রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫৮
ন্যায়পরায়ণ শাসক
الْوَالِي শব্দটি উৎপত্তি وِلايَةٌ থেকে। এর অর্থ কর্তৃত্ব, অভিভাবকত্ব, তত্ত্বাবধানকর্ম। এটা সীমিত অর্থেও হতে পারে, ব্যাপক অর্থেও হতে পারে। এতিম ও নাবালকের অভিভাবক, ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী, আঞ্চলিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রের শাসক- এদের সকলকেই الْوَالِي শব্দে ব্যক্ত করা হয়। এদের প্রত্যেকেই আপন আপন পরিমণ্ডলে কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্ব করে থাকে।
عَادِل শব্দটির উৎপত্তি عَدْلٌ থেকে। এর অর্থ বরাবর ও ভারসাম্য। যে-কোনও ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফের অবস্থা ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে থাকে, যেন তা দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পরিমাপকৃত। দাঁড়িপাল্লার কোনও একদিক ঝোঁকা থাকলে তা দ্বারা পরিমাপ সঠিক হয় না। পরিমাপ সঠিক হওয়ার জন্য উভয়দিক সমান থাকা জরুরি। তদ্রূপ বিচারকার্যে বিচারকের দৃষ্টিও উভয়পক্ষের দিকে সমান থাকা জরুরি। অন্যথায় বিচারকর্ম সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে না। এ কারণেই দাঁড়িপাল্লাকে ন্যায়বিচারের প্রতীক গণ্য করা হয়।
ওয়ালী (اَلْوَالِي) অর্থাৎ শাসক-প্রশাসকের প্রতি ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা হল তাদেরকে অবশ্যই আপন দায়িত্ব-কর্তব্য ন্যায়নিষ্ঠতার সঙ্গে পালন করতে হবে। এটা তাদের উপর ফরয। আখিরাতে তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ভেতর পার্থিব বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। শাসক-প্রশাসক নিয়োগই করা হয় জনগণের কল্যাণার্থে। তারা ইনসাফের সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করলে জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে ব্যাপক অকল্যাণ সাধিত হয়। ফলে শাসক নিয়োগের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শাসক-প্রশাসকের প্রধান দায়িত্ব মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। বলাবাহুল্য, এ দায়িত্ব ন্যায়সম্মত শাসনের দ্বারাই পূরণ হওয়া সম্ভব। কেননা শাসন যদি জুলুম-অত্যাচারের সঙ্গে হয়, তবে তার অনিবার্য পরিণাম জননিরাপত্তার বিলুপ্তি। দেখা দেয় নৈরাজ্য ও অস্থিরতা। পরিণামে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
ন্যায় ও ইনসাফের শাসন রাষ্ট্রকে কল্যাণকর করে তোলে। রাষ্ট্রপ্রধানের ন্যায়নীতি ক্রমবিস্তার লাভ করে রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায়। তাতে জনগণও আপন আপন পরিমণ্ডলে ইনসাফ বিস্তারে আগ্রহী হয়। এর কল্যাণ প্রকাশ পায় ভূমি, কল-কারখানাসহ উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং উৎপাদনমূলক সকল কর্মকাণ্ডে। এটা আল্লাহর রহমত। ন্যায়শাসনে আল্লাহ খুশি হন। ফলে তিনি সে শাসকের অধীন সকল ক্ষেত্রে কল্যাণধারা বর্ষণ করেন। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ভূমি তার উর্বরাশক্তির প্রকাশ ঘটায়। এভাবে জলে-স্থলে সবখানে রহমত ও বরকতের প্রবাহ ছাপিয়ে যায়। এমনই কল্যাণপ্রসূ ইনসাফসম্মত শাসন। তাই তো বলা হয়, একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক মুষলধারার বৃষ্টি অপেক্ষাও উত্তম। শাসকের ন্যায় ও ইনসাফ ফলনমুখর কাল অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট। অপরদিকে জালেম শাসকের জুলুম সর্বাংশে ক্ষতিকর। কেবল জুলুম করাই নয়, জুলুমের নিয়তটুকুও অকল্যাণকর। ইবনুল আযরাক রহ. বলেন, বরকতনাশের জন্য জুলুমের নিয়তই যথেষ্ট। ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. বলেন, শাসক যখন ন্যায় ও ইনসাফের ইচ্ছা করে, তখন আল্লাহ তা'আলা রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে এমনকি হাটে-বাজারে পর্যন্ত বরকত দিয়ে দেন। বরকত দেন জীবন ও জীবিকায়। অপরপক্ষে যখন জুলুমের ইচ্ছা করে, তখন আল্লাহ তা'আলা হাট-বাজার, জীবন-জীবিকা ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে বেবরকতী ও অভাব-অনটন বিস্তার করে দেন।
সুতরাং জনগণের সঙ্গে শাসকের প্রীতিবন্ধন, জনগণের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সংহতি, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও সার্বিক কল্যাণার্থে শাসক-প্রশাসকের একান্ত কর্তব্য ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা। তাতে কেবল পার্থিব উন্নয়নই হয় না, আল্লাহ তা'আলারও সন্তুষ্টি লাভ হয়, যা কিনা একজন মুমিন বান্দার সর্বাপেক্ষা বড় কাম্যবস্তু। তাই কুরআন-হাদীছ অতি গুরুত্বের সঙ্গে এর প্রতি আমীর ও শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
'ন্যায়পরায়ণ শাসক' সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ ও দয়া করার হুকুম দেন।(সূরা নাহল (১৬), আয়াত ৯০)
ব্যাখ্যা
এটি পূর্ববর্তী অধ্যায়ের ২ নং আয়াতরূপে গত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থ: এবং ইনসাফ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।(সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ৯)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ দুই পক্ষের মধ্যে আপস-রফা, অন্যায়-অপরাধের বিচার-আচার ও মানুষের প্রতি আচার-ব্যবহারে ইনসাফের পরিচয় দিয়ো। কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব করো না। ইনসাফ রক্ষায় যেন আপন-পরের পার্থক্য তোমাদের প্রভাবিত করতে না পারে। এমনকি মুসলিম-অমুসলিমের প্রভেদও নয়। যাদের সঙ্গে কোনওরকম শত্রুতা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও ন্যায় ও ইনসাফ থেকে সরে যাওয়ার কোনও অবকাশ নেই। এটা এমনই এক সাধারণ ও সর্বব্যাপী নির্দেশ, যা সকলের ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য। এমনকি পিতারও কর্তব্য সন্তানদের প্রতি সমতাপূর্ণ ব্যবহার করা। অনুরূপ ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকেরও। যার দুই স্ত্রী আছে, তার জন্য উভয়ের সঙ্গে সুসম ব্যবহার করা কর্তব্য।
আয়াত হুকুম দিয়েছে যে, সকলের প্রতি ইনসাফ করো। আর এর কারণ বলেছে যে, আল্লাহ তা'আলা ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। বস্তুত আল্লাহর প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে, তারা আল্লাহ তা'আলাকে ভালোওবাসে সর্বাপেক্ষা বেশি এবং তা বেশি হওয়াই উচিত। যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, তাদের পরম লক্ষ্য তাঁর ভালোবাসা পাওয়া। এ আয়াত জানাচ্ছে, আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটি উপায় ন্যায় ও ইনসাফের আচরণ করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে যে ব্যক্তি ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করে দিতে পারবে, সে আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসা পাবেই। সুতরাং এ লক্ষ্যে প্রত্যেকের র্তব্য একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরূপে জীবনযাপন করা।
আল্লাহ তা'আলা যখন ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন, তখন এ কথা স্পষ্ট যে, যারা ইনসাফ করে না, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না। কাজেই যা-কিছু ইনসাফবিরোধী কাজ অবশ্যই তা পরিহার করে চলতে হবে। কুরআন মাজীদে পালকপুত্রদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকতে বলা হয়েছে। কী এর কারণ? আল্লাহ তা'আলা বলেন-
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللَّهِ
'তোমরা তাদেরকে (পোষ্যপুত্রদেরকে) তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। এ পদ্ধতিই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ ন্যায়সঙ্গত।(সূরা আহযাব (৩৩), আয়াত ৫)
অর্থাৎ কেবল লালন-পালনের কারণে কাউকে পিতা সাব্যস্ত করা আর জন্মদাতা তার সঙ্গে তার পরিচয় ভুলিয়ে দেওয়া কিছুতেই ইনসাফের কাজ নয়। এটা পিতা-পুত্র উভয়ের প্রতি জুলুম। কিন্তু মানুষ সাধারণত এটাকে জুলুম মনে করে না। ফলে এই এক পরাধ তাদেরকে আরও নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে ন্যায় ও ইনসাফ সর্জন দেওয়ার দ্বারা নানা অপরাধের পথ খুলে যায়। তাই সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ রক্ষায় সতর্ক থাকা অতীব জরুরি, বিশেষত শাসকশ্রেণির জন্য। দেশের সব জনগণ শাসকদের অধীন। শাসক ইনসাফ পরিহার করলে তার ভোগান্তি পোহাতে হয় দেশের সকল জনগণকে। ফলে তাকে এ পাপের দরুন সকল জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। দায় থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত জাহান্নাম থেকে তার মুক্তিও আটকে যায়। এ অবস্থায় আখিরাতে মুক্তির কী উপায়? তাই শাসকশ্রেণির খুব সাবধান হওয়া দরকার যাতে কানওভাবেই কোনও ক্ষেত্রে তারা ন্যায় ও ইনসাফের গণ্ডি অতিক্রম করে না ফেলে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আমাদেরকে অবশ্যই জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করে চলতে হবে।
খ. শাসকশ্রেণির জন্য ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আখিরাতে তাদের মুক্তিলাভ করা না করার একটা বড় সম্পর্ক এর সঙ্গে রয়েছে।
গ. ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করার দ্বারা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়।
الْوَالِي শব্দটি উৎপত্তি وِلايَةٌ থেকে। এর অর্থ কর্তৃত্ব, অভিভাবকত্ব, তত্ত্বাবধানকর্ম। এটা সীমিত অর্থেও হতে পারে, ব্যাপক অর্থেও হতে পারে। এতিম ও নাবালকের অভিভাবক, ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী, আঞ্চলিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রের শাসক- এদের সকলকেই الْوَالِي শব্দে ব্যক্ত করা হয়। এদের প্রত্যেকেই আপন আপন পরিমণ্ডলে কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্ব করে থাকে।
عَادِل শব্দটির উৎপত্তি عَدْلٌ থেকে। এর অর্থ বরাবর ও ভারসাম্য। যে-কোনও ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফের অবস্থা ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে থাকে, যেন তা দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পরিমাপকৃত। দাঁড়িপাল্লার কোনও একদিক ঝোঁকা থাকলে তা দ্বারা পরিমাপ সঠিক হয় না। পরিমাপ সঠিক হওয়ার জন্য উভয়দিক সমান থাকা জরুরি। তদ্রূপ বিচারকার্যে বিচারকের দৃষ্টিও উভয়পক্ষের দিকে সমান থাকা জরুরি। অন্যথায় বিচারকর্ম সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে না। এ কারণেই দাঁড়িপাল্লাকে ন্যায়বিচারের প্রতীক গণ্য করা হয়।
ওয়ালী (اَلْوَالِي) অর্থাৎ শাসক-প্রশাসকের প্রতি ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা হল তাদেরকে অবশ্যই আপন দায়িত্ব-কর্তব্য ন্যায়নিষ্ঠতার সঙ্গে পালন করতে হবে। এটা তাদের উপর ফরয। আখিরাতে তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ভেতর পার্থিব বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। শাসক-প্রশাসক নিয়োগই করা হয় জনগণের কল্যাণার্থে। তারা ইনসাফের সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করলে জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে ব্যাপক অকল্যাণ সাধিত হয়। ফলে শাসক নিয়োগের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শাসক-প্রশাসকের প্রধান দায়িত্ব মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। বলাবাহুল্য, এ দায়িত্ব ন্যায়সম্মত শাসনের দ্বারাই পূরণ হওয়া সম্ভব। কেননা শাসন যদি জুলুম-অত্যাচারের সঙ্গে হয়, তবে তার অনিবার্য পরিণাম জননিরাপত্তার বিলুপ্তি। দেখা দেয় নৈরাজ্য ও অস্থিরতা। পরিণামে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
ন্যায় ও ইনসাফের শাসন রাষ্ট্রকে কল্যাণকর করে তোলে। রাষ্ট্রপ্রধানের ন্যায়নীতি ক্রমবিস্তার লাভ করে রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায়। তাতে জনগণও আপন আপন পরিমণ্ডলে ইনসাফ বিস্তারে আগ্রহী হয়। এর কল্যাণ প্রকাশ পায় ভূমি, কল-কারখানাসহ উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং উৎপাদনমূলক সকল কর্মকাণ্ডে। এটা আল্লাহর রহমত। ন্যায়শাসনে আল্লাহ খুশি হন। ফলে তিনি সে শাসকের অধীন সকল ক্ষেত্রে কল্যাণধারা বর্ষণ করেন। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ভূমি তার উর্বরাশক্তির প্রকাশ ঘটায়। এভাবে জলে-স্থলে সবখানে রহমত ও বরকতের প্রবাহ ছাপিয়ে যায়। এমনই কল্যাণপ্রসূ ইনসাফসম্মত শাসন। তাই তো বলা হয়, একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক মুষলধারার বৃষ্টি অপেক্ষাও উত্তম। শাসকের ন্যায় ও ইনসাফ ফলনমুখর কাল অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট। অপরদিকে জালেম শাসকের জুলুম সর্বাংশে ক্ষতিকর। কেবল জুলুম করাই নয়, জুলুমের নিয়তটুকুও অকল্যাণকর। ইবনুল আযরাক রহ. বলেন, বরকতনাশের জন্য জুলুমের নিয়তই যথেষ্ট। ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. বলেন, শাসক যখন ন্যায় ও ইনসাফের ইচ্ছা করে, তখন আল্লাহ তা'আলা রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে এমনকি হাটে-বাজারে পর্যন্ত বরকত দিয়ে দেন। বরকত দেন জীবন ও জীবিকায়। অপরপক্ষে যখন জুলুমের ইচ্ছা করে, তখন আল্লাহ তা'আলা হাট-বাজার, জীবন-জীবিকা ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে বেবরকতী ও অভাব-অনটন বিস্তার করে দেন।
সুতরাং জনগণের সঙ্গে শাসকের প্রীতিবন্ধন, জনগণের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সংহতি, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও সার্বিক কল্যাণার্থে শাসক-প্রশাসকের একান্ত কর্তব্য ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা। তাতে কেবল পার্থিব উন্নয়নই হয় না, আল্লাহ তা'আলারও সন্তুষ্টি লাভ হয়, যা কিনা একজন মুমিন বান্দার সর্বাপেক্ষা বড় কাম্যবস্তু। তাই কুরআন-হাদীছ অতি গুরুত্বের সঙ্গে এর প্রতি আমীর ও শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
'ন্যায়পরায়ণ শাসক' সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ ও দয়া করার হুকুম দেন।(সূরা নাহল (১৬), আয়াত ৯০)
ব্যাখ্যা
এটি পূর্ববর্তী অধ্যায়ের ২ নং আয়াতরূপে গত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থ: এবং ইনসাফ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।(সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ৯)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ দুই পক্ষের মধ্যে আপস-রফা, অন্যায়-অপরাধের বিচার-আচার ও মানুষের প্রতি আচার-ব্যবহারে ইনসাফের পরিচয় দিয়ো। কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব করো না। ইনসাফ রক্ষায় যেন আপন-পরের পার্থক্য তোমাদের প্রভাবিত করতে না পারে। এমনকি মুসলিম-অমুসলিমের প্রভেদও নয়। যাদের সঙ্গে কোনওরকম শত্রুতা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও ন্যায় ও ইনসাফ থেকে সরে যাওয়ার কোনও অবকাশ নেই। এটা এমনই এক সাধারণ ও সর্বব্যাপী নির্দেশ, যা সকলের ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য। এমনকি পিতারও কর্তব্য সন্তানদের প্রতি সমতাপূর্ণ ব্যবহার করা। অনুরূপ ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকেরও। যার দুই স্ত্রী আছে, তার জন্য উভয়ের সঙ্গে সুসম ব্যবহার করা কর্তব্য।
আয়াত হুকুম দিয়েছে যে, সকলের প্রতি ইনসাফ করো। আর এর কারণ বলেছে যে, আল্লাহ তা'আলা ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। বস্তুত আল্লাহর প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে, তারা আল্লাহ তা'আলাকে ভালোওবাসে সর্বাপেক্ষা বেশি এবং তা বেশি হওয়াই উচিত। যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, তাদের পরম লক্ষ্য তাঁর ভালোবাসা পাওয়া। এ আয়াত জানাচ্ছে, আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটি উপায় ন্যায় ও ইনসাফের আচরণ করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে যে ব্যক্তি ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করে দিতে পারবে, সে আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসা পাবেই। সুতরাং এ লক্ষ্যে প্রত্যেকের র্তব্য একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরূপে জীবনযাপন করা।
আল্লাহ তা'আলা যখন ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন, তখন এ কথা স্পষ্ট যে, যারা ইনসাফ করে না, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না। কাজেই যা-কিছু ইনসাফবিরোধী কাজ অবশ্যই তা পরিহার করে চলতে হবে। কুরআন মাজীদে পালকপুত্রদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকতে বলা হয়েছে। কী এর কারণ? আল্লাহ তা'আলা বলেন-
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللَّهِ
'তোমরা তাদেরকে (পোষ্যপুত্রদেরকে) তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। এ পদ্ধতিই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ ন্যায়সঙ্গত।(সূরা আহযাব (৩৩), আয়াত ৫)
অর্থাৎ কেবল লালন-পালনের কারণে কাউকে পিতা সাব্যস্ত করা আর জন্মদাতা তার সঙ্গে তার পরিচয় ভুলিয়ে দেওয়া কিছুতেই ইনসাফের কাজ নয়। এটা পিতা-পুত্র উভয়ের প্রতি জুলুম। কিন্তু মানুষ সাধারণত এটাকে জুলুম মনে করে না। ফলে এই এক পরাধ তাদেরকে আরও নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে ন্যায় ও ইনসাফ সর্জন দেওয়ার দ্বারা নানা অপরাধের পথ খুলে যায়। তাই সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ রক্ষায় সতর্ক থাকা অতীব জরুরি, বিশেষত শাসকশ্রেণির জন্য। দেশের সব জনগণ শাসকদের অধীন। শাসক ইনসাফ পরিহার করলে তার ভোগান্তি পোহাতে হয় দেশের সকল জনগণকে। ফলে তাকে এ পাপের দরুন সকল জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। দায় থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত জাহান্নাম থেকে তার মুক্তিও আটকে যায়। এ অবস্থায় আখিরাতে মুক্তির কী উপায়? তাই শাসকশ্রেণির খুব সাবধান হওয়া দরকার যাতে কানওভাবেই কোনও ক্ষেত্রে তারা ন্যায় ও ইনসাফের গণ্ডি অতিক্রম করে না ফেলে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আমাদেরকে অবশ্যই জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করে চলতে হবে।
খ. শাসকশ্রেণির জন্য ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আখিরাতে তাদের মুক্তিলাভ করা না করার একটা বড় সম্পর্ক এর সঙ্গে রয়েছে।
গ. ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করার দ্বারা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়।
আল্লাহর রহমতের ছায়ায় সাত শ্রেণির লোকের স্থানলাভ ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা
হাদীছ নং: ৬৫৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সাত ব্যক্তি এমন যাদেরকে আল্লাহ সেই দিন নিজ (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনও ছায়া থাকবে না। তারা হল- ন্যায়পরায়ণ শাসক; ওই যুবক যে মহান আল্লাহর ইবাদতের ভেতর বেড়ে ওঠে; ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত; ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে, তাঁরই জন্য একত্র হয় এবং তাঁরই জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়; ওই ব্যক্তি যাকে কোনও খান্দানি ও সুন্দরী নারী ডাকে আর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি; ওই ব্যক্তি যে-কোনও দান-সদাকা করে, আর সে তা এমনভাবে গোপন করে যে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী ব্যয় করে; এবং ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৬০; সহীহ মুসলিম: ১০৩১; সুনানে নাসাঈ: ৫৩৮০; জামে তিরমিযী: ২৩৯১ মুসনাদে আহমাদ: ৯৬৬৫; সহীহ ইবন খুজায়মা ৩৫৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৪৮৬ তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত: ৬৩২৪; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ৪৯৮৭)
হাদীছ নং: ৬৫৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সাত ব্যক্তি এমন যাদেরকে আল্লাহ সেই দিন নিজ (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনও ছায়া থাকবে না। তারা হল- ন্যায়পরায়ণ শাসক; ওই যুবক যে মহান আল্লাহর ইবাদতের ভেতর বেড়ে ওঠে; ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত; ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে, তাঁরই জন্য একত্র হয় এবং তাঁরই জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়; ওই ব্যক্তি যাকে কোনও খান্দানি ও সুন্দরী নারী ডাকে আর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি; ওই ব্যক্তি যে-কোনও দান-সদাকা করে, আর সে তা এমনভাবে গোপন করে যে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী ব্যয় করে; এবং ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৬০; সহীহ মুসলিম: ১০৩১; সুনানে নাসাঈ: ৫৩৮০; জামে তিরমিযী: ২৩৯১ মুসনাদে আহমাদ: ৯৬৬৫; সহীহ ইবন খুজায়মা ৩৫৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৪৮৬ তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত: ৬৩২৪; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ৪৯৮৭)
79 - باب الوالي العادل
قَالَ الله تَعَالَى: {إنَّ اللهَ يَأمُرُ بِالعَدْلِ وَالإِحْسَانِ} [النحل: 90] الآية، وقال تَعَالَى: {وَأَقْسِطُوا إنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ} [الحجرات: 9].
قَالَ الله تَعَالَى: {إنَّ اللهَ يَأمُرُ بِالعَدْلِ وَالإِحْسَانِ} [النحل: 90] الآية، وقال تَعَالَى: {وَأَقْسِطُوا إنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ} [الحجرات: 9].
658 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ الله في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ: إِمَامٌ عادِلٌ، وَشَابٌ نَشَأ في عِبادة الله تَعَالَى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ في المَسَاجِدِ، وَرَجُلانِ تَحَابَّا في اللهِ اجتَمَعَا عَلَيْهِ، وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذاتُ مَنْصِبٍ وجَمالٍ، فَقَالَ: إنّي أخافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে সাত ব্যক্তি সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিজ ছায়ায় স্থান দেবেন। সাত ব্যক্তি দ্বারা সাত শ্রেণীর লোক বোঝানো উদ্দেশ্য। ‘আল্লাহর ছায়া' বলে তাঁর রহমতের ছায়া বোঝানো হয়েছে অথবা আরশের ছায়া। অপর এক বর্ণনায় আছে, তাদেরকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। হাদীছটিতে সাত শ্রেণীর লোকের বিবরণ দেওয়া হয়েছে নিম্নরূপ
ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা
এক. امام عادل (ন্যায়পরায়ণ শাসক)। অর্থাৎ এমন শাসক, যে আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং সে অনুযায়ী জনগণের মধ্যে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। কোনওরূপ স্বজনপ্রীতির পরিচয় দেয় না। না কোনও ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে, না শৈথিল্য দেখায়। কেউ কারও প্রতি জুলুম করলে সে ক্ষেত্রে জালিমের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং মজলুমকে নিজ ইনসাফের ছায়াতলে আশ্রয় দান করে। বলাবাহুল্য, কাজটি সহজ নয়। বরং ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ। তাই এই সাত শ্রেণীর মধ্যে ন্যায়পরায়ণ শাসককে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অনেক উপরে। বিভিন্ন হাদীছে তার বিপুল ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إن المقسطين عند الله على منابر من نور، عن يمين الرحمن عز وجل، وكلتا يديه يمين، الذين يعدلون في حكمهم وأهليهم وما ولوا
“আল্লাহ তাআলার কাছে ইনসাফকারীগণ থাকবে নূরের মিম্বরে, দয়াময় আল্লাহর ডানদিকে তাঁর উভয় হাতই ডান যারা তাদের শাসনকার্যে ইনসাফ করে, ইনসাফ করে তাদের পরিবারবর্গ ও অধীনস্থদের উপর।২৭৪
আরেক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إن أحب الناس إلى الله عز وجل يوم القيامة وأقربهم منه مجلسا: إمام عادل، وإن أبغض الناس إلى الله يوم القيامة وأشده عذابا إمام جائر
“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় ও সর্বাপেক্ষা বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে ন্যায়পরায়ণ শাসক। অপরদিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি ঘৃণ্য ও সর্বাপেক্ষা কঠোর শাস্তিযোগ্য হবে জালিম শাসক।২৭৫
অপর এক হাদীছে ইরশাদ الإمام العادل لا ترد دعوته 'ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ নামঞ্জুর করা হয় না।২৭৬
ন্যায়পরায়ণ শাসক যেহেতু মানুষকে তার ইনসাফের ছায়াতলে আশ্রয় দেয়, তাই হাশরের ময়দানে তাকেও আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
ইবাদতনিষ্ঠ যুবকের মর্যাদা
দুই. وشاب نشأ في عبادة الله عز وجل (ওই যুবক যে মহান আল্লাহর ইবাদতের ভেতর বেড়ে উঠে)। যৌবন বয়সে মানুষ সবদিক থেকে শক্ত-সমর্থ থাকে। তাই ইন্দ্ৰিয়চাহিদা থাকে প্রবল। ফলে অধিকাংশ যুবকই যৌবনের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হয়ে যায়। তারা ইন্দ্রিয়ের বশীভূত হয়ে পড়ে। ইন্দ্রিয়ের চাহিদা পূরণকেই জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলে। তাদের পক্ষে যৌবনের উচ্ছ্বসিত আবেদন ও ইন্দ্রিয়সুখের হাতছানি উপেক্ষা করে শরীআতের পাবন্দী করা সহজ হয় না। তা সত্ত্বেও যারা তা উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করতে যত্নবান থাকে, তারা যে তাদের অন্তরে অধিকতর শক্তিশালী তাকওয়া ও গভীর আল্লাহভীতি লালন করে তাতে সন্দেহ কী? এ শ্রেণীর যুবকেরা যেহেতু আল্লাহভীতিতে উদ্দীপিত হয়ে নফস ও শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে এবং ইবাদত-বন্দেগীর আশ্রয় নেয়, তাই এর পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে নিজ রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন। অপর এক হাদীছে এরূপ যুবকের ফযীলত বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে إن الله ليعجب من الشاب ليست له صبوة “আল্লাহ তাআলা ওই যুবকের প্রতি অবশ্যই খুশি থাকেন, যার খেলাধুলার ও মন্দ চাহিদার প্রতি আসক্তি নেই ৷২৭৭
মসজিদমুখী মুমিনের মর্যাদা
তিন. ورجل قلبه معلق بالمساجد (ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত)। অর্থাৎ মসজিদে ঝাড়বাতি বা ফানুস যেমন ঝুলে থাকে, তেমনি তার অন্তরও সর্বদা মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে, যদিও তার দেহ থাকে বাইরে। বোঝানো উদ্দেশ্য মসজিদের ভালোবাসা তার অন্তরে বদ্ধমূল। কেননা মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ভালোবাসায় সে মনপ্রাণ দিয়ে মসজিদকে ভালোবাসে।
মসজিদ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর জন্য। আল্লাহর আশেক বান্দা অন্য সবকিছুর উপর ইবাদতকে প্রাধান্য দেয়। সে ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের স্বাদ অনুভব করে। মসজিদ আল্লাহর ঘর হওয়ায় সেই নৈকট্যলাভের এটাই বেশি উপযুক্ত স্থান। তাই সে বার বার ফিরে ফিরে মসজিদেই আসে। পার্থিব প্রয়োজনে বাইরে থাকলেও কখন নামাযের সময় হবে সেই অপেক্ষায় থাকে। ফলে আযান শোনামাত্র মসজিদে চলে আসে। ফরয নামায সে মসজিদেই পড়ে। নামায শেষে বাইরে বের হলেও আবার ফিরে আসার তাড়নায় থাকে। পার্থিব প্রয়োজন না থাকলে যেন সে মুহূর্তের জন্যও মসজিদের বাইরে যেত না। এভাবে যে মসজিদকে তার আশ্রয়স্থল বানায়, আল্লাহ তাআলাও পুরস্কারস্বরূপ হাশরের ময়দানে তাকে নিজ আরশের ছায়ায় জায়গা দেবেন।
যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে
চার. ورجلان تحابا في الله ، اجتمعا عليه وتفرقا عليه (ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে, তাঁরই জন্য একত্র হয় এবং তাঁরই জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়)। অর্থাৎ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসায় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভ ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। ফলে যতক্ষণ সে ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের অনুকূল থাকে, ততক্ষণ তারা একে অন্যকে ভালোবেসে যায়। কিন্তু যখন তাদের সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের পক্ষে অন্তরায় হয়, তখন একে অন্যকে পরিত্যাগ করে। সারকথা তাদের সম্পর্ক রক্ষাও যেমন পার্থিব স্বার্থে হয় না; আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়, তেমনি সম্পর্ক ছিন্ন করাটাও কোনও পার্থিব কারণে নয়; আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যেই হয়। পারস্পরিক যে মহব্বত আল্লাহ তাআলার জন্য হয়, তা আল্লাহ তাআলার বড় পসন্দ। একটি হাদীছে কুদসীতে আছে حقت محبتى للمتحابين في “যে দুই ব্যক্তি আমারই জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত হয়ে যায়।২৭৮
আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহরই জন্য সম্পর্কচ্ছেদ প্রকৃতপক্ষে মনপ্রাণ আল্লাহতে নিবেদিত থাকারই পরিচয় বহন করে। এরূপ ব্যক্তি যেন আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছুর লগ্নতায় স্বস্তিবোধ করে না। তাই সর্বাবস্থায় সে তাঁরই অভিমুখী থাকে, তাঁরই দিকে ধাবিত থাকে। সুতরাং আল্লাহ তাআলাও তাকে মহব্বতের সঙ্গে কবুল করে নেন। সে কবুলিয়াতের নিদর্শনস্বরূপ তিনি হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় ঠাঁই দেবেন।
চরিত্ররক্ষায় বদ্ধপরিকর ব্যক্তির মর্যাদা
পাঁচ. ورجل دعته امراة ذات منصب وجمال ، فقال اني اخاف الله (ওই ব্যক্তি যাকে কোনও খান্দানী ও সুন্দরী নারী ডাকে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি)। এমনিই নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ অন্যসব আকর্ষণ অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী। তদুপরি নারী যদি হয় সুন্দরী ও খান্দানী, তবে সে আকর্ষণ হয় তীব্রতর। এরূপ নারী যখন কাউকে প্রলোভন দিয়ে ডাকে, তখন সে ডাক উপেক্ষা করে নিজেকে সংযত রাখা অতি গভীর আল্লাহভীতি ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। এরূপ ব্যক্তি যেন নিজ চরিত্ররক্ষায় হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের প্রতিনিধিত্ব করে। মিশরের শাসনকর্তার স্ত্রী তাঁকে নিজ শয়নকক্ষে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সাফ বলে দিয়েছিলেন معاذ الله (আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি)২৭৯।
এ হাদীছ জানাচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে সে ডাক উপেক্ষা করে এবং তার ছলনা, নফসের ধোঁকা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে এই বলে দয়াময়ের আশ্রয় গ্রহণ করে যে, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ভয় করি, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানে অবশ্যই সাহায্য করেন। দুনিয়ায় তাকে সেই পাপকর্ম থেকে হেফাজত করেন, আর হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন।
গোপনে দান-খয়রাত করার ফযীলত
ছয়. ورجل تصدق بصدقة فاخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه (ওই ব্যক্তি যে-কোনও দান-সদাকা করে, আর সে তা এমনভাবে গোপন করে যে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী ব্যয় করে)। এ দান-সদাকা দ্বারা নফল দান-সদাকা বোঝানো হয়েছে, যাকাত নয়। কেননা যাকাত প্রকাশ্যে দেওয়াই ভালো। ডান হাত কী ব্যয় করে তা বাম হাত জানে না' বলে চূড়ান্ত পর্যায়ের গোপনীয়তা বোঝানো উদ্দেশ্য। যেন বলা হচ্ছে, যদি কল্পনা করে নেওয়া হয় বাম হাতের বুঝ-জ্ঞান আছে, ফলে ডান হাত কী খরচ করেছে সে তা বুঝতে পারে, তবুও চূড়ান্ত পর্যায়ের গোপনীয়তা রক্ষার কারণে ডান হাতের খরচের বিষয়টি সে জানতে পারবে না, যদিও তার অবস্থান ডান হাতের অতি কাছে।
দান-খয়রাত গোপনে করাই নিরাপদ। তাতে যেমন নিজ ইখলাস ঠিক থাকে, অহংকার থেকে আত্মরক্ষা হয়, তেমনি যাকে দেওয়া হয় তারও ইজ্জত-সম্মান বাঁচে, যদিও অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশ্যেও দান করার অনুমতি আছে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
“তোমরা দান-সদাকা যদি প্রকাশ্যে দাও, সেও ভালো, আর যদি তা গোপনে গরীবদেরকে দান কর তবে তা তোমাদের পক্ষে কতইনা শ্রেয়! এবং আল্লাহ তোমাদের মন্দকর্মসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।২৮০
মানবস্বভাবে যেমন আছে সম্পদের আসক্তি, তেমনি আছে খ্যাতির মোহও। এ দু'টিই প্রকৃত দুনিয়াদারী। এ দু'টি যে ব্যক্তি দমন করতে পারে, কিংবা বলা যায় যে ব্যক্তি এর উপর আল্লাহপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে সক্ষম হয়, তার পক্ষেই আল্লাহর পথে গোপনে দান-খয়রাত করা সম্ভব হয়। এরূপ দান-খয়রাত প্রমাণ করে- দুনিয়া নয়; বরং কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভই তার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। তাই তো সে সম্পদ ও সুখ্যাতির ছত্রচ্ছায়া পরিহার করে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় মনোনিবেশ করেছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
গোপনে দান করার ফযীলত সম্পর্কে এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
فتعجبت الملائكة من خلق الجبال، فقالت : يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الجبال؟ قال: نعم، الحديد. قالت: يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الحديد؟ قال: نعم، النار . قالت : يا رب، هل من خلقك شيء أشد من النار؟ قال: نعم، الماء. قالت: يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الماء؟ قال: نعم، الريح . قالت: يا رب، فهل من خلقك شيء أشد من الريح؟ قال: نعم، ابن آدم يتصدق بيمينه يخفيها من شماله
“ফিরিশতাগণ পাহাড়ের সৃজনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টিরাজির মধ্যে পাহাড়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, লোহা। তারা বলল, লোহার চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আগুন। তারা বলল, আগুনের চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, পানি। তারা বলল, পানির চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, বাতাস। তারা বলল, বাতাসের চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আদমসন্তান তার ডান হাতে যা খরচ করে আর তা তার বাম হাত থেকেও গোপন রাখে।২৮১
নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে ক্রন্দন করা
সাত. ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه (এবং ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়)। নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ লোকচক্ষুর আড়ালে মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করা ও মুখে তাঁর যিকর করা, যেমন কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত করা, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইত্যাদি জপ করা। এ নির্জনতা লোকসমাবেশের মধ্যেও হতে পারে। আর তা হলো সমস্ত গায়রুল্লাহ থেকে মন-মস্তিষ্ক খালি করে একান্তভাবে এক আল্লাহর যিকর ও স্মরণে মগ্ন থাকা।
আল্লাহর স্মরণে চোখে পানি আসতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তাঁর ইশক ও ভালোবাসার ব্যাকুলতা, তাঁর আযাব, গযব ও প্রতিপত্তির ভীতি, নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পাপ-পঙ্কিলতাজনিত অনুতাপ-অনুশোচনা। বান্দা হিসেবে এর প্রতিটিই কাম্য ও প্রশংসনীয়। যে বান্দা এসব কারণে চোখের পানি ফেলে, তখন তার মনপ্রাণ, চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-জ্ঞান এক আল্লাহতে নিবেদিত হয়ে যায়। তাই আল্লাহ তাআলাও তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।
আল্লাহর ভয়ে চোখ থেকে পানি ঝরানোর ফযীলত সম্পর্কে অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من ذكر الله ففاضت عيناه من خشية الله، حتى يصيب الأرض من شيء من دموعه لم يعذبه الله يوم القيامة
“যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকর ও স্মরণ করে, ফলে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ অশ্রু প্রবাহিত করে, এমনকি তার অশ্রুর কিছু ফোঁটা মাটিতেও পড়ে যায়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দেবেন না।২৮২
হাসান বসরী রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলার পথে রক্তের যে ফোঁটা গড়ানো হয় অথবা গভীর রাতে যখন এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না, তখন সিজদা অবস্থায় অশ্রুর যে ফোঁটা বহানো হয়, আল্লাহর কাছে তার চেয়ে প্রিয় আর কোনও ফোঁটা নেই।
আরও যারা আল্লাহর রহমত ও আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে যে সদ্গুণসমূহের কারণে আল্লাহ তাআলার রহমত ও আরশের ছায়াতলে স্থানদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই প্রযোজ্য। ‘পুরুষ' শব্দ ব্যবহার করাটা কেবলই বাকশৈলী। আল্লাহ তাআলার কাছে নেক আমলের পুরস্কার লাভের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনও ভেদাভেদ নেই। উল্লেখ্য, আরশ ও রহমতের ছায়াতলে যারা স্থান পাবে তারা কেবল এ সাত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বাইরেও আছে। যেমন এক হাদীছে আছে من أنظر معسرا أو وضع عنه، أظله الله في ظله ‘যে ব্যক্তি ঋণগ্রহীতা গরীবকে সময় দেয় বা ছাড় দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় স্থান দান করবেন।২৮৩
এক বর্ণনায় আছে-
التاجر الصدوق مع السبعة، في ظل عرش الله يوم القيامة
“কিয়ামতের দিন সত্যনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সাত শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।২৮৪
অপর এক হাদীছে সাত শ্রেণীর যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে দু'টি শ্রেণী এরকম-
ورجل غض عينيه عن محارم الله تعالى، وعين حرست في سبيل الله
‘ওই ব্যক্তি, যে নিজের দুই চোখ ওই সকল বস্তু থেকে সংযত রাখে, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এবং (ওই ব্যক্তি) যার চোখ আল্লাহর পথে (অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষায়) পাহারাদারি করে।২৮৫
অপর এক হাদীছে প্রদত্ত তালিকায় এরকম আছে-
ورجل كان في سرية مع قوم فلقوا العدو، فانكشفوا، فحمى آثارهم، حتى نجا ونجوا، أو استشهد
“এবং ওই ব্যক্তি, যে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কোনও যুদ্ধাভিযানে ছিল। এ অবস্থায় শত্রুদলের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তারপর যুদ্ধে শত্রুদল পরাস্ত হয়ে পলায়ন করে। তখন সে শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবন করে, যতক্ষণ না সে নিজে ও তার সঙ্গীগণ তাদের থেকে রক্ষা পায় কিংবা সে শহীদ হয়ে যায়।২৮৬
এছাড়াও যারা শৈশবে কুরআন শেখে এবং বৃদ্ধাবস্থায় তা তিলাওয়াত করে, যারা ওয়াক্তমত নামায আদায়ে যত্নবান থাকে, যারা অন্ধকারে জামাতে নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, যারা আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে সাহায্য করে এবং এমনিভাবে আরও বিভিন্ন সৎকর্মপরায়ণ সম্পর্কে রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায় যে, তারাও আল্লাহ তাআলার রহমত ও আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তাআলা যাকে শাসনক্ষমতা দান করেছেন, তার একান্ত কর্তব্য ন্যায় ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা।
খ. যৌবনকালকে খেলাধুলার ও খেয়ালখুশির ভেতর নষ্ট করা উচিত নয়। এ সময়টা অনেক মূল্যবান। ইবাদত-বন্দেগীর সঙ্গে কাটাতে পারলে রহমতের ছায়ায় স্থান পাওয়া যাবে।
গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত মসজিদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা। যখন যেখানেই থাকা হয় না কেন, মন যেন মসজিদেই পড়ে থাকে।
ঘ. পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা হওয়া উচিত কেবল আল্লাহ তাআলার জন্যই।। এমনিভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টাও কোনও পার্থিব স্বার্থে না হয়ে আল্লাহ তাআলার জন্যই হওয়া উচিত।
ঙ. কোনও পুরুষের উচিত নয় কোনও নারীর ছলনায় পড়া। কোনও নারীরও উচিত নয় পুরুষের ছলনায় নিজেকে কলঙ্কিত করা। আল্লাহর ভয়ে নিজেকে এর থেকে হেফাজত করা চাই।
চ. আল্লাহর পথে সাধ্যমত দান-খয়রাত করা চাই। আর নিজের পক্ষ থেকে তা কিছুতেই প্রকাশ করা উচিত নয়।
ছ. নির্জনে নিভৃতে আল্লাহ তাআলার যিকর ও স্মরণে লিপ্ত হয়ে চোখের পানি ঝরানো অতি উচ্চ পর্যায়ের আমল। আপন সময়-সুযোগ অনুযায়ী এ আমলটি অবশ্যই করা চাই।
২৭৪. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৮৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩৭৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪০৩৫
২৭৫. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১১৭৪, ১১৫২৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৭২
২৭৬. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৭২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২১৯২৩
২৭৭. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৩৭১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৫৩: মুসনাদ আবূ ইয়া'লা; ১৭৪৯; খারাইতী, ই‘তিলালুল কুলূব, হাদীছ নং ৫৩৭
২৭৮. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪১০০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৭৭; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, ৩৮৯৩
২৭৯. সূরা ইউসুফ (১২), আয়াত ২৩
২৮০. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭১
২৮১. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৫৩; মুসনাদে আবৃ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৪৩১০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৬৭
২৮২. আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৬১৭১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক, হাদীছ নং ৭৬৬৮
২৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৩০০৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩০৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২২১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৪৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৭২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৭৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২১৪১
২৮৪. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৬১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪৭০
২৮৫. বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, হাদীছ নং ৭৯৩
২৮৬. ইবন যানজাওয়াইহ্, আল আমওয়াল, হাদীছ নং ১০; সুয়ূতী, আল-জামি'উস্ সগীর, হাদীছ নং ৪৬৪৬
ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা
এক. امام عادل (ন্যায়পরায়ণ শাসক)। অর্থাৎ এমন শাসক, যে আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং সে অনুযায়ী জনগণের মধ্যে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। কোনওরূপ স্বজনপ্রীতির পরিচয় দেয় না। না কোনও ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে, না শৈথিল্য দেখায়। কেউ কারও প্রতি জুলুম করলে সে ক্ষেত্রে জালিমের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং মজলুমকে নিজ ইনসাফের ছায়াতলে আশ্রয় দান করে। বলাবাহুল্য, কাজটি সহজ নয়। বরং ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ। তাই এই সাত শ্রেণীর মধ্যে ন্যায়পরায়ণ শাসককে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অনেক উপরে। বিভিন্ন হাদীছে তার বিপুল ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إن المقسطين عند الله على منابر من نور، عن يمين الرحمن عز وجل، وكلتا يديه يمين، الذين يعدلون في حكمهم وأهليهم وما ولوا
“আল্লাহ তাআলার কাছে ইনসাফকারীগণ থাকবে নূরের মিম্বরে, দয়াময় আল্লাহর ডানদিকে তাঁর উভয় হাতই ডান যারা তাদের শাসনকার্যে ইনসাফ করে, ইনসাফ করে তাদের পরিবারবর্গ ও অধীনস্থদের উপর।২৭৪
আরেক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إن أحب الناس إلى الله عز وجل يوم القيامة وأقربهم منه مجلسا: إمام عادل، وإن أبغض الناس إلى الله يوم القيامة وأشده عذابا إمام جائر
“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় ও সর্বাপেক্ষা বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে ন্যায়পরায়ণ শাসক। অপরদিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি ঘৃণ্য ও সর্বাপেক্ষা কঠোর শাস্তিযোগ্য হবে জালিম শাসক।২৭৫
অপর এক হাদীছে ইরশাদ الإمام العادل لا ترد دعوته 'ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ নামঞ্জুর করা হয় না।২৭৬
ন্যায়পরায়ণ শাসক যেহেতু মানুষকে তার ইনসাফের ছায়াতলে আশ্রয় দেয়, তাই হাশরের ময়দানে তাকেও আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
ইবাদতনিষ্ঠ যুবকের মর্যাদা
দুই. وشاب نشأ في عبادة الله عز وجل (ওই যুবক যে মহান আল্লাহর ইবাদতের ভেতর বেড়ে উঠে)। যৌবন বয়সে মানুষ সবদিক থেকে শক্ত-সমর্থ থাকে। তাই ইন্দ্ৰিয়চাহিদা থাকে প্রবল। ফলে অধিকাংশ যুবকই যৌবনের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হয়ে যায়। তারা ইন্দ্রিয়ের বশীভূত হয়ে পড়ে। ইন্দ্রিয়ের চাহিদা পূরণকেই জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলে। তাদের পক্ষে যৌবনের উচ্ছ্বসিত আবেদন ও ইন্দ্রিয়সুখের হাতছানি উপেক্ষা করে শরীআতের পাবন্দী করা সহজ হয় না। তা সত্ত্বেও যারা তা উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করতে যত্নবান থাকে, তারা যে তাদের অন্তরে অধিকতর শক্তিশালী তাকওয়া ও গভীর আল্লাহভীতি লালন করে তাতে সন্দেহ কী? এ শ্রেণীর যুবকেরা যেহেতু আল্লাহভীতিতে উদ্দীপিত হয়ে নফস ও শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে এবং ইবাদত-বন্দেগীর আশ্রয় নেয়, তাই এর পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে নিজ রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন। অপর এক হাদীছে এরূপ যুবকের ফযীলত বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে إن الله ليعجب من الشاب ليست له صبوة “আল্লাহ তাআলা ওই যুবকের প্রতি অবশ্যই খুশি থাকেন, যার খেলাধুলার ও মন্দ চাহিদার প্রতি আসক্তি নেই ৷২৭৭
মসজিদমুখী মুমিনের মর্যাদা
তিন. ورجل قلبه معلق بالمساجد (ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত)। অর্থাৎ মসজিদে ঝাড়বাতি বা ফানুস যেমন ঝুলে থাকে, তেমনি তার অন্তরও সর্বদা মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে, যদিও তার দেহ থাকে বাইরে। বোঝানো উদ্দেশ্য মসজিদের ভালোবাসা তার অন্তরে বদ্ধমূল। কেননা মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ভালোবাসায় সে মনপ্রাণ দিয়ে মসজিদকে ভালোবাসে।
মসজিদ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর জন্য। আল্লাহর আশেক বান্দা অন্য সবকিছুর উপর ইবাদতকে প্রাধান্য দেয়। সে ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের স্বাদ অনুভব করে। মসজিদ আল্লাহর ঘর হওয়ায় সেই নৈকট্যলাভের এটাই বেশি উপযুক্ত স্থান। তাই সে বার বার ফিরে ফিরে মসজিদেই আসে। পার্থিব প্রয়োজনে বাইরে থাকলেও কখন নামাযের সময় হবে সেই অপেক্ষায় থাকে। ফলে আযান শোনামাত্র মসজিদে চলে আসে। ফরয নামায সে মসজিদেই পড়ে। নামায শেষে বাইরে বের হলেও আবার ফিরে আসার তাড়নায় থাকে। পার্থিব প্রয়োজন না থাকলে যেন সে মুহূর্তের জন্যও মসজিদের বাইরে যেত না। এভাবে যে মসজিদকে তার আশ্রয়স্থল বানায়, আল্লাহ তাআলাও পুরস্কারস্বরূপ হাশরের ময়দানে তাকে নিজ আরশের ছায়ায় জায়গা দেবেন।
যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে
চার. ورجلان تحابا في الله ، اجتمعا عليه وتفرقا عليه (ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালোবাসে, তাঁরই জন্য একত্র হয় এবং তাঁরই জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়)। অর্থাৎ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসায় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভ ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। ফলে যতক্ষণ সে ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের অনুকূল থাকে, ততক্ষণ তারা একে অন্যকে ভালোবেসে যায়। কিন্তু যখন তাদের সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের পক্ষে অন্তরায় হয়, তখন একে অন্যকে পরিত্যাগ করে। সারকথা তাদের সম্পর্ক রক্ষাও যেমন পার্থিব স্বার্থে হয় না; আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়, তেমনি সম্পর্ক ছিন্ন করাটাও কোনও পার্থিব কারণে নয়; আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যেই হয়। পারস্পরিক যে মহব্বত আল্লাহ তাআলার জন্য হয়, তা আল্লাহ তাআলার বড় পসন্দ। একটি হাদীছে কুদসীতে আছে حقت محبتى للمتحابين في “যে দুই ব্যক্তি আমারই জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত হয়ে যায়।২৭৮
আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহরই জন্য সম্পর্কচ্ছেদ প্রকৃতপক্ষে মনপ্রাণ আল্লাহতে নিবেদিত থাকারই পরিচয় বহন করে। এরূপ ব্যক্তি যেন আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছুর লগ্নতায় স্বস্তিবোধ করে না। তাই সর্বাবস্থায় সে তাঁরই অভিমুখী থাকে, তাঁরই দিকে ধাবিত থাকে। সুতরাং আল্লাহ তাআলাও তাকে মহব্বতের সঙ্গে কবুল করে নেন। সে কবুলিয়াতের নিদর্শনস্বরূপ তিনি হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় ঠাঁই দেবেন।
চরিত্ররক্ষায় বদ্ধপরিকর ব্যক্তির মর্যাদা
পাঁচ. ورجل دعته امراة ذات منصب وجمال ، فقال اني اخاف الله (ওই ব্যক্তি যাকে কোনও খান্দানী ও সুন্দরী নারী ডাকে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি)। এমনিই নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ অন্যসব আকর্ষণ অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী। তদুপরি নারী যদি হয় সুন্দরী ও খান্দানী, তবে সে আকর্ষণ হয় তীব্রতর। এরূপ নারী যখন কাউকে প্রলোভন দিয়ে ডাকে, তখন সে ডাক উপেক্ষা করে নিজেকে সংযত রাখা অতি গভীর আল্লাহভীতি ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। এরূপ ব্যক্তি যেন নিজ চরিত্ররক্ষায় হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের প্রতিনিধিত্ব করে। মিশরের শাসনকর্তার স্ত্রী তাঁকে নিজ শয়নকক্ষে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সাফ বলে দিয়েছিলেন معاذ الله (আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি)২৭৯।
এ হাদীছ জানাচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে সে ডাক উপেক্ষা করে এবং তার ছলনা, নফসের ধোঁকা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে এই বলে দয়াময়ের আশ্রয় গ্রহণ করে যে, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ভয় করি, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানে অবশ্যই সাহায্য করেন। দুনিয়ায় তাকে সেই পাপকর্ম থেকে হেফাজত করেন, আর হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন।
গোপনে দান-খয়রাত করার ফযীলত
ছয়. ورجل تصدق بصدقة فاخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه (ওই ব্যক্তি যে-কোনও দান-সদাকা করে, আর সে তা এমনভাবে গোপন করে যে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী ব্যয় করে)। এ দান-সদাকা দ্বারা নফল দান-সদাকা বোঝানো হয়েছে, যাকাত নয়। কেননা যাকাত প্রকাশ্যে দেওয়াই ভালো। ডান হাত কী ব্যয় করে তা বাম হাত জানে না' বলে চূড়ান্ত পর্যায়ের গোপনীয়তা বোঝানো উদ্দেশ্য। যেন বলা হচ্ছে, যদি কল্পনা করে নেওয়া হয় বাম হাতের বুঝ-জ্ঞান আছে, ফলে ডান হাত কী খরচ করেছে সে তা বুঝতে পারে, তবুও চূড়ান্ত পর্যায়ের গোপনীয়তা রক্ষার কারণে ডান হাতের খরচের বিষয়টি সে জানতে পারবে না, যদিও তার অবস্থান ডান হাতের অতি কাছে।
দান-খয়রাত গোপনে করাই নিরাপদ। তাতে যেমন নিজ ইখলাস ঠিক থাকে, অহংকার থেকে আত্মরক্ষা হয়, তেমনি যাকে দেওয়া হয় তারও ইজ্জত-সম্মান বাঁচে, যদিও অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশ্যেও দান করার অনুমতি আছে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
“তোমরা দান-সদাকা যদি প্রকাশ্যে দাও, সেও ভালো, আর যদি তা গোপনে গরীবদেরকে দান কর তবে তা তোমাদের পক্ষে কতইনা শ্রেয়! এবং আল্লাহ তোমাদের মন্দকর্মসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।২৮০
মানবস্বভাবে যেমন আছে সম্পদের আসক্তি, তেমনি আছে খ্যাতির মোহও। এ দু'টিই প্রকৃত দুনিয়াদারী। এ দু'টি যে ব্যক্তি দমন করতে পারে, কিংবা বলা যায় যে ব্যক্তি এর উপর আল্লাহপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে সক্ষম হয়, তার পক্ষেই আল্লাহর পথে গোপনে দান-খয়রাত করা সম্ভব হয়। এরূপ দান-খয়রাত প্রমাণ করে- দুনিয়া নয়; বরং কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভই তার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। তাই তো সে সম্পদ ও সুখ্যাতির ছত্রচ্ছায়া পরিহার করে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় মনোনিবেশ করেছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা হাশরের ময়দানে তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
গোপনে দান করার ফযীলত সম্পর্কে এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
فتعجبت الملائكة من خلق الجبال، فقالت : يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الجبال؟ قال: نعم، الحديد. قالت: يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الحديد؟ قال: نعم، النار . قالت : يا رب، هل من خلقك شيء أشد من النار؟ قال: نعم، الماء. قالت: يا رب، هل من خلقك شيء أشد من الماء؟ قال: نعم، الريح . قالت: يا رب، فهل من خلقك شيء أشد من الريح؟ قال: نعم، ابن آدم يتصدق بيمينه يخفيها من شماله
“ফিরিশতাগণ পাহাড়ের সৃজনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টিরাজির মধ্যে পাহাড়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, লোহা। তারা বলল, লোহার চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আগুন। তারা বলল, আগুনের চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, পানি। তারা বলল, পানির চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, বাতাস। তারা বলল, বাতাসের চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আদমসন্তান তার ডান হাতে যা খরচ করে আর তা তার বাম হাত থেকেও গোপন রাখে।২৮১
নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে ক্রন্দন করা
সাত. ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه (এবং ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়)। নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ লোকচক্ষুর আড়ালে মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করা ও মুখে তাঁর যিকর করা, যেমন কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত করা, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইত্যাদি জপ করা। এ নির্জনতা লোকসমাবেশের মধ্যেও হতে পারে। আর তা হলো সমস্ত গায়রুল্লাহ থেকে মন-মস্তিষ্ক খালি করে একান্তভাবে এক আল্লাহর যিকর ও স্মরণে মগ্ন থাকা।
আল্লাহর স্মরণে চোখে পানি আসতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তাঁর ইশক ও ভালোবাসার ব্যাকুলতা, তাঁর আযাব, গযব ও প্রতিপত্তির ভীতি, নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পাপ-পঙ্কিলতাজনিত অনুতাপ-অনুশোচনা। বান্দা হিসেবে এর প্রতিটিই কাম্য ও প্রশংসনীয়। যে বান্দা এসব কারণে চোখের পানি ফেলে, তখন তার মনপ্রাণ, চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-জ্ঞান এক আল্লাহতে নিবেদিত হয়ে যায়। তাই আল্লাহ তাআলাও তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।
আল্লাহর ভয়ে চোখ থেকে পানি ঝরানোর ফযীলত সম্পর্কে অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من ذكر الله ففاضت عيناه من خشية الله، حتى يصيب الأرض من شيء من دموعه لم يعذبه الله يوم القيامة
“যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকর ও স্মরণ করে, ফলে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ অশ্রু প্রবাহিত করে, এমনকি তার অশ্রুর কিছু ফোঁটা মাটিতেও পড়ে যায়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দেবেন না।২৮২
হাসান বসরী রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলার পথে রক্তের যে ফোঁটা গড়ানো হয় অথবা গভীর রাতে যখন এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না, তখন সিজদা অবস্থায় অশ্রুর যে ফোঁটা বহানো হয়, আল্লাহর কাছে তার চেয়ে প্রিয় আর কোনও ফোঁটা নেই।
আরও যারা আল্লাহর রহমত ও আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে যে সদ্গুণসমূহের কারণে আল্লাহ তাআলার রহমত ও আরশের ছায়াতলে স্থানদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই প্রযোজ্য। ‘পুরুষ' শব্দ ব্যবহার করাটা কেবলই বাকশৈলী। আল্লাহ তাআলার কাছে নেক আমলের পুরস্কার লাভের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনও ভেদাভেদ নেই। উল্লেখ্য, আরশ ও রহমতের ছায়াতলে যারা স্থান পাবে তারা কেবল এ সাত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বাইরেও আছে। যেমন এক হাদীছে আছে من أنظر معسرا أو وضع عنه، أظله الله في ظله ‘যে ব্যক্তি ঋণগ্রহীতা গরীবকে সময় দেয় বা ছাড় দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ রহমতের ছায়ায় স্থান দান করবেন।২৮৩
এক বর্ণনায় আছে-
التاجر الصدوق مع السبعة، في ظل عرش الله يوم القيامة
“কিয়ামতের দিন সত্যনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সাত শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।২৮৪
অপর এক হাদীছে সাত শ্রেণীর যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে দু'টি শ্রেণী এরকম-
ورجل غض عينيه عن محارم الله تعالى، وعين حرست في سبيل الله
‘ওই ব্যক্তি, যে নিজের দুই চোখ ওই সকল বস্তু থেকে সংযত রাখে, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এবং (ওই ব্যক্তি) যার চোখ আল্লাহর পথে (অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষায়) পাহারাদারি করে।২৮৫
অপর এক হাদীছে প্রদত্ত তালিকায় এরকম আছে-
ورجل كان في سرية مع قوم فلقوا العدو، فانكشفوا، فحمى آثارهم، حتى نجا ونجوا، أو استشهد
“এবং ওই ব্যক্তি, যে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কোনও যুদ্ধাভিযানে ছিল। এ অবস্থায় শত্রুদলের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তারপর যুদ্ধে শত্রুদল পরাস্ত হয়ে পলায়ন করে। তখন সে শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবন করে, যতক্ষণ না সে নিজে ও তার সঙ্গীগণ তাদের থেকে রক্ষা পায় কিংবা সে শহীদ হয়ে যায়।২৮৬
এছাড়াও যারা শৈশবে কুরআন শেখে এবং বৃদ্ধাবস্থায় তা তিলাওয়াত করে, যারা ওয়াক্তমত নামায আদায়ে যত্নবান থাকে, যারা অন্ধকারে জামাতে নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, যারা আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে সাহায্য করে এবং এমনিভাবে আরও বিভিন্ন সৎকর্মপরায়ণ সম্পর্কে রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায় যে, তারাও আল্লাহ তাআলার রহমত ও আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তাআলা যাকে শাসনক্ষমতা দান করেছেন, তার একান্ত কর্তব্য ন্যায় ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা।
খ. যৌবনকালকে খেলাধুলার ও খেয়ালখুশির ভেতর নষ্ট করা উচিত নয়। এ সময়টা অনেক মূল্যবান। ইবাদত-বন্দেগীর সঙ্গে কাটাতে পারলে রহমতের ছায়ায় স্থান পাওয়া যাবে।
গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত মসজিদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা। যখন যেখানেই থাকা হয় না কেন, মন যেন মসজিদেই পড়ে থাকে।
ঘ. পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা হওয়া উচিত কেবল আল্লাহ তাআলার জন্যই।। এমনিভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টাও কোনও পার্থিব স্বার্থে না হয়ে আল্লাহ তাআলার জন্যই হওয়া উচিত।
ঙ. কোনও পুরুষের উচিত নয় কোনও নারীর ছলনায় পড়া। কোনও নারীরও উচিত নয় পুরুষের ছলনায় নিজেকে কলঙ্কিত করা। আল্লাহর ভয়ে নিজেকে এর থেকে হেফাজত করা চাই।
চ. আল্লাহর পথে সাধ্যমত দান-খয়রাত করা চাই। আর নিজের পক্ষ থেকে তা কিছুতেই প্রকাশ করা উচিত নয়।
ছ. নির্জনে নিভৃতে আল্লাহ তাআলার যিকর ও স্মরণে লিপ্ত হয়ে চোখের পানি ঝরানো অতি উচ্চ পর্যায়ের আমল। আপন সময়-সুযোগ অনুযায়ী এ আমলটি অবশ্যই করা চাই।
২৭৪. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৮৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩৭৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪০৩৫
২৭৫. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১১৭৪, ১১৫২৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৭২
২৭৬. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৭২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২১৯২৩
২৭৭. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৩৭১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৫৩: মুসনাদ আবূ ইয়া'লা; ১৭৪৯; খারাইতী, ই‘তিলালুল কুলূব, হাদীছ নং ৫৩৭
২৭৮. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪১০০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৭৭; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, ৩৮৯৩
২৭৯. সূরা ইউসুফ (১২), আয়াত ২৩
২৮০. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭১
২৮১. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৫৩; মুসনাদে আবৃ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৪৩১০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৬৭
২৮২. আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৬১৭১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক, হাদীছ নং ৭৬৬৮
২৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৩০০৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩০৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২২১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৪৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৭২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৭৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২১৪১
২৮৪. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৬১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪৭০
২৮৫. বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, হাদীছ নং ৭৯৩
২৮৬. ইবন যানজাওয়াইহ্, আল আমওয়াল, হাদীছ নং ১০; সুয়ূতী, আল-জামি'উস্ সগীর, হাদীছ নং ৪৬৪৬
