প্রশ্নঃ ১০৭৩৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
কেউ যদি কোন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মাজারে যাওয়ার নিয়ত করে যেমন সিলেট মাজার, তাহলে কি মাজারে যাওয়া জায়েজ হবে? কোরআন হাদিসের আলোকে উত্তর দিলে খুব উপকৃত হব। জাযাকাল্লাহু খায়রান।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৯৫১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নবী — রাসূলগনের কাছে কি দোয়া চাওয়া বা তাঁদের মাজারের সামনে গিয়ে কি কিছু চাওয়া যায়?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত অন্য কারো কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করা যাবে না। কেননা এটা দুআ। আর দুআ ও সাহায্য প্রার্থনা শুধু আল্লাহ তাআলার কাছেই করা যায়। দুআ একটি ইবাদত। আর সমস্ত ইবাদত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সূরা ফাতিহায় আছে-
اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.
আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই। [সূরা ফাতেহা (১) : ৪]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ.
আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৪০
সূরা রা‘দে (আয়াত : ১৪) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্য প্রার্থনা সেটিই, যা আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য যে কারো কাছেই প্রার্থনা করা হোক তা বৃথা এবং তা কাফেরদেরই কাজ।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ.
দুআই ইবাদত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করেন-
وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ اِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِیْ سَیَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیْنَ.
তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দুআ কর, আমি তোমাদের দুআ কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ হবে তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা মু’মিন (৪০) : ৬০] -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৬৯
কুরআনে অন্যের কাছে কোনো কিছু চাওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلاَ تَدْعُ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকা যাবে না, যে তোমার ভালো কারতে পারবে না আবার মন্দও করতে পারবে না। বস্তুত তুমিও যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের (অত্যাচারীদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
-(সুরা ইউনুছ : আয়াত ১০৬)
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত দুনিয়াতে কোনো মানুষকে কোনো কিছু দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি তাঁর ক্ষমতা বর্ণনা করতে গিয়ে অন্য আয়াতে বলেন,
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ (13)
‘তিনি রাতকে দিনে প্রবিষ্ট করেন এবং দিনকে রাতে রূপান্তরিত করেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ; তোমাদের পালনকর্তা, (এ বিশাল) সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদের ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়।
-(সুরা ফাতির : আয়াত ১৩)
মানুষের দুনিয়া ও পরকালের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু দেয়ার একচ্ছত্র মালিকই হচ্ছেন মহান আল্লাহ। তাই আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে চাওয়া মূলত তারই নির্ধারিত অধিকারে অন্যকে অহেতুক অংশীদার বানানোর সমান, যা মারাত্মক অপরাধ।
সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে কিছু চাওয়া, এমনকি কোনো নবি-রাসুলের কাছেও অহেতুক কোনো কিছু চাওয়া শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ে একজন মুনাফিক ছিল। সে মুমিনদের কষ্ট দিত। কেউ কেউ বললেন, চলুন আমরা রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এই মুনাফিক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই ধরণের মুক্তি আমার থেকে চাওয়া উচিত নয়, বরং তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।’ (আত-তাবারানি)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
প্রশ্নঃ ৭৯৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আটরশি কি ভন্ড? কোটি কোটি মানুষ এই আটরশির সদস্য ও সমর্থক। তাদের আকিদা সম্পর্কে বিস্তরিত জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ফরিদপুর শহরের নিকটস্থ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সুফী হাশমত উল্লাহ হলেন আটরশির পীর। তিনি ত্রিশ বছর যাবত এনায়েতপুরীর দরবারে থাকাকালীন তার নির্দেশে ফরিদপুর এসে “জাকের ক্যাম্প” স্থাপন করে। যার নাম হয় পরবর্তিতে “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল”। আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বর্তমানে পুরোপুরি গদিনশীন পীর পীরজাদা মাহফুজুল হক ফরিদপুরীর নিয়ন্ত্রণে। (তথ্য: বিশ্বজাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি- ২০তম সংস্করন)।
নিম্নে তাদের বিশেষ কিছু আকীদা হলো:
.
১. ভাগ্যের ভালো-মন্দ পীরের হাতে:
আটরশির পীর সাহেব বলেছেন “বাবা! তোর ভালো-মন্দ উভয়টাই আমার হাতে রইলো। তোর কোনো চিন্তা নেই। (শাহ সূফী ফরিদপুরীর নছিহত, ৩য় মুদ্রণ, ১লা মে, ১৯৯৯; ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১১১)
খন্ডন: মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,”বস্তুত তাদের কোন কল্যান সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যদি কোন অকল্যান হয় তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। (তাদের) বলে দাও, এ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। (সুরা নিসা: ৭৮)
সুতরাং এ থেকে কি প্রমানিত হয় না যে, পীর সাহেব নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছেন?
২. পরকালে মুক্তিদাতা পীর কেবলা:
আটরশি পীর বলেছেন, দুনিয়াতে থাকাবস্থায় তোমরা যে যতটুকু অগ্রসর হওনা কেনো, তোমাদের ছায়ের-ছুলুক যদি জীবৎকালে সম্পন্ন নাও হয়, তবুও ভয় নাই। মৃত্যুর পরে কবরের মধ্যে দুই পুণ্যাত্মা (রাসূল সা. ও আপন পীর) তোমাকে প্রশিক্ষণ দিবেন।মারেফাতের তালিম দিবেন। ফলে হাশরের মাঠে সকলে আল্লাহর ওলী হইয়া উঠিবেন। (শাহ সূফী ফরিদপুরী ছাহেবের নছিহত, খন্ড ৪, পৃ: ৯৩)
খন্ডন: ঠিক এমন ধারণা পোষণ করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। তারা মনে করে, ঈসা আ. নিজের প্রাণ দিয়ে নিজের অনুসারিদের মুক্তির ব্যবস্থা করে গেছেন। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। (সুরা আনআম- ১৬৫)
নবী কারীম সা. তিনি তাঁর মেয়েকে নির্দেশ করে বলেন, হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার ব্যাবস্থা কর। আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। (বুখারী ও মুসলিম)
এবার বলুনতো দেখি, পীর সাহেব নিজের মুক্তির গ্যারান্টি দিতে পারবে কি না!
৩. মুর্শিদের হেফাজতকারী পীরবাবা:
পীর সাহেব বলেছেন, মুর্শিদে কামেল তদীয় মুরীদ পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুকনা কেনো সেই স্থানেই কুওতে এলাহির দ্বারা হেফাযতে রাখিতে পারেন। শুধু মুরীদকেই নয় মুরীদের আত্মিয় স্বজন, মাল সামানা, বাড়ি-ঘর যাহা কিছু খেয়াল করুক, তাহার সবকিছু আল্লাহ তায়ালার কুওতে ককেল্লায় বন্দী করে দেন।(শাহ সূফি ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত, খন্ড ৬, পৃ: ৩৬; ২য় মূদ্রণ)
খন্ডন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি আল্লাহ তোমার কোন অকল্যান ঘটান, তাহলে তা হটানোর কেউ নেই।(সুরা ইউনুস- ১০৭)
এখন আপনারাই বলুন, পীর তার মুরীদ ও মুরীদের স্বজনদের বিপদ থেকে রক্ষা করলে তারা কেন পথে-ঘাটে দুর্ঘটনার শিকার হয়? কেন তাদের বাড়ি ঘরে চুরি ডাকাতি হয়?
৪. সব ধর্মের মাধ্যমেই স্রস্টার নৈকট্য লাভ করা যায়:
আটরশি পীর বলেন, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃস্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশ্ব শান্তি আসতে পারে। (আটরশি কাফেলা, পৃঃ৮৯; সংস্করণঃ ১৯৮৪)
খন্ডন: আল্লাহর কাছে একমাএ মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম। (সূরা আল ইমরান- ১৯)
অন্যত্র বলেন, কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করলে কোনভাবেই তা গ্রহন করা হবে না। (সূরা আল ইমরান-৮৫)
৫. ওরশ শরীফ কাযা করা মানে আত্মাহুতি:
পীরবাবা বলেন, ওরশ শরীফ কাযা করলে পরবর্তি এক বছরে বহু দূর্ভোগ পোহাতে হয়। আয় উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়। (ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত, খন্ড ২১, পৃ: ৪৯)
খন্ডন: রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা আমার কবরকে ঈদে (যা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়) পরিণত করো না।
এ হাদীসে স্পষ্টত নির্দিষ্ট সময়ে দরগাহে যাওয়াকে (ওরশ) নিষেধ করেছেন। এবার বলুন, নবী সা. বললেন কি আর পীর সাহেব (?) বলে কী!
.
উল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলো দ্বারা আটরশির পীরের ধর্মীয় অজ্ঞতা ও ভণ্ডামি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
সুতরাং দৃঢ়তার সাথে একথা বলা যায়, কুরআন সুন্নাহ বিরোধী এমন আকীদা পোষণকারীরা ভ্রান্ত। এসব পীর মুরিদরা নিশ্চিত ভন্ড। ধান্ধাবাজ এসব পেটপুজারি, মাজারিদেরকে প্রতিহত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
***এবার এদের কবরপূজা ইত্যাদি কর্মকান্ড কুরআন ও হাদিসের মানদন্ডে দেখে নিইঃ
আমাদের বাংলাদেশে ভ্রান্ত আকীদাপন্থী নামধারী পীরদের মাঝে আটরশী ও মাইজভান্ডারীর দু’টি দরবার খুবই প্রসিদ্ধ। হিন্দুদের ধর্মগুরু ও তাদের মন্দিদের কার্যক্রমের অনুরূপ পরিচালিত হয় এসব দরবারগুলো।
হিন্দুদের মূর্তিপূজার মতই এসব দরবারে কবরপূজা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের মূর্তিদের ঘিরে যতগুলো রুসুম রেওয়াজ পরিচালনা করে হুবহু একই পদ্ধতির রুসুম রেওয়াজ এসব দরবারে পরিচালিত হয়।
যেমন
বর্তমান মূর্তিপূজকরা প্রধানত মূর্তিপূজায় ৪টি কাজ করে থাকেঃ
১. বছরে দু’বার মূর্তিকে কেন্দ্র করে বড় আকারের অনুষ্ঠান করে।
যথা- (ক) কালিপূজা (খ) দূর্গা পূজা।
ছোট আকারের পূজা আরো অনেক হয়। কিন্তু সারাদেশব্যাপী ধুমধামের সাথে এ দু’টি পূজা পালন করে থাকে।
এসময় তারা মূর্তিকে ঘিরে যা করে তারা সারাংশ হলঃ
২. মূর্তির সামনে প্রদিপ জ্বালায়।
৩. মূর্তির নামে মান্নত করে ও পশু বলি দেয়।
৪. মূর্তির সামনে মাথা নত করে ও সেজদা করে।
কবর বা মাযার পূজারীরা যা করে কবরকে কেন্দ্র করেঃ
১. বছরে দু’বার বড় আকারে উরস ও ফাতেহা মাহফিল নামে অনুষ্ঠান করে পীর বা বুযুর্গদের কবরকে ঘিরে।
২. কবরের সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে নিয়মিত।
৩. কবরে শায়িত বুযুর্গের নামে মান্নত ও কুরবানী করে।
৪. কবরকে সামনে নিয়ে দুআ করে, ক্ষেত্র বিশেষে মাথানত ও সেজদাও করে।
বিজ্ঞ পাঠকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা-মূর্তিপূজকদের মূর্তিপূজায় যে কর্মাদী করে আর আমাদের দেশের মাজারও কবরপূজারীরা যা করে এর মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে?
এবার আসুন দেখি কবর পূজারীদের কর্মকান্ড কুরআন ও হাদিসের মানদন্ডেঃ
১
স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044)
“তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?
হাদীসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-
قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)
“এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)
২
কবরের সামনে বাতি প্রজ্জ্বলন করাকে হারাম সাব্যস্ত করে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)
“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায় (কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। (জামি তিরমীযী-২/১৩৬)
উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৩
আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)
সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (2) অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা কাউসার-২)
সুতরাং পীরের নামে ও মাযারের নামে মান্নত করা কি শিরকী কাজ ছাড়া আর কী হতে পারে?
৪
আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা সুষ্পষ্ট হারাম। কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদীসে নববী দ্বারা যা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার। একথা মনে হয় অন্ধ পীর ও মাজারপূজারী ছাড়া সকল মুসলমানরাই জানে।
কুরআন ও হাদীসের উল্লেখিত বিবরণ মোতাবিক কবর ও মূর্তিপূজার সাযুজ্যতার মাধ্যমে আমরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি আমাদের দেশের আটরশী, মাইজভান্ডারীসহ মাযারপূজারী ও কবরপূজারীরা কি পরিমাণ শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত।
আরবের মুশরিকদের শিরক কি ছিল?
মহান রাব্বুর আলামীন বলেন-
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ (سورة يونس-31)
“হে পয়গম্বর! আপনি মুশকদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, বল তো কে তোমাদেরকে আসমান জমিন থেকে রুযী কে দেন? এবং কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তারা পরিস্কার বলবে যে, মহান আল্লাহ। বল এরপরও কি তোমরা ভয় করবে না? (সূরা ইউনুস-৩১)
আল্লাহ তায়ালাই মূল ক্ষমতার অধিকারী একথা আরবের মুশরিকরাও বিশ্বাস করতো, তারপরও তারা কাফের কেন?
এই সূরার প্রথমাংশে মহান রাব্বুল আলামীন এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ (18)
আর তার (মুশরেকরা) আল্লাহ ভিন্ন এমন কতিপয়ের ইবাদত করে, যারা তাদের কোন অপকারও করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা, ও তারা বলে-এরা হল আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সুপারিশকারী। (হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা আছে বলে তিনি (নিজেও) জানেন না, না আসমানে না জমিনে! তিনি তাদের শিরকী কার্যকলাপ হতে পবিত্র ও অনেক ঊর্দ্ধে। (সূরা ইউনুস-১৮)
আরবের মুশরিকরা আল্লাহকে ¯্রষ্টা স্বীকার করতো। আরবের মুশরিকরা কাবার হিফাযত করতো। কাবা তওয়াফ করতো। মেহমানদারী করতো। কিন্তু এরপরও তারা কফির। তারা মুশরিক।
কেন?
কারণ তারা আল্লাহর সাথে সাথে মূর্তির কাছে সন্তান চাইতো। মূর্তির জন্য মান্নত করতো। মূর্তির নামে কুরবানী করতো।
এসব কারণে তারা মুশরিক। ধিকৃত।
প্রশ্ন হল, একই কাজ মাইজভান্ডারী, আটরশীর মাজারের মুরীদেরা করার পরও তারা খাঁটি মুসলিম থাকে কী করে? তারা কেন মুশরিক নয়?
এমন সব কুফরী আকীদা আমলে ভরপুর এসব ভান্ডারী ও আটরশীদের দরবার। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে পড়–ন মাওলানা আব্দুল মালেক দামাত বারাকাতুহুর লেখা “তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ” গ্রন্থটি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভ্রান্ত পীরদের ভন্ডামী থেকে আমাদের দেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন।
আসুন! তাদেরকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসি। রুখে দাঁড়াই তাদের কুফরি ও শিরকি আকীদার বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষকে রক্ষাকরি তাদের প্রতারণার ফাঁদ হতে। আল্লাহপাক সুসংহতভাবে আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
প্রশ্নঃ ৮৮৫২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আস সালামু আলাইকুম হুজুর প্রশ্ন:হুজুর বিভিন্ন মাজারে ( শাহ মখদুম রহ, শাহ জালাল রহ ইত্যাদি এছাড়াও আরো অনেক ছোট খাটো মাজার আছে ) কিছু সময় মাহফিল বা ওরশ হয় । সেখানে তারা নানা রকমের কার্যকলাপ করে ।আমার প্রশ্ন হলো এই মাজারের ওরসে কি আমাদের যাওয়া জায়েজ হবে এবং সেখানকার খাবার খাওয়া জায়েজ হবে ? যদি পরিবারের কোনো সদস্য সেখান থেকে কোনো খাবার নিয়ে আসে সেটা কি খাওয়া জায়েজ হবে ?দয়া করে জানালে খুব উপকৃত হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামে মাজারের কোন অস্তিত্ব নেই। ইসলামে রয়েছে মাকবারা তথা কবরস্থান।
বুজুর্গ ব্যক্তিদের কবরে অনুষ্ঠান ওরস মাহফিল করা ক্ষেত্রবিশেষে শিরকী আকীদায় অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়ে থাকে। এগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
ওরশের সময় মাজারে যে সব গরু-ছাগল আসে এগুলো সব মাজারের নামে মান্নত করা হয়। পীর সাহেবের জন্য উৎসর্গ করা হয়। যা সম্পূর্ণ কুফরি ও শিরক।
ওরশ উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়া জায়েয নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন