শাস্তি দিতে হবে এবং তাকে আজীবনের জন্য বন্দী করবে যতক্ষণ না সে মারা যায় বা তওবা করে। [আসসারেমুল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল-৫৭৩, ৫৬৮]
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলামঃ
সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর ব্যাপারে সুধারণা রাখতে হবে। কুধারণা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর ব্যাপারে যে ব্যক্তি খারাপ মন্তব্য করবে বা সমালোচনা করবে তার ইসলাম সন্দেহযুক্ত, শরীয়তে তার দ্বীনের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। যে কোন সাহাবীর ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাকে তওবা করানো হবে। যদি তওবা না করে তাহলে তাকে আজীবনের জন্য বন্দী করা হবে। তওবা করলে মুক্তি মিলবে নতুবা মৃত্যু পর্যন্ত বন্দীত্বের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এধরণের ব্যক্তির পিছনে ইক্তিদা করা মাকরুহে তাহরিমী। নামায পড়লে নামায হবে। কিন্তু নামায মাকরুহে তাহরিমী হবে।
فى بدائع الصنائع – وَهَلْ تَجُوزُ الصَّلَاةُ خَلْفَهُ قال بَعْضُ مَشَايِخِنَا إنَّ الصَّلَاةُ خَلْفَ الْمُبْتَدِعِ لَا تَجُوزُ
کیا علامہ مودودی نے صحابہ اور انبیاء پر ہاتھ صاف نہیں کیا تو نماز ان کے متبعین کے پیچھے نماز کیسے درست ہے شیعہ سے زیادہ خرابی انہوں نے کی اور ملا علی قاری نے ان کے دائرہ اسلام سے خارج ہونے کی بات کی ہے ، مدلل اور مفصل بیان فرمائیں۔
بسم الله الرحمن الرحيم
جو شخص صحابہ کو معیار حق نہ سمجھے ، اُن پر تنقید کرے ، اسلاف پر طعن و تشنیع کرے ، ایک مشت سے پہلے ڈاڑھی ترشوائے ، اُس کو امام بنانا مکروہ ہے ۔
واللہ تعالیٰ اعلم
جواب نمبر: 165102
دارالافتاء،
دارالعلوم دیوبند
البحر الرائق میں ہے:
"(قوله: وكره إمامة العبد والأعرابي والفاسق والمبتدع والأعمى وولد الزنا) بيان للشيئين الصحة والكراهةأما الصحة فمبنية على وجود الأهلية للصلاة مع أداء الأركان وهما موجودان من غير نقص في الشرائط والأركان ... وأطلق المصنف في المبتدع فشمل كل مبتدع هو من أهل قبلتنا، وقيده في المحيط والخلاصة والمجتبى وغيرها بأن لاتكون بدعته تكفره فإن كانت تكفره فالصلاة خلفه لاتجوز، وعبارة الخلاصة هكذا، وفي الأصل: الاقتداء بأهل الأهواء جائز إلا الجهمية والقدرية والروافض الغالي ومن يقول بخلق القرآن والخطابية والمشبهة.
وجملته أن من كان من أهل قبلتنا ولم يغل في هواه حتى يحكم بكفره تجوز الصلاة خلفه وتكره ولا تجوز الصلاة خلف من ينكر شفاعة النبي أو ينكر الكرام الكاتبين أو ينكر الرؤية لأنه كافر."
(كتاب الصلاة، باب الإمامة (1/ 370)،ط. دار المعرفة، بيروت)
فتاوى هنديه میں ہے:
"قال المرغيناني: تجوز الصلاة خلف صاحب هوى وبدعة ولا تجوز خلف الرافضي والجهمي والقدري والمشبهة ومن يقول بخلق القرآن وحاصله إن كان هوى لا يكفر به صاحبه تجوز الصلاة خلفه مع الكراهة وإلا فلا. هكذا في التبيين والخلاصة وهو الصحيح."
(كتاب الصلاة، الباب الخامس في الإمامة، الفصل الثالث في بيان من يصلح إماما لغيره (1/ 84)،ط, رشيديه)
فتاوی شامی میں ہے:
"(قوله: نال فضل الجماعة) أفاد أن الصلاة خلفهما أولى من الانفراد لكن لاينال كما ينال خلف تقي ورع."
(كتاب الصلاة، باب الإمامة (1/ 562)،ط. سعيد)
اگر اتفاقاً پڑھ لی تو نماز لوٹانے کی ضرورت نہیں، کراہت تحریمی کے ساتھ نماز ہوجائے گی۔
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শিক্ষক, হাদীস ও ফিকহ বিভাগ
মারকাযুশ শরীয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন