আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১০- জুমআর অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৭৬
আন্তর্জাতিক নং: ৯২২ - ৯২৩
৫৮৩. খুতবায় আল্লাহর প্রশংসার পর আমমা বা’দু বলা।
ইকরিমা (রাহঃ) ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
মাহমুদ (রাহঃ) ...... আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একদিন) আয়িশা (রাযিঃ)-এর নিকট গমন করি। লোকজন তখন নামায আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকদের কি হয়েছে? তখন তিনি মাথা দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইশারা করলেন, হ্যাঁ বললেন। (এরপর আমিও তাঁদের সঙ্গে নামাযে যোগ দিলাম) তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিলাম। আমার পার্শ্বেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটা খুললাম এবং আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। এরপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায সমাপ্ত করলেন এবং লোকজনদের উদ্দেশ্যে খুতবা পেশ করলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, আমমা বা’দু।
আসমা (রাযিঃ) বলেন, তখন কয়েকজন আনসারী মহিলা শোরগোল করছিলেন। তাই আমি চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। এরপর আয়িশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি [নবী করীম (ﷺ)] কি বললেন? আয়িশা (রাযিঃ) বললেন, তিনি বলেছেন, এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি আমি এ জায়গা থেকে সব কিছুই দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আমার নিকট ওহী পাঠান হয়েছে যে, তোমাদেরকে কবরে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা তিনি বলেছেন, সে ফিতনার কাছাকাছি ফিতনায় ফেলা হবে। (অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হবে) তোমাদের প্রত্যেককে (কবরে) উঠানো হবে এবং প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) সম্পর্কে তুমি কী জান? তখন মু’মিন অথবা মুকিন (নবী ﷺ এ দু’টোর মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন এ ব্যপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে) বলবে, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল, তিনি মুহাম্মাদ (ﷺ), তিনি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। এরপর আমরা ঈমান এনেছি, তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছি, তাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাঁকে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক, যেহেতু তুমি নেককার। তুমি যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর যে মুনাফিক বা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) (এ দু’টোর মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন এ সম্পর্কে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে)- তাকেও প্রশ্ন করা হবে যে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান? উত্তরে সে বলবে, আমি কিছুই জানি না। অবশ্য মানুষকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলতাম। হিশাম (রাহঃ) বলেন, ফাতিমা (রাহঃ) আমার নিকট যা বলেছেন, তা সবটুকু আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি। তবে তিনি ওদের প্রতি যে কঠোরতা করা হবে তাও উল্লেখ করেছেন।
৮৭৬। মুহাম্মাদ ইবনে মা’মার (রাহঃ) ......... আমর ইবনে তাগলিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হলে তিনি তা বন্টন করে দিলেন। বন্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। তারপর তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, যাদের তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, তারপর বললেনঃ আমমা বা'দ। আল্লাহর শপথ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেই না, সে যাকে আমি দেই, তার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখতে পাই; আর কিছু লোককে আল্লাহ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে আমর ইবনে তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী আমর ইবনে তাগলিব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও* পছন্দ করি না। ইউনুস আবু আসিমের অনুসরণ করেছেন।

