রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৯৫
মানুষের উপর তাদের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী শরীআতের বিধান জারী করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।
মানুষের বাহ্যিক অবস্থাই বিবেচ্য
হাদীছ নং : ৩৯৫

আব্দুল্লাহ ইবন উতবা ইবন মাসউদ রহ. বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মানুষকে ধরা হত ওহীর দ্বারা। এখন ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন তোমাদেরকে ধরব তোমাদের বাহ্যিক কাজকর্মের দ্বারা। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো কাজ দেখাবে, আমরা তাকে নিরাপত্তা দেব ও তাকে কাছে জায়গা দেব। তার অভ্যন্তরীণ অবস্থা দিয়ে আমাদের কোনও কাজ নেই। তার অভ্যন্তরীণ অবস্থার হিসাব আল্লাহ নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ কাজ করবে, তাকে নিরাপত্তা দেব না ও তাকে বিশ্বাস করব না, যদিও সে বলে, তার ভেতর ভালো -বুখারী।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৪১; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৮৫; শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫১০
49 - باب إجراء أحكام الناس عَلَى الظاهر وسرائرهم إِلَى الله تَعَالَى
395 - وعن عبد الله بن عتبة بن مسعود، قَالَ: سَمِعْتُ عمر بن الخطاب - رضي الله عنه - يقولُ: إنَّ نَاسًا كَانُوا يُؤْخَذُونَ بِالوَحْيِ في عَهْدِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - وَإنَّ الوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ، وإِنَّمَا نَأخُذُكُمُ الآن بما ظَهَرَ لَنَا مِنْ أعمَالِكُمْ، فَمَنْ أظْهَرَ لَنَا خَيْرًا أَمَّنَّاهُ وَقَرَّبْنَاهُ، وَلَيْسَ لَنَا مِنْ سَرِيرَتِهِ شَيْءٌ، اللهُ يُحَاسِبُهُ فِي سَرِيرَتِهِ، وَمَنْ أَظْهَرَ لَنَا سُوءًا لَمْ نَأْمَنْهُ وَلَمْ نُصَدِّقْهُ وَإنْ قَالَ: إنَّ سَرِيرَتَهُ حَسَنَةٌ. رواه البخاري. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি. বিচার-আচার, সাক্ষ্য-প্রমাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূলনীতি বর্ণনা করেছেন যে, এসব ক্ষেত্রে মানুষের বাহ্যিক অবস্থা বিবেচ্য। মানুষের কথা ও কাজ দ্বারা বাহ্যত যা বোঝা যায় তাই ধর্তব্য। তার মনে কী আছে না আছে তা দেখার বিষয় নয়। মানুষের পক্ষে তা দেখা সম্ভবও নয়। মানুষের মনের অবস্থা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন তো ওহীর মাধ্যমে তা জানা সম্ভব ছিল। তাঁর চলে যাওয়ার দ্বারা ওহী আসাও বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন যার বাহ্যিক অবস্থা ভালো মনে হবে তাকে ভালো বলা হবে। কেউ যদি বলে ওসব তার ভান, তার মনের অবস্থা এর বিপরীত, তবে তাতে কর্ণপাত করা হবে না। অপরদিকে যার বাহ্যিক অবস্থা ভালো নয় তাকে ভালো বলা হবে না, যদিও সে দাবি করে তার মন ভালো। মনের হিসাব আল্লাহ নেবেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. বলেন, আমাদের সামনে যে মন্দ অবস্থা প্রকাশ করবে, আমরা তার সম্পর্কে মন্দ ধারণা করব এবং সে কারণে তাকে অপসন্দ করব। আর যে আমাদের কাছে ভালো অবস্থা প্রকাশ করবে, তাকে আমরা ভালো গণ্য করব এবং সে কারণে তাকে ভালোবাসব। ব্যস দুনিয়ায় কারও ভালো বা মন্দ হওয়ার এটাই মাপকাঠি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যার কথাবার্তা কাজকর্ম বাহ্যত ভালো, তাকে ভালোই গণ্য করা চাই। অহেতুক তার মন নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা উচিত নয়।

খ. কারও বাহ্যিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম মন্দ হলে তার এ দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না যে, আমার মন ভালো।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)