রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৪৭
অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার ফযীলত
মানুষ সামাজিক জীব। তাকে পারিবারিক জীবন যাপন করতে হয়। তাকে দশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। কারও পক্ষেই একাকী জীবনযাপন সম্ভব নয়। অন্যদিকে স্বভাব-চরিত্র, চিন্তা-ভাবনা ও রুচি-প্রকৃতিতে মানুষ বড় বৈচিত্র্যময়। ফলে মিলেমিশে চলার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই মানুষকে অন্যের পক্ষ থেকে বিপরীত চিন্তা, ভিন্ন মানসিকতা এমনকি কখনও অপ্রীতিকর আচরণেরও সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় মানুষ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়। নিজ আখলাক-চরিত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এরূপ লোক অন্যকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলে। তা ইচ্ছাকৃতভাবেও দেয়। তারা আপন লোককেও কষ্ট দেয়, পরকেও কষ্ট দেয়। ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাটে তাদের দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রকমের কষ্ট-ক্লেশের শিকার হয়।
কখনও মানুষ কষ্ট পায় ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েও। কেউ কোনও কথা বলেছে এক রকম আর সে বুঝেছে অন্যরকম। তার কাছে সে কথা অপ্রীতিকর বোধ হয়েছে। ফলে সে মনে কষ্ট পেয়েছে। কোনও কোনও আচরণও অনেক সময় সঠিকভাবে বুঝতে না পারার দরুন মানুষ মনে কষ্ট পেয়ে বসে।
মোটকথা মানুষের মনোকষ্টের নানা রকমফের আছে। বহুমাত্রিক সে কষ্ট-ক্লেশ যারা সইতে পারে না, তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। কারণে-অকারণে তারা একের পর এক কষ্টই পেতে থাকে। আর তার প্রতিক্রিয়ায় তারা অন্যের কাছেও পরিণত হয় সাক্ষাৎ যন্ত্রণায়। সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় জীবনের ভার লাঘব করা।
জীবনের ভার লাঘব হয় অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার দ্বারা। যে ব্যক্তি কথায় কথায় মন খারাপ করে না, কেউ কষ্ট দিলে তা হাসিমুখে অগ্রাহ্য করে, তার জীবন তার নিজের কাছেও সহজ, অন্যদের কাছেও সুখকর।
একটুতেই যে মন খারাপ করে, তার পক্ষে জীবনকে কর্মময় করে তোলা সম্ভব নয়। অথচ মানবজীবন বড় সম্ভাবনাময়। প্রত্যেকের পক্ষেই প্রচুর কাজ করা সম্ভব- কল্যাণময় কাজ। যে কাজ দ্বারা ব্যক্তির নিজের জীবন হয় সার্থক এবং অন্যদের জীবনে সাধিত হয় নানাবিধ কল্যাণ, তারই জন্য তো মানুষের জীবন। সেরূপ কল্যাণকর কাজে জীবন ভরে তোলার জন্য দরকার প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় সম্ভাবনা ও সক্ষমতার যথোচিত ব্যবহার। কথায় কথায় মন খারাপকারী ব্যক্তির পক্ষে সেরূপ ব্যবহার কীভাবে সম্ভব?
মানুষ পার্থিব জীবনসর্বস্ব কোনও জীব নয়। তার সামনে আছে অনন্ত আখিরাত। আখিরাতের জীবন সফল করার লক্ষ্যেই সীমিত কালের এ পার্থিব জীবন। তার মানে পার্থিব জীবনের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার কোনও সুযোগ নেই। তা যাতে নষ্ট না হয়; বরং যথাযথ কাজে প্রতিটি মুহূর্তের যথোচিত ব্যবহার হয়, তারই জন্য প্রত্যেকের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকা দরকার। সে প্রস্তুতির লক্ষ্যেই দরকার মনের ভার লাঘব করা তথা আপন-পর যার পক্ষ থেকেই কোনও আঘাত আসুক তা উপেক্ষা করে যাওয়া। এককথায় অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবজীবন সার্থক করে তোলার রহস্য। কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার দ্বারা মন ভারমুক্ত থাকে। ফলে নির্ভার মনে আনন্দের সঙ্গে যাবতীয় দরকারি কাজে লেগে থাকা সম্ভব হয়। তাতে করে ইহজীবনও হয় কর্মময় এবং আখিরাতের জীবনও হয় সাফল্যমণ্ডিত।
এর দ্বারা বোঝা গেল প্রত্যেকের জন্য অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করা খুব বেশি জরুরি। তা জরুরি বলেই আমাদেরকে এতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الْمُسْلِمُ إِذَا كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ خَيْرٌ مِنَ الْمُسْلِمِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ
‘কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে আর সে তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে, সে ওই মুসলিম অপেক্ষা উত্তম, যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে না আর তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে না।( জামে' তিরমিযী: ২৫০৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪০৩২; মুসনাদে আহমাদ: ৫০২২; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬২২০; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ১৯৮৮; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৫৯৫৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ২০১৭৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ : ৩৫৮৫)
বস্তুত এ বিষয়ে প্রচুর আয়াত ও হাদীছ আছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে তার কয়েকটি উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ…’ সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১৩৪)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৩ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।(সূরা শূরা (৪২), আয়াত ৪৩)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ৪ নং আয়াতরূপে গত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
মানুষ সামাজিক জীব। তাকে পারিবারিক জীবন যাপন করতে হয়। তাকে দশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। কারও পক্ষেই একাকী জীবনযাপন সম্ভব নয়। অন্যদিকে স্বভাব-চরিত্র, চিন্তা-ভাবনা ও রুচি-প্রকৃতিতে মানুষ বড় বৈচিত্র্যময়। ফলে মিলেমিশে চলার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই মানুষকে অন্যের পক্ষ থেকে বিপরীত চিন্তা, ভিন্ন মানসিকতা এমনকি কখনও অপ্রীতিকর আচরণেরও সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় মানুষ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়। নিজ আখলাক-চরিত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এরূপ লোক অন্যকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলে। তা ইচ্ছাকৃতভাবেও দেয়। তারা আপন লোককেও কষ্ট দেয়, পরকেও কষ্ট দেয়। ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাটে তাদের দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রকমের কষ্ট-ক্লেশের শিকার হয়।
কখনও মানুষ কষ্ট পায় ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েও। কেউ কোনও কথা বলেছে এক রকম আর সে বুঝেছে অন্যরকম। তার কাছে সে কথা অপ্রীতিকর বোধ হয়েছে। ফলে সে মনে কষ্ট পেয়েছে। কোনও কোনও আচরণও অনেক সময় সঠিকভাবে বুঝতে না পারার দরুন মানুষ মনে কষ্ট পেয়ে বসে।
মোটকথা মানুষের মনোকষ্টের নানা রকমফের আছে। বহুমাত্রিক সে কষ্ট-ক্লেশ যারা সইতে পারে না, তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। কারণে-অকারণে তারা একের পর এক কষ্টই পেতে থাকে। আর তার প্রতিক্রিয়ায় তারা অন্যের কাছেও পরিণত হয় সাক্ষাৎ যন্ত্রণায়। সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় জীবনের ভার লাঘব করা।
জীবনের ভার লাঘব হয় অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার দ্বারা। যে ব্যক্তি কথায় কথায় মন খারাপ করে না, কেউ কষ্ট দিলে তা হাসিমুখে অগ্রাহ্য করে, তার জীবন তার নিজের কাছেও সহজ, অন্যদের কাছেও সুখকর।
একটুতেই যে মন খারাপ করে, তার পক্ষে জীবনকে কর্মময় করে তোলা সম্ভব নয়। অথচ মানবজীবন বড় সম্ভাবনাময়। প্রত্যেকের পক্ষেই প্রচুর কাজ করা সম্ভব- কল্যাণময় কাজ। যে কাজ দ্বারা ব্যক্তির নিজের জীবন হয় সার্থক এবং অন্যদের জীবনে সাধিত হয় নানাবিধ কল্যাণ, তারই জন্য তো মানুষের জীবন। সেরূপ কল্যাণকর কাজে জীবন ভরে তোলার জন্য দরকার প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় সম্ভাবনা ও সক্ষমতার যথোচিত ব্যবহার। কথায় কথায় মন খারাপকারী ব্যক্তির পক্ষে সেরূপ ব্যবহার কীভাবে সম্ভব?
মানুষ পার্থিব জীবনসর্বস্ব কোনও জীব নয়। তার সামনে আছে অনন্ত আখিরাত। আখিরাতের জীবন সফল করার লক্ষ্যেই সীমিত কালের এ পার্থিব জীবন। তার মানে পার্থিব জীবনের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার কোনও সুযোগ নেই। তা যাতে নষ্ট না হয়; বরং যথাযথ কাজে প্রতিটি মুহূর্তের যথোচিত ব্যবহার হয়, তারই জন্য প্রত্যেকের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকা দরকার। সে প্রস্তুতির লক্ষ্যেই দরকার মনের ভার লাঘব করা তথা আপন-পর যার পক্ষ থেকেই কোনও আঘাত আসুক তা উপেক্ষা করে যাওয়া। এককথায় অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবজীবন সার্থক করে তোলার রহস্য। কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার দ্বারা মন ভারমুক্ত থাকে। ফলে নির্ভার মনে আনন্দের সঙ্গে যাবতীয় দরকারি কাজে লেগে থাকা সম্ভব হয়। তাতে করে ইহজীবনও হয় কর্মময় এবং আখিরাতের জীবনও হয় সাফল্যমণ্ডিত।
এর দ্বারা বোঝা গেল প্রত্যেকের জন্য অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করা খুব বেশি জরুরি। তা জরুরি বলেই আমাদেরকে এতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الْمُسْلِمُ إِذَا كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ خَيْرٌ مِنَ الْمُسْلِمِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ
‘কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে আর সে তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে, সে ওই মুসলিম অপেক্ষা উত্তম, যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে না আর তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে না।( জামে' তিরমিযী: ২৫০৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪০৩২; মুসনাদে আহমাদ: ৫০২২; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬২২০; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ১৯৮৮; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৫৯৫৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ২০১৭৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ : ৩৫৮৫)
বস্তুত এ বিষয়ে প্রচুর আয়াত ও হাদীছ আছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে তার কয়েকটি উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ…’ সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১৩৪)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৩ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।(সূরা শূরা (৪২), আয়াত ৪৩)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ৪ নং আয়াতরূপে গত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
অন্যের দুর্ব্যবহার সহ্য করার সুফল
হাদীছ নং: ৬৪৭
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমনকিছু আত্মীয় আছে, যাদের সঙ্গে আমি সুসম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের দুর্ব্যবহারে সহনশীলতার পরিচয় দিই, কিন্তু তারা আমার প্রতি অসংযত আচরণ করে। তিনি বললেন, তুমি যেমন বললে যদি সেরকমই হয়ে থাক তবে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ। তুমি যতক্ষণ তোমার এই নীতির উপর থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তোমার একজন সাহায্যকারী থাকবে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৫৮; সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৫০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৯৯২; শুআবুল ঈমান : ৭৫৮৩; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত: ২৭৮৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৪৩৭)
হাদীছ নং: ৬৪৭
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমনকিছু আত্মীয় আছে, যাদের সঙ্গে আমি সুসম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের দুর্ব্যবহারে সহনশীলতার পরিচয় দিই, কিন্তু তারা আমার প্রতি অসংযত আচরণ করে। তিনি বললেন, তুমি যেমন বললে যদি সেরকমই হয়ে থাক তবে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ। তুমি যতক্ষণ তোমার এই নীতির উপর থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তোমার একজন সাহায্যকারী থাকবে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৫৮; সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৫০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৯৯২; শুআবুল ঈমান : ৭৫৮৩; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত: ২৭৮৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৪৩৭)
76 - باب احتمال الأذى
قَالَ الله تَعَالَى: {وَالْكَاظِمِينَ الغَيْظَ والْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ واللهُ يُحِبُّ المُحْسِنِينَ} [آل عمران: 134]، وقال تَعَالَى: {وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43] وفي الباب: الأحاديث السابقة في الباب قبله.
قَالَ الله تَعَالَى: {وَالْكَاظِمِينَ الغَيْظَ والْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ واللهُ يُحِبُّ المُحْسِنِينَ} [آل عمران: 134]، وقال تَعَالَى: {وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43] وفي الباب: الأحاديث السابقة في الباب قبله.
647 - وعن أَبي هريرة رضي الله تَعَالَى عنه: أنَّ رَجُلًا، قَالَ: يَا رسول الله، إنّ لي قَرَابةً أصِلُهم وَيَقْطَعُونِي، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلُمُ عَنهم وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ! فَقَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ تَعَالَى ظَهيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ». رواه مسلم. (1)
وقد سَبَقَ شَرْحُهُ في بَابِ صلة الأرحام.
وقد سَبَقَ شَرْحُهُ في بَابِ صلة الأرحام.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছের সারকথা হলো জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার আত্মীয় সম্পর্কে তিনটি অভিযোগ করেছিলেন। প্রথম অভিযোগ- আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। দ্বিতীয় অভিযোগ- আমি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে। তৃতীয় অভিযোগ- আমি তাদের মন্দ আচরণ বরদাশত করি ও তাদের প্রতি সহনশীলতার পরিচয় দিই, কিন্তু তারা আমার প্রতি অজ্ঞতাসুলভ ও অসহিষ্ণু আচরণ করে। এর উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি কথা বললেন। প্রথম কথা বললেন-
لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ
(তুমি যেমন বললে যদি সেরকমই হয়ে থাক তবে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ)। ইমাম নববী রহ. বলেন, المل -এর অর্থ গরম ছাই। অর্থাৎ তুমি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছ। এটি একটি উপমা। এর দ্বারা গুনাহে রত ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে উপমিত করা হয়েছে, যে গরম ছাই খাওয়ার কারণে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে। যে আত্মীয় অপর আত্মীয়ের প্রতি ভালো ব্যবহার করে, বাস্তবিকপক্ষে তার কোনও কষ্ট নেই। গুনাহ তো নেই-ই। পক্ষান্তরে সেই অপর আত্মীয় তার হক নষ্ট করে ও তাকে কষ্ট দিয়ে কঠিনভাবে গুনাহগার হচ্ছে।
ইমাম নববী রহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, কারও কারও মতে এর অর্থ- তুমি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করে তাদের নিজেদের কাছে তাদেরকে হীন ও নীচ সাব্যস্ত করছ। একদিকে তুমি তাদের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করছ, অন্যদিকে তারা করছে মন্দ আচরণ। কাজেই তাদের হীনতা ও নীচতাটা ঠিক ওই ব্যক্তির মত, যে (ভালো খাবার ছেড়ে) গরম ছাই খায়। অথবা বলা যায়, তোমার পক্ষ থেকে তাদের অনুগ্রহ গ্রহণ করাটা ওই গরম ছাই গ্রাস করার মত, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
ইমাম আকূলী রহ. বলেন, এর অর্থ সে যেন সদ্ব্যবহার করার দ্বারা তাদের সামনে গরম ছাই রাখছে, যে ছাই তারা গ্রাস করছে। অর্থাৎ তারা যখন তোমার সদ্ব্যবহারের কৃতজ্ঞতা করল না, তখন সে সদ্ব্যবহার গ্রহণ করা তাদের পক্ষে হারাম হয়ে গেল, যা তাদের উদরে আগুন হয়ে প্রবেশ করল।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় কথা বললেন- وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ (তুমি যতক্ষণ তোমার এই নীতির উপর থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তোমার একজন সাহায্যকারী থাকবে)। অর্থাৎ তাদের দুর্ব্যবহার তোমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তোমাকে ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন। তুমি যতদিন এ নীতির উপর অবিচল থাকবে, ততদিন সে ফিরিশতা তোমার সাহায্য করে যাবে।
এ নীতির উপর অবিচল থাকাটাও তোমার পক্ষে সে ফিরিশতার সাহায্যের ফল। সে তোমার মনোবল অটুট রাখতে প্রেরণা যোগাতে থাকবে। তাছাড়া বাহ্যিকভাবেও তারা যদি কোনও ক্ষতি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও তুমি সেই ফিরিশতার সাহায্য পাবে। এই বলে মূলত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে তার এ আদর্শের উপর অবিচল থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, একবার কোনও এক ব্যক্তি তাঁকে রূঢ় কথা বলে যাচ্ছিল, কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দিচ্ছিলেন না। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ছিলেন। লোকটি যখন খুব বাড়াবাড়ি করছিল, তখন একপর্যায়ে আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. তার কথার উত্তর দিয়ে ফেললেন। অমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গেলেন। হযরত আবু বকর রাযি.-ও তার পেছন পেছন চললেন আর বলতে লাগলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছিল, তখন আপনি চুপ করে বসে ছিলেন। তারপর যেই না আমি প্রত্যুত্তর করলাম, অমনি আপনি উঠে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-
يَا أَبَا بَكْرٍ، إِنَّكَ مَا سَكَتَ كَانَ الْمَلَكُ يَرُدُّ عَلَيْهِ ، فَلَمَّا انْتَصَرْتَ ارْتَفَعَ الْمَلَكُ، وَحَضَرَ الشَّيْطَانُ، فَلَمْ أَكُنْ لِأُجَالِسَ الشَّيْطَانَ
হে আবূ বকর! যতক্ষণ তুমি চুপ ছিলে, ততক্ষণ ফিরিশতা তোমার পক্ষ হতে তাকে জবাব দিচ্ছিল। যেই না তুমি জবাব দিলে, অমনি ফিরিশতা চলে গেল আর শয়তান হাজির হলো। আমি তো শয়তানের সঙ্গে বসবার নই। ৭৫
উল্লেখ্য, বিপদ-আপদে ফিরিশতাগণ যে মুমিনদের সাহায্য করে থাকে, সে সম্পর্কে এ ছাড়াও আরও বহু হাদীছ আছে। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারাও এটা প্রমাণিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সর্বাবস্থায় আত্মীয়ের প্রতি ভালো আচরণ করে যাওয়া চাই। কোনও আত্মীয় মন্দ ব্যবহার করলেও তার প্রতি নিজ আচরণ ভালো রাখাই বাঞ্ছনীয়।
খ. আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহার করা কিছুতেই জায়েয নয়। সদ্ব্যবহারকারী আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহার করা নীচতাও বটে ।
গ. কোনও আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহারে রত থেকে তার পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার গ্রহণ করে যাওয়া গরম ছাই খাওয়ার মত কাজ।
ঘ. কারও দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও তার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে থাকলে ফিরিশতার পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ হয়।
৭৫. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮৯৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৬২৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫৮৬; আল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং ৭২৩৯ বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১০৯৬
لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ
(তুমি যেমন বললে যদি সেরকমই হয়ে থাক তবে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ)। ইমাম নববী রহ. বলেন, المل -এর অর্থ গরম ছাই। অর্থাৎ তুমি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছ। এটি একটি উপমা। এর দ্বারা গুনাহে রত ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে উপমিত করা হয়েছে, যে গরম ছাই খাওয়ার কারণে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে। যে আত্মীয় অপর আত্মীয়ের প্রতি ভালো ব্যবহার করে, বাস্তবিকপক্ষে তার কোনও কষ্ট নেই। গুনাহ তো নেই-ই। পক্ষান্তরে সেই অপর আত্মীয় তার হক নষ্ট করে ও তাকে কষ্ট দিয়ে কঠিনভাবে গুনাহগার হচ্ছে।
ইমাম নববী রহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, কারও কারও মতে এর অর্থ- তুমি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করে তাদের নিজেদের কাছে তাদেরকে হীন ও নীচ সাব্যস্ত করছ। একদিকে তুমি তাদের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করছ, অন্যদিকে তারা করছে মন্দ আচরণ। কাজেই তাদের হীনতা ও নীচতাটা ঠিক ওই ব্যক্তির মত, যে (ভালো খাবার ছেড়ে) গরম ছাই খায়। অথবা বলা যায়, তোমার পক্ষ থেকে তাদের অনুগ্রহ গ্রহণ করাটা ওই গরম ছাই গ্রাস করার মত, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
