রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯৪
মানুষের উপর তাদের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী শরীআতের বিধান জারী করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।
অন্যায়ভাবে নিহত মুমিন ব্যক্তির পক্ষে হাশরের ময়দানে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ এর ভূমিকা
হাদীছ নং : ৩৯৪
হযরত জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল মুশরিকের বিরুদ্ধে একটি মুসলিম বাহিনী পাঠালেন। তারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলো। মুশরিকদের এক ব্যক্তি এমন ছিল যে, সে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে চাইলে অনায়াসে তাকে আক্রমণ করত ও হত্যা করে ফেলত। মুসলিমদের এক ব্যক্তি তার অসতর্কতার অপেক্ষায় থাকল। আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম, তিনি উসামা ইবন যায়দ। যখন তিনি তার উপর তরবারি তুললেন, অমনি বলে উঠল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ তারপরও তাকে হত্যা করলেন। তারপর সুসংবাদবাহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছল। তিনি তার কাছে খোঁজখবর নিলেন। সে সবই জানাল। এমনকি ওই ব্যক্তির সংবাদও জানাল যে, তিনি কী করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি তাকে কেন হত্যা করলে? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো মুসলিমদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সে অমুককে অমুককে হত্যা করেছে। এ বলে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। অবশেষে আমি তার উপর হামলা করলাম। যেই না সে তরবারি দেখল, অমনি বলে উঠল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি বললেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? তিনি আর কিছু নয়, বরাবর এ কথাই বলতে থাকলেন যে, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? -মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৭; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৪১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩২২৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৬২
হাদীছ নং : ৩৯৪
হযরত জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল মুশরিকের বিরুদ্ধে একটি মুসলিম বাহিনী পাঠালেন। তারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলো। মুশরিকদের এক ব্যক্তি এমন ছিল যে, সে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে চাইলে অনায়াসে তাকে আক্রমণ করত ও হত্যা করে ফেলত। মুসলিমদের এক ব্যক্তি তার অসতর্কতার অপেক্ষায় থাকল। আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম, তিনি উসামা ইবন যায়দ। যখন তিনি তার উপর তরবারি তুললেন, অমনি বলে উঠল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ তারপরও তাকে হত্যা করলেন। তারপর সুসংবাদবাহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছল। তিনি তার কাছে খোঁজখবর নিলেন। সে সবই জানাল। এমনকি ওই ব্যক্তির সংবাদও জানাল যে, তিনি কী করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি তাকে কেন হত্যা করলে? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো মুসলিমদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সে অমুককে অমুককে হত্যা করেছে। এ বলে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। অবশেষে আমি তার উপর হামলা করলাম। যেই না সে তরবারি দেখল, অমনি বলে উঠল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি বললেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? তিনি আর কিছু নয়, বরাবর এ কথাই বলতে থাকলেন যে, কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? -মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৭; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৪১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩২২৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৬২
49 - باب إجراء أحكام الناس عَلَى الظاهر وسرائرهم إِلَى الله تَعَالَى
394 - وعن جندب بن عبد الله - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بَعَثَ بَعْثًا مِنَ المُسْلِمينَ إِلَى قَومٍ مِنَ المُشرِكينَ، وَأنَّهُمْ التَقَوْا، فَكَانَ رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ إِذَا شَاءَ أَنْ يَقْصِدَ إِلَى رَجُل مِنَ المُسْلِمينَ قَصَدَ لَهُ فَقَتَلَهُ، وَأنَّ رَجُلًا مِنَ المُسْلِمِينَ قَصَدَ غَفْلَتَهُ. وَكُنَّا نتحَدَّثُ أنَّهُ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، فَلَمَّا رَفَعَ عَلَيهِ السَّيفَ، قَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ اللهُ، فَقَتَلهُ، فَجَاءَ البَشيرُ إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَسَألَهُ وَأخبَرَهُ، حَتَّى أخْبَرَهُ خَبَرَ الرَّجُلِ كَيْفَ صَنَعَ، فَدَعَاهُ فَسَألَهُ، فَقَالَ: «لِمَ قَتَلْتَهُ؟» فَقَالَ: يَا رَسُول اللهِ، أوْجَعَ في المُسلِمِينَ، وَقَتَلَ فُلانًا وفلانًا، وسمى لَهُ نَفرًا، وَإنِّي حَمَلْتُ عَلَيهِ، فَلَمَّا رَأى السَّيفَ، قَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ اللهُ. قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أَقَتَلْتَهُ؟» قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: «فَكَيفَ تَصْنَعُ بلاَ إلهَ إلاَّ اللهُ، إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ القِيَامَةِ؟» قَالَ: يَا رَسُول الله، اسْتَغْفِرْ لِي. قَالَ: «وكَيفَ تَصْنَعُ بِلا إلهَ إلاَّ الله إِذَا جَاءتْ يَوْمَ القِيَامَةِ؟» فَجَعَلَ لاَ يَزِيدُ عَلَى أَنْ يَقُولَ: «كَيفَ تَصْنَعُ بِلاَ إلهَ إلاَّ الله إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বর্ণিত ঘটনা এবং এর আগের হাদীছে বর্ণিত ঘটনাটি মূলত একই। বর্ণনার মধ্যে সামান্য বৈপরীত্য রয়েছে। যেমন আগের হাদীছে বলা হয়েছিল হযরত উসামা রাযি. লোকটিকে হত্যা করেছিলেন বর্শা দ্বারা, আর এ হাদীছে তরবারির কথা বলা হয়েছে। ইবন হাজার আসকালানী রহ. উভয়ের মধ্যে এভাবে সামঞ্জস্যবিধান করেছেন যে, প্রথমে তিনি তরবারিই তুলেছিলেন, কিন্তু তরবারি দ্বারা তাকে বাগে না পাওয়ায় শেষে বর্শা দিয়ে আঘাত করেন। আগের হাদীছে ছিল- সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? আর এখানে আছে- কিয়ামতের দিন যখন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ সামনে আসবে তখন তুমি কী করবে? এখানে মূলত কোনও বিরোধ নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উপরের কথাটি প্রথমে বলেছিলেন এবং পরের কথাটি বলেছিলেন শেষে। দু'টি কথা দুই বর্ণনায় এসেছে। অনেক সময় এমন হয়ে থাকে যে, ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সবগুলো কথা একসঙ্গে বলা হয় না।
فَكَيْفَ تَصْنَعُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ এর অর্থ হলো- কিয়ামতের দিন সে যখন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কালেমা তার সঙ্গে থাকবে, তখন তো তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কালেমা পাঠ করার দ্বারা প্রাণের নিরাপত্তা পেয়ে গিয়েছিল, তা সত্ত্বেও তুমি তাকে কেন হত্যা করলে? তখন তুমি কী জবাব দেবে? কে তোমার পক্ষে উকিল হয়ে দাঁড়াবে? কে তোমার পক্ষে সুপারিশ করবে?
এ ঘটনার পর হযরত উসামা রাযি. শপথ গ্রহণ করেন যে, জীবনে আর কখনও কোনও মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবেন না। এ কারণেই তিনি জামাল ও সিফীনের যুদ্ধে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকেছিলেন। কোনও পক্ষের হয়েই মাঠে নামেননি।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. মুখে কালেমা পাঠ দ্বারাই ইসলামগ্রহণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কাজেই যে ব্যক্তি মুখে কালেমা পাঠ করবে, তাকে মুসলিম বলেই গণ্য করতে হবে, যতক্ষণ না ইসলামবিরোধী কোনও কথা বা আচরণ তার দ্বারা প্রকাশ না পায়।
খ. আমাদের কাজ মানুষের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী আচরণ করা। মনে কী আছে বা না আছে তার পেছনে পড়া নয়।
গ. প্রিয় ব্যক্তিও যদি অন্যায়-অনুচিত কাজ করে, তবে তার নিন্দা করা চাই। যেমন হযরত উসামা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর অনুচিত কাজের তীব্র নিন্দা করেছিলেন।
فَكَيْفَ تَصْنَعُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ এর অর্থ হলো- কিয়ামতের দিন সে যখন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কালেমা তার সঙ্গে থাকবে, তখন তো তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কালেমা পাঠ করার দ্বারা প্রাণের নিরাপত্তা পেয়ে গিয়েছিল, তা সত্ত্বেও তুমি তাকে কেন হত্যা করলে? তখন তুমি কী জবাব দেবে? কে তোমার পক্ষে উকিল হয়ে দাঁড়াবে? কে তোমার পক্ষে সুপারিশ করবে?
এ ঘটনার পর হযরত উসামা রাযি. শপথ গ্রহণ করেন যে, জীবনে আর কখনও কোনও মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবেন না। এ কারণেই তিনি জামাল ও সিফীনের যুদ্ধে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকেছিলেন। কোনও পক্ষের হয়েই মাঠে নামেননি।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. মুখে কালেমা পাঠ দ্বারাই ইসলামগ্রহণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কাজেই যে ব্যক্তি মুখে কালেমা পাঠ করবে, তাকে মুসলিম বলেই গণ্য করতে হবে, যতক্ষণ না ইসলামবিরোধী কোনও কথা বা আচরণ তার দ্বারা প্রকাশ না পায়।
খ. আমাদের কাজ মানুষের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী আচরণ করা। মনে কী আছে বা না আছে তার পেছনে পড়া নয়।
গ. প্রিয় ব্যক্তিও যদি অন্যায়-অনুচিত কাজ করে, তবে তার নিন্দা করা চাই। যেমন হযরত উসামা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর অনুচিত কাজের তীব্র নিন্দা করেছিলেন।
রিয়াযুস সালিহীন,মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম
