রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯৩
মানুষের উপর তাদের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী শরীআতের বিধান জারী করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. কর্তৃক জনৈক কালেমা পাঠকারীকে হত্যা করা সম্পর্কিত একটি ঘটনা
হাদীছ নং: ৩৯৩
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহায়না গোত্রের শাখা হুরাকাহ'র বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। আমরা ভোরবেলা তাদের জলাশয়ে পৌঁছে হামলা চালাই। আমি ও জনৈক আনসারী তাদের এক ব্যক্তিকে পেয়ে যাই। আমরা তার উপর চড়াও হতেই সে বলে উঠে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ফলে আনসারী ব্যক্তি তার উপর আক্রমণ করা হতে নিবৃত্ত হয়ে যায়। আর আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেলি। আমরা মদীনায় ফিরে আসার পর এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছে যায়। তিনি আমাকে বললেন, হে উসামা! সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তিনি বললেন, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, সেদিনের আগে যদি আমি ইসলাম গ্রহণ না-ই করতাম! বুখারী ও মুসলিম।৩৩৩
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলল আর তুমি তাকে হত্যা করলে?! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল অস্ত্রের ভয়ে। তিনি বললেন, তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন, যাতে জানতে পার সে তা (অন্তর দিয়ে) বলেছিল কি না? তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, আমি যদি আজই ইসলাম গ্রহণ করতাম! ৩৩৪
ইমাম নববী রহ. বলেন, الحرقة হলো প্রসিদ্ধ জুহায়না গোত্রের একটি শাখাগোত্র।
متعوذاএর অর্থ, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলেছিল তা দ্বারা হত্যা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে, এতে বিশ্বাসী হয়ে নয়।
(৩৩৩. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪২৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭৪৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৮৯৩২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৭৫১; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৪০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩২২৮
৩৩৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৬৪৩, বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৮৪৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৯৩৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৬২)
হাদীছ নং: ৩৯৩
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহায়না গোত্রের শাখা হুরাকাহ'র বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। আমরা ভোরবেলা তাদের জলাশয়ে পৌঁছে হামলা চালাই। আমি ও জনৈক আনসারী তাদের এক ব্যক্তিকে পেয়ে যাই। আমরা তার উপর চড়াও হতেই সে বলে উঠে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ফলে আনসারী ব্যক্তি তার উপর আক্রমণ করা হতে নিবৃত্ত হয়ে যায়। আর আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেলি। আমরা মদীনায় ফিরে আসার পর এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছে যায়। তিনি আমাকে বললেন, হে উসামা! সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তিনি বললেন, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, সেদিনের আগে যদি আমি ইসলাম গ্রহণ না-ই করতাম! বুখারী ও মুসলিম।৩৩৩
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলল আর তুমি তাকে হত্যা করলে?! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল অস্ত্রের ভয়ে। তিনি বললেন, তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন, যাতে জানতে পার সে তা (অন্তর দিয়ে) বলেছিল কি না? তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, আমি যদি আজই ইসলাম গ্রহণ করতাম! ৩৩৪
ইমাম নববী রহ. বলেন, الحرقة হলো প্রসিদ্ধ জুহায়না গোত্রের একটি শাখাগোত্র।
متعوذاএর অর্থ, সে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলেছিল তা দ্বারা হত্যা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে, এতে বিশ্বাসী হয়ে নয়।
(৩৩৩. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪২৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭৪৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৮৯৩২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৭৫১; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৪০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩২২৮
৩৩৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৬৪৩, বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৮৪৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৯৩৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৬২)
49 - باب إجراء أحكام الناس عَلَى الظاهر وسرائرهم إِلَى الله تَعَالَى
393 - وعن أُسَامة بن زيدٍ رضي الله عنهما، قَالَ: بعثنا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - إِلَى الْحُرَقَةِ مِنْ جُهَيْنَةَ فَصَبَّحْنَا القَوْمَ عَلَى مِيَاهِهِمْ، وَلَحقْتُ أنَا وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ رَجُلًا مِنْهُمْ، فَلَمَّا غَشَيْنَاهُ، قَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ الله، فَكفَّ عَنْهُ الأَنْصَاري، وطَعَنْتُهُ برُمْحِي حَتَّى قَتَلْتُهُ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ، بَلَغَ ذلِكَ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ لِي: «يَا أُسَامَة، أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ: لا إلهَ إلاَّ اللهُ؟!» قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إِنَّمَا كَانَ متعوِّذًا، فَقَالَ: «أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ اللهُ؟!» فما زَالَ يُكَرِّرُهَا عَلَيَّ حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنِّي لَمْ أَكُنْ أَسْلَمْتُ قَبْلَ ذلِكَ اليَوْمِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1) [ص:142]
وفي رواية: فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أَقَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ اللهُ وقَتَلْتَهُ؟!» قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إِنَّمَا قَالَهَا خَوْفًا مِن السِّلاحِ، قَالَ: «أَفَلاَ شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أمْ لاَ؟!» فمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أنِّي أسْلَمْتُ يَوْمَئذٍ.
«الحُرَقَةُ» بضم الحاءِ المهملة وفتح الراءِ: بَطْنٌ مِنْ جُهَيْنَةَ: القَبِيلةُ المَعْرُوفَةُ. وقوله: «مُتَعَوِّذًا»: أيْ مُعْتَصِمًا بِهَا مِنَ القَتْلِ لاَ معْتَقِدًا لَهَا.
وفي رواية: فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أَقَالَ: لاَ إلهَ إلاَّ اللهُ وقَتَلْتَهُ؟!» قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إِنَّمَا قَالَهَا خَوْفًا مِن السِّلاحِ، قَالَ: «أَفَلاَ شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أمْ لاَ؟!» فمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أنِّي أسْلَمْتُ يَوْمَئذٍ.
«الحُرَقَةُ» بضم الحاءِ المهملة وفتح الراءِ: بَطْنٌ مِنْ جُهَيْنَةَ: القَبِيلةُ المَعْرُوفَةُ. وقوله: «مُتَعَوِّذًا»: أيْ مُعْتَصِمًا بِهَا مِنَ القَتْلِ لاَ معْتَقِدًا لَهَا.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বনূ জুহায়না গোত্রের একটি শাখার নাম হুরাকাত। এ গোত্রের পূর্বপুরুষের নাম ছিল জুহায়শ। তার উপাধি ছিল হুরাকাহ। তিনি একটি গোত্রের উপর হামলা করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। এ কারণেই তার উপাধি হয়েছিল হুরাকাহ- অগ্নিদগ্ধকারী। অগ্নিকাণ্ড দ্বারা যেমন সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিছু অবশিষ্ট থাকে না, তার হামলাটিও ছিল অনেকটা সেরকম। এ গোত্রের বিরুদ্ধে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়েছিল হিজরী ৭ম সনের রমযান মাসে। হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. ছিলেন এ যুদ্ধের সেনাপতি। এক বর্ণনানুযায়ী সেনাপতি ছিলেন হযরত গালিব ইবন আব্দুল্লাহ লায়ছী রাযি। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী জয়ী হয়। বাহিনীটি ফিরে আসার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ জানানো হয়। তার মধ্যে এ সংবাদটিও ছিল যে, প্রতিপক্ষের এক সৈন্য لا اله الا الله বলা সত্ত্বেও হযরত উসামা রাযি. তাকে হত্যা করেছিলেন। ওই লোকটির নাম ছিল মিরদাস ইবন নাহীক।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, নিজ কাজের জন্য হযরত উসামা রাযি.-এর নিজের মনেই খটকা দেখা দিয়েছিল এবং তিনি নিজেই বিষয়টি নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করেন। তাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই মর্মাহত হন। তিনি হযরত উসামা রাযি.-কে তিরস্কার করে বার বার বলতে থাকেন اقتلته بعدما قال: لا اله الا الله؟ (সে لا اله الا الله বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে)? অর্থাৎ لا اله الا الله বলার দ্বারা সে তো প্রাণের নিরাপত্তা লাভ করেছিল। এরপর আর তাকে হত্যা করার কোনও বৈধতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তুমি তাকে হত্যা করলে? হযরত উসামা রাযি. প্রথমে উত্তর দিয়েছিলেন يا رسول الله ﷺ ، إنما كان متعوذا (ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল প্রাণ বাঁচানোর জন্য)। অর্থাৎ তার অন্তরে এ কথার প্রতি বিশ্বাস ছিল না। হযরত উসামা রাযি. এমন কোনও লক্ষণ দেখতে পেয়েছিলেন, যা দ্বারা তাঁর এরকম ধারণা হয়েছিল। ফলে তিনি মনে করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে সে যেহেতু এখনও কুফর অবস্থায়ই আছে, তাই মুখের এ উচ্চারণ দ্বারা সে প্রাণরক্ষা পাবে না। কিন্তু শরীআত যেহেতু জাহেরী অবস্থার উপর নির্ভর করেই বিধান জারি করে, তাই হযরত উসামা রাযি.-এর সে অজুহাত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গৃহীত হয়নি। তাই তিনি বার বার বলতে থাকেন- সে لا اله الا الله বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল তাঁর মনের সংশয় দূর করা এবং এ জাতীয় অজুহাতের ভিত্তিতে হত্যা করা যে জায়েয নয় তা স্পষ্ট করে দেওয়া, যাতে আর কখনও এরূপ কাজ না করে বসেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথায় হযরত উসামা রাযি.-এর মনের খটকা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। তিনি ভালোভাবে বুঝতে পারেন যে, ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা তার জন্য কিছুতেই সমীচীন হয়নি। ফলে তিনি খুব অনুতপ্ত হন। সে অনুতাপের মাত্রা তাঁর আক্ষেপ-বাক্য দ্বারা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন
حتى تمنيت أني لم أكن أسلمت قبل ذلك اليوم - (শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, সেদিনের আগে যদি আমি ইসলাম গ্রহণ না-ই করতাম!)। অর্থাৎ আগে ইসলাম না গ্রহণ করে যদি এই মুহূর্তে ইসলাম গ্রহণ করতাম, তবে তা দ্বারা এর পূর্বেকার আমার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যেত।
ইবন রাসলান রহ. বলেন, যেন তিনি এ অপরাধটির সামনে তাঁর ইতঃপূর্বের ইসলামগ্রহণ এবং যাবতীয় নেক আমলকে তুচ্ছ গণ্য করছেন। প্রকৃতপক্ষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তীব্র আপত্তির কারণে তাঁর অন্তরে যে অনুতাপ সৃষ্টি হয়েছিল, এ উক্তিটি তাঁর সে অনুতাপেরই বহিঃপ্রকাশ। নয়তো ইসলামগ্রহণের মত মহাসম্পদের বিপরীতে তাঁর এ অপরাধটিকে তুলনায় আনা যায় না। কেননা এক তো তিনি হত্যা করেছিলেন তাঁর একটি ধারণার বশবর্তীতে, যদিও সে ধারণাটি ভুল। তাছাড়া হত্যাকর্ম ইচ্ছাকৃত হলেও সেটি একটি মহাপাপ বটে, কিন্তু কুফরীকর্ম নয় যে, তা দ্বারা ইসলাম বাতিল হয়ে যাবে।
কারও মতে ‘এর আগে ইসলাম গ্রহণ না করা' দ্বারা সম্ভবত তাঁর বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল এমন ইসলামগ্রহণ, যার পর পাপকর্মও হয়ে যায়। অর্থাৎ তিনি আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন যে, যে ইসলামগ্রহণের পর আর কোনও গুনাহ করা হয় না, আমার ইসলামগ্রহণটা যদি সেরকম হত!
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন افلا شققت عن قلبه حتى تعلم أقالها أم لا ؟ 'তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন, যাতে জানতে পার সে তা (অন্তর দিয়ে) বলেছিল কি না? অর্থাৎ তোমার যখন এ ধারণা জন্মাল যে, সে বলেছে অস্ত্রের ভয়ে, যদ্দরুন তুমি তাকে হত্যা করে ফেললে, তখন সত্যিই সে অস্ত্রের ভয়ে তা বলেছে কি না, সে কথা জানার জন্য তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন? অথবা এর অর্থ- তুমি কি জান না প্রকৃত ঈমান এক গুপ্ত বিষয়, মানুষের অন্তর তার স্থান, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়, তাই দুনিয়ার যাবতীয় বিধান মানুষের বাহ্যিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে? তুমি যদি মনে কর বাহ্যিক অবস্থা দেখা যথেষ্ট নয়; বরং মনের অবস্থাও জানতে হবে, তাহলে তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন? প্রকৃতপক্ষে এটা এক তিরস্কার-বাক্য। এর দ্বারা বাস্তবিকই অন্তর ফেঁড়ে দেখতে বলার হুকুম দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। কেননা অন্তর ফেঁড়ে ঈমান আছে কি না তা জানা তো সম্ভব নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুখে কালেমা পাঠ দ্বারাই ইসলামগ্রহণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কাজেই যে ব্যক্তি মুখে কালেমা পাঠ করবে, তাকে মুসলিম বলেই গণ্য করতে হবে, যতক্ষণ না ইসলামবিরোধী কোনও কথা বা আচরণ তার দ্বারা প্রকাশ না পায়।
খ. আমাদের কাজ মানুষের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী আচরণ করা। মনে কি আছে বা না আছে তার পেছনে পড়া নয়।
গ. হযরত উসামা রাযি. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর অনুচিত কাজের তীব্র নিন্দা করেছেন, কোনওরূপ ছাড় দেননি। আমাদেরও কর্তব্য, অন্যায়-অনুচিত কাজের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকেও কোনও ছাড় না দেওয়া।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, নিজ কাজের জন্য হযরত উসামা রাযি.-এর নিজের মনেই খটকা দেখা দিয়েছিল এবং তিনি নিজেই বিষয়টি নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করেন। তাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই মর্মাহত হন। তিনি হযরত উসামা রাযি.-কে তিরস্কার করে বার বার বলতে থাকেন اقتلته بعدما قال: لا اله الا الله؟ (সে لا اله الا الله বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে)? অর্থাৎ لا اله الا الله বলার দ্বারা সে তো প্রাণের নিরাপত্তা লাভ করেছিল। এরপর আর তাকে হত্যা করার কোনও বৈধতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তুমি তাকে হত্যা করলে? হযরত উসামা রাযি. প্রথমে উত্তর দিয়েছিলেন يا رسول الله ﷺ ، إنما كان متعوذا (ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তা বলেছিল প্রাণ বাঁচানোর জন্য)। অর্থাৎ তার অন্তরে এ কথার প্রতি বিশ্বাস ছিল না। হযরত উসামা রাযি. এমন কোনও লক্ষণ দেখতে পেয়েছিলেন, যা দ্বারা তাঁর এরকম ধারণা হয়েছিল। ফলে তিনি মনে করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে সে যেহেতু এখনও কুফর অবস্থায়ই আছে, তাই মুখের এ উচ্চারণ দ্বারা সে প্রাণরক্ষা পাবে না। কিন্তু শরীআত যেহেতু জাহেরী অবস্থার উপর নির্ভর করেই বিধান জারি করে, তাই হযরত উসামা রাযি.-এর সে অজুহাত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গৃহীত হয়নি। তাই তিনি বার বার বলতে থাকেন- সে لا اله الا الله বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল তাঁর মনের সংশয় দূর করা এবং এ জাতীয় অজুহাতের ভিত্তিতে হত্যা করা যে জায়েয নয় তা স্পষ্ট করে দেওয়া, যাতে আর কখনও এরূপ কাজ না করে বসেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথায় হযরত উসামা রাযি.-এর মনের খটকা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। তিনি ভালোভাবে বুঝতে পারেন যে, ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা তার জন্য কিছুতেই সমীচীন হয়নি। ফলে তিনি খুব অনুতপ্ত হন। সে অনুতাপের মাত্রা তাঁর আক্ষেপ-বাক্য দ্বারা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন
حتى تمنيت أني لم أكن أسلمت قبل ذلك اليوم - (শেষপর্যন্ত আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, সেদিনের আগে যদি আমি ইসলাম গ্রহণ না-ই করতাম!)। অর্থাৎ আগে ইসলাম না গ্রহণ করে যদি এই মুহূর্তে ইসলাম গ্রহণ করতাম, তবে তা দ্বারা এর পূর্বেকার আমার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যেত।
ইবন রাসলান রহ. বলেন, যেন তিনি এ অপরাধটির সামনে তাঁর ইতঃপূর্বের ইসলামগ্রহণ এবং যাবতীয় নেক আমলকে তুচ্ছ গণ্য করছেন। প্রকৃতপক্ষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তীব্র আপত্তির কারণে তাঁর অন্তরে যে অনুতাপ সৃষ্টি হয়েছিল, এ উক্তিটি তাঁর সে অনুতাপেরই বহিঃপ্রকাশ। নয়তো ইসলামগ্রহণের মত মহাসম্পদের বিপরীতে তাঁর এ অপরাধটিকে তুলনায় আনা যায় না। কেননা এক তো তিনি হত্যা করেছিলেন তাঁর একটি ধারণার বশবর্তীতে, যদিও সে ধারণাটি ভুল। তাছাড়া হত্যাকর্ম ইচ্ছাকৃত হলেও সেটি একটি মহাপাপ বটে, কিন্তু কুফরীকর্ম নয় যে, তা দ্বারা ইসলাম বাতিল হয়ে যাবে।
কারও মতে ‘এর আগে ইসলাম গ্রহণ না করা' দ্বারা সম্ভবত তাঁর বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল এমন ইসলামগ্রহণ, যার পর পাপকর্মও হয়ে যায়। অর্থাৎ তিনি আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন যে, যে ইসলামগ্রহণের পর আর কোনও গুনাহ করা হয় না, আমার ইসলামগ্রহণটা যদি সেরকম হত!
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন افلا شققت عن قلبه حتى تعلم أقالها أم لا ؟ 'তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন, যাতে জানতে পার সে তা (অন্তর দিয়ে) বলেছিল কি না? অর্থাৎ তোমার যখন এ ধারণা জন্মাল যে, সে বলেছে অস্ত্রের ভয়ে, যদ্দরুন তুমি তাকে হত্যা করে ফেললে, তখন সত্যিই সে অস্ত্রের ভয়ে তা বলেছে কি না, সে কথা জানার জন্য তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন? অথবা এর অর্থ- তুমি কি জান না প্রকৃত ঈমান এক গুপ্ত বিষয়, মানুষের অন্তর তার স্থান, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়, তাই দুনিয়ার যাবতীয় বিধান মানুষের বাহ্যিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে? তুমি যদি মনে কর বাহ্যিক অবস্থা দেখা যথেষ্ট নয়; বরং মনের অবস্থাও জানতে হবে, তাহলে তুমি তার অন্তর ফেঁড়ে দেখলে না কেন? প্রকৃতপক্ষে এটা এক তিরস্কার-বাক্য। এর দ্বারা বাস্তবিকই অন্তর ফেঁড়ে দেখতে বলার হুকুম দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। কেননা অন্তর ফেঁড়ে ঈমান আছে কি না তা জানা তো সম্ভব নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুখে কালেমা পাঠ দ্বারাই ইসলামগ্রহণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কাজেই যে ব্যক্তি মুখে কালেমা পাঠ করবে, তাকে মুসলিম বলেই গণ্য করতে হবে, যতক্ষণ না ইসলামবিরোধী কোনও কথা বা আচরণ তার দ্বারা প্রকাশ না পায়।
খ. আমাদের কাজ মানুষের বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ী আচরণ করা। মনে কি আছে বা না আছে তার পেছনে পড়া নয়।
গ. হযরত উসামা রাযি. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর অনুচিত কাজের তীব্র নিন্দা করেছেন, কোনওরূপ ছাড় দেননি। আমাদেরও কর্তব্য, অন্যায়-অনুচিত কাজের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকেও কোনও ছাড় না দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
