রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬২
অধ্যায়ঃ ৫৫ দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তির ফযীলত, অল্পেতুষ্টির প্রতি উৎসাহদান ও দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য।
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার প্রাচুর্যের স্বল্পতা
হাদীছ নং : ৪৬২

হযরত মুসতাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত কেবল এরকম যে, তোমাদের কেউ সাগরে একটা আঙ্গুল ডুবিয়ে দেখুক তা কী নিয়ে ফেরে- মুসলিম।
55 - باب فضل الزهد في الدنيا والحث على التقلل منها وفضل الفقر
462 - وعن المُسْتَوْرِد بن شَدَّاد - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ أُصْبُعَهُ في اليَمِّ (1)، فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ!». رواه مسلم. (2)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে একটি উদাহরণের মাধ্যমে আখিরাতের বিপরীতে দুনিয়ার স্বল্পতা বোঝানো হয়েছে। জান্নাতের বিস্তৃতি, তার নি'আমতসমূহের বিপুলতা ও তার কালের দৈর্ঘ্য সবই অসীম অফুরন্ত। অসীমের সঙ্গে সসীমের কোনও তুলনা হয় না। তারপরও আমরা যাতে উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারি, সে লক্ষ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদাহরণটি পেশ করেছেন।

বলেছেন, তোমরা কেউ সাগরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখ তাতে কতটুকু পানি আসে। সাগরের বিপুল জলরাশির তুলনায় আঙ্গুলে লেগে আসা সে পানি কতটুকু? অতি সামান্য নয় কি? জান্নাতের নি'আমতরাজির তুলনায় দুনিয়ার নি'আমতসমূহের স্বল্পতা এরকমই বুঝে নাও। প্রকৃতপক্ষে এ দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান আরও বেশি। কেননা আঙ্গুলে লেগে আসা পানির তুলনায় সাগরের পানি যতই বেশি হোক না কেন তার একটা সীমা আছে। কিন্তু জান্নাতের নি'আমতসমূহের তো কোনও সীমা নেই। মানুষ যখন যা চাবে তাই সে পেতে থাকবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ
জান্নাতে তোমাদের জন্য আছে এমন সবকিছুই, যা তোমাদের অন্তর চাবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে এমন সবকিছুই যার ফরমায়েশ তোমরা করবে, অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (আল্লাহ)-এর পক্ষ হতে প্রাথমিক আতিথেয়তাস্বরূপ।

আরও ইরশাদ হয়েছে-
وفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ لَّا مَقْطوْعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ
এবং প্রচুর ফলমূলের ভেতর। যা কখনও শেষ হবে না এবং যাতে কোনও বাধাও দেওয়া হবে না।”

আরও ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ (51) فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (52) يَلْبَسُونَ مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ (53) كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ (54) يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ (55) لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى
(অপর দিকে) মুত্তাকীগণ অবশ্যই নিরাপদ স্থানে থাকবে- উদ্যানরাজিতে ও প্রস্রবণে। তারা ‘সুন্দুস' ও 'ইসতাবরাক'-এর পোশাক পরিহিত অবস্থায় সামনাসামনি বসা থাকবে। তাদের সাথে এরকমই ব্যবহার করা হবে। আমি ডাগর ডাগর চোখের হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা পরম নিশ্চিন্তে সবরকম ফলের ফরমায়েশ করবে। (দুনিয়ায়) তাদের যে মৃত্যু প্রথমে এসেছিল, তা ছাড়া সেখানে (অর্থাৎ জান্নাতে) তাদেরকে কোনও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পেছনে পড়ে আখিরাত ভুলে যেতে নেই। এখানকার সর্বাধিক প্রাচুর্যও আখিরাতের নি'আমতের তুলনায় নেহাৎ অল্প, নিতান্তই তুচ্ছ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)