বাসা বাড়ী বন্ধক রেখে সুদ গ্রহন
প্রশ্নঃ ১১৬১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার এক আত্মীয় একজন ফ্ল্যাটের মালিককে কিছু টাকা ধার দিবেন এই মর্মে যে, ওই টাকা ফেরত দেওয়া পর্যন্ত, টাকা ধার দেওয়া ব্যক্তি দান গ্রহীতার একটি অতিরিক্ত ফ্ল্যাটে বসবাস করবেন। ফ্ল্যাটের মালিক যেদিন টাকা পরিশোধ করবেন, সেদিন টাকা ধার দেওয়া ব্যক্তি দান গ্রহীতার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিবেন। কিন্তু হঠাৎ করে সুদের কথা চিন্তা করে, টাকা ধার দেওয়া ব্যক্তি ফ্ল্যাটের মালিককে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫০০/১০০০ টাকা প্রদান করিবেন বলে ঠিক করলেন। এবং দান গ্রহীতাও তাতে রাজি হলেন।
আমার প্রশ্ন হল, এই ধরনের লেনদেন ইসলামী শরীয়তে কতটুকু জায়েজ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এধরণের লেনদেন ইসলামী শরিয়তে মোটেও জায়েজ নাই। কেননা হাদিস শরিফে ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহিতা থেকে উপকৃত হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এটাকে সুদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর পরবর্তীতে ৫০০/১০০০ কমিয়ে যে বাহানা করা হয় সেটাও শরিয়ত সম্মত নয়। বরং এটা সুদ গ্রহাণের একটি ভিন্ন কৌশল মাত্র। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এজাতীয় লেনদেন এবং হিলা-বাহানা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকা অবশ্যক।
এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০৪১২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম মুফতি সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, যদি কেউ এক বছর মেয়াদি 50000 টাকার ঋণ গ্রহণ করে এবং ঋণদাতার নিকট ঋণগ্রহীতার একটি জমি বন্ধক রাখে। আর ঋণদাতা এক বছর সেই জমি চাষাবাদ করে, এক বছর পর ঋণগ্রহীতা সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে তার জমি ফেরত নেয়, তাহলে এটা কি জায়েজ হবে? যদি যায়েজ না হয় তাহলে কোন পদ্ধতিতে জায়েজ হতে পারে?এই মাসআলার কোন জায়েজ পদ্ধতি থাকলে আশা করি জানাবেন। কারণ কখনো কখনো ঋণগ্রহীতা ঋণ নিয়ে টালবাহানা করে তাই বাধ্য হয়ে বর্তমান সমাজে ঋণদাতাও তার জমি বন্ধক রেখে উপভোগ করে থাকে।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নে উত্তর জানতে নিজের প্রশ্নোত্তরটি পড়ূন।
প্রশ্ন: মুহতারাম! আমাদের দেশে জমি বন্ধক দেয়ার যে পদ্ধতি প্রচলিত তা কি জায়েয? পদ্ধতিটি হল, কোনো ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কারো কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি বন্ধক নিয়ে থাকে। সাধরণত কত বছরের জন্য বন্ধক নেয়া হল তা উল্লেখ থাকে না। টাকাদাতা জমি ভোগ করতে থাকে। এভাবে দু-চার বছর চলে যায়। এরপর জমির মালিক টাকাদাতার মূল টাকা ফিরিয়ে দিয়ে নিজের জমি ফিরিয়ে নেয়। এ পদ্ধতি জায়েয কি না? যদি টাকাদাতা এরূপ শর্ত করে নেয় যে, বছরে বছরে তার টাকা থেকে ৫০০/১০০০ টাকা বা ৫% কিংবা ১০% টাকা কাটা যাবে তাহলে কি জায়েয হবে? বিষয়টা জটিল মনে হচ্ছে। একটু বিস্তারিত খুলে বললে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিধান কী? যামানত? রাহান-বন্ধক? না কি? একটু খুলে বললে উপকার হয়।
উত্তর
ঋণ দিয়ে জমি বন্ধক রাখার প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি জায়েয নয়। কেননা ঋণ দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বললেন, এক লোক আমার নিকট একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, অতঃপর আমি তাতে আরোহণ করেছি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন-
مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.
তুমি উক্ত ঘোড়ার উপর যে পরিমাণ আরোহণ করেছ তা সুদ হয়েছে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৭১)
আর ঋণের অর্থ থেকে বছর প্রতি ৫০০/১০০০ টাকা কর্তন করার শর্ত করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ বন্ধকী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য নামমাত্র ভাড়া দিয়ে তার ভোগ-দখল একটি হিলা বা ছুতা মাত্র। সকলেই জানে যে, জমি মালিককে ঋণ না দেয়া হলে এত কম মূল্যে ভাড়া দিত না।
আর উক্ত লেনদেনে যে টাকা দেয়া হয় তা করয তথা ঋণ। আমানত নয়। আর সেই করয হাসিলের জন্যই বন্ধক নেয়া-দেয়া হয়ে থাকে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
সৌজন্যে: মাসিক আলকাউসার
সফর ১৪৪২ || অক্টোবর ২০২০
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
প্রশ্নঃ ১০৬৫৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত! বাসা মর্টগেজ রাখা কী জায়েজ আছে? এক মাদ্রাসার বড় হুজুর বাসা মর্টগেজ রাখছে। ইনশাআল্লাহ্ বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন। জাজাকুমুল্লাহ খাইরান।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বাড়ি মর্টগেজ বা বন্ধক পদ্ধতি
কোনো কোনো বাড়ির মালিকের একত্রে পাঁচ-দশ লাখ টাকা দরকার হলে কারো থেকে এ শর্তে নেয় যে, পাঁচ বছরের জন্য আপনি আমাকে দশ লাখ টাকা দেন। আপনার টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছর পর্যন্ত আপনি আমার বাড়িতে ফ্রী বসবাস করবেন। অথবা অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে আপনি লাভবান হবেন। অনেকটা গ্রাম দেশের জমি বন্ধক দেয়ার মতই।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় নির্ধারিত থাকে না; বরং বলা হয় যত দিন আপনার টাকা না দিব তত দিন আমার বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভোগ করবেন। এই লেনদেন সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ এক্ষেত্রে বাসাটি বন্ধকী বস্তু। আর বন্ধকী বস্তু থেকে উপকার গ্রহণ করা ঋণ দিয়ে লাভ ভোগ করার মত, যা সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত।
عَنِ ابْنِ سِيرِينَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ: إِنّ رَجُلًا رَهَنَنِي فَرَسًا، فَرَكِبْتُهَا. قَالَ مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.
মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. বলেন, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি তার পিঠে আরোহন করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, ঘোড়ার পিঠে চড়ে যে উপকার ভোগ করেছ তা সুদ। -মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৮০৭১
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ صَاحِبِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ قَالَ كُلّ قَرْضٍ جَرّ مَنْفَعَةً فَهُوَ وَجْهٌ مِنْ وُجُوهِ الرِّبَا.
ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যেই ঋণ কোনো লাভ নিয়ে আসে তা রিবার প্রকারসমূহের মধ্যে একটি। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১০৯৩৩
-মাসিক আলকাউসার বর্ষ: ১৪, সংখ্যা: ০৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন