রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫৭
অধ্যায়: ৭৮ শাসকবর্গকে জনগণের প্রতি নম্রতা দেখানো, তাদের প্রতি কল্যাণকামিতা ও মমত্ব প্রদর্শনের হুকুম এবং তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, কঠোরতা আরোপ, তাদের কল্যাণকর বিষয়সমূহ উপেক্ষা করা, তাদের প্রতি অমনোযোগিতা ও তাদের প্রয়োজন পূরণে অবহেলা প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা
জনগণের প্রয়োজন পূরণে অবহেলাকারী শাসকের পরিণাম
হাদীছ নং: ৬৫৭
হযরত আবূ মারয়াম আল-আযদী রাযি. একদিন হযরত মু'আবিয়া রাযি-কে লক্ষ্য করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি আল্লাহ যাকে মুসলিমদের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্বদান করেন আর সে তাদের প্রয়োজন, তাদের চাহিদা ও তাদের অভাব-অনটন পূরণ করা হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার প্রয়োজন, তার চাহিদা ও তার অভাবপূরণ হতে বিরত থাকবেন। অতঃপর হযরত মু'আবিয়া রাযি. মানুষের প্রয়োজনাদি দেখভালের জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। -আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ২৯৪৮; জামে' তিরমিযী: ১৩৮২; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৬৫১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮৩২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭০২৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৭৯)
হাদীছ নং: ৬৫৭
হযরত আবূ মারয়াম আল-আযদী রাযি. একদিন হযরত মু'আবিয়া রাযি-কে লক্ষ্য করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি আল্লাহ যাকে মুসলিমদের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্বদান করেন আর সে তাদের প্রয়োজন, তাদের চাহিদা ও তাদের অভাব-অনটন পূরণ করা হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার প্রয়োজন, তার চাহিদা ও তার অভাবপূরণ হতে বিরত থাকবেন। অতঃপর হযরত মু'আবিয়া রাযি. মানুষের প্রয়োজনাদি দেখভালের জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। -আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ২৯৪৮; জামে' তিরমিযী: ১৩৮২; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৬৫১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮৩২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭০২৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৭৯)
78 - باب أمر وُلاة الأمور بالرفق برعاياهم ونصيحتهم والشفقة عليهم والنهي عن غشهم والتشديد عليهم وإهمال مصالحهم والغفلة عنهم وعن حوائجهم
657 - وعن أَبي مريم الأزدِيِّ - رضي الله عنه: أنّه قَالَ لِمعاوية - رضي الله عنه: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنْ وَلاَّهُ اللهُ شَيْئًا مِنْ أُمُورِ المُسْلِمِينَ، فَاحْتَجَبَ دُونَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ، احْتَجَبَ اللهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» فجعل معاوية رجلًا عَلَى حوائج النَّاسِ. رواه أَبُو داود والترمذي. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ شَيْئًا مِنْ أُمُورِ الْمُسْلِمِينَ (আল্লাহ যাকে মুসলিমদের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্বদান করেন)। 'কোনও বিষয়ে কর্তৃত্বদান'-এর দ্বারা ক্ষুদ্র-বৃহৎ যে-কোনও পরিসরের কর্তৃত্বের প্রতি ইশারা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যাকে মুসলিম জনসাধারণের যে-কোনও পর্যায়ের শাসক ও প্রশাসক বানান, তা প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী হোক বা সাধারণ মন্ত্রী, এমপি, জেলা প্রশাসক ইত্যাদি যাই হোক না কেন।
فَاحْتَجَبَ دُوْنَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ (আর সে তাদের প্রয়োজন, তাদের চাহিদা ও তাদের অভাব-অনটন পূরণ করা হতে বিরত থাকে)। احْتَجَبَ এর মূল অর্থ আত্মগোপন করল, পর্দার ভেতর থাকল, বিরত থাকল। পাহারাদার ও দ্বাররক্ষীকে حَاجِبٌ বলে। احْتَجَبَ এর মূল অক্ষর حَاجِبٌ। حَجَبَ এরও তাই। শাসকবর্গ তাদের বাড়ি ও কার্যালয়ের দুয়ারে রক্ষী ও পাহারাদার নিযুক্ত করে। উদ্দেশ্য, যাতে সাধারণ জনগণ যখন-তখন তাদের কাছে পৌঁছতে না পারে এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় কথা সরাসরি গিয়ে বলতে না পারে। সে হিসেবে পাহারাদার তাদের জন্য এক রকম পর্দা ও আড়ালস্বরূপ। তারা এর মাধ্যমে নিজেদের আড়াল ও গোপন করে রাখে। এভাবে যেন তারা জনগণের কথা শোনা ও তাদের প্রয়োজন পূরণ করা হতে এক রকম বিরত থাকে।
মানুষের প্রয়োজন বোঝানোর জন্য এখানে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- ،خَلَّةٌ، حَاجَةُ ও فَقرٌ । সাধারণভাবে তিনওটি সমার্থবোধক। তবে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্যও রয়েছে। حَاجَةُ বলা হয় সাধারণ প্রয়োজনকে, যা পূরণ না হলে বড় ধরনের সমস্যা হয় না। خَلَّةٌ তারচে' বড় প্রয়োজনকে বলা হয়, যা পূরণ না হলে জীবন কঠিন হয়ে যায়। আর فَقرٌ বলা হয় তারচে'ও বড় প্রয়োজনকে, যা পূরণ না হলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। তবে অনেক সময় সাধারণ প্রয়োজন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। خَلَّةٌ-ও সেরকম।
তো হাদীছে বলা হয়েছে, কোনও শাসকের জনগণের প্রয়োজন পূরণ করা হতে বিরত থাকা উচিত নয় এবং যাতে করে মানুষ তাদের প্রয়োজন নিয়ে সহজে তার কাছে পৌঁছতে না পারে সে লক্ষ্যে নিজ কার্যালয়ে প্রহরী নিযুক্ত করাও বাঞ্ছনীয় নয়। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রহরী নিযুক্ত করলে তা ভিন্ন কথা।
যে শাসক জনগণের প্রয়োজন পূরণ করা হতে বিরত থাকে, তার পরিণাম সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- احتَجَبَ اللَّهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ (আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার প্রয়োজন, তার চাহিদা ও তার অভাবপূরণ হতে বিরত থাকবেন)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করবেন না এবং তার কোনও আশা পূরণ করবেন না। ফলে যেদিন মানুষের প্রয়োজন পূরণের দরকার হবে সবচে' বেশি, সেদিন তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হবে না। সেদিনকার প্রয়োজন হল হাশরের বিভীষিকায় আল্লাহর রহমতের ছায়ায় স্থান পাওয়া, হিসাব-নিকাশ সহজ হওয়া, ডানহাতে আমলনামা পাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করা। সেদিন মানুষের এসব প্রয়োজন পূরণ না হলে তারচে' বড় দুর্ভাগ্য ও বঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং এটা কী কঠিন সতর্কবাণী যে, জনগণের শাসক যদি জনগণের প্রয়োজনপূরণ থেকে বিরত থাকে, তবে তাকে কিয়ামতে এ দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হবে।
فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلًا عَلَى حَوَائِجِ النَّاسِ (অতঃপর হযরত মু'আবিয়া রাযি. মানুষের প্রয়োজনাদি দেখভালের জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন)। হযরত মু'আবিয়া রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন মহান সাহাবী। এ হাদীছের সতর্কবাণী যে কত কঠিন তা বুঝতে তাঁর বিলম্ব হয়নি। সুতরাং এর উপর আমল করার জন্য অবিলম্বেই তিনি এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করেন যে, মানুষের অভাব-অভিযোগের খোঁজখবর নিয়ে তা তাঁকে জানাবে, যাতে তাঁর পক্ষে সহজে তা মেটানো সম্ভব হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে-কোনও পর্যায়ের শাসক-প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিকে অবশ্যই জনগণের প্রয়োজনপূরণে তৎপর থাকতে হবে।
খ. জনগণের প্রয়োজন পৌছানোকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রহরী নিয়োগ করা জায়েয নয়।
গ. জনগণের প্রয়োজনপূরণে অবহেলা করলে শাসকবর্গকে কিয়ামতে তার খেসারত দিতে হবে।
ঘ. কুরআন-হাদীছে বর্ণিত কোনও সতর্কবাণী কানে আসামাত্র তা আমলে নিতে হবে।
ঙ. দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উচিত শাসকশ্রেণির প্রতি কল্যাণকামী থাকা এবং তাদেরকে সদুপদেশ দেওয়া।
فَاحْتَجَبَ دُوْنَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ (আর সে তাদের প্রয়োজন, তাদের চাহিদা ও তাদের অভাব-অনটন পূরণ করা হতে বিরত থাকে)। احْتَجَبَ এর মূল অর্থ আত্মগোপন করল, পর্দার ভেতর থাকল, বিরত থাকল। পাহারাদার ও দ্বাররক্ষীকে حَاجِبٌ বলে। احْتَجَبَ এর মূল অক্ষর حَاجِبٌ। حَجَبَ এরও তাই। শাসকবর্গ তাদের বাড়ি ও কার্যালয়ের দুয়ারে রক্ষী ও পাহারাদার নিযুক্ত করে। উদ্দেশ্য, যাতে সাধারণ জনগণ যখন-তখন তাদের কাছে পৌঁছতে না পারে এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় কথা সরাসরি গিয়ে বলতে না পারে। সে হিসেবে পাহারাদার তাদের জন্য এক রকম পর্দা ও আড়ালস্বরূপ। তারা এর মাধ্যমে নিজেদের আড়াল ও গোপন করে রাখে। এভাবে যেন তারা জনগণের কথা শোনা ও তাদের প্রয়োজন পূরণ করা হতে এক রকম বিরত থাকে।
মানুষের প্রয়োজন বোঝানোর জন্য এখানে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- ،خَلَّةٌ، حَاجَةُ ও فَقرٌ । সাধারণভাবে তিনওটি সমার্থবোধক। তবে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্যও রয়েছে। حَاجَةُ বলা হয় সাধারণ প্রয়োজনকে, যা পূরণ না হলে বড় ধরনের সমস্যা হয় না। خَلَّةٌ তারচে' বড় প্রয়োজনকে বলা হয়, যা পূরণ না হলে জীবন কঠিন হয়ে যায়। আর فَقرٌ বলা হয় তারচে'ও বড় প্রয়োজনকে, যা পূরণ না হলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। তবে অনেক সময় সাধারণ প্রয়োজন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। خَلَّةٌ-ও সেরকম।
তো হাদীছে বলা হয়েছে, কোনও শাসকের জনগণের প্রয়োজন পূরণ করা হতে বিরত থাকা উচিত নয় এবং যাতে করে মানুষ তাদের প্রয়োজন নিয়ে সহজে তার কাছে পৌঁছতে না পারে সে লক্ষ্যে নিজ কার্যালয়ে প্রহরী নিযুক্ত করাও বাঞ্ছনীয় নয়। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রহরী নিযুক্ত করলে তা ভিন্ন কথা।
যে শাসক জনগণের প্রয়োজন পূরণ করা হতে বিরত থাকে, তার পরিণাম সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- احتَجَبَ اللَّهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ (আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার প্রয়োজন, তার চাহিদা ও তার অভাবপূরণ হতে বিরত থাকবেন)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করবেন না এবং তার কোনও আশা পূরণ করবেন না। ফলে যেদিন মানুষের প্রয়োজন পূরণের দরকার হবে সবচে' বেশি, সেদিন তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হবে না। সেদিনকার প্রয়োজন হল হাশরের বিভীষিকায় আল্লাহর রহমতের ছায়ায় স্থান পাওয়া, হিসাব-নিকাশ সহজ হওয়া, ডানহাতে আমলনামা পাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করা। সেদিন মানুষের এসব প্রয়োজন পূরণ না হলে তারচে' বড় দুর্ভাগ্য ও বঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং এটা কী কঠিন সতর্কবাণী যে, জনগণের শাসক যদি জনগণের প্রয়োজনপূরণ থেকে বিরত থাকে, তবে তাকে কিয়ামতে এ দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হবে।
فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلًا عَلَى حَوَائِجِ النَّاسِ (অতঃপর হযরত মু'আবিয়া রাযি. মানুষের প্রয়োজনাদি দেখভালের জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন)। হযরত মু'আবিয়া রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন মহান সাহাবী। এ হাদীছের সতর্কবাণী যে কত কঠিন তা বুঝতে তাঁর বিলম্ব হয়নি। সুতরাং এর উপর আমল করার জন্য অবিলম্বেই তিনি এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করেন যে, মানুষের অভাব-অভিযোগের খোঁজখবর নিয়ে তা তাঁকে জানাবে, যাতে তাঁর পক্ষে সহজে তা মেটানো সম্ভব হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে-কোনও পর্যায়ের শাসক-প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিকে অবশ্যই জনগণের প্রয়োজনপূরণে তৎপর থাকতে হবে।
খ. জনগণের প্রয়োজন পৌছানোকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রহরী নিয়োগ করা জায়েয নয়।
গ. জনগণের প্রয়োজনপূরণে অবহেলা করলে শাসকবর্গকে কিয়ামতে তার খেসারত দিতে হবে।
ঘ. কুরআন-হাদীছে বর্ণিত কোনও সতর্কবাণী কানে আসামাত্র তা আমলে নিতে হবে।
ঙ. দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উচিত শাসকশ্রেণির প্রতি কল্যাণকামী থাকা এবং তাদেরকে সদুপদেশ দেওয়া।
