প্রশ্নঃ ১১৩৪৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
১) নামাজে সূরার আগে কি বিসমিল্লাহ বলতে হবে?
২) তাকবির বলার সময় হাত কোন বরাবর উঠাতে হবে? এবং প্রত্যেক তাকবীরেই কি হাত তুলতে হবে। আর হাত কি নাভি বরাবর নাকি বুকে বাধবো?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. জি, নামাজে সুরা শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। এটা সুন্নত। তবে ছুটে গেলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়।
১. তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় পুরুষের জন্য কান বরাবর এবং নারীর জন্য কাঁধ বরাবর হাত তুলতে হবে।
# শুধুমাত্র তাকবিরে তাহরিমায় হাত তুলতে হবে। অন্য কোনো তাকবিরে হাত তুলতে হবে না। (তবে ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবির বলার সময় হাত তুলতে হয়।)
# পুরুষ যথাসম্ভব নাভির নিচে এবং নারীরা বুকের ওপর হাত বাঁধবে।
বিস্তারিত জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরগুলো দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১১৪৫৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রফউল ইয়াদাইন ও জোরে আমিন বলা কী হাদিসসম্মত আমল?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
একাধিক হাদীস ও অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল একথা প্রমাণ করে যে, নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত তোলা সুন্নত। রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় হাত তোলা সুন্নত নয়।
সাহাবীগনের যুগে মদীনা শরীফ এবং কুফা এই দুটি শহরেই অধিকাংশ সাহাবী বসবাস করতেন। কুফা নগরীতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী পাঁচশ সাহাবীসহ পনেরশ সাহাবী অবস্থান করতেন। তাঁদের মধ্যে তিনশত সাহাবী ছিলেন, যারা বায়আতে রেযওয়ানে শরীক ছিলেন এবং সত্তরজন সাহাবী এমন ছিলেন, যারা বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন।(মুকাদ্দমা নাসবুর রায়াহ দ্রষ্টব্য
তাঁদের মধ্যে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.ও ছিলেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নামাযে অনেক স্থানে হাত তুলতে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন । তাঁদের মধ্যে হযরত আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও হযরত আলী রা.ও ছিলেন, যারা অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে প্রথম কাতারেই নামায আদায় করেছিলেন। হযরত আলী রা.ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাধিক স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করতে দেখেছেন বলে বর্ণিত আছে। এই দুই নগরীর আমল আমাদের সামনে রাখতে হবে।
মদীনা শরীফের আমল:
ইমাম মালেক রহ. -যিনি মদীনা শরীফের বড় মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন- তিনি বলেছেন,
لا أعرف رفع اليدين في شيء من تكبير الصلاة لا في خفض ولا في رفع إلا في افتتاح الصلاة. (المدونة الكبرى صـ ١/٧١
অর্থাৎ নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন তাকবীরের সময়, ঝোঁকার সময় বা সোজা হওয়ার সময় হাত তোলার নিয়ম আমার জানা নেই। (আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ১খ, ৭১পৃ)
কূফা নগরীর আমল:
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাসর (মৃত্যু ২৯৪ হি.) বলেছেন,
لا نعلم مصرا من الأمصار ينسب إلى أهله العلم قديما تركوا بإجماعهم رفع اليدين عند الخفض والرفع في الصلاة إلا أهل الكوفة، كذا في التمهيد ৯/২১২،২১৩ وزاد في الاستذكار: فكلهم لا يرفع إلا في الإحرام. (رقم ১৪০)
আমরা কূফাবাসী ছাড়া আর কোন শহরবাসী: যারা প্রাচীনকালে ইলমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন: সম্পর্কে জানি না, যারা সকলে মিলে নামাযে ঝোঁকার সময় ও সোজা হওয়ার সময় হাত তোলা ছেড়ে দিয়েছেন। (দ্র, তামহীদ লি ইবনি আব্দুল বার রহ. ৯/২১২,২১৩) আল ইসতিযকার গ্রন্থে একথাও ইবনে নাসর থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, কূফাবাসী সকলে শুধু তাহরীমার সময় হাত তুলতেন। (হাদীস ১৪০) (টীকা-১)
লক্ষ করুন, সকলে মিলে ছেড়েছেন এমন শহর শুধু কূফাই ছিল। তার মানে অন্যান্য শহরে ছেড়ে দেয়ারও লোক ছিল, হাত তোলারও লোক ছিল।
চিন্তা করুন, কূফার পনেরশ’ সাহাবীর কেউ যদি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় হাত তুলতেন, তাহলে তাঁদের শাগরেদদের কেউ না কেউ অবশ্যই হাত তুলতেন। কিন্তু না, তাঁদের কেউই হাত তুলতেন না। ইমাম তিরমিযীও হযরত ইবনে মাসউদ রা. এর একবার হাত তোলার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
وبه يقول غير واحد من أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين وهو قول سفيان الثوري وأهل الكوفة
অর্থাৎ এ হাদীস অনুসারেই মত দিয়েছেন একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী। সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীদের মতও এই হাদীস অনুসারে।
তামহীদ গ্রন্থে ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেছেন,
روى ابن القاسم وغيره عن مالك أنه كان يرى رفع اليدين في الصلاة ضعيفا إلا في تكبيرة الإحرام وحدها وتعلق بهذه الرواية عن مالك أكثر المالكيين وهو قول الكوفيين سفيان الثوري وأبي حنيفة وأصحابه والحسن بن حي وسائر فقهاء الكوفة قديما وحديثا.
অর্থাৎ ইবনুল কাসেম প্রমুখ ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া নামাযে অন্য কোথাও রফয়ে ইয়াদাইনকে দুর্বল মনে করতেন। ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণিত এ বর্ণনাকেই মালেকী মাযহাবের অধিকাংশ আলেম গ্রহণ করেছেন। সুফিয়ান ছাওরী, আবু হানীফা, তাঁর শিষ্যবর্গ, হাসান ইবনে হায়্য, এমনকি প্রাচীন ও পরবর্তী উভয়কালের সকল কূফাবাসীর মত এটাই। (৯/২১২,২১৩)
সুফিয়ান ছাওরীর জীবনী পড়–ন। তাঁকে ‘আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস’ বা হাদীসের সম্রাট উপাধি দেওয়া হয়েছে। রফয়ে ইয়াদাইন নিয়মিত সুন্নত হিসাবে প্রমাণিত থাকলে তিনি তা ছেড়ে দিতেন না। ইমাম মালেক র.ও ছিলেন হাদীসের সম্রাট। মুয়াত্তায় তিনি রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। এতদসত্ত্বেও মদীনা শরীফের অধিকাংশের আমল তদনুযায়ী না থাকার কারণে তিনিও হাত না তোলাকেই অবলম্বন করেছেন। মদীনা ও কূফার এ সকল সাহাবী ও তাবেয়ী একারণেই তো রুকুতে যাওয়ার আগে ও পরে হাত তুলতেন না যে- তাঁদের মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মধ্যে তেমনটা করলেও অধিকাংশ সময় তা করেননি। কিংবা পূর্বে করেছেন বটে, পরে ছেড়ে দিয়েছেন। ভূমিকা স্বরূপ একথাগুলো আরজ করার পর এ বিষয়ের হাদীসগুলো তুলে ধরছি।
শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের দলিল
১ আলকামা র. বলেন,
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ في أول مَرَّة. أخرجه أبو داود (٧٤٨) والترمذي (٢٥٧) والنسائي (١٠٥٨) وقال الترمذي : حديث حسن وصححه ابن حزم في المحلى ٤/٨٨ وقال أحمد شاكر في تعليقه على الترمذي : هذا الحديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ وهو حديث صحيح وما قالوا في تعليله ليس بعلة
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মত নামায পড়বনা? একথা বলে তিনি নামায পড়লেন, এবং তাতে শুধু প্রথম বারই হাত তুললেন। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৪৮, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৫৭, নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৫৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৬, মুসনাদে আহমদ, ১খ, ৩৮৮পৃ।
ইমাম তিরমিযী র. এ হাদীসকে ‘হাসান’ বলেছেন, ইবনে হাযম জাহিরী (যিনি কোন মাযহাব অনুসরণ করতেন না) এটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী শরীফের টীকায় শায়খ আহমদ শাকের (তিনি মিসরের কাজী ছিলেন) বলেছেন, এ হাদীসটিকে ইবনে হাযমসহ অনেক হাফেজে হাদীস সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আসলেও এটি সহীহ হাদীস। অনেকে এর যেসব ত্রুটির কথা বলেছেন সেগুলো বাস্তবে কোন ত্রুটি নয়।
আহমদ শাকের রহ. অন্যদের উত্থাপিত যে ত্রুটির প্রতি ইংগিত করেছেন তন্মধ্যে একটি হলো; কেউ কেউ বলেছেন, এ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী র. বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক র. বলেছেন :
ولم يثبت حديث ابن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع إلا في أول مرة.
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. এর এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু প্রথমবারই হাত তুলেছেন। এর জবাব এই যে, ইবনে মাসউদ রা. থেকে এ ব্যাপারে দুটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একটি মৌখিক বর্ণনারূপে, অপরটি নিজে আমল করে দেখানোর মাধ্যমে। ইবনুল মুবারক র. প্রথমটি সম্পর্কে ঐ মন্তব্য করেছেন। উপরে উদ্ধৃত তার বক্তব্য থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয় বর্ণনা সম্পর্কে তিনি ঐ মন্তব্য করেননি। এর প্রমাণ তিনি নিজেও দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যা নাসায়ী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীস নং ১০২৬।
২
হযরত বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه إلى قريب من أذنيه ثم لا يعود. أخرجه أبو داود (٧٥٢) وابن أبي شيبة (٢٤٥٥) وعبد الرزاق في المصنف (২৫৩১) والدارقطني (১/২৯৩، رقم ২১) فرواه عن البراء ثقتان عدي ين ثابت عند الدارقطني وعبد الرحمن بن أبي ليلى عند غيره وعنهما يزيد بن أبي زياد والحكم بن عتيبة وعيسى ، والحكم وعيسى ثقتان ويزيد صدوق عند البخاري ومسلم وصحح حديثه الترمذي (৭৭৭،১১৪) وعن يزيد ابن أبي ليلى والسفيانان وشريك و اسرائيل واسماعيل بن زكريا والإمام أبو حنيفة وغيرهم
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় কানের কাছাকাছি হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও হাত তুলতেন না।
আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৫২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৫। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৫৩১), দারাকুতনী (১খ, ২৯৩ পৃ.) হাদীস ২১।
৩
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ترفع الأيدي في سبعة مواطن، افتتاح الصلاة واستقبال البيت والصفا والمروة والموقفين وعند الحجر، أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٥) موقوفا والطبراني (١٢٠٧٢) مرفوعا
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হয়। ১. নামাযের শুরুতে, ২. কাবা শরীফের সামনে আসলে, ৩. সাফা পাহাড়ে উঠলে, ৪. মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫. আরাফায় ৬. মুযাদালিফায় ৭. হাজরে আসওয়াদের সামনে।
তাবারানী, মুজামে কাবীর(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যরূপে) নং ১২০৭২। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৫ (সাহাবীর বক্তব্যরূপে)। সুনানে বায়হবাকী, ৫খ, ৭২-৭৩ পৃ। হায়ছামী র. হযরত ইবনে উমর রা. থেকেও মারফূরূপে এটি উল্লেখ করেছেন।(দ্র. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২খ, ২২২ পৃ) এখানে উদ্ধৃত হাদীসটি এই শব্দে মুসনাদে বাযযারের বরাত দিয়ে হায়ছামী তার কাশফুল আসতারে উল্লেখ করেছেন। (হা. ৫১৯)
৪
হযরত ইবনে উমর রা. বলেছেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرفع يديه إذا افتتح الصلاة ثم لا يعود. رواه البيهقي في الخلافيات من حديث محمد بن غالب ثنا أحمد بن محمد البرتي ثنا عبد الله بن عون الخراز ثنا مالك عن الزهري عن سالم عن ابن عمر. قال الحافظ مغلطائي: لا بأس بسنده. وقال الشيخ عابد السندي: هذا الحديث عندي صحيح لا محالة رجاله رجال الصحيح.(راجع- الإمام ابن ماجه وكتابه السنن صـ ٢٥٢) قلت: ويؤيده أيضا عمل ابن عمر على وفقه كما عند الطحاوي ١/١١٠ وابن أبي شيبة (٢٤٦٧) والبيهقي في المعرفة عن مجاهد قال: صليت خلف ابن عمر فلم يكن يرفع يديه إلا في التكبيرة الأولى من الصلاة. وأخرجه الإمام محمد في الموطا عن محمد بن أبان بن صالح عن عبد العزيز بن حكيم قال: رأيت ابن عمر يرفع يديه حذاء أذنيه في أول تكبيرة افتتاح الصلاة ولم يرفعهما فيما سوى ذلك.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। এর পর আর করতেন না। (বায়হাকী, আল খিলাফিয়াত) । হাফেজ মুগলতাঈ র. বলেছেন, এর সনদে কোন সমস্যা নেই। শায়খ আবেদ সিন্ধী র. বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে এটি অবশ্যই সহীহ। ইমাম মালেক র. থেকে ইবনুল কাসেম ও ইবনে ওয়াহব র. একবার হাত ওঠানোর যে বর্ণনা পেশ করেছেন, যা আল মুদাওয়ানা’য় বিদ্ধৃত হয়েছে, তা এই বর্ণনার সমর্থন করে। এমনিভাবে হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি এবং তাঁর আমলও এর সমর্থক।
ইবনে আবী শায়বা র. স্বীয় মুসান্নাফে ও তাহাবী র. শরহে মাআনিল আছার গ্রন্থে মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত ইবনে উমর রা. এর পেছনে নামায পড়েছি। তিনি নামাযের সূচনায় ছাড়া আর কোথাও হাত তোলেন নি। এর সনদ সহীহ। ইমাম মুহাম্মদ র.ও মুয়াত্তায় হযরত ইবনে উমর রা.এর অনুরূপ আমলের কথা উদ্ধৃত করেছেন।
৫
আসওয়াদ র. বলেছেন,
رأيت عمر بن خطاب رض يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود. أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٩) والطحاوي ١/١١١ وصححه الزيلعي وقال الحافظ ابن حجر في الدراية : وهذا رجاله ثقات. وقال المارديني في الجوهر النقي ٢/٧٥: هذا سند صحيح على شرط مسلم.
অর্থ: আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন; পরে আর তুলতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৯; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ।
যায়লাঈ র. এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. আদদিরায়া গ্রন্থে লিখেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সবাই বিশ্বস্ত। আল্লামা আলাউদ্দীন মারদীনী র. আল জাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলেছেন, এসনদটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
ইমাম তাহাবী এই হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন,
وفعل عمر رضي الله عنه هذا وترك أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم إياه علي ذلك دليل صحيح أن ذلك هو الحق الذي لا ينبغي لأحد خلافه
অর্থাৎ উমর রা. কর্তৃক এই আমল করা এবং সাহাবীগণের তার উপর কোন আপত্তি না করা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, এটাই এমন সঠিক পদ্ধতি, যার ব্যতিক্রম করা কোন ব্যক্তির জন্য উচিৎ নয়।
৬
আসিম ইবনে কুলায়ব র. তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন,
أن عليا رضـ كان يرفع يديه في أول تكبيرة من الصلاة ثم لا يرفع بعد. أخرجه ابن أبي شيبة ٢٤٥٧ والطحاوي ١/١١٠ والبيهقي ٢/٨٠ وصححه الزيلعي وقال الحافظ في الدراية : رجاله كلهم ثقات وقال العيني : صحيح على شرط مسلم.
অর্থ: হযরত আলী রা. নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও তুলতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৭; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১০পৃ।
যায়লাঈ র. এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. আদদিরায়া গ্রন্থে লিখেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সবাই বিশ্বস্ত। আল্লামা আয়নী র. বলেছেন, এটি মুসলিম শরীফের সনদের মানসম্পন্ন।
ইমাম তাহাবী র. এটি উল্লেখ করার পর বলেন,
فإن عليا لم يكن ليرى النبي صلى الله عليه و سلم يرفع ثم يترك هو الرفع بعده إلا وقد ثبت عنده نسخ الرفع
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাত তুলতে দেখেও তাঁর ইন্তেকালের পর আলী রা.তো শুধু একারণেই হাত তোলা ছেড়ে দিতে পারেন যে, তার নিকট হাত তোলার বিধান রহিত হওয়ার কোন প্রমাণ বিদ্যমান ছিল।
৭
ইবরাহীম নাখায়ী র. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে বর্ণনা করেন,
أنه كان يرفع يديه في أول ما يفتتح ثم لا يرفعهما . أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٥٨) والطحاوي ١/١١١ وعبد الرزاق ٢/٧١ وإسناده صحيح.
অর্থ: তিনি নামায শুরু করার সময় হাত তুলতেন। পরে আর কোথাও হাত তুলতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৮; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২খ, ৭১পৃ। এটির সনদ সহীহ।
৮
হযরত আব্বাদ ইবনুয যুবায়র থেকে বর্ণিত:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه في أول الصلاة ثم لم يرفعهما في شيئ حتى يفرغ. أخرجه البيهقي في الخلافيات. كما في نصب الراية ١/٤٠٤
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন, তখন শুধু নামাযের শুরুতেই উভয় হাত তুলতেন। এর পর নামায শেষ করা পর্যন্ত আর কোথাও হাত তুলতেন না। বায়হাকী তার ‘আল-খিলাফিয়াত’ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
এ হাদীসটির সনদ সম্পর্কে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী র. বলেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সকলেই বিশ্বস্ত।
৯
আবূ ইসহাক সাবিয়ী র. বলেন,
كان أصحاب عبد الله وأصحاب علي لا يرفعون أيديهم إلا في افتتاح الصلاة. قال وكيع: ثم لا يعودون. أخرجه ابن أبي شيبة بسند صحيح جدا (٢٤٦١)
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর শাগরেদগণ এবং হযরত আলী রা. এর শাগরেদগণ কেবল মাত্র নামাযের শুরুতে হাত ওঠাতেন। ওয়াকী র. বলেন, এর পর আর হাত ওঠাতেন না।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬১। এর সনদ অত্যন্ত সহীহ।
রফয়ে ইয়াদাইন কত জায়গায় ছিল?
সহীহ হাদীসসমূহে দেখা যায়, রফয়ে ইয়াদাইন একবার থেকে শুরু করে প্রত্যেক ওঠানামায় ছিল। খোদ হযরত ইবনে উমর রা. এর হাদীসে এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ উদ্ধৃত হয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
ক
শুধু এক জায়গায় অর্থাৎ নামাযের শুরুতে। যেমনটি পেছনের হাদীসগুলো থেকে জানা গেল।
খ
দুই জায়গায়, অর্থাৎ শুরুতে এবং রুকু থেকে ওঠার পর। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে ইমাম মালেক র. মুয়াত্তায় এটি উদ্ধৃত করেছেন। আবূ দাউদ হযরত ইবনে উমর রা. থেকে (৭৪২), ইবনে মাজা র. হযরত আনাস রা. থেকে (৮৬৬)।
গ
তিন জায়গায়, অর্থাৎ নামাযের শুরুতে এবং রুকুর পূর্বে ও পরে। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বুখারী ও মুসলিমসহ অনেকে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
ঘ
চার জায়গায়, অর্থাৎ উপরোক্ত তিন জায়গায় এবং দুরাকাত শেষ করে দাঁড়ানোর সময়। ইবনে উমর রা. থেকে বুখারী (৭৩৯), আবূ দাউদ(৭৪৩)। আবূ হুমায়দ রা. থেকে ইবনে মাজা (৮৬২) ও তিরমিযী (৩০৪), তিনি এটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। হযরত আলী রা. থেকে আবূ দাউদ (৭৪৪), ইবনে মাজাহ (৮৬৪), ও তিরমিযী (৩৪২৩)। তিনি এটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে আবূ দাউদ(৭৩৮)।
ঙ
পাঁচ জায়গায়, উক্ত চার জায়গা ছাড়াও সেজদায় যাওয়ার সময়। বুখারী, ‘জুযউ রাফইল ইয়াদাইন গ্রন্থে’, (পৃ ২৬); এবং তাবারানী ‘আল আওসাত’ গ্রন্থে। হায়ছামী র.বলেছেন, এর সনদ সহীহ। নাসাঈ র. মালেক ইবনুল হুয়ায়রিছ রা. থেকে (১০৮৫) । এর সনদও সহীহ। ইবনে মাজাহ র. হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে (৮৬০)। আবূ ইয়ালা র. হযরত আনাস রা. থেকে (৩৭৪০)। এর সনদও সহীহ। (দ্র, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/২২০)। দারা কুতনী র. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে। এর সনদও সহীহ। (দ্র, আছারুস সুনান)
এছাড়া হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. এর বর্ণনায় ২য় রাকাতের শুরুতে : আবূ দাউদ (৭২৩), এবং হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় দুই সেজদার মাঝে : আবূ দাউদ (৭৪০), নাসায়ী (১১৪৩)- রফয়ে ইয়াদাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
চ
প্রত্যেক ওঠানামার সময়। অর্থাৎ রুকু, সেজদা, কেয়াম (দাঁড়ানো), কুউদ (বসা) এবং উভয় সেজদার মাঝখানে রফয়ে ইয়াদাইন। তাহাবী মুশকিলুল আছার গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর রা. থেকে (৫৮৩১) । এর রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত। ইবনে মাজাহ র. উমায়ের ইবনে হাবীব থেকে (৮৬১) এর সনদ দুর্বল। প্রত্যেক ওঠানামায় হাত তোলার হাদীসকে ইমাম আহমাদ সহীহ বলেছেন। (দ্র. মুগনী, ১/৩৬৯) আবুল হাসান ইবনুল কাত্তানও তার বায়ানুল ওয়াহাম ওয়াল ঈহাম গ্রন্থে এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। (৫/৬১২) ইবনে হাযমও (মৃত্যু-৪৫৬হি) আল মুহাল্লা গ্রন্থে এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। একটু পরেই তার বক্তব্য আসছে।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় সহীহ সনদে হযরত ইবনে উমর রা.এর দুই সেজদার মাঝেও রফয়ে ইয়াদাইন করার কথা উল্লেখ আছে। এমনিভাবে হযরত আনাস রা., নাফে র., তাউস র., হাসান বসরী র., ইবনে সীরীন র. ও আইয়ুব সাখ্তিয়ানী সকলেই দুই সেজদার মাঝখানে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (দ্র.মুসান্নাফ, ৩খ.,৫০৯পৃ. ২৮১০-২৮১৫ নং হাদীস)
আহলে হাদীস ভাইদের সহীহ হাদীস অনুসরণের দাবী ঠিক রাখতে চাইলে এসবগুলো অনুযায়ী আমল করতে হবে। ইবনে হাযম জাহেরী ও আলবানী সাহেব তাই করেছেন।
হানাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, রাফয়ে ইয়াদাইন অনেক জায়গায়ই ছিল, তবে ক্রমে ক্রমে একবারের মধ্যে এসে ঠেকেছে, যা পূর্বোল্লিখিত হাদীসগুলি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের কারণ হলো, প্রথম দিকে নামাযে চলাফেরা, সালাম-কালাম অনেক কিছুই বৈধ ছিল। ক্রমান্বয়ে স্থিরতা ও কম নড়াচড়ার নির্দেশ কুরআন ও হাদীসে আসতে থাকে। হানাফীগণ মনে করেন পূর্বোল্লিখিত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, রাফয়ে ইয়াদাইনও স্থিরতার পরিপন্থী। তাই ক্রমে ক্রমে এটিকে কমানো হয়েছে। অন্যথায় হযরত আলী রা., ওয়াইল ইবনে হুজ্্র রা.ও আবু মূসা আশ্আরী রা. প্রমুখ সাহাবীগণ রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করা সত্ত্বেও তদনুযায়ী আমল না করার কোন কারণ থাকতে পারে না।
বাড়াবাড়ি কাম্য নয়
আমাদের পূর্বসূরিগণের যুগেও এ মাসআলা নিয়ে দ্বিমত ছিল। তবে বাড়াবাড়ি ছিল না। এখানে দু’জন বড় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। একজন ইবনে হাযম জাহেরী এবং অপরজন ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী। তারা দু’জনই আমাদের লা-মাযহাবী ভাইদের অত্যন্ত আস্থাভাজন।
ইবনে হাযম জাহিরী আল মুহাল্লা গ্রন্থে হযরত ইবনে মাসউদ রা.এর হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন:
فَلَمَّا صَحَّ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَرْفَعُ فِي كُلِّ خَفْضٍ وَرَفْعٍ بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الإِحْرَامِ ، وَلاَ يَرْفَعُ , كَانَ كُلُّ ذَلِكَ مُبَاحًا لاَ فَرْضًا , وَكَانَ لَنَا أَنْ نُصَلِّيَ كَذَلِكَ , فَإِنْ رَفَعْنَا صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي , وَإِنْ لَمْ نَرْفَعْ فَقَدْ صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ يُصَلِّي. المحلى ٣/٢٣٥
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর প্রত্যেক ওঠা-নামার সময় হাত তুলতেন বলে যখন সহীহ হাদীসে প্রমাণিত, তখন এর সব ধরণই মুবাহ বা বৈধ হবে, ফরজ হবে না। আমরা এর যে কোন পদ্ধতি অনুসারেই নামায পড়তে পারি। আমরা যদি রফয়ে ইয়াদাইন করি তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। আর যদি রফয়ে ইয়াদাইন না করি তবুও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। (মুহাল্লা, ৩ খ., ২৩৫ পৃ.)
হায়! যদি আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা ইবনে হাযম (তিনিও কোন মাযহাব অনুসরণ করতেন না)এর উপরোক্ত বক্তব্য গ্রহণ করে নিতেন তাহলে ফেতনা অনেকাংশেই কমে যেত।
আল্লামা ইব্নুল কায়্যিম র. (মৃত্যু-৭৫০হি.)ও তাঁর ‘যাদুল-মাআদ’ গ্রন্থে ফজরের নামাযে কুনুত পড়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গে লিখেছেন,
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يُعنَّف فيه من فعله، ولا مَنْ تَركه، وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه، وكالخلاف في أنواع التشهدات، وأنواع الأذان والإِقامة، وأنواع النسك من الإِفراد والقِران والتمتع،
অর্থাৎ এটা এমন বৈধ মতপার্থক্যের অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যক্তি এটা করলো এবং যে করলো না কাউকেই দোষারোপ ও নিন্দা করা যায় না। এটা ঠিক তেমনই যেমন নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রুপ তাশাহহুদ বিভিন্ন শব্দে পড়া,আযান-ইকামতের বিভিন্ন নিয়ম অবলম্বন করা, এবং হজ্জের তিনটি নিয়ম-ইফরাদ,কিরান ও তামাত্তু বিষয়ে মতানৈক্যের মতোই। (দ্র. ১/২৬৬)
////////\\\\\\\\
আমীন আস্তে বলা হাদীস ও আছারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত
মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানভী
সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নামাযে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ (একা নামায আদায়কারী)-এর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুকতাদির জন্যও ইমামের
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত।
ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার (কল্পনা করার) বিষয় নয়; বরং নামাযের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। তবে তাঁদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। এটা মূলত ‘তানাওউয়ে সুন্নাহ’ বা সুন্নাহর বিভিন্নতা, যাকে ইখতিলাফে মুবাহও বলা হয় অর্থাৎ এখানে দুটি নিয়মই মোবাহ ও বৈধ এবং যে নিয়মই অনুসরণ করা হোক সুন্নত আদায় হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অন্য অনেক কিছুর মতো একেও মানুষ জায়েয-নাজায়েয ও সুন্নত-বিদআতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনকি একে কেন্দ্র করে বিবাদ- বিসংবাদেও লিপ্ত হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় দেখা যায়, কিছু মানুষ এত উঁচুস্বরে আমীন বলেন, যেন নামাযের মাঝেই অন্য মুসল্লীদের কটাক্ষ করেন যে, তোমরা সবাই সুন্নাহ তরককারী!
