পরিবহনে হাফ পাস কতটুকু যৌক্তিক?
প্রশ্নঃ ১০৮৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইসলামের দৃষ্টিতে হাফ ভাড়া কতটুকু যৌক্তিক?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাফ ভাড়া সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক নয়। আবার বিনা শর্তে যৌক্তিকও নয়।
সরকারি পরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, নিতান্তই হতদরিদ্র, কিংবা রাষ্ট্রের বিশেষ কোন শ্রেণীর জন্য হাফ ভাড়া অথবা বিনামূল্যে পরিবহন সার্ভিস দিতে অসুবিধা নেই। রাষ্ট্রের এই সার্ভিস ব্যক্তিমালিকানাধীন কোন পরিবহন এর উপর চাপিয়ে দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারি অবৈধ হস্তক্ষেপ হয়ে যাবে। যা জুলুমের পর্যায়ে পড়বে। দেশের দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের জন্য সরকার সরকারি গাড়িতে সুযোগ সুবিধা দেবে। তাদের জন্য হাফ পাসের ব্যবস্থা করবে। ঐ পাস দেখিয়ে তারা এই সুবিধা গ্রহণ করবে।
বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্যাপকভাবে হাফ ভাড়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এদেশের যেসকল নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, তাদের অধিকাংশই পড়াশোনায় খুব আগ্রহী নয়। স্বল্পসংখ্যক যারা পড়াশোনায় আসে, শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে অপারগ হয়ে একটা সময় তারাও পড়াশোনা থেকে ছিঁটকে পড়ে। উচ্চশিক্ষা এদের কপালে খুব কমই জুটে। সরকার চাইলে দরিদ্র শ্রেণীর জন্য ফ্রি পড়াশোনা, ফ্রী ক্যাম্পাস এবং তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত, তাদের যাতায়াতের জন্য সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারে। বড়জোর ধনী শ্রেণীর প্রতি সরকার আহ্বান রাখতে পারে, যেন তারাও এখানে ডোনেশন করে। কিন্তু গড়পড়তায় সকল শিক্ষার্থীর জন্য হাফ ভাড়ার আইন ব্যক্তিমালিকানাধীন গণপরিবহনের উপর চাপিয়ে দেওয়া কিছুতেই জায়েয মনে হচ্ছে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
ثُمَّ قَالَ : " اسْمَعُوا مِنِّي تَعِيشُوا، أَلَا لَا تَظْلِمُوا، أَلَا لَا تَظْلِمُوا، أَلَا لَا تَظْلِمُوا، إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ،
(বিদায় হজের খুতবার একাংশ) অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে শুনে রাখ কল্যাণময় জীবন যাপন করতে পারবে। শুনে রাখ তোমরা জুলুম করো না, শুনে রাখ তোমরা জুলুম করো না, শুনে রাখ তোমরা জুলুম করো না। কোন ব্যক্তির সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া (ব্যবহার বা ভোগ করা) হালাল নয়।
—মুসনাদ আহমাদ ২০৬৯৫
পরিবহনের মালিকদের সন্তুষ্টি ছাড়া তাদের ওপর হাফ ভাড়ার লোকসান চাপিয়ে দেয়া সরকার অথবা ছাত্র-জনতার জন্য জায়েয হবে না।
কিছু প্রশ্ন:
১. যে ছাত্রটি প্রায় দিন নিজস্ব প্রাইভেটকারে চড়ে প্রতিষ্ঠানে যায়। দুই-একদিন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠে হাফ ভাড়ার সুবিধা কীভাবে ভোগ করতে পারে?
২. স্কুল কলেজের ছাত্ররা হাফ ভাড়ার সুবিধা পেলে সমাজের নিতান্তই দুর্বল, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ভাড়া মওকুফ এর সুবিধা কেন পাবে না?
৩. "স্কুল কলেজের ছাত্ররা উপার্জন করে না" এই যুক্তিতে যদি হাফ ভাড়ার সুবিধা পেয়ে থাকে, তবে যে লোকটি চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, সে কেন হাফ ভাড়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে?
৪. স্কুল কলেজের ছাত্ররা হাফ পাস পেলে মাদরাসার ছাত্ররা কোন কারণে বাদ যাবে?
৫. শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ পার্সেন্ট গরীব ঘরের সন্তান হতে পারে। তাই বলে সকল শিক্ষার্থীরা কোন যুক্তিতে হাফ ভাড়ার সুবিধা নেবে?
৬. স্টুডেন্টদের হাফ পাস এর কার্যকারিতা তাদের সকল যাতায়াতে, নাকি শুধু পড়াশোনা কেন্দ্রিক যাতায়াতের জন্য প্রযোজ্য?
৭. ভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য সরকারি গাড়ি বরাদ্দ আছে। এর পরেও কেন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে তাদের জন্য হাফ পাস দিতে হবে?
৮. যেই যক্তিতে নগর/মহানগরে হাফভাড়ার বিধান দেওয়া হয়েছে সেই যুক্তিতে দূরপাল্লার যাতায়াতে, ট্রেন, জাহাজ, ষ্টিমারে কেন হাফভাড়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এটা কি নগর/মহানগরের ট্রান্সপোর্ট মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জুলুম নয়?
এসব প্রশ্নের সমাধানে আমাদের প্রস্তাব থাকবে, দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে হাফ পাস দেয়া হোক। পরিবহনে তারা এটি প্রদর্শন করে সুবিধা ভোগ করবে। গণহারে সকল পরিবহনের ওপর সকল শিক্ষার্থীর জন্য হাফপাস ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হোক।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন