আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৯৭৭
আন্তর্জতিক নং: ৬৪১৯

পরিচ্ছেদঃ ৩৪১৭. যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌঁছে গেল, আল্লাহ তাআলা তার বয়সের ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত, অথচ তোমাদের কাছে সতর্ককারীরাও এসেছিল ..…. (৩৫ঃ ৩৭)।

৫৯৭৭। আব্দুস সালাম ইবনে মুতাহহার (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যাকে দীর্ঘায়ু দান করেছেন, এমনকি যাকে ষাট বছরে পৌছিয়েছেন, তার ওযর পেশ করার সুযোগ রাখেননি।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছে ওজর দেখানো বলতে নেক কাজ না করার পক্ষে ওজর দেখানোর কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যখন কেউ ৬০ বছর বয়স পেয়ে যায়, তা সত্ত্বেও সৎকর্মে লিপ্ত না হয় আর এ অবস্থায় মৃত্যু হয়ে যায়, তবে তার আর এ কথা বলার সুযোগ থাকে না যে, আমি আমল করার মত সময় পাইনি। আমাকে যদি আরও আয়ু দেওয়া হত, তবে নেক কাজ করতাম এবং আমাকে যেসব আদেশ করা হয়েছে সেসব পালন করতাম। সুতরাং কারও যখন ৬০ বছর বয়স হয়ে যায় তখন তার অবশ্যকর্তব্য, সকল গড়িমসি ছেড়ে দিয়ে তাওবা-ইস্তিগফার করে ফেলা এবং সর্বতোপ্রকারে আখিরাতমুখী হয়ে যাওয়া। অতঃপর সবরকম পাপাচার থেকে দূরে থেকে একান্ত মনে 'ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত হয়ে যাওয়া। প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছ দ্বারা ৬০ বছর বয়সের আগে গাফলাতি করার সুযোগ দিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ এ কথা বোঝা ঠিক হবে না যে, যাদের বয়স ষাটে পৌছেনি,তারা কোনও গুনাহ করলে সেজন্য তাদের ধরা হবে না এবং তাদের ওজর গ্রহণ করা হবে। কেননা যৌবনে পদার্পণ করার পর সালাত ও অন্যান্য ফরয কাজ ছাড়ার কোনও অবকাশ থাকতে পারে না। ৬০ বছর বয়সের সীমারেখা দ্বারা মূলত বোঝানো উদ্দেশ্য যে, গাফলতি করার সুযোগ তো এর আগেও ছিল না, কিন্তু বয়স যখন ৬০ বছর হয়ে গেল তখন সে সুযোগ আরও বেশি রহিত হয়ে গেল। এর আগে পাপাচার করলে তাও অপরাধ ছিল, কিন্তু এখন করলে সেটা আরও বেশি অপরাধ। সুতরাং শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন সব কালেই করতে হবে। যখন যে জীবন আসে সেটাকেই আমলের প্রকৃত সময় মনে করতে হবে। কেননা চলতি দিনগুলোর পর আয়ু আর অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে। এ অবস্থায় সে সময়টাকে গাফলাতির মধ্যে কাটালে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেওয়া যাবে? গাফলতি তো এমন কোনও বিষয় নয়, যাকে আল্লাহর সামনে অজুহাত হিসেবে পেশ করা যাবে। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছ আমাদেরকে বেশি বেশি আমলে যত্নবান হওয়ার উৎসাহ যোগায়, বিশেষত বয়স যখন বার্ধক্যের দিকে অগ্রসর হয়। খ. প্রত্যেকের কর্তব্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ জীবনেও পরিবর্তন আনা। বিশেষত ৬০ বছর যদি হয়ে যায়, তখন কোনওক্রমেই গাফলাতির জীবন কাটানো উচিত নয়, যেহেতু তখনকার গাফলাতির জন্য কোনও অজুহাত চলবে না।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন

সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৫৯৭৭ | মুসলিম বাংলা