এ সংখ্যায় আমীন বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানভী রাহ.-এর একটি প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ পেশ করা হল, মনোযোগের সাথে পড়া হলে ইনশাআল্লাহ ফায়েদা হবে এবং সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া যাবে।
জামাতের নামাযে জোরে আমীন-আস্তে আমীন সম্পর্কে কয়েকটি কথা মনে রাখা কর্তব্য :
এক. এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে, আর তা জায়েয-না-জায়েযের ইখতিলাফ নয়; বরং উত্তম-অনুত্তম নির্ণয়ের ইখতিলাফ। ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)
ইবনুল কাইয়্যিম রাহ.-এর বক্তব্য থেকে দু’ টো বিষয় জানা যায় : ১. এ বিষয়ে সবাই একমত যে, আমীন আস্তে ও জোরে দু’ ভাবেই বলা যায়। তবে এক পক্ষের নিকট আস্তে বলা উত্তম, অন্য পক্ষের নিকট জোরে বলা।
২.যদি দলীলের ভিত্তিতে একপক্ষের কাছে একটি বিষয় অগ্রগণ্য মনে হয়, অন্য পক্ষের কাছে অন্যটি তাহলে কারোরই আপত্তি করার অবকাশ থাকে না। তাছাড়া আপত্তি তো সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করলে হতে পারে, মুস্তাহাব তরক করলে আপত্তি করা যায় না।
দুই.
আমীন একটি দুআ। আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’
آمين دعاء
(সহীহ বুখারী ১/১০৭)
লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে, ‘আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক।’
ومعناه استجب لي أو كذلك فليكن
অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
ادعوا ربكم تضرعا وخفية
তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক কাতরভাবে ও গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ : ৫৫)
হযরত যাকারিয়া আ. সম্পর্কে বলা হয়েছে-
اذ نادى ربه نداء خفيا
যখন তিনি তার প্রতিপালককে ডাকলেন অনুচ্চস্বরে।-সূরা মারইয়াম : ৩
আমীন যেহেতু দুআ তাই কুরআন মজীদের উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী তা আস্তে ও অনুচ্চস্বরে বলাই উত্তম।
তিন.
যারা মনে করেন, জাহরি নামাযে অর্থাৎ ফজর, মাগরিব ও ইশায় ইমাম-মুকতাদি সবার জোরে আমীন বলা মুস্তাহাব এবং নামাযের সাধারণ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত, তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসব নামাযে সর্বদা বা অধিকাংশ সময় জোরে আমীন বলেছেন। অথবা জোরে আমীন বলার আদেশ করেছেন। অথচ কোনো সহীহ হাদীসে তা আছে বলে আমাদের জানা নেই।
সহীহ বুখারীতে ‘জাহরুল ইমামি বিততামীন’ (ইমামের উচ্চস্বরে আমীন পাঠ) এবং ‘জাহরুল মামূমি বিততামীন’ (মুকতাদির উচ্চস্বরে আমীন পাঠ) শিরেনামে দুটি পরিচ্ছেদ আছে। ইমাম বুখারী রাহ. হযরত আবু হুরাইরা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একই হাদীসের দুই রেওয়ায়েত দুই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে আছে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ‘‘ইবনে শিহাব বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন’।’’
إذا أمن الإمام فأمنوا، فإنه من وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه،
قال ابن شهاب : وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : آمين
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আছে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন ইমাম বলে
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন তোমরা বল আমীন। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।’’
إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين، فإنه من وافق قوله قول الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه
(সহীহ বুখারী ১/১০৮)
এই হাদীসে আমীন বলার ফযীলত এবং ইমাম-মুকতাদি সকলের আমীন বলার কথা আছে, কিন্তু আমীন কি আস্তে বলা হবে, না জোরে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অথচ ইমাম বুখারী রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন জোরে আমীন বলা!
এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা উচিত, যা হাফেয ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘একথা বলাই বাহুল্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি প্রতিদিন ভোরে (ফজরের নামাযে) কুনূত পড়তেন এবং ঐ দুআ (আল্লাহুম্মাহদিনী …) পাঠ করতেন আর সাহাবায়ে কেরাম আমীন বলতেন তাহলে তা ঐভাবেই বর্ণিত হত যেভাবে নামাযের সময় ও সংখ্যা এবং নামাযে জোরে কুরআন পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কুনূতের বিষয়টি উম্মত সংরক্ষণ করেনি তাহলে তো নামাযের উপরোক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও একই সন্দেহ পোষণ করা যাবে!
‘‘এই একই যুক্তিতে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, বিসমিল্লাহ জোরে পড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ নিয়ম ছিল না। অন্যথায় এটা কীভাবে হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিন-রাতে পাঁচ (ছয়) বার জোরে বিসমিল্লাহ পাঠ করেছেন অথচ অধিকাংশ সাহাবীই তা জানতেন না? কিংবা জেনেশুনেও তা পরিত্যাগ করেছেন? এরচেয়ে অসম্ভব কথা আর কী হতে পারে? সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নিয়মিত উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন তাহলে তা নামাযের সংখ্যা, রুকু-সিজদা ও রাকাতের সংখ্যা; (কুরআন) জোরে পড়া, আস্তে পড়া; এবং অন্যান্য রোকনের নিয়ম ও তারতীবের মতোই (অনেক সাহাবীর সূত্রে) বর্ণিত হত।
‘‘ইনসাফের কথা, যা একজন ন্যায়নিষ্ঠ আলিম পছন্দ করবেন তা এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো জোরে পড়েছেন, কখনো আস্তে। কখনো কুনূত পড়েছেন, কখনো পড়েননি। আর তার আস্তে পড়া ছিল জোরে পড়ার চেয়ে বেশি এবং কুনূত না-পড়া ছিল কুনূত পড়ার চেয়ে বেশি।’’
ومن المعلوم بالضرورة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم لو كان يقنت كل غداة ويدعو بهذا الدعاء ويؤمن الصحابة لكان نقل الأمة لذلك كلهم كنقلهم بجهره بالقراءة فيها وعددها ووقتها وإن جاز عليهم تضييع أمر القنوت منها جاز عليهم تضييع ذلك ولا فرق، وبهذا الطريق علمنا أنه لم يكن هديه الجهر بالبسملة كل يوم وليلة خمس مرات دائما مستمرا ثم يضيع أكثر الأمة ذلك ويخفى عليها وهذا من أمحل المحال بل لو كان ذلك واقعا لكان نقله كنقل عدد الصلوات وعدد الركعات والجهر والإخفات وعدد السجدات ومواضع الأركان وترتيبها والله الموفق.
والإنصاف الذي يرتضيه العالم المنصف أنه صلى الله عليه وسلم جهر وأسر وقنت وترك وكان إسراره أكثر من جهره وتركه القنوت أكثر من فعله
(যাদুল মাআদ পৃ. ৬৯)
ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. যে কথা ফজরের কুনূত ও বিসমিল্লাহ জোরে পড়া সম্পর্কে বলেছেন তা হুবহু জোরে আমীনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম যদি সর্বদা বা অধিকাংশ সময় জোরে আমীন বলতেন তাহলে তা নামাযের রাকাত-সংখ্যার মতো (স্পষ্ট ভাষায় ও অনেক সনদে) বর্ণিত হত। সেক্ষেত্রে সাহাবা-তাবেয়ীন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মাঝে মতভিন্নতাও থাকত না এবং ইমাম বুখারীকেও এমন একটি হাদীস উল্লেখ করতে হত না, যাতে জোরে আমীন বলার কথা উল্লেখিতই হয়নি।
চার.
উপরোক্ত হাদীসে জোরে আমীন পড়ার কথা উচ্চারিত না হলেও ইমাম বুখারী রাহ. তা আহরণের চেষ্টা করেছেন এবং হাদীসটিকে জোরে আমীনের দলীল মনে করেছেন। পক্ষান্তরে যারা আস্তে আমীনের নিয়ম অনুসরণ করেন তাঁদের মতে, এই হাদীস থেকে আস্তে আমীনের নিয়মই প্রমাণিত হয়। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে :
১.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম যখন বলে
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন তোমরা বল আমীন।’ এ থেকে বোঝা যায়, ইমাম জোরে আমীন বলবে না। তাই ইমাম
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
বলার পর মুকতাদিকে আমীন বলার আদেশ করা হয়েছে।
২.
এই হাদীসের এক রেওয়ায়েতে সহীহ সনদে আছে, ইমাম যখন বলে –
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين، فإن الملائكة تقول آمين، وإن الإمام يقول آمين، فمن وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه
(সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭)
প্রশ্ন এই যে, ইমাম সূরা ফাতেহার পর আমীন পাঠ করে-এই কথা বলার প্রয়োজন কেন হল? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি জোরে আমীন বলতেন তাহলে তো সাহাবায়ে কেরাম তা শুনেছেন। সুতরাং একথা তো বলার প্রয়োজন থাকে না যে, ঐ সময় ইমাম আমীন বলে থাকেন।
পাঁচ.
যেসব মারফূ রেওয়ায়েতে স্পষ্ট ভাষায় জোরে আমীনের কথা আছে সেগুলোর সনদ আপত্তিমুক্ত নয়; তাছাড়া কখনো কখনো জোরে আমীন বলা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেও হতে পারে।
এই তালীমের প্রয়োজন এই জন্য হয়েছে যে, আমীন যেহেতু অনুচ্চস্বরে পড়া হয় তাই কারো মনে হতে পারে যে, আমীন বলার নিয়ম নেই, বরং তা বিদআত। যেমন এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী, ইমাম মালিক রাহ. ইমামের জন্য আমীন বলার নিয়ম নেই বলে মনে করেন।
ছয়.
আল্লামা ইবনুত তুরকুমানি ‘‘আলজাওহারুন নাকী’’ কিতাবে আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. (৩১০ হি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই নিয়ম আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তেমনি ইবরাহীম নাখাঈ, শাবী, ইবরাহীম তাইমী রাহ. থেকেও বর্ণিত। আর আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার দুটো রেওয়ায়েতই সহীহ এবং উভয় নিয়ম অনুসারেই আলিমগণ আমল করেছেন। তবে অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ী যেহেতু অনুচ্চস্বরে আমীন বলতেন তাই আমি অনুচ্চস্বরে আমীন বলা পছন্দ করি।-আলজাওহারুন নকী ২/৫৮
এ থেকে বোঝা যায়, এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মূল সুন্নাহ। আর কখনো কখনো জোরে আমীন বলা হলে তা ছিল নতুন আগন্তুকদের শেখানোর জন্য।
আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে কিছু আছার
১.
হযরত ওমর রা. বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ।
أربع يخفيهن الإمام : التعوذ و وآمين واللهم ربنا ولك الحمد
(ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১৯)
২.
আবু ওয়াইল রাহ. বলেন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও।
كان علي وعبد الله لا يجهران ب ولا بالتعوذ، ولا بالتأمين، قال الهيثمي : رواه الطبراني في الكبير وفيه أبو سعد البقال، وهو ثقة مدلس.
(আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮)
৩.
আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর রা. ও হযরত আলী রা. বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না।
لم يكن عمر وعلي يجهران ولا بآمين.
(ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০
৪.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ …, বিসমিল্লাহ … ও আমীন।
يخفي الإمام ثلاثا : الاستعاذة و وآمين.
(আলমুহাল্লা ৩/১৮৪)
৫.
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ, আমীন ও সামিআল্লাহর পর রাববানা লাকাল হামদ।
أربع يخفيهن الإمام : والاستعاذة وآمين، وإذا قال سمع الله لمن حمده قال ربنا لك الحمد.
অন্য বর্ণনায় আছে, পাঁচটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়া হয় : সুবহানাকাল্লাহুম্মা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ।
خمس يخفيهن : سبحانك اللهم وبحمدك وتعوذ و وآمين واللهم ربنا لك الحمد.
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৮৬)
পরিশিষ্ট
উপরোক্ত বিষয়ে এবং এ জাতীয় অন্যান্য বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি মনে রাখা উচিত, যা হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেবের ‘সুন্নাহসম্মত নামায : কিছু মৌলিক কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে-
যেসব ক্ষেত্রে একাধিক সুন্নাহ আছে, যেহেতু দু’টোই শরীয়তে স্বীকৃত তাই যে অঞ্চলে যে সুন্নাহ প্রচলিত সেখানে সেটিই চলতে দেওয়া উচিত। প্রচলিত সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে তার স্থলে ভিন্ন সুন্নাহ জারি করার প্রচেষ্টা যেমন শরীয়তের নীতি ও মিযাজের পরিপন্থী তেমনি মুসলমানদের ঐক্য ও শৃঙ্খলার পক্ষেও ক্ষতিকর। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তো হয় বিদআতের ক্ষেত্রে, সুন্নাহর ক্ষেত্রে নয়।
এ প্রসঙ্গে শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ.-এর একটি ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি একবার রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠা ইত্যাদি স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে আরম্ভ করেন। অথচ সে সময় গোটা ভারতবর্ষে (ফিকহে শাফেয়ীর অনুসারী সামান্য কিছু অঞ্চল বাদে) রাফয়ে ইয়াদাইনের এই সুন্নাহ প্রচলিত ছিল না। শাহ ছাহেব রাহ.-এর যুক্তি ছিল, মুর্দা সুন্নত যিন্দা করায় অনেক ছওয়াব ও ফযীলত। হাদীস শরীফে আছে, ‘উম্মতের ফাসাদের সময় যে আমার সুন্নাহকে ধারণ করে সে একশ শহীদের ছওয়াব ও মর্যাদা পাবে।’
তখন তাঁর চাচা হযরত মাওলানা আবদুল কাদের দেহলভী রাহ. (যিনি ছিলেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.-এর পুত্র এবং তাফসীরে মূযিহুল কুরআন-এর রচয়িতা) তাঁর এই ধারণা সংশোধন করেছিলেন। ইসমাইল শহীদ রাহ.-এর যুক্তির জবাবে তিনি বলেছিলেন, ঐ হাদীসে বলা হয়েছে উম্মতের ‘ফাসাদের’ সময় যে ব্যক্তি সুন্নাহকে ধারণ করে তার জন্য উপরোক্ত ফযীলত। কিন্তু কোনো বিষয়ে যদি একাধিক সুন্নাহ থাকে, তাহলে কোনো একটিকে কি ‘ফাসাদ’ বলা যায়? যায় না। সুন্নাহর বিপরীতে ফাসাদ হল শিরক ও বিদআত। দ্বিতীয় সুন্নাহ কষ্মিনকালেও ‘ফাসাদ’ নয়; বরং দুটোই রহমত ও সুন্নাহ। তো রাফয়ে ইয়াদাইন না-করাও যখন সুন্নাহ তখন যে অঞ্চলে এই সুন্নাহ মোতাবেক আমল হচ্ছে সেখানে রাফয়ে ইয়াদাইনের সুন্নত ‘যিন্দা’ করে ঐ ছওয়াব আশা করা ভুল। এটা হাদীসের ভুল প্রয়োগ এবং সুন্নাহকে ‘ফাসাদ’ বলার নামান্তর।]
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
প্রশ্নঃ ৮০২৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত আসসালামু আলাইকুম ১। অনেকে বলে নামাজে নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস জাল মিথ্যা বানোয়াট। সেই হাদিসের উপর কি আমল করা যেতে পারে। ২।মুসনাদে আহমদ কিতাব কত খন্ড ৩।ইমাম বোখারীর বাড়ি কোথায়৪।হিজবুত তাওহীদ সমপর্কে বলুন
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
و عَلَيْــــــــــــــــــــكُمْ السلام ورحمة الله
১- নামাযে হাত কোথায় বাঁধবেনঃ
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বাঁধতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁধতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোথায় তাঁরা হাত বাঁধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁধার মূল প্রসঙ্গ যত পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি? আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁধছেন। কোথায় বাঁধছেন তা সবার সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী।
নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন-
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم، يرون أن يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة، ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة، ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة، وكل ذلك واسع عندهم.
অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪
বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা
উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
تحت السرة أقوى في الحديث تحت السرة أقوى في الحديث وأقرب إلى التواضع
তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩
এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -
حدثنا يزيد بن هارون قال : أخبرنا الحجاج بن حسان قال : سمعت أبا مجلز ـ أو سألته ـ قال : قلت كيف أصنع؟ قال : يضع باطن كف يمنيه على ظاهر كف شماله ويجعلها أسفل من السرة.
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০
এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
حدثنا وكيع، عن ربيع، عن أبي معشر، عن إبراهيم قال : يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
قال محمد : أخبرنا الربيع بن صبيح، عن أبي معشر، عن إبراهيم : أنه كان يضع يده اليمنى على يده اليسرى تحت السرة. قال محمد : وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه الله. (كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)
প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁধা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।
রেওয়ায়েতটি এই-
أخبرنا أبو حنيفة، عن حماد عن إبراهيم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يعتمد بإحدى يديه على الأخرى في الصلاة، يتواضع لله تعالى. قال محمد : ويضع بطن كفه الأيمن على رسغه الأيسر، تحت السرة، فيكون الرسغ في وسط الكف، (كتاب الأثار، كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর সামনে বিনীত হতেন।’
(ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁধা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ রাহ. থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে বর্ণিত।-আলমুগনী ২/১৪১
উল্লেখ্য, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ‘আলমুগনী’তে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. থেকে মোট তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তবে মূল মতন অর্থাৎ ‘মুখতাসারুল খিরাকী’তে শুধু নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথাই বলা হয়েছে।
আরবী পাঠ-ويجعلهما ويجعلهما تحت سرته
‘মুখতাসারে’র ভূমিকায় লেখক ইমাম আবুল কাসিম উমার ইবনুল হুসাইন আলখিরাকী (৩৩৪ হি.) বলেছেন, ‘আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব অনুসারে (শরীয়তের মাসাইল) এই কিতাবে সংকলন করেছি।’
اختصرت هذا الكتاب ليقرب على متعلمه على مذهب أبي عبد الله أحمد بن محمد بن حنبل رضي الله عنه.
-আলমুগনী ১/৭-৮
শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন, ‘এক হাত অন্য হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫
উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য মনে করেছেন।
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম) নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।
তিনি আরো বলেন, ‘আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে দুটি রেওয়ায়েত আছে : এক. নাভীর উপর হাত বাঁধা, দুই. নাভীর নিচে হাত বাঁধা।
-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০
উল্লেখ্য, জনৈক গবেষক একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত মনীষীগণ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন। ইবনুল মুনযির রাহ. (৩১৮ হি.) স্বয়ং ইসহাক ইবনে রাহুয়াহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
সুতরাং এখানে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর যে রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন ঐ রেওয়ায়েতেও তা নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি বিতর নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধতেন বা বুকের নিচে।
আরবী পাঠ-
كان إسحاق يوتر بنا ... ويضع يديه على ثدييه أو تحت الثديين.
আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নাভীর নিচে ও নাভীর উপরে (বুকের নিচে) দু’ জায়গায় হাত বাঁধার নিয়মই সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাঁরা একটিকে অগ্রগণ্য মনে করলেও কেউ অন্যটিকে অনুসরণযোগ্য মনে করতেন। তো ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. যদি নাভীর নিচে হাত বাঁধাকে অগ্রগণ্য মনে করার পর কখনো কখনো নাভীর উপরে হাত বাঁধার নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তাতে আশ্চর্যের কী আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটি অস্পষ্ট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কোনো একটি বিচ্ছিন্ন মত কারো উপর আরোপ করার অবকাশ নেই। এটি বরং আরোপকারীর দলীল-প্রমাণের দৈন্য এবং শুযূয ও বিছিন্নতাকেই প্রকটভাবে প্রকাশিত করে দেয়।
মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এ পর্যন্ত আমরা খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণের ফতোয়া ও আমল লক্ষ্য করেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়েছে, যা হাত বাঁধার মরফূ হাদীসমূহেরই ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক রূপ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা যেমন সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত তেমনি মারফূ রেওয়ায়েতের সূত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
حدثنا وكيع، عن موسى بن عمير، عن علقمة بن وائل بن حجر، عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১
এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন-وهذا إسناد جيد এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা
উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডুলিপিতে হাদীসটি এভাবেই অর্থাৎ ةحة السرة (নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। এর মধ্যে ইমাম মুরতাযা আযাবীদী-এর পান্ডুলিপি ও ইমাম আবিদ আসসিন্দী রাহ.-এর পান্ডুলিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইমাম কাসিম ইবনে কুতলূবুগা রাহ., আল্লামা আবদুল কাদির ইবনে আবু বকর আসসিদ্দীকি ও আল্লামা মুহাম্মাদ আকরাম সিন্ধীর পান্ডুলিপিতেও হাদীসটি এভাবে আছে। পক্ষান্তরে অন্য কিছু পান্ডুলিপিতে এই বর্ণনায় ةحة السرة (নাভীর নিচে) কথাটা নেই। এ কারণে ভারতবর্ষে মুদ্রিত মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার পুরানো সংস্করণে এই হাদীসে ةحة السرة (নাভীর নিচে) অংশটি ছিল না। বর্তমানে মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামার তাহকীক-সম্পাদনায় মুসান্নাফের যে মুদ্রণ পাঠক-গবেষকদের কাছে পৌঁছেছে তাতে হাদীসটি ةحة السرة (নাভীর নিচে) অংশসহ রয়েছে। কারণ শায়খের সামনে প্রথমোক্ত পান্ডুলিপি দুটিও ছিল। এ বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বলেন-
ومن نقل الحديث من إحدى النسخ الأربع خ. ظ. ن. ش. التي ليست فيها هذه الجملة : معذور في عدم إثبات هذه الزيادة، ولكنه ليس معذورا في نفي ورودها، ومن نقله عن إحدى النسختين اللتين فيهما هذه الزيادة هو معذور في إثباتها، بل واجب عليه ذلك ولا يجوز لها حذفها فعلى م التنابز والتنابذ؟
উৎসাহী আলিমগণ শায়খের পূর্ণ আলোচনা মুসান্নাফের টীকায় দেখে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, যারা মুআম্মাল ইবনে ইসমাইলের মুনকার রেওয়ায়েত অবলীলায় গ্রহণ করেন তাদের তো এই রেওয়ায়েত গ্রহণে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ এক. এই রেওয়ায়েতের সনদ ইবনে খুযায়মার ঐ রেওয়ায়েতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। দুই. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতেও এর বেশ সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
حدثنا أبو مسلم الكشي ثنا حجاج بن نصير ثنا شعبة عن سلمة بن كهيل قال : سمعت حجرا أبا العنبس يحدث عن وائل الحضرمي أنه صلى مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ...، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى وجعلها على بطنه.
-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০
তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
قال الإمام الدارمي في السنن (باب وضع اليمين على الشمال في الصلاة) : أخبرنا أبو نعيم، ثنا زهير، عن أبي إسحاق، عن عبد الجبار بن وائل، عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على اليسرى قريبا من الرسغ. انتهى
ورواه الطبراني بطريق عبدان بن أحمد، ثنا عمرو بن عثمان الحمصي، ثنا إسماعيل بن عياش، عن يونس بن أبي إسحاق عن أبي إسحاق به.
-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২
এই রেওয়ায়েতগুলো সামনে রাখলে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ যাইদা ইবনে কুদামা বর্ণনা করেছেন, যাতে ‘ডান হাত বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর’ রাখার কথা আছে, তার অর্থ ‘বাহু বাহুর উপর’ রাখা নয়; বরং ডান হাতের পাতা এমনভাবে রাখা যে, তা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বুকের উপর হাত বাঁধার মতটি পর্যালোচনা করার সময় ইনশাআল্লাহ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার বিষয়ে জয়ীফ সনদে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতও আছে। তবে রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্ত্ত উপরে বর্ণিত হাদীস, আছার ও আমলে মুতাওয়ারাছ দ্বারা সমর্থিত।
২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
حدثنا محمد بن محبوب، حدثنا حفص بن غياث، عن عبد الرحمن بن إسحاق، عن زياد بن زيد، عن أبي جحيفة أن عليا رضي الله عنه قال : السنة وضع الكف على الكف في الصلاة تحت السرة.
قال المزي في تحفة الأشراف ٨/٤٥٨، هذا الحديث في رواية ابي سعيد بن الأعرابي، وابن داسة وغير واحد عن أبي داود، ولم يذكره أبو القاسم.
৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
حدثنا مسدد، حدثنا عبد الواحد بن زياد، عن عبد الرحمن بن إسحاق الكوفي، عن سيار أبي الحكم، عن أبي وائل قال : قال أبو هريرة رضي الله عنه : أخذ الأكف على الأكف في الصلاة تحت السرة.
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ; তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪
এই দুই রেওয়ায়েতের সনদে আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক একজন রাবী আছেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন। দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৬২; আরো দেখুন : হাদীস ২৫২৭
আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে হাদীসটি (২৫২৬) বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিযী বলেন, কোনো কোনো মনীষী এই আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। আরবী পাঠ-
ا هذا حديث غريب وقد تكلم بعض أهل العلم في عبد الرحمن هذا من قبل حفظه وهو كوفي، وعبد الرحمن بن إسحاق القرشي مديني وهو أثبت من هذا. انتهى
উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী রাহ.ও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে শাওয়াহেদের (অন্যান্য বর্ণনার সমর্থনের) কারণে সিলসিলাতুস সহীহায় উল্লেখ করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতুস সহীহা হাদিস
৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নবী-স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা।’
ثلاث من أخلاق النبوة : تعجيل الأفظار، وتأخير السحور، ووضع اليد اليمنى على اليسرى في الصلاة تحت السرة.
-আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১
উল্লেখ্য, ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) তাঁর নামাযে হাত বাঁধার আলোচনায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার একটি মারফূ হাদীস ও একটি আছর উল্লেখ করেছেন। তবে সেগুলোর সনদ উল্লেখ করেননি।
পক্ষান্তরে এ আলোচনায় বুকের উপর হাত বাঁধার একটি রেওয়ায়েতও উল্লেখ করেননি, না সনদসহ না সনদ ছাড়া। তদ্রূপ হাত বাঁধার নিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব হল, নামাযী তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে।’
ويستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصلاة، في وقوفه كله فيها.
-আলমুহাল্লা ৩/২৯
সারসংক্ষেপ : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এই সুন্নাহর ব্যবহারিক রূপ খাইরুল কুরূনে কী ছিল তা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া এবং সে যুগ থেকে চলে আসা ‘আমলে মুতাওয়ারাছ’ দ্বারা প্রমাণিত, যা ইবাদত-বন্দেগীর সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী সূত্র। এ সূত্রে নামাযে হাত বাঁধার দু’টি নিয়ম পাওয়া যায় : নাভীর নিচে হাত বাঁধা ও নাভীর উপর (বুকের নীচে) হাত বাঁধা। দু'টো নিয়মই আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীনের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইমাম তিরমিযী রাহ. জামে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন। তবে রেওয়ায়েতের বিচারে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন।
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস-ফিকহের বড় বড় ইমাম এই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরন্তু বেশ কিছু মরফূ হাদীসেও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং এটি নামাযে হাত বাঁধার মাসনূন তরীকা। এ সম্পর্কে দ্বিধা ও সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।
২- মুসনাদে আহমদ কিতাব খানা হাদীসের অন্যতম বৃহৎ একটি কিতাব।
এটি শাইখ শুআইব আরনাউতের তাহকীকে ৫০ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
৩- ইমাম বুখারী বুখারা শহরের অধিবাসী ছিলেন। বর্তমানে বোখারা পশ্চিম উজবেকিস্তানের বোখারা প্রদেশের রাজধানী শহর।
চতুর্থ প্রশ্নটি আলাদাভাবে করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন