রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫২০
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়ঃ ৫৬ অনাহারে থাকা, কৃচ্ছতাপূর্ণ জীবনযাপন করা, অল্প পানাহার, অল্প পোশাক ও অল্প ভোগে পরিতুষ্ট থাকা এবং চাহিদা ত্যাগের ফযীলত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য সাহাবীদেরকে হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-এর দাওয়াত খাওয়ানো
হাদীছ নং : ৫২০
অর্থ : হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাযি. উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কণ্ঠস্বর শুনেছি। আমি তাতে ক্ষুধা অনুভব করেছি। তোমার কাছে কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। এই বলে তিনি যবের কয়েক টুকরো রুটি বের করলেন। তারপর তার একটা ওড়না নিয়ে একাংশ দিয়ে রুটি পেঁচালেন এবং তা আমার কাপড়ের নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়নার অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা পেলাম। তাঁর সঙ্গে লোকজন আছে। আমি তাদের সামনে দাঁড়ালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, খাবার দিয়ে? বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওঠো। তারা (উঠে আমাদের বাড়ির দিকে) চললেন। আমি তাদের আগে আগে চললাম। আবু তালহার কাছে এসে এ খবর তাকে দিলাম।
আবু তালহা রাযি. বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন নিয়ে এসেছেন। আমাদের কাছে তো তাদেরকে খাওয়ানোর মত খাবার নেই! উম্মু সুলায়ম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন ।
তারপর আবু তালহা রাযি. এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মিলিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে এগিয়ে আসলেন। এসে তাঁরা দু'জন প্রবেশ করলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে বের কর। উম্মু সুলায়ম রাযি. সেই রুটি নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে তা টুকরো টুকরো করা হল। উম্মু সুলায়ম তার উপর একটা কৌটা (থেকে ঘি) ঢেলে দিয়ে তরকারি বানালেন।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহ তা'আলার যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। এভাবে উপস্থিত লোকদের সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। লোকসংখ্যা ছিল সত্তর জন বা আশি জন - বুখারী ও মুসলিম।
অপর এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে ও বের হতে থাকলেন। এমনকি তাদের একজনও বাকি থাকল না। প্রত্যেকেই ঢুকলেন এবং পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর অবশিষ্ট খাবার একত্র করে দেখা গেল তা যখন তারা খাওয়া শুরু করেছিলেন তখনকার মতই আছে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তারা দশজন দশজন করে খেলেন। এভাবে আশি জনের সঙ্গে এরকম করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঘরের লোকজন খেলেন। তারপরও কিছু অবশিষ্ট রাখলেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তারপর তারা এ পরিমাণ অবশিষ্ট রাখলেন, যা প্রতিবেশীদের কাছে তারা পৌঁছিয়েছিলেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। এসে দেখলাম তিনি সাহাবীগণের সঙ্গে বসা আছেন আর নিজ পেট একটি কাপড়ের টুকরো দ্বারা বেঁধে রেখেছেন। আমি তাঁর সঙ্গীদের কাউকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড়ের টুকরো দ্বারা পেট বেঁধে রেখেছেন কেন? তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে। আমি আবূ তালহার কাছে গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনতে মিলহানের স্বামী। বললাম, হে পিতা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি কাপড়ের টুকরো দ্বারা পেট বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখেছি। আমি তাঁর সঙ্গীদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, এটা ক্ষুধার কারণে। এ কথা শুনতেই আবু তালহা আমার মায়ের কাছে গেলেন। বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আমার কাছে রুটির কয়েকটি টুকরো ও কিছু খেজুর আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা আসলে তাঁকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াতে পারব। যদি তাঁর সঙ্গে অন্য কেউ আসে, তবে তাদের কম হয়ে যাবে। তারপর হযরত আনাস রাযি. পূর্ণ হাদীছটি বর্ণনা করেন।
হাদীছ নং : ৫২০
অর্থ : হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাযি. উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কণ্ঠস্বর শুনেছি। আমি তাতে ক্ষুধা অনুভব করেছি। তোমার কাছে কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। এই বলে তিনি যবের কয়েক টুকরো রুটি বের করলেন। তারপর তার একটা ওড়না নিয়ে একাংশ দিয়ে রুটি পেঁচালেন এবং তা আমার কাপড়ের নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়নার অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা পেলাম। তাঁর সঙ্গে লোকজন আছে। আমি তাদের সামনে দাঁড়ালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, খাবার দিয়ে? বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওঠো। তারা (উঠে আমাদের বাড়ির দিকে) চললেন। আমি তাদের আগে আগে চললাম। আবু তালহার কাছে এসে এ খবর তাকে দিলাম।
আবু তালহা রাযি. বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন নিয়ে এসেছেন। আমাদের কাছে তো তাদেরকে খাওয়ানোর মত খাবার নেই! উম্মু সুলায়ম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন ।
তারপর আবু তালহা রাযি. এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মিলিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে এগিয়ে আসলেন। এসে তাঁরা দু'জন প্রবেশ করলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে বের কর। উম্মু সুলায়ম রাযি. সেই রুটি নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে তা টুকরো টুকরো করা হল। উম্মু সুলায়ম তার উপর একটা কৌটা (থেকে ঘি) ঢেলে দিয়ে তরকারি বানালেন।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহ তা'আলার যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। এভাবে উপস্থিত লোকদের সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। লোকসংখ্যা ছিল সত্তর জন বা আশি জন - বুখারী ও মুসলিম।
অপর এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে ও বের হতে থাকলেন। এমনকি তাদের একজনও বাকি থাকল না। প্রত্যেকেই ঢুকলেন এবং পরিতৃপ্ত হয়ে খেলেন। তারপর অবশিষ্ট খাবার একত্র করে দেখা গেল তা যখন তারা খাওয়া শুরু করেছিলেন তখনকার মতই আছে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তারা দশজন দশজন করে খেলেন। এভাবে আশি জনের সঙ্গে এরকম করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঘরের লোকজন খেলেন। তারপরও কিছু অবশিষ্ট রাখলেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তারপর তারা এ পরিমাণ অবশিষ্ট রাখলেন, যা প্রতিবেশীদের কাছে তারা পৌঁছিয়েছিলেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। এসে দেখলাম তিনি সাহাবীগণের সঙ্গে বসা আছেন আর নিজ পেট একটি কাপড়ের টুকরো দ্বারা বেঁধে রেখেছেন। আমি তাঁর সঙ্গীদের কাউকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড়ের টুকরো দ্বারা পেট বেঁধে রেখেছেন কেন? তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে। আমি আবূ তালহার কাছে গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনতে মিলহানের স্বামী। বললাম, হে পিতা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি কাপড়ের টুকরো দ্বারা পেট বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখেছি। আমি তাঁর সঙ্গীদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, এটা ক্ষুধার কারণে। এ কথা শুনতেই আবু তালহা আমার মায়ের কাছে গেলেন। বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আমার কাছে রুটির কয়েকটি টুকরো ও কিছু খেজুর আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা আসলে তাঁকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াতে পারব। যদি তাঁর সঙ্গে অন্য কেউ আসে, তবে তাদের কম হয়ে যাবে। তারপর হযরত আনাস রাযি. পূর্ণ হাদীছটি বর্ণনা করেন।
مقدمة الامام النووي
56 - باب فضل الجوع وخشونة العيش والاقتصار على القليل من المأكول والمشروب والملبوس وغيرها من حظوظ النفس وترك الشهوات
520 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ أَبو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ: قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ضَعيفًا أعْرِفُ فيه الجُوعَ، فَهَلْ عِنْدَكِ مِنْ شَيْءٍ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ، فَأخْرَجَتْ أقْرَاصًا مِنْ شَعِيرٍ، ثُمَّ أخَذَتْ خِمَارًا لَهَا، فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ، ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي بِبَعْضِهِ، ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَذَهَبتُ بِهِ، فَوَجَدْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - جَالِسًا في المَسْجِدِ، وَمَعَهُ النَّاسُ، فَقُمْتُ عَلَيْهمْ، فَقَالَ لي رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «أرْسَلَكَ أَبو طَلْحَةَ؟» فقلت: نَعَمْ، فَقَالَ: «ألِطَعَامٍ؟» فقلت: نَعَمْ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «قُومُوا» فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ، فَقَالَ أَبو طَلْحَةَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ، قَدْ جَاءَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ؟ فَقَالَتْ: الله وَرَسُولُهُ أعْلَمُ.
فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأقْبَلَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «هَلُمِّي مَا عِنْدَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ» فَأتَتْ بِذلِكَ الخُبْزِ، فَأمَرَ بِهِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيهِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ» فأذنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حتى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ» فأذِنَ لهم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلًا أَو ثَمَانُونَ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية: فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَة، وَيخرجُ عشرةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ، فَأكَلَ حَتَّى شَبعَ، ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا.
وفي رواية: فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلًا، ثُمَّ أكَلَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم - بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ، وَتَرَكُوا سُؤْرًا.
وفي رواية: ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جيرانَهُمْ.
وفي رواية عن أنس، قَالَ: جِئتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يومًا، فَوَجَدْتُهُ جَالِسًا مَعَ أصْحَابِه، وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ، بِعِصَابَةٍ، فقلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ: لِمَ عَصَبَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بَطْنَهُ؟ فقالوا: مِنَ الجوعِ، فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ، وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْت مِلْحَانَ، فقلتُ: يَا أبتَاهُ، قَدْ رَأيْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ، فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ، فقالوا: من الجُوعِ. فَدَخَلَ أَبو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي، فَقَالَ: هَلْ مِنْ شَيءٍ؟ قالت: نَعَمْ، عِنْدِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ، فَإنْ جَاءنَا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَحْدَهُ أشْبَعْنَاهُ، وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ ... وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ.
فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأقْبَلَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «هَلُمِّي مَا عِنْدَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ» فَأتَتْ بِذلِكَ الخُبْزِ، فَأمَرَ بِهِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيهِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ» فأذنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حتى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ» فأذِنَ لهم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلًا أَو ثَمَانُونَ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية: فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَة، وَيخرجُ عشرةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ، فَأكَلَ حَتَّى شَبعَ، ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا.
وفي رواية: فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلًا، ثُمَّ أكَلَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم - بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ، وَتَرَكُوا سُؤْرًا.
وفي رواية: ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جيرانَهُمْ.
وفي رواية عن أنس، قَالَ: جِئتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يومًا، فَوَجَدْتُهُ جَالِسًا مَعَ أصْحَابِه، وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ، بِعِصَابَةٍ، فقلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ: لِمَ عَصَبَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بَطْنَهُ؟ فقالوا: مِنَ الجوعِ، فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ، وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْت مِلْحَانَ، فقلتُ: يَا أبتَاهُ، قَدْ رَأيْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ، فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ، فقالوا: من الجُوعِ. فَدَخَلَ أَبو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي، فَقَالَ: هَلْ مِنْ شَيءٍ؟ قالت: نَعَمْ، عِنْدِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ، فَإنْ جَاءنَا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَحْدَهُ أشْبَعْنَاهُ، وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ ... وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বর্ণিত ঘটনাটি খন্দকের যুদ্ধকালীন। এ যুদ্ধের সময় একটি অস্থায়ী নামাযের স্থান তৈরি করা হয়েছিল। নামাযের সময় হলে সেখানে এসে সকলে নামায পড়তেন। এ সময়েরই ঘটনা যে, হযরত আবু তালহা আনসারী রাযি. সে নামাযের স্থানে প্রবেশ করে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার দিকে তাকালেন, তখন তাঁর চেহারায় ক্ষুধার ছাপ লক্ষ করলেন।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তাঁকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন হযরত আনাস রাযি.। তিনি বাড়িতে গিয়ে হযরত আবূ তালহা রাযি.-কে তা অবহিত করেন। কোনও বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি.-এর কাছে কোনও সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষুধার্ত অবস্থার সংবাদ পৌঁছেছিল। তবে এসব বর্ণনার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। হযরত আনাস রাযি.-এর সূত্রেই হোক বা অন্য কোনও সূত্রে, সংবাদ পেয়েই হযরত আবূ তালহা রাযি. দ্রুত মসজিদে ছুটে আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা দেখে নিজেও উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনি খুবই ক্ষুধার্ত। অমনি তিনি বাড়িতে ছুটে গেলেন এবং হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে বললেন-
قد سمعت صوت رسول الله ﷺ ضعيفا أعرف فيه الجوع (আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কন্ঠস্বর শুনেছি। আমি তাতে ক্ষুধা অনুভব করেছি)। তিনি হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে যদিও দুর্বল কন্ঠস্বরের কথা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর ক্ষুধার্ত অবস্থার কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নানাভাবে। এক তো ক্ষুধায় তাঁর কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এক বর্ণনায় আছে, তখন তিনি সাহাবীদেরকে সূরা নিসা পড়াচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল, তৃতীয়ত তখন তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল।
বর্ণনাটিতে বলা হয়েছে, হযরত উম্মে সুলায়ম রাযি, হযরত আনাস রাযি.-কে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু খাবার পাঠিয়েছিলেন। হযরত আনাস রাযি. সে খাবার নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলে পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করেছিলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. বলেন-
فقال لي رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم: أرسلك أبو طلحة؟ فقلت: نعم! فقال: للطعام؟ فقلت: نعم! فقال رسول الله صلى الله عليه لمن معه: قوموا! فانطلقوا
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, খাবার দিয়ে? বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওঠো। তারা (উঠে আমাদের বাড়ির দিকে) চললেন)।
পাঠানো হল খাবার দিয়ে, অথচ তিনি নিজেই চলে আসলেন। এর কারণ কী? অন্য বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠবেন এবং লোকজন তাঁর থেকে সরে যাবে, তখন তুমি তাঁর পেছনে পেছনে চলবে। তিনি নিজ বাড়ির দরজায় পৌঁছলে তাঁকে বলবে যে, আব্বা আপনাকে যেতে বলেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, তুমি তাঁকে বলবে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন আমাদের ওখানে গিয়ে খাবেন, তবে তাও করতে পারেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-এর বাড়িতে চলে এসেছেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন-
وانطلقت بين أيديهم حتى جئت أبا طلحة فاخبرته (আমি তাদের আগে আগে চললাম। আবূ তালহার কাছে এসে এ খবর তাকে দিলাম)। এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে অনেক লোক আসায় আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। খাবার সামান্য। এত বেশি লোক আসছেন। এখন কী উপায় হবে? এ কারণেই তিনি আগে আগে এসে পিতাকে তাঁদের আগমনের খবর দেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি ভীত-বিহ্বল অবস্থায় উম্মু সুলায়মের কাছে প্রবেশ করলাম। আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. তাঁকে বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি তো আমাদের অপদস্থ করলে!
বস্তুত হযরত আবূ তালহা রাযি. খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নিজ ব্যাকুলতার কথা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে প্রকাশ করলে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন الله ورسوله اعلم (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন)। অর্থাৎ খাবারের পরিমাণ এত অল্প হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সঙ্গে অনেক লোক নিয়ে এসেছেন, তখন ধারণা করি তিনি বুঝেশুনেই এটা করেছেন। হয়তো ওহী মারফত তাঁকে জানানো হয়েছে যে, এ খাবারের ভেতর তাঁর মু'জিযা প্রকাশ পাবে। ফলে অল্প খাবারেই এত সংখ্যক লোক পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে।
এর দ্বারা বোঝা যায় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাঁর যথেষ্ট নির্ভরশীলতা ছিল। নবুওয়াতের মর্যাদা ও মহিমা সম্পর্কেও তিনি সচেতন ছিলেন।
তারপর হযরত আবূ তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য বের হয়ে পড়লেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন-
فانطلق ابو طلحة حتى لقي رسول الله ﷺ (তারপর আবূ তালহা রাযি. এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মিলিত হলেন)। বোঝা গেল সামনে এগিয়ে গিয়ে অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা চাই। এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আনাসকে পাঠিয়েছিলাম একা আপনাকে নিয়ে আসার জন্য । আমাদের কাছে খাবার আছে সামান্য। যাদের দেখছি তাদের সকলকে তা দ্বারা আপ্যায়ন করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘরে ঢোক। তোমার কাছে যে খাবার আছে তাতে আল্লাহ তা'আলা বরকত দেবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ঢুকে কতটুকু খাবারের ব্যবস্থা আছে তা জেনে নিলেন। তারপর বললেন-
هلمي ما عندك يا ام سليم (হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে বের করো)। উম্মু সুলায়ম রাযি, তাঁর তৈরি করা রুটিগুলো নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশে সেগুলো টুকরো টুকরো করা হল। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি, তার উপর একটা কৌটা (থেকে ঘি) ঢেলে দিয়ে তরকারি বানালেন।
এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, একটুও ঘি আছে কি? উত্তরে আবূ তালহা রাযি. বলেন, একটা কৌটায় কিছুটা ঘি ছিল। তারপর তিনি সেটি নিয়ে আসলেন এবং দু'জনে অনেক ঝেড়েমুছে খানিকটা বের করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. সংক্ষেপে বলেন
ثم قال فيه رسول الله ﷺ ما شاء الله أن يقول (তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহ তা'আলার যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন)। এ সংক্ষিপ্ত কথার বিস্তারিত বিবরণ অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায়। যেমন এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে নিজ শাহাদাত আঙ্গুলে তা লাগালেন। তারপর তা রুটির টুকরোগুলোয় ছোঁয়ালেন। অমনি সেগুলো ফুলে উঠল। তিনি এরকম কয়েকবার করতে থাকলেন। রুটির টুকরোগুলোও ফুলতে থাকল। এমনকি যে ডিশে সেগুলো ছিল তা ভরে উপচে পড়ার উপক্রম করল। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সেগুলো আনা হলে তিনি পাত্র খুলে বলেছিলেন-
بسم الله، اللهم أعظم فيها البركة.
"আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! আপনি এতে বিপুল বরকত দান করুন।"
অতঃপর হযরত আনাস রাযি বলেন- ثم قال : ائذن لعشرة فأذن لهم (তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন)। বাহ্যত এর দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই ঘরে ঢুকেছিলেন, বাকি সকলে বাইরে ছিলেন। এক বর্ণনায় স্পষ্টই তা আছে। তাতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ির দরজায় পৌছে সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এখানে বসো। তারপর নিজে প্রবেশ করলেন। দশজন করে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল সম্ভবত ঘর ছোট হওয়ায়। এ বর্ণনায় দশ-দশজন করে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে আটজন করে। হতে পারে সেটি ভিন্ন ঘটনা। আবার কোনও রাবীর দ্বারা বিভ্রমও ঘটতে পারে।
সে দশজন পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেলেন। এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুটির টুকরোগুলোর মাঝখানে হাত রাখলেন। তারপর বললেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাও। তারা চারপাশ থেকে খেতে থাকলেন। এমনকি পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উঠে যাও এবং তোমাদের স্থানে অপর দশজন আসুক। এভাবে দশ-দশজন করে এসে খেতে থাকলেন। সর্বমোট লোক ছিল সত্তর বা আশিজন। তারপরও সে খাবার আগে যেমন ছিল তেমনি থেকে গেল। তারপর পরিবারের লোকজন খেলেন। তারপর আরও বেঁচে থাকল। তাঁরা তা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অভাব-অনটন সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়।
খ. আরও জানা যায় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবাযত্নে কেমন আন্তরিক ও তৎপর থাকতেন।
গ. ঘরে সামান্য খাবার থাকলেও তা দ্বারা অভুক্তের ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত।
ঘ. ঘরের ছোটদেরকেও মেহমানের সেবাযত্নে অভ্যস্ত করে তোলা উচিত।
ঙ. মেহমানদারিতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক পরামর্শ থাকা বাঞ্ছনীয়। স্ত্রীর উচিত মেহমানদারিতে স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতা করা।
চ. গৃহকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা থাকলে আমন্ত্রিত ব্যক্তি সঙ্গে অতিরিক্ত লোক নিয়ে আসতে পারে।
ছ. খাবার সাদামাটা বা অল্প পরিমাণ হলে তাতে মেহমানদের অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। বরং আল্লাহর নামে ও দু'আর সঙ্গে তা-ই সন্তুষ্টিভরে গ্রহণ করা চাই।
জ. প্রয়োজনে আমন্ত্রিত ব্যক্তি মেহমানদারির কাজে গৃহকর্তার সহায়তা করবে।
ঝ. বাড়ি থেকে বের হয়ে মেহমানকে সংবর্ধনা দিয়ে আনা চাই।
ঞ. গৃহে স্থান সংকুলান না হলে অতিরিক্ত মেহমান বাইরে অপেক্ষা করতে বিরক্তি বোধ করবে না।
ট. মু'জিযা ও কারামাত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা চাই।
ঠ. খাদ্যে বরকত হওয়ার বিষয়টি কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
ড. মেহমানদারির পর অবশিষ্ট খাবার সম্ভব হলে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করবে, বিশেষত তার মধ্যে যদি বরকতেরও প্রকাশ ঘটে।
ঢ. এ হাদীছ দ্বারা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তাঁকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন হযরত আনাস রাযি.। তিনি বাড়িতে গিয়ে হযরত আবূ তালহা রাযি.-কে তা অবহিত করেন। কোনও বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি.-এর কাছে কোনও সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষুধার্ত অবস্থার সংবাদ পৌঁছেছিল। তবে এসব বর্ণনার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। হযরত আনাস রাযি.-এর সূত্রেই হোক বা অন্য কোনও সূত্রে, সংবাদ পেয়েই হযরত আবূ তালহা রাযি. দ্রুত মসজিদে ছুটে আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা দেখে নিজেও উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনি খুবই ক্ষুধার্ত। অমনি তিনি বাড়িতে ছুটে গেলেন এবং হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে বললেন-
قد سمعت صوت رسول الله ﷺ ضعيفا أعرف فيه الجوع (আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কন্ঠস্বর শুনেছি। আমি তাতে ক্ষুধা অনুভব করেছি)। তিনি হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে যদিও দুর্বল কন্ঠস্বরের কথা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর ক্ষুধার্ত অবস্থার কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নানাভাবে। এক তো ক্ষুধায় তাঁর কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এক বর্ণনায় আছে, তখন তিনি সাহাবীদেরকে সূরা নিসা পড়াচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল, তৃতীয়ত তখন তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল।
বর্ণনাটিতে বলা হয়েছে, হযরত উম্মে সুলায়ম রাযি, হযরত আনাস রাযি.-কে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু খাবার পাঠিয়েছিলেন। হযরত আনাস রাযি. সে খাবার নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলে পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করেছিলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. বলেন-
فقال لي رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم: أرسلك أبو طلحة؟ فقلت: نعم! فقال: للطعام؟ فقلت: نعم! فقال رسول الله صلى الله عليه لمن معه: قوموا! فانطلقوا
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, খাবার দিয়ে? বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওঠো। তারা (উঠে আমাদের বাড়ির দিকে) চললেন)।
পাঠানো হল খাবার দিয়ে, অথচ তিনি নিজেই চলে আসলেন। এর কারণ কী? অন্য বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠবেন এবং লোকজন তাঁর থেকে সরে যাবে, তখন তুমি তাঁর পেছনে পেছনে চলবে। তিনি নিজ বাড়ির দরজায় পৌঁছলে তাঁকে বলবে যে, আব্বা আপনাকে যেতে বলেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, তুমি তাঁকে বলবে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন আমাদের ওখানে গিয়ে খাবেন, তবে তাও করতে পারেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-এর বাড়িতে চলে এসেছেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন-
وانطلقت بين أيديهم حتى جئت أبا طلحة فاخبرته (আমি তাদের আগে আগে চললাম। আবূ তালহার কাছে এসে এ খবর তাকে দিলাম)। এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে অনেক লোক আসায় আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। খাবার সামান্য। এত বেশি লোক আসছেন। এখন কী উপায় হবে? এ কারণেই তিনি আগে আগে এসে পিতাকে তাঁদের আগমনের খবর দেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি ভীত-বিহ্বল অবস্থায় উম্মু সুলায়মের কাছে প্রবেশ করলাম। আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. তাঁকে বলেছিলেন, হে আনাস! তুমি তো আমাদের অপদস্থ করলে!
বস্তুত হযরত আবূ তালহা রাযি. খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নিজ ব্যাকুলতার কথা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর কাছে প্রকাশ করলে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন الله ورسوله اعلم (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন)। অর্থাৎ খাবারের পরিমাণ এত অল্প হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সঙ্গে অনেক লোক নিয়ে এসেছেন, তখন ধারণা করি তিনি বুঝেশুনেই এটা করেছেন। হয়তো ওহী মারফত তাঁকে জানানো হয়েছে যে, এ খাবারের ভেতর তাঁর মু'জিযা প্রকাশ পাবে। ফলে অল্প খাবারেই এত সংখ্যক লোক পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে।
এর দ্বারা বোঝা যায় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাঁর যথেষ্ট নির্ভরশীলতা ছিল। নবুওয়াতের মর্যাদা ও মহিমা সম্পর্কেও তিনি সচেতন ছিলেন।
তারপর হযরত আবূ তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য বের হয়ে পড়লেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন-
فانطلق ابو طلحة حتى لقي رسول الله ﷺ (তারপর আবূ তালহা রাযি. এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মিলিত হলেন)। বোঝা গেল সামনে এগিয়ে গিয়ে অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা চাই। এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ তালহা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আনাসকে পাঠিয়েছিলাম একা আপনাকে নিয়ে আসার জন্য । আমাদের কাছে খাবার আছে সামান্য। যাদের দেখছি তাদের সকলকে তা দ্বারা আপ্যায়ন করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘরে ঢোক। তোমার কাছে যে খাবার আছে তাতে আল্লাহ তা'আলা বরকত দেবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ঢুকে কতটুকু খাবারের ব্যবস্থা আছে তা জেনে নিলেন। তারপর বললেন-
هلمي ما عندك يا ام سليم (হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে বের করো)। উম্মু সুলায়ম রাযি, তাঁর তৈরি করা রুটিগুলো নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশে সেগুলো টুকরো টুকরো করা হল। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি, তার উপর একটা কৌটা (থেকে ঘি) ঢেলে দিয়ে তরকারি বানালেন।
এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, একটুও ঘি আছে কি? উত্তরে আবূ তালহা রাযি. বলেন, একটা কৌটায় কিছুটা ঘি ছিল। তারপর তিনি সেটি নিয়ে আসলেন এবং দু'জনে অনেক ঝেড়েমুছে খানিকটা বের করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করলেন সে সম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. সংক্ষেপে বলেন
ثم قال فيه رسول الله ﷺ ما شاء الله أن يقول (তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহ তা'আলার যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন)। এ সংক্ষিপ্ত কথার বিস্তারিত বিবরণ অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায়। যেমন এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে নিজ শাহাদাত আঙ্গুলে তা লাগালেন। তারপর তা রুটির টুকরোগুলোয় ছোঁয়ালেন। অমনি সেগুলো ফুলে উঠল। তিনি এরকম কয়েকবার করতে থাকলেন। রুটির টুকরোগুলোও ফুলতে থাকল। এমনকি যে ডিশে সেগুলো ছিল তা ভরে উপচে পড়ার উপক্রম করল। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সেগুলো আনা হলে তিনি পাত্র খুলে বলেছিলেন-
بسم الله، اللهم أعظم فيها البركة.
"আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! আপনি এতে বিপুল বরকত দান করুন।"
অতঃপর হযরত আনাস রাযি বলেন- ثم قال : ائذن لعشرة فأذن لهم (তারপর বললেন, দশজনকে অনুমতি দাও। তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন)। বাহ্যত এর দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই ঘরে ঢুকেছিলেন, বাকি সকলে বাইরে ছিলেন। এক বর্ণনায় স্পষ্টই তা আছে। তাতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ির দরজায় পৌছে সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এখানে বসো। তারপর নিজে প্রবেশ করলেন। দশজন করে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল সম্ভবত ঘর ছোট হওয়ায়। এ বর্ণনায় দশ-দশজন করে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে আটজন করে। হতে পারে সেটি ভিন্ন ঘটনা। আবার কোনও রাবীর দ্বারা বিভ্রমও ঘটতে পারে।
সে দশজন পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেলেন। এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুটির টুকরোগুলোর মাঝখানে হাত রাখলেন। তারপর বললেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাও। তারা চারপাশ থেকে খেতে থাকলেন। এমনকি পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উঠে যাও এবং তোমাদের স্থানে অপর দশজন আসুক। এভাবে দশ-দশজন করে এসে খেতে থাকলেন। সর্বমোট লোক ছিল সত্তর বা আশিজন। তারপরও সে খাবার আগে যেমন ছিল তেমনি থেকে গেল। তারপর পরিবারের লোকজন খেলেন। তারপর আরও বেঁচে থাকল। তাঁরা তা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অভাব-অনটন সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়।
খ. আরও জানা যায় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবাযত্নে কেমন আন্তরিক ও তৎপর থাকতেন।
গ. ঘরে সামান্য খাবার থাকলেও তা দ্বারা অভুক্তের ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত।
ঘ. ঘরের ছোটদেরকেও মেহমানের সেবাযত্নে অভ্যস্ত করে তোলা উচিত।
ঙ. মেহমানদারিতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক পরামর্শ থাকা বাঞ্ছনীয়। স্ত্রীর উচিত মেহমানদারিতে স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতা করা।
চ. গৃহকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা থাকলে আমন্ত্রিত ব্যক্তি সঙ্গে অতিরিক্ত লোক নিয়ে আসতে পারে।
ছ. খাবার সাদামাটা বা অল্প পরিমাণ হলে তাতে মেহমানদের অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। বরং আল্লাহর নামে ও দু'আর সঙ্গে তা-ই সন্তুষ্টিভরে গ্রহণ করা চাই।
জ. প্রয়োজনে আমন্ত্রিত ব্যক্তি মেহমানদারির কাজে গৃহকর্তার সহায়তা করবে।
ঝ. বাড়ি থেকে বের হয়ে মেহমানকে সংবর্ধনা দিয়ে আনা চাই।
ঞ. গৃহে স্থান সংকুলান না হলে অতিরিক্ত মেহমান বাইরে অপেক্ষা করতে বিরক্তি বোধ করবে না।
ট. মু'জিযা ও কারামাত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা চাই।
ঠ. খাদ্যে বরকত হওয়ার বিষয়টি কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
ড. মেহমানদারির পর অবশিষ্ট খাবার সম্ভব হলে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করবে, বিশেষত তার মধ্যে যদি বরকতেরও প্রকাশ ঘটে।
ঢ. এ হাদীছ দ্বারা হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)