ইমাম আকূলী রহ. বলেন, এর অর্থ সে যেন সদ্ব্যবহার করার দ্বারা তাদের সামনে গরম ছাই রাখছে, যে ছাই তারা গ্রাস করছে। অর্থাৎ তারা যখন তোমার সদ্ব্যবহারের কৃতজ্ঞতা করল না, তখন সে সদ্ব্যবহার গ্রহণ করা তাদের পক্ষে হারাম হয়ে গেল, যা তাদের উদরে আগুন হয়ে প্রবেশ করল।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় কথা বললেন- وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ (তুমি যতক্ষণ তোমার এই নীতির উপর থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তোমার একজন সাহায্যকারী থাকবে)। অর্থাৎ তাদের দুর্ব্যবহার তোমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তোমাকে ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন। তুমি যতদিন এ নীতির উপর অবিচল থাকবে, ততদিন সে ফিরিশতা তোমার সাহায্য করে যাবে।
এ নীতির উপর অবিচল থাকাটাও তোমার পক্ষে সে ফিরিশতার সাহায্যের ফল। সে তোমার মনোবল অটুট রাখতে প্রেরণা যোগাতে থাকবে। তাছাড়া বাহ্যিকভাবেও তারা যদি কোনও ক্ষতি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও তুমি সেই ফিরিশতার সাহায্য পাবে। এই বলে মূলত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে তার এ আদর্শের উপর অবিচল থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, একবার কোনও এক ব্যক্তি তাঁকে রূঢ় কথা বলে যাচ্ছিল, কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দিচ্ছিলেন না। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ছিলেন। লোকটি যখন খুব বাড়াবাড়ি করছিল, তখন একপর্যায়ে আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. তার কথার উত্তর দিয়ে ফেললেন। অমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গেলেন। হযরত আবু বকর রাযি.-ও তার পেছন পেছন চললেন আর বলতে লাগলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছিল, তখন আপনি চুপ করে বসে ছিলেন। তারপর যেই না আমি প্রত্যুত্তর করলাম, অমনি আপনি উঠে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-
يَا أَبَا بَكْرٍ، إِنَّكَ مَا سَكَتَ كَانَ الْمَلَكُ يَرُدُّ عَلَيْهِ ، فَلَمَّا انْتَصَرْتَ ارْتَفَعَ الْمَلَكُ، وَحَضَرَ الشَّيْطَانُ، فَلَمْ أَكُنْ لِأُجَالِسَ الشَّيْطَانَ
হে আবূ বকর! যতক্ষণ তুমি চুপ ছিলে, ততক্ষণ ফিরিশতা তোমার পক্ষ হতে তাকে জবাব দিচ্ছিল। যেই না তুমি জবাব দিলে, অমনি ফিরিশতা চলে গেল আর শয়তান হাজির হলো। আমি তো শয়তানের সঙ্গে বসবার নই। ৭৫
উল্লেখ্য, বিপদ-আপদে ফিরিশতাগণ যে মুমিনদের সাহায্য করে থাকে, সে সম্পর্কে এ ছাড়াও আরও বহু হাদীছ আছে। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারাও এটা প্রমাণিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সর্বাবস্থায় আত্মীয়ের প্রতি ভালো আচরণ করে যাওয়া চাই। কোনও আত্মীয় মন্দ ব্যবহার করলেও তার প্রতি নিজ আচরণ ভালো রাখাই বাঞ্ছনীয়।
খ. আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহার করা কিছুতেই জায়েয নয়। সদ্ব্যবহারকারী আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহার করা নীচতাও বটে ।
গ. কোনও আত্মীয়ের প্রতি মন্দ ব্যবহারে রত থেকে তার পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার গ্রহণ করে যাওয়া গরম ছাই খাওয়ার মত কাজ।
ঘ. কারও দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও তার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে থাকলে ফিরিশতার পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ হয়।
৭৫. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮৯৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৬২৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫৮৬; আল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং ৭২৩৯ বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১০৯৬
