আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৪১৮
৩৪১৬. আশা এবং ধৈর্য।
৫৯৭৬। মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ একবার নবী (ﷺ) কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেনঃ এটা আশা আর এটা তার আয়ু। মানুষ যখন এ অবস্থায় থাকে, হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে যায়।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার ভেতর মানুষের জীবনযাপন, এর মধ্যেও তার বড় বড় ও লম্বা-চওড়া আশা পোষণ এবং এ অবস্থার মধ্যেই অকস্মাৎ মৃত্যুর আগমন, চিত্রের সাহায্যে মানুষের এ তিন অনুষঙ্গ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি একটি চতুর্ভুজ আঁকেন। তার মাঝখান থেকে একটি রেখা টানেন। রেখাটি চতুর্ভুজের সীমানা ভেদ করে বাইরে চলে আসে। তারপর আরও কতগুলো রেখা টানেন। সেগুলোর এক মাথা মাঝখানের রেখাটির দিকে, অন্য মাথা চতুর্ভুজের সীমানার দিকে। অনেকটা এরকম-
_____________________
|____________________|_______
|___|___|___|__|__|_____|
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিত্রটির যে ব্যাখ্যা দেন তা এরকম যে, মাঝখানের লম্বা রেখাটি যেন মানুষ। রেখাটির যে অংশ চতুর্ভুজ ভেদ করে সামনে চলে গেছে, তা মানুষের আশা। চতুর্ভুজটি মানুষের আয়ু, যা তাকে ঘিরে রেখেছে। এর বাইরে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। ছোট ছোট রেখাগুলো বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ ও বালা-মসিবত। মানুষের জীবনে এসব হানা দিতে থাকে। সে একটি থেকে রক্ষা পায়, তো আরেকটিতে আক্রান্ত হয়। আবার আরেকটি থেকে বেঁচে যায়, তো অন্য একটি তাকে বিদ্ধ করে। এভাবেই চলতে থাকে। ওদিকে তার আশা কিছু পূর্ণ হয়, তো কিছু বাকি থেকে যায়। এক পর্যায়ে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। ফলে তার মৃত্যু ঘটে। ওদিকে আশার অনেকখানিই থেকে যায় অপূর্ণ। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, বেশিরভাগ বালা-মসিবত থেকেই সে রেহাই পেয়ে যায়। হয়তো জীবনে কোনও মসিবতেই সে পড়ে না। তা যতই নিরাপদ থাকুক না কেন, মৃত্যু তো অবধারিত। একসময় তাকে মরতেই হবে। কিন্তু আশার অনেকখানি অপূর্ণ থেকে যাবে।
সারকথা, মানুষের আয়ু সীমিত। সীমিত আয়ুর ভেতর মানুষ অনেক বড় বড় আশা করে। সেসব আশা পূরণের চেষ্টায় জীবনের অনেকখানি ব্যয় করে ফেলে। হয়তো অনেক কিছুই হয় বৃথাচেষ্টা। তা তার দুনিয়ায়ও কোনও কাজে আসে না, আখিরাতেও না। কিংবা দুনিয়ায় হয়তো কিছুটা কাজে আসে, কিন্তু আখিরাতে তার কোনওই ফায়দা নেই। ওদিকে আছে নানা বালা-মসিবত। তার ভেতর দিয়েই মানুষকে চলতে হয়। কম মানুষই তা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। তা মানবজীবনের অবধারিত অনুষঙ্গ। এ অবস্থায় মানুষের দরকার জীবনের এসব অনুষঙ্গ মেনে নিয়ে সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাড়তি আশা না করে ইহজীবনের জন্য যা না হলেই নয় তাতে সন্তুষ্ট থেকে পরকালীন সাফল্য কীভাবে অর্জন করা যায় তাতেই সচেষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে গড়িমসি করা নেহাৎ ভুল। হঠাৎ করেই মৃত্যু এসে যাবে। তখন কিছুই করার থাকবে না। তার আগেই যা করার করে নেওয়া চাই।
প্রকাশ থাকে যে, আশা-আকাঙ্ক্ষা যেহেতু মানুষের সহজাত, তাই এটা সম্পূর্ণরূপে নিন্দনীয় নয়। জীবনে এর প্রয়োজন আছে বলেই মানুষকে এটা দেওয়া হয়েছে। এ না হলে মানুষ সংসারজীবন যাপন করত না। এ না হলে মানুষ চাষাবাদ করত না। এ না হলে শিল্পকারখানা গড়ে উঠত না। ভেতরে আশা-আকাঙ্ক্ষা সক্রিয় না থাকলে কেউ সন্তান লালন-পালন করত না। জীবনের যত নির্মাণ ও উন্নয়ন, তা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। সুতরাং মানবমনে এটা আল্লাহ তা'আলার এক মহান দান। কাজেই এমনিতে একে খারাপ বলা যায় না। এটা খারাপ হয় তখনই, যখন সীমালঙ্ঘন করে। এজন্যই হাদীছে আশা'র নিন্দা করা হয়নি। নিন্দা করা হয়েছে দীর্ঘ আশার। অতিরিক্ত আশা মন শক্ত করে। অতিরিক্ত আশা মানুষকে নীতিভ্রষ্ট করে। অতিরিক্ত আশা পরিণামে মানুষকে নৈরাশ্যের শিকার করে, যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবন বরবাদ করে দেয়। তাই অন্তরে আশা-আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই পোষণ করতে হবে, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়; বরং সীমার ভেতরে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মানুষের আয়ু বড় সীমিত। তাই আশা-আকাঙ্ক্ষাও সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