*তৎকালীন আরবের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
بَاب مَنْ قَالَ فِي الْخُطْبَةِ بَعْدَ الثَّنَاءِ أَمَّا بَعْدُ رَوَاهُ عِكْرِمَةُ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
922 - وَقَالَ مَحْمُودٌ: حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، قَالَ: أَخْبَرَتْنِي فَاطِمَةُ بِنْتُ المُنْذِرِ، عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ قَالَتْ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ، قُلْتُ: مَا شَأْنُ النَّاسِ، فَأَشَارَتْ بِرَأْسِهَا: إِلَى السَّمَاءِ، فَقُلْتُ: آيَةٌ؟ فَأَشَارَتْ بِرَأْسِهَا: أَيْ نَعَمْ، قَالَتْ: فَأَطَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِدًّا حَتَّى تَجَلَّانِي الغَشْيُ، وَإِلَى جَنْبِي قِرْبَةٌ فِيهَا مَاءٌ، فَفَتَحْتُهَا، فَجَعَلْتُ أَصُبُّ مِنْهَا عَلَى رَأْسِي، فَانْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ تَجَلَّتِ الشَّمْسُ، فَخَطَبَ النَّاسَ، وَحَمِدَ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، ثُمَّ قَالَ: «أَمَّا بَعْدُ» قَالَتْ: - وَلَغَطَ نِسْوَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ، فَانْكَفَأْتُ إِلَيْهِنَّ لِأُسَكِّتَهُنَّ، فَقُلْتُ لِعَائِشَةَ: مَا قَالَ؟ قَالَتْ: قَالَ -: " مَا مِنْ شَيْءٍ لَمْ أَكُنْ أُرِيتُهُ إِلَّا قَدْ رَأَيْتُهُ فِي مَقَامِي هَذَا، حَتَّى الجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَإِنَّهُ قَدْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّكُمْ تُفْتَنُونَ فِي القُبُورِ، مِثْلَ - أَوْ قَرِيبَ مِنْ - فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ، يُؤْتَى أَحَدُكُمْ فَيُقَالُ لَهُ: مَا عِلْمُكَ بِهَذَا الرَّجُلِ؟ فَأَمَّا المُؤْمِنُ - أَوْ قَالَ: المُوقِنُ شَكَّ هِشَامٌ - فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ، هُوَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، جَاءَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَالهُدَى، فَآمَنَّا وَأَجَبْنَا وَاتَّبَعْنَا وَصَدَّقْنَا، فَيُقَالُ لَهُ: نَمْ صَالِحًا قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ إِنْ كُنْتَ لَتُؤْمِنُ بِهِ، وَأَمَّا المُنَافِقُ - أَوْ قَالَ: المُرْتَابُ، شَكَّ هِشَامٌ - فَيُقَالُ لَهُ: مَا عِلْمُكَ بِهَذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ: لاَ أَدْرِي، سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ شَيْئًا فَقُلْتُ " قَالَ هِشَامٌ: فَلَقَدْ قَالَتْ لِي فَاطِمَةُ فَأَوْعَيْتُهُ، غَيْرَ أَنَّهَا ذَكَرَتْ مَا يُغَلِّظُ عَلَيْهِ
923 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ الحَسَنَ، يَقُولُ: حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِمَالٍ - أَوْ سَبْيٍ - فَقَسَمَهُ، فَأَعْطَى رِجَالًا وَتَرَكَ رِجَالًا، فَبَلَغَهُ أَنَّ الَّذِينَ تَرَكَ عَتَبُوا، فَحَمِدَ اللَّهَ، ثُمَّ أَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَمَّا بَعْدُ فَوَاللَّهِ إِنِّي لَأُعْطِي الرَّجُلَ، وَأَدَعُ الرَّجُلَ، وَالَّذِي أَدَعُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنَ الَّذِي [ص:11] أُعْطِي، وَلَكِنْ أُعْطِي أَقْوَامًا لِمَا أَرَى فِي قُلُوبِهِمْ مِنَ الجَزَعِ وَالهَلَعِ، وَأَكِلُ أَقْوَامًا إِلَى مَا جَعَلَ اللَّهُ فِي قُلُوبِهِمْ مِنَ الغِنَى وَالخَيْرِ، فِيهِمْ عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ» فَوَاللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِكَلِمَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُمْرَ النَّعَمِ، تَابَعَهُ يُونُسُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সামগ্রিকভাবে সাহাবায়ে কেরাম নিতান্তই গরীব ছিলেন। তাদের অধিকাংশেরই অর্থকষ্ট নিবারণের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন থাকতই। তা সত্ত্বেও তারা কারও কাছে কিছু চাইতেন না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন গনীমত বা সদাকা-যাকাতের মাল আসত, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা থেকে তাদের কিছু পাওয়ার আশা থাকত। এ হাদীছে একবারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু মালামাল বা যুদ্ধবন্দীরূপে দাস-দাসী নিয়ে আসা হলে তিনি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তা বণ্টন করতে থাকেন। কিন্তু তিনি সকলকেই দিলেন না। কাউকে দিলেন এবং কাউকে বাদ রাখলেন। যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদের মনে উদ্বেগ দেখা দিল। কী কারণে তাদের দেওয়া হল না? তবে কি তাদের মধ্যে কোনও কমতি আছে? এরূপ নানা ভাবনায় তারা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণও হলেন। বিষয়টা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কানে পৌঁছে গেল। তিনি তাদের ডাকলেন এবং তাদের সামনে পরিষ্কার করে দিলেন যে, যাদেরকে দিলেন কী কারণে দিলেন এবং যাদেরকে দিলেন না কী কারণে দিলেন না। তিনি এ কথাও বললেন যে, আমি যাকে দিই তার তুলনায় যাকে দিই না সে আমার কাছে বেশি প্রিয় হয়ে থাকে। তিনি বললেন-
وَلَكِنِّي إِنَّمَا أعْطِي أَقْوَامًا لِمَا أَرَى فِي قُلُوْبِهِمْ مِنَ الْجَزَعِ وَالْهَلَعِ (বস্তুত আমি তো এমনসব লোককেই দিই, যাদের অন্তরে অস্থিরতা ও দ্বিধাগ্রস্ততা আছে বলে লক্ষ করি)। অর্থাৎ যাদের ব্যাপারে আশঙ্কা হয় যে, না দিলে তারা অস্থির হয়ে পড়বে, অভাব- অনটনে ধৈর্য রক্ষা করতে পারবে না কিংবা বঞ্চিত হওয়ার কারণে অশান্ত হয়ে পড়বে, তাদেরকে দিয়ে থাকি, যাতে তারা অধৈর্য ও অশান্ত না হয়। এমনিভাবে ঈমানের উপর যাদের দৃঢ়তা আসেনি, এখনও পর্যন্ত কিছুটা অপূর্ণতা আছে, তাদেরকেও দিই, যাতে পুরোপুরিভাবে তারা দীনের উপর মজবুত হয়ে যায়।

وَأَكِلُ أَقْوَامًا إِلَى مَا جَعَلَ اللهُ فِي قُلُوبِهِمْ مِنَ الْغِنَى وَالْخَيْرِ (আর যাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা ঐশ্বর্য ও কল্যাণ দিয়েছেন, সেরকম লোকদেরকে আমি সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি)। অর্থাৎ অন্তরে ঐশ্বর্য থাকার কারণে অর্থ-সম্পদের অভাবকে যারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না, যাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলার উপর পরিপূর্ণ ভরসা আছে এবং যারা পূর্ণ ঈমানদারও বটে, ঈমানের উপর মজবুতির কারণে দুনিয়ার উপর আখিরাতকেই অগ্রাধিকার দেয়, আমি তাদেরকে দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন মনে করি না। আমি তাদেরকে তাদের তাওয়াক্কুল ও ঈমানের পরিপক্কতার উপর ছেড়ে দিই।

এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে দেননি, তাদের ঈমান ও তাওয়াক্কুলের উপর নিজ আস্থা ব্যক্ত করেন এবং তাদেরকে আখিরাতের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে অনুপ্রাণিত করেন।

যাদের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গভীর আস্থা থাকার কথা ব্যক্ত করেন, হযরত আমর ইবন তাগলিব রাযি.-ও তাদের একজন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ প্রশংসায় তিনি যারপরনাই খুশি হন। সুতরাং তিনি এই বলে নিজ অনুভূতি প্রকাশ করেন যে-
فَوَاللهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِكَلِمَةِ رَسُوْلِ اللَّهِ ﷺ حُمْرَ النَّعَمِ (আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথার বিনিময়ে আমি একপাল লাল উটও গ্রহণ করতে পসন্দ করব না)। অর্থাৎ আমাকে এ কথা বলার পরিবর্তে যদি আমাকে একপাল লাল উটও দেওয়া হতো, তবে তাও আমার পসন্দ হতো না। কেননা একপাল লাল উট যত দামিই হোক না কেন, তা সীমিত ও ক্ষণস্থায়ীই বটে। পক্ষান্তরে আমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা আমার ঈমানের পক্ষে সাক্ষ্য। ঈমানের বিনিময়ে আখিরাতে যে পুরস্কার পাওয়া যাবে, তা অসীম ও অফুরন্ত। তার সঙ্গে একপাল লাল উটের কোনও তুলনাই চলে না।

এর দ্বারা ধারণা পাওয়া যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার বিপরীতে আখিরাতকে কতটা প্রাধান্য দিতেন এবং তারা দুনিয়ার সামান্য অর্থের উপর কতটা সন্তুষ্ট ছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যাকে অর্থসাহায্য না করলে অধৈর্য হয়ে পড়ার ভয় থাকে, তাকে সাহায্য করা চাই।

খ. অর্থসাহায্য করলে দীনের প্রতি অধিকতর আনুগত্য প্রকাশ করবে বলে যার ব্যাপারে আশা থাকে, তাকে অর্থসাহায্য করা কাম্য।

গ. আখিরাতের উচ্চমর্যাদা অনুসারে যে দুনিয়ায় সচ্ছলতা লাভ হবে-এমন কোনও কথা নেই।

ঘ. অর্থ-সম্পদের প্রতি স্বভাবগতভাবেই মানুষের আগ্রহ থাকে। কাজেই সে আগ্রহে কোনও দোষ নেই, যদি না তাতে সীমালঙ্ঘন করা হয়।

ঙ. অর্থ-সম্পদের কমতি থাকা বা কাঙ্ক্ষিত সম্পদ লাভে বঞ্চিত থাকা দুর্ভাগ্য নয়; বরং অনেক সময় তা ব্যক্তির পক্ষে কল্যাণকরই হয়ে থাকে।

চ. কারও কোনও কাজে যদি অন্যের মনে মন্দ ধারণা জন্মায়, তবে তা নিরসন করে দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)