আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১২- জানাযা-কাফন-দাফন সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৩৩
আন্তর্জাতিক নং: ৯৭৭-২
২৯. কবরস্থানে প্রবেশের দুআ
২১৩৩। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... সুলাইমান ইবনে বুরায়দা (রাহঃ) তার পিতার সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। অন্য সূত্রে ইবনে আবু উমর, মুহাম্মাদ ইবনে রাফি, আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রাহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তবে তারা সবাই আবু সিনান (রাহঃ) এর মর্মের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
باب مَا يُقَالُ عِنْدَ دُخُولِ الْقُبُورِ وَالدُّعَاءِ لأَهْلِهَا
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا أَبُو خَيْثَمَةَ، عَنْ زُبَيْدٍ الْيَامِيِّ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، أُرَاهُ عَنْ أَبِيهِ، - الشَّكُّ مِنْ أَبِي خَيْثَمَةَ - عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ح . وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، بْنِ مَرْثَدٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ح . وَحَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، جَمِيعًا عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ عَطَاءٍ الْخُرَاسَانِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ بِمَعْنَى حَدِيثِ أَبِي سِنَانٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রথমদিকে কবর যিয়ারত করা নিষেধ ছিল। শাহ ওয়ালিয়্যুল্লাহ রহ.-এর মতে এর কারণ ছিল শিরকের পথ বন্ধ করা। তিনি বলেন, কবর যিয়ারত কবর পূজার দুয়ার খোলে। পরে যখন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং মানুষের চিন্তা-চেতনায় গায়রুল্লাহর ইবাদত হারাম হওয়ার বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন (কবরপূজার আশঙ্কা দূর হয়ে যায়, ফলে) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।

এ হাদীছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আগে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল বটে, কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা রহিত করে দেওয়া হয়েছে এবং যিয়ারত করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন হাদীছে তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
فَإِنَّهَا تُذَكَّرُنَا الْآخِرَةَ (কারণ তা আমাদেরকে আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয়)। অর্থাৎ কবরস্থানে গেলে সামনাসামনি লক্ষ করা যায় যারা একদিন এ মাটির উপর বিচরণ করত, দুনিয়ার হাজারও নি'আমত ভোগ ও উপভোগ করত, কীভাবে তারা সবকিছু থেকে চিরবিদায় নিয়ে একদম খালিহাতে মাটির নিচে চলে গেছে! সেখানে তারা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। মাটির অন্ধকার কক্ষে সম্পূর্ণ অসহায়। যাদের চলে যাওয়া পুরোনো হয়ে গেছে, তারা তো মাটিতে মিশেই গেছে। একদিন আমারও এ দশা হবে। অতএব শুধু শুধু কেন লম্বা-চওড়া স্বপ্নের জাল বোনা? এভাবে চিন্তা করতে থাকলে দুনিয়ার লোভ-লালসা ঘুচে যায় এবং মন আখিরাতের দিকে ঝোঁকে। মন আখিরাতমুখী হলে আমলে তার আছর পড়ে। তখন মন্দকাজের প্রবণতা কমে এবং সৎকাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সৎকাজ দ্বারাই আখিরাতে মুক্তিলাভ হয়। সুতরাং কবর যিয়ারত আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে খুব সহায়ক। তাই এটা মাঝেমধ্যেই করা উচিত।

কবর যিয়ারতের এ অনুমতি নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। হযরত ফাতিমা রাযি. প্রতি জুমু'আর দিন হযরত হামযা রাযি.-এর কবর যিয়ারত করতে যেতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কবর যিয়ারতে গিয়ে কী বলব? তিনি বলেছিলেন-
قُوْلِي : السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْن
‘তুমি বলবে, হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও যারা পশ্চাদবর্তী, সকলের প্রতি দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ: ২৫৮৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১১০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৭১২; সুনানে নাসাঈ ২০৩৭; তাবারানী, আদ-দু'আ: ১২৪৬)

কোনও কোনও হাদীছে যে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়, সে নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্য সাধারণ নয়। তা কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা বারবার কবরস্থানে যায়, সেখানে গিয়ে বিলাপ করে, পর্দারও বরখেলাফ করে ও নানারকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয়। যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় এবং কোনওরকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয় না, এরকম মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ নয়। কবর যিয়ারতের যে দীনী উপকারিতা, তা যেমন পুরুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নারীদের জন্যও প্রয়োজন বটে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার মোহ ঘুচানো ও আখিরাতের ফিকির বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঝেমাঝে কবর যিয়ারত করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)