রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৪৮
শরী'আত যা-কিছু নিষিদ্ধ করেছে ও যা-কিছুর মর্যাদা দিয়েছে, তাতে শরী'আত অবমাননায় অসন্তোষপ্রকাশ এবং আল্লাহর দীনের জন্য প্রতিশোধগ্রহণ

পেছনের অধ্যায়টি ছিল অন্যের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করা সম্পর্কে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিষয়ে অন্যের উপর রাগ না করে এবং প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করাই ইসলামের শিক্ষা। তবে আল্লাহ তা'আলা মানবচরিত্রে যে রাগ রেখেছেন তা শুধু শুধুই নয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তার প্রয়োজনও আছে। বিশেষভাবে এর প্রয়োজন পড়ে দীনের ক্ষেত্রে। কেউ যদি দীন প্রচারে বাধা দেয়, দীনের বিরোধিতা করে বা দীনের অবমাননা করে, সে ক্ষেত্রে রাগ দেখানো ঈমানের দাবি। এ রাগ আল্লাহর জন্য। আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য অন্যের প্রতি ক্রোধ ও বিদ্বেষ প্রদর্শন ঈমানের অঙ্গ। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসে, সে আল্লাহর শত্রুকে ঘৃণা না করে পারে না। । তিনি মানুষের কল্যাণার্থেই এটা দিয়েছেন।

দীন আল্লাহর দেওয়া ব্যবস্থা অনুসরণ করলে আল্লাহ খুশি হন। বিরোধিতা করলে তিনি নারাজ হন। সুতরাং যে ব্যক্তি দীনের বিরোধিতা করে, সে আল্লাহকে নারাজ করে। তাই আল্লাহপ্রেমিকের কর্তব্য দীনবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একে নাহী আনিল মুনকার বলে। অর্থাৎ দীনের দৃষ্টিতে যা আপত্তিকর, কেউ সেরকম কাজ করলে তাকে তা থেকে বিরত করার চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য মুখে বোঝানো, শাসন ও ধমকানো এবং প্রয়োজনে শক্তি আরোপেরও হুকুম আছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনও অন্যায় কাজ দেখে, তার কর্তব্য তাতে হাত দিয়ে বাধা দেওয়া। তা না পারলে মুখে বাধা দেওয়া। তাও যদি না পারে,তবে সর্বশেষ কাজ হল অন্তরে ঘৃণা করা। আল্লাহর জন্য যার অন্তরে ক্রোধের সঞ্চার হবে না, তার দ্বারা এই সর্বশেষ কাজ 'ঘৃণা করা'-এর বিষয়টিও আঞ্জাম পাবে না। এর দ্বারা বোঝা গেল, রাগও আল্লাহ তা'আলার একটি দান। দীনের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
রাগ ব্যবহারের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল শরী'আতের অবমাননা। অর্থাৎ শরী'আত যে কাজ করতে নিষেধ করেছে, কেউ যদি সে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে, তবে তার উপর করা একান্ত কর্তব্য। তারপর সে রাগের প্রয়োগ তার উপর কীভাবে করা হবে, তা স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী নিরূপিত হবে। তা যেভাবেই হোক না কেন, সে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ জরুরি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তা করেছেন। তাঁর আপত্তিকর কোনও কাজ সংঘটিত হলে তিনি সেজন্য অবশ্যই রাগ করতেন, তা সে কাজটি যে-ই করুক না কেন এবং সে যতই আপনজন হোক না কেন।
এমনিভাবে কেউ যদি দীনের বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে তার বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যবস্থা রয়েছে। সে জিহাদ মুখে হতে পারে, কলম দিয়ে হতে পারে এবং হতে পারে অস্ত্র দিয়ে। এটা দীনের সাহায্য। কুরআন মাজীদে দীনের সাহায্যকে আল্লাহর সাহায্য বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে ক্ষমাপ্রদর্শন করা ইসলামের বিধান নয়। বরং এরূপ ক্ষেত্রে ইসলাম ঈমানী জোশ দেখাতেই উৎসাহিত করেছে। এটা ভিন্ন কথা যে, সে জোশ দেখানোরও সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি আছে। যার যেমন ইচ্ছা তেমনি দেখাতে গেলে লাভের চেয়ে লোকসানেরই আশঙ্কা বেশি। তাই তা থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। তা বিরত থাকা হবে বটে, কিন্তু সর্বাবস্থায় অন্তরে সে জোশ লালন করতে হবে। কোনও কোনও ক্ষেত্র এমন আছে, যেখানে সহজেই এর প্রয়োগ সম্ভব। যদি নিজ সন্তান-সন্ততি, ছাত্র-শিষ্য ও অধীনস্থদের কেউ শরী'আতবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে শাসন ও ধমকানোতে কিসের বাধা? এরূপ ক্ষেত্রে রাগ না দেখানো ঈমান নিস্তেজ হয়ে যাওয়ারই আলামত বহন করে। কোনও মুমিনেরই ঈমান এরকম নিস্তেজ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। কুরআন মাজীদ ও হাদীছ আমাদেরকে উদ্দীপিত করেছে যেন আমরা শরী'আতবিরোধী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় না দিই; বরং আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তার সংশোধন ও দমনে ভূমিকা রাখি এবং আল্লাহর দীনের সম্মান রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে থাকি। আলোচ্য অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।


‘শরী'আত যা-কিছু নিষিদ্ধ করেছে…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত
وَ مَنْ يُعَظِمْ حُرُمَتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِنْدَ رَبِّهِ
অর্থ: আর যে ব্যক্তি আল্লাহ যেসব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করবে, তার পক্ষে তার প্রতিপালকের কাছে এ কাজ অতি উত্তম।(সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ৩০)

ব্যাখ্যা
حُرُمت শব্দটি حُرْمَةٌ এর বহুবচন। এর অর্থ মর্যাদাপূর্ণ বস্তু বা বিষয়। حُرمت الله এ দ্বারা এমনসব বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য, যার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা জায়েয নয়। আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ তথা গোটা শরী'আত এর অন্তর্ভুক্ত। এর মর্যাদা রক্ষা করার একটা দিক তো হল জ্ঞানগত। অর্থাৎ একজন মুসলিম হিসেবে শরী'আতের যেসব বিধান পালন করা জরুরি, তা যথাযথভাবে জানতে হবে। কেউ যদি শরী'আতের বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে, তবে সে জ্ঞানগতভাবে শরী'আতের অমর্যাদা করল।
এর মর্যাদাদানের আরেকটি দিক হল কর্মর্গত। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু করতে আদেশ করেছেন তা সঠিকভাবে করা, যথা নামায পড়া, যাকাত দেওয়া, রোযা রাখা, হজ্জ করা, কুরবানী করা, হালাল খাওয়া, সত্য বলা, ন্যায় ও ইনসাফ করা ইত্যাদি। এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু করতে তিনি নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, যেমন সুদ ও ঘুষের লেনদেন না করা, জুলুম না করা, মিথ্যা না বলা, ধোঁকা না দেওয়া, সর্বপ্রকার অশ্লীলতা পরিহার করা ইত্যাদি। তো আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি শরী'আতের আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, সে বাস্তবিকপক্ষে শরী'আতেরই অমর্যাদা করে।
حُرمت الله দ্বারা যেমন শরী'আতের বিধানাবলি বোঝানো হয়, যথা নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত, তেমনি আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে যা-কিছুর বিশেষ সম্পর্ক আছে তার জন্যও এ শব্দ প্রযোজ্য হয়। কেননা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের দরুন সেসবেরও পৃথক মর্যাদা রয়েছে। যেমন কা'বাঘর, মক্কানগরী, মদীনা মুনাউওয়ারা,সমস্ত মসজিদ, কুরআন মাজীদ, কুরবানীর জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ, বরকতপূর্ণ দিন ও সময়, যথা রমাযান মাস, জুমু'আর দিন, যুলহিজ্জা মাসের প্রথম ১০ দিন, মুহাররামের ১০ তারিখ ইত্যাদি। আল্লাহর ইবাদত-আনুগত্যের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকার দরুন এসবেরও আছে আলাদা মর্যাদা। সে মর্যাদা রক্ষা করা প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য।
এমনিভাবে যারা আল্লাহ তা'আলার দীনের ধারক-বাহক, প্রচারক, সেবক এবং আল্লাহ তা'আলার আদেশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার দায়িত্বে নিয়োজিত, সেইসকল বিশিষ্ট বান্দাগণও حُرُمَت الله এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন নবী-রাসূল, নায়েবে রাসূল, উলামা, ফুকাহা, সুলাহা (নেককার বান্দাগণ), শুহাদা (যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছেন) ও সমস্ত ফিরিশতা। আল্লাহর এই খাস বান্দাদেরকেও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা ও তাদের আদব বজায় রাখা প্রত্যেক মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্য।
আল্লাহপ্রদত্ত মর্যাদার কারণে যা-কিছুরই বিশেষ মর্যাদা আছে, এ আয়াত দ্বারা বোঝা গেল তার মর্যাদা রক্ষা করাও বান্দা হিসেবে আমাদের একান্ত কর্তব্য। তা রক্ষা করা হলে তাতে আমাদেরই কল্যাণ। আল্লাহ তা'আলা বলেন- فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ (তার পক্ষে তার প্রতিপালকের কাছে এ কাজ অতি উত্তম)। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। তাঁর কাছে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এর প্রত্যেকটির মধ্যে রয়েছে বিপুল ছাওয়াব। তাছাড়া নেককাজ করার একটা বড় ফায়দা পাপমোচনও। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এসবের মর্যাদা রক্ষা করলে গুনাহ মাফ হওয়ারও যথেষ্ট আশা রয়েছে। মোটকথা, আল্লাহর জন্য কৃত বান্দার কোনও নেক আমলই বৃথা যায় না। কোনও না কোনওভাবে তার সুফল সে পায়ই। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
‘সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে।(সূরা যিলযাল (৯৯), আয়াত ৭)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. শরী'আত সম্পর্কে জানা ও শরী'আত মেনে চলা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য। এর দ্বারাই শরী'আতের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়।
খ. আমাদেরকে অবশ্যই সম্মানিত স্থানসমূহ ও সম্মানিত সময়-কালের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।
গ. আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পর্কের দরুন যারা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী, তাদে মর্যাদা ও আদব রক্ষায় যত্নবান থাকা উচিত।
ঘ. আল্লাহর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলাতে বান্দার নিজেরই কল্যাণ।

দুই নং আয়াত
إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
অর্থ : তোমরা যদি আল্লাহর সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদম অবিচলিত রাখবেন।(সূরা মুহাম্মাদ (৪৭), আয়াত ৭)

ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা'আলার সাহায্য করার অর্থ তাঁর দীনের সাহায্য করা। এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন দীনের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখা, সেজন্য বাকশক্তিও লেখনিশক্তির ব্যবহার করা, দীনী বই-পুস্তক লেখা ও প্রকাশ করা, সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা, মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া, তর্কযুদ্ধ করা এবং প্রয়োজনে সসস্ত্র সংগ্রাম করা।
দীন প্রতিষ্ঠার মেহনত করা এমনকি দীনের কোনও একটি বিধান প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করায় ভূমিকা রাখাও আল্লাহ তা'আলার সাহায্য করার অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি শরী'আতের কোনও আদেশ লঙ্ঘন করে, তবে তাকে সে আদেশ পালনের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও দীনের সাহায্য করার শামিল। সে আদেশ লঙ্ঘন করার কারণে যদি তার উপর কোনও শর'ঈ শাস্তি অবধারিত হয়, তবে সরকারের পক্ষ থেকে সে শাস্তি কার্যকর করাও আল্লাহর দীনের সাহায্য বলে গণ্য হবে।
আয়াতে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর দীনের সাহায্য করবে, আল্লাহ তা'আলাও তাদের সাহায্য করবেন। অর্থাৎ তারা দীনের যে-কাজই করবে, তাতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য পাবে। ফলে সে কাজে তারা ব্যর্থ হবে না। অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
‘আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাহায্য করবেন, যারা তার সাহায্য করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী।(সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ৪০)
আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য হয় কখনও মনোবল বৃদ্ধির দ্বারা। কখনও শত্রুর অন্তরে ভীতি সঞ্চার দ্বারা। কখনও তিনি সাহায্য করেন বৃষ্টি দিয়ে, আবার কখনও সাহায্য করেন অনুকূল বায়ু প্রবাহিত করে। কখনও তিনি সাহায্য করেন সরাসরি। আবার কখনও সাহায্য করেন ফিরিশতাদের মাধ্যমে। বদর যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি ফিরিশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন। হযরত হাসসান ইবন ছাবিত রাযি. কাফেরদের বিরুদ্ধে নিজ কাব্যশক্তি ব্যবহার করতেন। এ প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন-
إِنَّ رُوْحَ الْقُدُسِ لَا يَزَالُ يُؤَيِّدُكَ ، مَا نَافَحْتَ عَنِ اللَّهِ وَرَسُوْلِهِ
‘তুমি যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে (নিজ কবিতার মাধ্যমে শত্রুদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের) জবাব দেবে, ততক্ষণ রূহুল কুদ্‌স্স (জিবরাঈল) তোমার সাহায্য করবে।(সহীহ মুসলিম: ২৪৯০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭১৪৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৩৫৮২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২১১০৬)
তবে আল্লাহ কাকে কীভাবে সাহায্য করবেন তা তিনিই জানেন। এমনিভাবে কখন সাহায্য করবেন তাও তাঁর ইচ্ছাধীন। এটাও একটা পরীক্ষার বিষয়। কাজেই ধৈর্য হারালে চলবে না। আমাদের কর্তব্য কাজে লেগে থাকা। তিনি তাঁর সময়মতো অবশ্যই সাহায্য করবেন, তা শীঘ্র হোক বা বিলম্ব এবং তা যেভাবেই হোক।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর দীনের সাহায্য করার দু'টি পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। এক তো হল আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ করা। আর দ্বিতীয় হল তাঁর পক্ষ থেকে বান্দার কদম অবিচলিত রাখা। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ (এবং তোমাদের কদম অবিচলিত রাখবেন)। এর এক অর্থ তো হল রণক্ষেত্রে অবিচল থাকা, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ ছেড়ে না পালানো। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হবে, আল্লাহ তা'আলা তার অন্তরে সাহস যোগাবেন এবং পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক তাতে তাকে অবিচল রাখবেন। রণক্ষেত্রে শত্রুর আক্রমণের মুখে অবিচল থাকতে পারা নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় দান ও অনেক বড় সাহায্য। যে-কোনও রণক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে কদম অবিচল রাখার বিষয়টা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের সাহায্য করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইবাদত-আনুগত্যে অটল-অবিচল থাকতে সাহায্য করবেন। কোনও প্রলোভনে সে টলবে না। কোনও হুমকি-ধমকিতে সে পেছাবে না। শয়তানের প্ররোচনা হোক বা নফসের উস্কানি কিংবা হোক সমাজের ফুসলানি, বিপথগামী করার যত আয়োজনই হোক, সে কিছুতেই তার শিকার হবে না। আপন পথ তথা শরী'আতের অনুসরণ থেকে সে এক কদমও এদিক-ওদিক সরবে না। সবচে' বড় কথা মৃত্যুকালে যখন শয়তান তাকে ঈমানহারা করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে, তখনও আল্লাহ তা'আলা তারে সাহায্য করবেন, তাকে আপন পথে অবিচল রাখবেন। ফলে শয়তান পরাজিত হবে এবং সে জয়ী হয়ে ঈমান নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে পারবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ
‘এবং নিশ্চয়ই আমার বাহিনীই হবে জয়যুক্ত।( সূরা সাফফাত (৩৭), আয়াত ১৭৩)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. আপন শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর দীনের সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য।
খ. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দীনের উপর চলায় এবং নফস, জিন্ন-শয়তান ও মানব- শয়তান থেকে আত্মরক্ষায় আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার বড় উপায় হল তাঁর দীনের সাহায্য করা।
গ. আল্লাহর দীনের সাহায্য করার দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত শরী'আতের অনুসরণ ও ইবাদত- আনুগত্যে অবিচল থাকার তাওফীক লাভ হয়।
ইমাম কর্তৃক নামায বেশি দীর্ঘায়িত করায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাগান্বিত হওয়া
হাদীছ নং: ৬৪৮

হযরত আবূ মাস'ঊদ উকবা ইবন আমর আল-বাদরী রাযি. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি অমুকের কারণে ফজরের নামায থেকে পিছিয়ে থাকি। কেননা সে আমাদের নিয়ে (নামায) দীর্ঘায়িত করে। (আবু মাস'উদ রাযি. বলেন,) আমি সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমনটা রাগ করতে দেখেছি, আর কখনও কোনও ওয়াজে সেরকম রাগ করতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী। তোমাদের মধ্যে কেউ মানুষের ইমামত করলে সে যেন নামায সংক্ষেপ করে। কেননা তার পেছনে বৃদ্ধ, শিশু ও এমন লোক থাকে, যার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৭০২; সহীহ মুসলিম: ৪৬৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ৯৮৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৪৬৫৭; সুনানে দারিমী: ১২৯৪; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৬৪১; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ১৭৯৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২১৩৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৫৬)
77 - باب الغضب إِذَا انتهكت حرمات الشّرع والانتصار لدين الله تعالى
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ الله فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ} [الحج: 30]، وقال تَعَالَى: {إنْ تَنْصُرُوْا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ} [محمد: 7].
وفي الباب حديث عائشة السابق في باب العفو (1).
648 - وعن أَبي مسعود عقبة بن عمرو البدري - رضي الله عنه - قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: إنِّي لأَتَأخَّرُ عَن صَلاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فلانٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا! فَمَا رَأيْتُ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - غَضِبَ في مَوْعِظَةٍ قَطُّ أشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئذٍ؛ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوجِزْ؛ فَإنَّ مِنْ وَرَائِهِ الكَبِيرَ وَالصَّغِيرَ وَذَا الحَاجَةِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত আবু মাস'উদ রাযি. জানিয়েছেন যে, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাছ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার ইমাম সম্পর্কে ফজরের নামায দীর্ঘ করার অভিযোগ জানায়। অভিযোগকারী সাহাবীর নাম কী, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যে ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ছিলেন হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বিশিষ্ট কারী ছিলেন। তিমি কুরআন খুব ভালো জানতেন। খুব সুন্দর পড়তেন। স্বাভাবিকভাবেই সব সাহাবীয় কুরআনের আশেক ছিলেন। যিনি কুরআন বেশি জানতেন এবং খুব সুন্দর পড়তে পারতেন, তাঁর কুরআনের প্রতি ইশক ও মহব্বত একটু বেশিই হবে বৈ কি। এরূপ ব্যক্তি ইমাম হলে ফজরের নামাযে তার তিলাওয়াত অনেক বেশি ভক্তিপূর্ণ হয়ে থাকে। ফজরের সময়টা কুরআনপাঠের পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল। কাজেই কুরআনের আশেক ও একজন বিশিষ্ট কারী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.-এর না জানি এ নামাযে কুরআনপাঠের আগ্রহ-উদ্দীপনা কী গভীর ছিল! সুতরাং তিনি ফজরের নামাযে লম্বা লম্বা কিরাআত পড়তেন। খুবসম্ভব তা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিরাআত অপেক্ষাও বেশি লম্বা হত। কেননা তিনি কিরাআত যে পরিমাণ লম্বা করতেন, হযরত উবাঈ রাযি.-এর কিরাআত সে পরিমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার কথা নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও সে অভিযোগ আমলে নেওয়ার কথা নয়। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। হযরত উবাঈ রাযি.-এর উপর খুব রাগও করেছেন এবং তাঁকে কঠিনভাবে ধমকও দিয়েছেন।

লক্ষণীয়, অভিযোগকারী তার অভিযোগে হযরত উবাঈ রাযি.-এর নাম নেননি। বরং বলেছেন- مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيْلُ بِنَا 'আমি অমুকের কারণে ফজরের নামায থেকে পিছিয়ে থাকি। কেননা সে আমাদের নিয়ে (নামায) দীর্ঘায়িত করে'। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি ফজরের নামায অনেক বেশি লম্বা করে বলে আমি জামাত ধরি না। নাম না বলে 'অমুক' বলাটা ছিল তার ভদ্রতা। সরাসরি নাম ধরে অভিযোগ করলে এক রকম রূঢ়তা প্রকাশ পায়। সাহাবী বিষয়টির সুরাহা চাচ্ছিলেন। ইমামের বিচার দাবি করছিলেন না। তা নাই করুন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখলেন। হযরত আবূ মাস'উদ রাযি.-এর বর্ণনা অনুযায়ী সেদিন নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রাগের সঙ্গে ওয়াজ করলেন যে, অতটা রাগ তাঁকে আর কখনও কোনও ওয়াজে করতে দেখা যায়নি। তিনি বললেন-
يا أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ مِنكُم مُنَفِّرِينَ (হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী)। অর্থাৎ তাদের কর্মপন্থা মানুষকে ইবাদতের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নামায সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সকলের উচিত এর প্রতি মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা, বিশেষত ইমামের। ইমাম মানুষকে নিয়ে নামায কায়েম করে। তার চেষ্টা থাকবে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কত বাড়ানো যায়। এর বিপরীত তার কর্মপন্থার কারণে যদি মুসল্লীর সংখ্যা কমে, তবে তা তার পদ মর্যাদার সঙ্গে কিছুতেই সঙ্গতিপূর্ণ হয় না।

লক্ষণীয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণভাবে বলেছেন 'হে লোকসকল'। তিনি নির্দিষ্টভাবে উবাঈ রাযি.-এর নাম নিয়ে বলেননি যে, তুমি মানুষকে নামাযের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলছ। এটা ছিল তাঁর ইসলাহ ও সংশোধনের তরিকা। যার কোনও ভুল হত, তিনি সকলের সামনে তার নাম ধরে ধমকাতেন না। উদ্দেশ্য তো হল সংশোধন করা, মানুষের সামনে হেয় করা নয়। নাম ধরে তিরস্কার করলে হেয় করা হয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হতে বিরত থাকতেন। তিনি সাধারণভাবে সকলকে সম্বোধন করে ভুলত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। যেমন বলতেন, মানুষের কী হল যে, তারা এরূপ এরূপ করছে। এতে করে যাদের বোঝার তারা ঠিকই বুঝে যেত। ফলে তারা নিজেদের সংশোধন করে নিত আবার তাদের মান-সম্মানও রক্ষা পেত।

উল্লেখ্য, যেসব কারণে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কমে, নামাযকে অতিরিক্ত লম্বা করাও তার একটি। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন- فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوْجِز (তোমাদের মধ্যে কেউ মানুষের ইমামত করলে সে যেন নামায সংক্ষেপ করে)। অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ যথাযথ আদায়ের পর নামায যেন বাড়তি লম্বা না করে। নামাযে কিরাআতের মাসনূন পরিমাপ আছে। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যে নামাযে যে পরিমাণ কিরাআত পড়তেন, সে পরিমাণ পড়াই সুন্নত। তারচে' বেশি না পড়াই সমীচীন। তবে বিনা ওজরে তারচে' কম পড়াও মুনাসিব নয়। কেন নামায এরূপ সংক্ষেপ করতে হবে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাদীছটিতে বলা হয়েছে-
فَإِنَّ مِنْ وَرَائِهِ الْكَبِيرَ وَالصَّغِيْرَ وَذَا الْحَاجَةِ (কেননা তার পেছনে বৃদ্ধ, শিশু ও এমন লোক থাকে, যার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে)। কোনও কোনও বর্ণনায় দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তির কথাও আছে। বৃদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। শিশুর পক্ষে শারীরিকভাবে কষ্টকর না হলেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য তার থাকে না। যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ, তার পক্ষেও নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। এমনিভাবে যার বিশেষ প্রয়োজন আছে, নামায বেশি লম্বা করলে তার সে প্রয়োজন পূরণ করা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। যেমন হয়তো সময়মতো গাড়ি ছেড়ে দেবে। নামায লম্বা করার কারণে সে তা ধরতে পারবে না। হয়তো কারও সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা আছে। নামায বেশি লম্বা করায় সে ওয়াদা রক্ষা করা হবে না। এমনিভাবে কারও হয়তো ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া আছে, কেউ হয়তো তার কোনও রোগী বসিয়ে রেখে এসেছে এবং এরকম আরও নানা জরুরত মানুষের থাকে। মানুষের সেসব জরুরতের দিকে লক্ষ রাখাও ইমামের কর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও বিরুদ্ধে তার মুরুব্বীর কাছে অভিযোগ করার সময় তার নাম না বলে অন্য কোনও ভাবে ইশারা-ইঙ্গিত করে বোঝানো ভদ্রতার পরিচায়ক।

খ. দীনী বিষয়ে কেউ কোনও আপত্তিকর কাজ করলে তার উপর রাগ করা জায়েয।

গ. নিষিদ্ধ কাজ হারাম পর্যায়ের না হলেও সে কাজে আপত্তি করা জায়েয আছে।

ঘ. সুন্নত পরিমাণের চেয়ে নামায বেশি লম্বা করা ইমামের জন্য সমীচীন নয়।

ঙ. ইমাম কোনও নামায সুন্নত পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ আছে।

চ. কারও সংশোধন করার প্রয়োজন হলে লোকসম্মুখে তাকে হেয় না করে এমনভালে কথা বলা উচিত, যাতে সে তার ত্রুটি সম্পর্কে সতর্কও হয়ে যায় আবার তার মান-সম্মানও রক্ষা পায়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৪৮ | মুসলিম বাংলা