প্রশ্নঃ ১০৩১৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু,
আমার বাবা একজন চাল ব্যাবসায়ি। আমি চাকুরী করি। বাবার নিজের কোনো পুঁজি নেই তাই অন্যের টাকা দিয়ে ব্যাবসা করেন অর্থাৎ অন্যের টাকা আর বাবার শ্রম মিলে মাস শেষে যা লাভ লস হয় তা অর্ধেক করে ভাগ করে নেন। কিন্তু এইভাবে বাবা ব্যাবসা করতে গিয়ে প্রাই ২৪,০০,০০০ টাকা মূলধন ঘাটতি হয় কারণ বাবার মুনাফা থেকে সংসার খরচ বেশি। বাবা এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছেন অন্যদের কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে। ব্যবসায় যা মুনাফা হয় তাকে ঘাটতি পুঁজি এবং নতুন পুঁজি দিয়ে ভাগ করে প্রতি লাখে যা আসে তার অর্ধেক বাবা নেন বাকি অর্ধেক পুঁজি দেনে ওয়ালা দের কে দেন। পুঁজি ঘাটতি থাকার কারণে ব্যবসায় মুনাফা কম হচ্ছে তাই পুঁজি দেনে ওয়ালারা পুঁজি নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। চাপের কারণে এখন বাবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাচ্ছে।
আমি আমার বেতন থেকে প্রতি মাসে বাবাকে 20000 টাকা দেই ঘাটতি পুঁজি পূরণ করার জন্য। আমার ফ্যামিলি বাবার সাথেই থাকে। আমি ঢাকায় থাকি। প্রতি সপ্তাহে একদিনের জন্য আসা-যাওয়া করি। আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি থেকে আমার ফ্যামিলি ঢাকায় নিয়ে যাব। তখনও আমি বাবাকে প্রতি মাসে 20000 টাকা দিব আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে। আমি চাচ্ছি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাবাকে দেওয়ার জন্য আর বাবাকে যে টাকা প্রতিমাসে দিব সেটা দিয়ে ব্যাংকের কিস্তি দিবো।
এই অবস্থায় বাবার এবং আমার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কি ইসলামী শরীয়া মোতাবেক ঠিক হবে?
আমি ব্যাংক থেকে ঋণ না নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“ব্যবসায় যা মুনাফা হয় তাকে ঘাটতি পুঁজি এবং নতুন পুঁজি দিয়ে ভাগ করে প্রতি লাখে যা আসে তার অর্ধেক বাবা নেন বাকি অর্ধেক পুঁজি দেনে ওয়ালা দের কে দেন।
”প্রিয় প্রশ্নকারী!
প্রথমত: আপনার প্রশ্নের ওপরোক্ত অংশটুকু আমি বুঝতে পারিনি। তথাপিও আপনার প্রশ্ন থেকে যেটা বুঝা যায় আপনার বাবা অন্যের পুঁজি এবং নিজের শ্রম বিনিয়োগ করে ব্যবসা করেন। এবং লভ্যাংশ অর্ধহারে ভাগ করেন।শরিয়তের পরিভাষায় এটাকে মুদারাবা ব্যবসা বলে। এটা জায়েজ আছে।
কিন্তু মুদারাবা ব্যবসায় পুঁজি ঘাটতি হলে শ্রমবিনিয়োগকারীর কোনো দায় নাই। কেননা এখানে ঘাটতি হলে সম্পূর্ণটাই পুঁজিপতির মালিকানা থেকে ঘাটতি হবে।অথচ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এর দায় আপনার বাবাকেও নিতে হচ্ছে তাহলে বুঝা যাচ্ছে, আপনার বাবার ওই চুক্তিটিও শরীয়ত সম্মত হয়নি।
কাজেই সঠিক উত্তর পেতে আপনাকে ব্যবসার বিস্তারিত বিবরণ লিখে পাঠাতে হবে। অথবা সরাসরি কোনো বিজ্ঞ মুফতির শরণাপন্ন হয়ে সঠিক মাসয়ালা জেনে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত: সুদের ভিত্তিতে ঋণ নেওয়া জায়েজ নাই। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমাদের মাসাইল সেকশনে অনেক প্রশ্নোত্তর আছে সেগুলো দেখে নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৯৬১৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কিস্তি নিয়ে যদি কোন ব্যবসা করা হয় এবং ওই লোন বা কিস্তি পরিশোধ করে দেওয়ার পরে ওই ব্যবসা আমার জন্য বৈধ হবে কিনা?, অথবা লোন বা কিস্তি নিয়ে যদি বাড়ি নির্মাণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ওই লোন বা কিস্তি পরিশোধ করা হয়, তার পর ওই বাড়ি আমার জন্য বৈধ হবে কিনা?,এবং বাড়ির ভাড়া উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ হবে কিনা? তাড়াতাড়ি জানালে খুবই উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুদ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই কবিরা গোনাহ। কুরআন ও হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরসব ধমকি এসেছে। সেই সাথে ভয়াবহ শাস্তির কথাও উদ্ধৃত হয়েছে।
সুতরাং এহেন পাপের সাথে জড়িত হওয়া কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নাই। বাকি সুদী ঋণ নিয়ে যে বাড়ী বানানো হয়েছে তার কাজটি গোনাহ ও পাপের হলেও বিল্ডিংটিতে থাকা নাজায়েজ ও হারাম হবে না। কারণ, এখানে সুদ দেয়া হয়েছে। নেয়া হয়নি। তাই বাড়িটি নির্মাণে সুদের টাকা ব্যবহৃত হয়নি। বরং ঋণের টাকা ব্যবহৃত হয়েছে।
যেহেতু সুদ দেয়া এবং নেয়া দু’টিই গোনাহের কাজ। তাই কাজটি হারাম ও গোনাহের কাজ হলেও নির্মিত বাড়িটি হারাম ও নাজায়েজ হবে না।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥]
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। [সূরা বাকারা-২৭৫]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ [٢:٢٧٨]
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। [সূরা বাকারা-২৭৮]
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ [٢:٢٧٩]
অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। [সূরা বাকারা-২৭৯]
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৭৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫১৩১, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২২৫৯]
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সূদখোর, সূদ দাতা সূদের সাক্ষীদ্বয় ও সূদের (চুক্তি বা হিসাব) লেখককে অভিসম্পাত করেছেন। [সুনানে তিরমিজী-১/২২৯ হাদীস নং-১২০৬, সহীহ মুসলিম-২/৭২, হাদীস নং-১৫৯৮]
لأن القرض إعارة ابتداء، حتى صح بلفظها معاوضة انتهاء، لأنه لا يمكن الانتفاع به إلا باستهلاك عينه، فيستلزم إيجاب المثلي في الذمة، وهذا لا يتأتى في غير المثلي قال في البحر: ولا يجوز في غير المثلي، لأنه لا يجب دينا في الذمة ويملكه المستقرض بالقبض كالصحيح (رد المحتار، كتاب البيوع، باب المرابحة والتولية، فصل فى القرض-7/388)
(আহলে হক মিডিয়া থেকে ঈসৎ পরিবর্তিত)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন