রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৭৩
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ:১১ অনুমতিপ্রার্থীকে 'তুমি কে' জিজ্ঞেস করা হলে 'আমি' বা এরূপ কিছু না বলে সে যে নামে পরিচিত তাই বলে জবাব দেওয়া
মি'রাজের সফরে প্রত্যেক আসমানে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম-পরিচয় দেওয়া
হাদীছ নং: ৮৭৩

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত ইসরার বর্ণনা সম্বলিত প্রসিদ্ধ হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তারপর জিবরীল আমাকে নিয়ে নিকটবর্তী আকাশে উঠলেন। তারপর দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। তারপর জিবরীল আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। তারপর দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। তারপর তিনি ততীয়, চতুর্থ এবং এভাবে একের পর এক আকাশসমূহে (উঠতে থাকলেন)। প্রত্যেক আকাশের দরজায় জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল, কে? আর তিনি বলছিলেন, জিবরীল। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৮৮৭; সহীহ মুসলিম: ১৬২; সুনানে নাসাঈ : ৪৪৮: সহীহ ইবনে হিব্বান; ৪৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৫৯৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৬৫৭০; মুসনাদুল বাযযার : ৬৯৬৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ৩৪৯৯)
كتاب السلام
باب بيان أنَّ السنة إِذَا قيل للمستأذن: من أنت؟ أن يقول: فلان، فيسمي نفسه بما يعرف به من اسم أَوْ كنية وكراهة قوله: «أنا» ونحوها
873 - وعن أنس - رضي الله عنه - في حديثه المشهور في الإسراءِ، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «ثُمَّ صَعَدَ بي جِبْريلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ، فقِيلَ: مَنْ هذَا؟ قَالَ: جِبْريلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، ثُمَّ صَعَدَ إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فاسْتَفْتَحَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْريل، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ وَالثَّالِثَةِ وَالرَّابِعَةِ وَسَائِرِهنَّ وَيُقَالُ فِي بَابِ كُلِّ سَمَاءٍ: مَنْ هَذَا؟ فَيَقُولُ: جِبْريلُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)