রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬৩
অধ্যায়ঃ ৫৫ দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তির ফযীলত, অল্পেতুষ্টির প্রতি উৎসাহদান ও দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য।
আল্লাহর কাছে দুনিয়ার হীনতা
হাদীছ নং : ৪৬৩
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকজন (সাহাবীগণ) তাঁর দু'পাশে। তিনি একটি মরা কানকাটা ছাগলছানার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি সেটির কান ধরে তুললেন, তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এটি এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা কোনওকিছুর বিনিময়েই এটি নিতে পসন্দ করব না। আমরা এটি দিয়ে করব কী? তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি এটি এমনিই নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আল্লাহর কসম, এটি যদি জীবিতও থাকত, তবুও তো কানকাটা হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ হতো। সুতরাং মরা অবস্থায় এটি কেমন (আগ্রহের বস্তু) হতে পারে? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তোমাদের কাছে এ মৃত ছাগলছানাটি যেমন তুচ্ছ, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এরচে'ও বেশি তুচ্ছ - মুসলিম।
হাদীছ নং : ৪৬৩
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকজন (সাহাবীগণ) তাঁর দু'পাশে। তিনি একটি মরা কানকাটা ছাগলছানার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি সেটির কান ধরে তুললেন, তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এটি এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা কোনওকিছুর বিনিময়েই এটি নিতে পসন্দ করব না। আমরা এটি দিয়ে করব কী? তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি এটি এমনিই নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আল্লাহর কসম, এটি যদি জীবিতও থাকত, তবুও তো কানকাটা হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ হতো। সুতরাং মরা অবস্থায় এটি কেমন (আগ্রহের বস্তু) হতে পারে? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তোমাদের কাছে এ মৃত ছাগলছানাটি যেমন তুচ্ছ, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এরচে'ও বেশি তুচ্ছ - মুসলিম।
55 - باب فضل الزهد في الدنيا والحث على التقلل منها وفضل الفقر
463 - وعن جابر - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَرَّ بالسُّوقِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَيْهِ، فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ، فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَيُّكُم يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ هَذَا لَهُ بِدرْهَم؟» فقالوا: مَا نُحِبُّ أنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ؟ ثُمَّ قَالَ: «أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ؟» قَالُوا: وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا، إنَّهُ أسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ ميِّتٌ! فقال: «فوَاللهِ للدُّنْيَا أهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ». رواه مسلم. (1)
قوله: «كَنَفَتَيْهِ» أيْ: عن جانبيه. وَ «الأَسَكُّ»: الصغير الأذُن.
قوله: «كَنَفَتَيْهِ» أيْ: عن جانبيه. وَ «الأَسَكُّ»: الصغير الأذُن.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তা'আলার কাছে দুনিয়া যে কত হীন ও কত তুচ্ছ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা আমাদেরকে তা বুঝিয়েছেন। তিনি একটি মৃত কানকাটা বা ছোট কানের ছাগল ছানা হাতে নিয়ে সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ এটি এক দিরহামে কিনতে পসন্দ করবে কি? কারওই তা পসন্দ করার কথা নয়। এক তো সেটি বড় ছাগল নয়; বরং ছাগলের বাচ্চা। তাও আবার ত্রুটিপূর্ণ। কানকাটা বা ছোট কানের ছাগল ছানা জীবিত থাকলেও টাকা- পয়সা দিয়ে কেউ সেটি কিনতে চাবে না। অথচ এটি জীবিতও নয়! তাই সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন যে, এটি জীবিত থাকলেও তো ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ত্রুটি, আবার মরা। এ অবস্থায় কিভাবে এটি এক দিরহাম দ্বারা কেনা যেতে পারে? অর্থাৎ আমাদের মধ্যে কেউ একটি এক দিরহামে কিনতে পসন্দ করবে না। এই জিজ্ঞাসা ও উত্তর দ্বারা যখন উপস্থিত সকলের অন্তরে ছাগল ছানাটির হীনতা স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোক্ষম কথাটি বললেন। তিনি বললেন- (আল্লাহর কসম, তোমাদের কাছে এ ছাগলছানাটি যেমন তুচ্ছ, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এরচে'ও বেশি তুচ্ছ)। এভাবে তিনি প্রিয় সাহাবীদের অন্তরে দুনিয়ার হীনতা ও তুচ্ছতার বোধ সঞ্চারিত করে দিলেন। তিনি ছিলেন এক মহান শিক্ষক। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া ছিল তাঁর বিশেষত্ব।
একবার প্রিয় শিষ্যদের নিয়ে তিনি একটি বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। বাজারে বিচিত্র মালামাল থাকে। দোকানে দোকানে নানা ধরনের নানা বর্ণের পণ্য সাজানো থাকে। তা দর্শকের নজর কাড়ে। মনে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এটা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ার এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তেই অন্তরে দুনিয়ার হীনতা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। নয়তো অজান্তেই কেউ এর শিকার হয়ে পড়তে পারে। এভাবে কেউ যাতে এর শিকার না হয়ে পড়ে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সতর্ক ও সচেতন করার প্রয়োজন বোধ করলেন। তার সুযোগও পেয়ে গেলেন।
বাজারে যেমন হাজারও পণ্যের পসরা সাজানো থাকে, তেমনি তার আশপাশে বর্জ্য ও পরিত্যক্ত বস্তুর ভাগারও থাকে বৈকি। সেরকম একটি স্থান থেকে একটি মরা ছাগলছানা উঁচিয়ে ধরে তার সঙ্গে তিনি দুনিয়ার তুলনা করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমাদের কাছে এই ছাগলছানাটি যেমন নিকৃষ্ট ও মূল্যহীন বস্তু, আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য জান্নাতের বিপরীতে দুনিয়া তারচে'ও বেশি হীন ও নিকৃষ্ট। তাহলে দুনিয়া কত হীন, কত তুচ্ছ বস্তু! আখিরাত ভুলে কোনও মুমিনের এহেন দুনিয়ায় মন দেওয়া সাজে কি?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর কাছে এ দুনিয়া অতি হীন ও তুচ্ছ। কোনও মুমিনের এতে মন দেওয়া উচিত নয়।
খ. বাস্তব কোনও দৃষ্টান্ত দ্বারা বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়া ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষানীতি। যে-কোনও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল শিক্ষক এ নীতি অবলম্বন করতে পারে।
গ. অনেক সময় দরস ও শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষকের কাছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়। তাই উদ্যমী শিক্ষার্থীদের যতবেশি সম্ভব শিক্ষকের সাহচর্যে সময় কাটানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
একবার প্রিয় শিষ্যদের নিয়ে তিনি একটি বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। বাজারে বিচিত্র মালামাল থাকে। দোকানে দোকানে নানা ধরনের নানা বর্ণের পণ্য সাজানো থাকে। তা দর্শকের নজর কাড়ে। মনে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এটা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ার এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তেই অন্তরে দুনিয়ার হীনতা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। নয়তো অজান্তেই কেউ এর শিকার হয়ে পড়তে পারে। এভাবে কেউ যাতে এর শিকার না হয়ে পড়ে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সতর্ক ও সচেতন করার প্রয়োজন বোধ করলেন। তার সুযোগও পেয়ে গেলেন।
বাজারে যেমন হাজারও পণ্যের পসরা সাজানো থাকে, তেমনি তার আশপাশে বর্জ্য ও পরিত্যক্ত বস্তুর ভাগারও থাকে বৈকি। সেরকম একটি স্থান থেকে একটি মরা ছাগলছানা উঁচিয়ে ধরে তার সঙ্গে তিনি দুনিয়ার তুলনা করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমাদের কাছে এই ছাগলছানাটি যেমন নিকৃষ্ট ও মূল্যহীন বস্তু, আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য জান্নাতের বিপরীতে দুনিয়া তারচে'ও বেশি হীন ও নিকৃষ্ট। তাহলে দুনিয়া কত হীন, কত তুচ্ছ বস্তু! আখিরাত ভুলে কোনও মুমিনের এহেন দুনিয়ায় মন দেওয়া সাজে কি?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর কাছে এ দুনিয়া অতি হীন ও তুচ্ছ। কোনও মুমিনের এতে মন দেওয়া উচিত নয়।
খ. বাস্তব কোনও দৃষ্টান্ত দ্বারা বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়া ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষানীতি। যে-কোনও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল শিক্ষক এ নীতি অবলম্বন করতে পারে।
গ. অনেক সময় দরস ও শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষকের কাছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়। তাই উদ্যমী শিক্ষার্থীদের যতবেশি সম্ভব শিক্ষকের সাহচর্যে সময় কাটানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