খ. বিপদ-আপদ ও বালা-মসিবত ইহজগতের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। এসব মেনে নেওয়ার ভেতরেই জীবনের সচলতা নিহিত। তাই বিপদে নিরাশ না হয়ে সবরের পরিচয় দেওয়াই সুবুদ্ধির কাজ।
গ. অতিরিক্ত আশা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তাই তার পেছনে ছোটা সম্পূর্ণই নির্বুদ্ধিতা।
ঘ. মৃত্যু যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। তাই সর্বদা তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
_____________________
|____________________|_______
|___|___|___|__|__|_____|
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিত্রটির যে ব্যাখ্যা দেন তা এরকম যে, মাঝখানের লম্বা রেখাটি যেন মানুষ। রেখাটির যে অংশ চতুর্ভুজ ভেদ করে সামনে চলে গেছে, তা মানুষের আশা। চতুর্ভুজটি মানুষের আয়ু, যা তাকে ঘিরে রেখেছে। এর বাইরে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। ছোট ছোট রেখাগুলো বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ ও বালা-মসিবত। মানুষের জীবনে এসব হানা দিতে থাকে। সে একটি থেকে রক্ষা পায়, তো আরেকটিতে আক্রান্ত হয়। আবার আরেকটি থেকে বেঁচে যায়, তো অন্য একটি তাকে বিদ্ধ করে। এভাবেই চলতে থাকে। ওদিকে তার আশা কিছু পূর্ণ হয়, তো কিছু বাকি থেকে যায়। এক পর্যায়ে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। ফলে তার মৃত্যু ঘটে। ওদিকে আশার অনেকখানিই থেকে যায় অপূর্ণ। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, বেশিরভাগ বালা-মসিবত থেকেই সে রেহাই পেয়ে যায়। হয়তো জীবনে কোনও মসিবতেই সে পড়ে না। তা যতই নিরাপদ থাকুক না কেন, মৃত্যু তো অবধারিত। একসময় তাকে মরতেই হবে। কিন্তু আশার অনেকখানি অপূর্ণ থেকে যাবে।
সারকথা, মানুষের আয়ু সীমিত। সীমিত আয়ুর ভেতর মানুষ অনেক বড় বড় আশা করে। সেসব আশা পূরণের চেষ্টায় জীবনের অনেকখানি ব্যয় করে ফেলে। হয়তো অনেক কিছুই হয় বৃথাচেষ্টা। তা তার দুনিয়ায়ও কোনও কাজে আসে না, আখিরাতেও না। কিংবা দুনিয়ায় হয়তো কিছুটা কাজে আসে, কিন্তু আখিরাতে তার কোনওই ফায়দা নেই। ওদিকে আছে নানা বালা-মসিবত। তার ভেতর দিয়েই মানুষকে চলতে হয়। কম মানুষই তা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। তা মানবজীবনের অবধারিত অনুষঙ্গ। এ অবস্থায় মানুষের দরকার জীবনের এসব অনুষঙ্গ মেনে নিয়ে সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাড়তি আশা না করে ইহজীবনের জন্য যা না হলেই নয় তাতে সন্তুষ্ট থেকে পরকালীন সাফল্য কীভাবে অর্জন করা যায় তাতেই সচেষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে গড়িমসি করা নেহাৎ ভুল। হঠাৎ করেই মৃত্যু এসে যাবে। তখন কিছুই করার থাকবে না। তার আগেই যা করার করে নেওয়া চাই।
প্রকাশ থাকে যে, আশা-আকাঙ্ক্ষা যেহেতু মানুষের সহজাত, তাই এটা সম্পূর্ণরূপে নিন্দনীয় নয়। জীবনে এর প্রয়োজন আছে বলেই মানুষকে এটা দেওয়া হয়েছে। এ না হলে মানুষ সংসারজীবন যাপন করত না। এ না হলে মানুষ চাষাবাদ করত না। এ না হলে শিল্পকারখানা গড়ে উঠত না। ভেতরে আশা-আকাঙ্ক্ষা সক্রিয় না থাকলে কেউ সন্তান লালন-পালন করত না। জীবনের যত নির্মাণ ও উন্নয়ন, তা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। সুতরাং মানবমনে এটা আল্লাহ তা'আলার এক মহান দান। কাজেই এমনিতে একে খারাপ বলা যায় না। এটা খারাপ হয় তখনই, যখন সীমালঙ্ঘন করে। এজন্যই হাদীছে আশা'র নিন্দা করা হয়নি। নিন্দা করা হয়েছে দীর্ঘ আশার। অতিরিক্ত আশা মন শক্ত করে। অতিরিক্ত আশা মানুষকে নীতিভ্রষ্ট করে। অতিরিক্ত আশা পরিণামে মানুষকে নৈরাশ্যের শিকার করে, যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবন বরবাদ করে দেয়। তাই অন্তরে আশা-আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই পোষণ করতে হবে, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়; বরং সীমার ভেতরে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মানুষের আয়ু বড় সীমিত। তাই আশা-আকাঙ্ক্ষাও সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
খ. বিপদ-আপদ ও বালা-মসিবত ইহজগতের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। এসব মেনে নেওয়ার ভেতরেই জীবনের সচলতা নিহিত। তাই বিপদে নিরাশ না হয়ে সবরের পরিচয় দেওয়াই সুবুদ্ধির কাজ।
গ. অতিরিক্ত আশা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তাই তার পেছনে ছোটা সম্পূর্ণই নির্বুদ্ধিতা।
ঘ. মৃত্যু যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। তাই সর্বদা তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
