রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৪৬
অধ্যায়: ৭৫ ক্ষমা প্রদর্শন করা ও অজ্ঞজনদের আচরণ উপেক্ষা করা
প্রকৃত বীর কে
হাদীছ নং: ৬৪৬

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (প্রকৃত) বীর সে নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে। প্রকৃত বীর সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৬১১৪; সহীহ মুসলিম: ৬৬০৯; মুসনাদে আহমাদ: ৭২১৮; মুআত্তা মালিক : ১২: মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩৮৫; মুসনাদুল বাযযার: ৮০৭৯; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১০১৫৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৬৪৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২১১২৬)
75 - باب العفو والإعراض عن الجاهلين
646 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ الشَّديدُ بِالصُّرَعَةِ، إنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে দৈহিক বীরত্বের উপর আত্মিক বীরত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দৈহিক বীরত্বও বীরত্ব বটে এবং তার উপযুক্ত ব্যবহার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ লাভ করা যায়, কিন্তু আত্মিক বীরত্বের কল্যাণ অনেক বেশি। কারণ এর দ্বারা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শত্রু শয়তানকে পরাভূত করা যায়। শয়তানই মানুষের অন্তরে রাগের আগুন জ্বালায়। শয়তান জানে, এ আগুন দ্বারা দুনিয়ায় কোনও ব্যক্তিকে প্রজ্জ্বলিত করা গেলে সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবেই। কেননা মানুষ যখন রাগে আগুন হয়, তখন সে কেবল নিজেই জ্বলে না, অন্যকেও জ্বালিয়ে ছারখার করে। তখন তার দ্বারা অন্যের জান-মালের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।

রাগের বশে স্ত্রীকে তালাক দেয়, এমনকি নিজ সন্তানকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে। অনেকে রাগের বশে কুফরী কথা পর্যন্ত বলে ফেলে। শয়তান তো এই-ই চায়। মানুষ খুনোখুনি করুক, বেঈমান হয়ে যাক ও সংসার ভাঙ্গুক।

তো আত্মিক শক্তি দ্বারা এহেন শত্রুর সঙ্গেই লড়াই করা হয়। একইসঙ্গে লড়াই চলে নফসের বিরুদ্ধেও। রাগের সময় মানুষের নফস নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যেতে চায়। সে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারলে বহিঃশত্রু শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে এবং ব্যক্তিকে দিয়ে শরী'আতবিরোধী কাজ করানোর প্রয়াস পায়। এমনকি যেই শারীরিক শক্তি দ্বারা মানুষ কাফের-বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়, সেখানেও নফস দূরভিসন্ধি চালায়। ব্যক্তির নিয়ত নষ্ট করে দিয়ে তাকে এ মহাসংগ্রামের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করে।

তাই দৈহিক শক্তির সুফল পেতেও আত্মিক শক্তির ব্যবহার ও নফসের চাহিদা দমনের প্রয়োজন হয়। এজন্যই নফসের সঙ্গে জিহাদকে হাদীছে 'বড় জিহাদ' নামে অভিহিত করা হয়েছে। তা বড় জিহাদ এ কারণে যে, সকল আমলে থাবা বিস্তারকারী এহেন শত্রুকে পরাস্ত করতে হলে অনেক বড় আত্মিক শক্তির প্রয়োজন পড়ে।

এ হাদীছে ক্রোধকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায় ক্রুদ্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং শরী'আতে এটাও কাম্য নয় যে, মানুষের বিলকুল রাগ না উঠুক। রাগ একটা স্বভাবগত বিষয়। যে-কোনও অপ্রীতিকরতার ক্ষেত্রে রাগ উঠবেই। বরং দীনের দিক থেকে যা অপ্রীতিকর, সে ক্ষেত্রে রাগ তো ঈমানের অঙ্গ। সেখানে রাগ করাই উচিত। খারাপ হচ্ছে রাগের অপব্যবহার। অর্থাৎ শরী'আতে যে ক্ষেত্রে রাগের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়, সে ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা। এরূপ ক্ষেত্রে নিজেরে নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। এটা যে করতে পারে, সেই প্রকৃত বীর।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও কারণে রাগ উঠলে তা হজম করতে হবে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

খ. রাগ যেহেতু স্বভাবগত বিষয়, তাই তা সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলা কখনও সম্ভব নয়। কেবল এর অনুচিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৪৬ | মুসলিম বাংলা