রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৮০
আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ফযীলত, এর প্রতি উৎসাহদান এবং কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা আর তাকে তা অবহিত করা হলে জবাবে সে যা বলবে।
আনসারদের মহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ
হাদীছ নং : ৩৮০
হযরত বারা’ ইবন ‘আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তাদেরকে ভালোবাসে কেবল মুমিনগণই। আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে কেবল মুনাফিকরাই। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ঘৃণা করে, আল্লাহও তাকে ঘৃণা করেন -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৮২৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৯০০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ৩২৩৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫০০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৭২৭২; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৭১০
হাদীছ নং : ৩৮০
হযরত বারা’ ইবন ‘আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তাদেরকে ভালোবাসে কেবল মুমিনগণই। আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে কেবল মুনাফিকরাই। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ঘৃণা করে, আল্লাহও তাকে ঘৃণা করেন -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৮২৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৯০০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ৩২৩৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫০০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৭২৭২; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৭১০
46 - باب فضل الحب في الله والحث عَلَيهِ وإعلام الرجل من يحبه، أنه يحبه، وماذا يقول لَهُ إِذَا أعلمه
380 - وعن البرَاءِ بن عازب رضي الله عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - أنَّهُ قَالَ في الأنصار: «لاَ يُحِبُّهُمْ إلاَّ مُؤمِنٌ، وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إلاَّ مُنَافِقٌ، مَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللهُ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে আনসারদেরকে ভালোবাসার গুরুত্ব ও তাদেরকে অপসন্দ করার মন্দত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আনসার বলা হয় মদীনা মুনাউওয়ারার মূল বাসিন্দা আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদেরকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে 'আনসার' উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এটি একটি ইসলামী নাম। এর আগে এ নামের ব্যবহার ছিল না। ইসলাম ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্য-সহযোগিতার পেছনে তারা নিজেদের জান-মাল সর্বস্ব কুরবানী করার অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত পেশ করেছিলেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ নাম তাদের সে অমিত ত্যাগের স্মৃতিবাহী হয়ে থাকবে।
তাদের ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে যেহেতু প্রথমে মদীনা মুনাউওয়ারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারপর সারা বিশ্বে ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে, তাই কাফের ও মুশরিকগণ কখনও তাদের ভালো চোখে দেখেনি। তারা তাদেরকে সর্বদা ঘৃণা করে এসেছে। সর্বাপেক্ষা বেশি ঘৃণা করেছে মদীনার মুনাফিকগণ। ফলে তাদের ঘৃণা করা বা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মুনাফিকীর আলামত হয়ে গেছে। আর তাদেরকে মহব্বত করা হয়েছে ঈমানের নিদর্শন, যেমন এ হাদীছে স্পষ্ট করা হয়েছে। অপর এক হাদীছে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
آية الإيمان : حب الأنصار، وآية النفاق، بغض الأنصار
‘ঈমানের আলামত হলো আনসারদের ভালোবাসা। আর মুনাফিকদের আলামত আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা।২৯৫
আরেক হাদীছে আছে-
حب الأنصار إيمان، وبغضهم نفاق
‘আনসারদের মহব্বত করা ঈমান আর তাদেরকে বিদ্বেষ করা মুনাফিকী।২৯৬
আরও এক হাদীছে আছে-
لا يبغض الأنصار رجل يؤمن بالله واليوم الآخر
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, সে আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না।২৯৭
বস্তুত আনসারদের ভালোবাসা নবীপ্রেমেরও পরিচায়ক। যে আনসারগণ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করেছিলেন, কোনও নবীপ্রেমিক তাদের ভালো না বেসে পারে? তাই তো এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من أحب الأنصار، فبحبي أحبهم، ومن أبغض الأنصار فببغضي أبغضهم
'যে-কেউ আনসারদের ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসে বলেই তাদের ভালোবাসে। আর যে-কেউ আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে, সে আমার প্রতি বিদ্বিষ্ট বলেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে।২৯৮
এ হাদীছে আনসারদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করার পুরস্কার জানানো হয়েছে যে, যারা তাদেরকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে ভালোবাসবেন। বোঝা গেল আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের একটি বড় উপায় আনসারদের ভালোবাসা। অপরদিকে আনসারদের প্রতি ঘৃণা পোষণের পরিণতিও অত্যন্ত ভয়াবহ। কেননা এ হাদীছে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে-কেউ তাদেরকে ঘৃণা করবে, আল্লাহ তাআলাও তাকে ঘৃণা করবেন। বলাবাহুল্য, আল্লাহ তাআলার ঘৃণার পাত্র হওয়া অপেক্ষা নিকৃষ্ট পরিণাম আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা সে পরিণাম থেকে আমাদের হেফাজত করুন। তিনি আমাদের অন্তরে আনসারদের প্রতি গভীর মহব্বত দান করুন এবং সে মহব্বত নিয়েই কবরে যাওয়ার তাওফীক দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আনসারদের ভালোবাসা ঈমানের দাবি এবং এটা মুমিন হওয়ার পরিচায়কও বটে।
খ. আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ যেহেতু মুনাফিকীর পরিচায়ক, তাই কোনও অবস্থায়ই আনসারদের কারও প্রতি যাতে অন্তরে বীতশ্রদ্ধা না জন্মাতে পারে সে ব্যাপারে সাবধান থাকা চাই।
গ. আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে আমরা অবশ্যই মনেপ্রাণে আনসারদের ভালোবেসে যাব।
ঘ. কিছুতেই যাতে আল্লাহ তাআলার ঘৃণা ও গযবের পাত্রে পরিণত না হয়, সে লক্ষ্যে যে-কোনও আনসার সাহাবীকে অশ্রদ্ধা করা হতে বেঁচে থাকতে হবে আমৃত্যু।
২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৭, ৩৭৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫০১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৩১৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪২৩, বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৯৬৬
২৯৬. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৬৬৮; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৩৯৬
২৯৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৯০৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৪০৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩২৩৭২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭২৭৪
২৯৮. তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৮৯; আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৯৯৯; আল মু'জামুস্ সগীর, হাদীছ নং ১১৭৬
তাদের ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে যেহেতু প্রথমে মদীনা মুনাউওয়ারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারপর সারা বিশ্বে ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে, তাই কাফের ও মুশরিকগণ কখনও তাদের ভালো চোখে দেখেনি। তারা তাদেরকে সর্বদা ঘৃণা করে এসেছে। সর্বাপেক্ষা বেশি ঘৃণা করেছে মদীনার মুনাফিকগণ। ফলে তাদের ঘৃণা করা বা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মুনাফিকীর আলামত হয়ে গেছে। আর তাদেরকে মহব্বত করা হয়েছে ঈমানের নিদর্শন, যেমন এ হাদীছে স্পষ্ট করা হয়েছে। অপর এক হাদীছে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
آية الإيمان : حب الأنصار، وآية النفاق، بغض الأنصار
‘ঈমানের আলামত হলো আনসারদের ভালোবাসা। আর মুনাফিকদের আলামত আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা।২৯৫
আরেক হাদীছে আছে-
حب الأنصار إيمان، وبغضهم نفاق
‘আনসারদের মহব্বত করা ঈমান আর তাদেরকে বিদ্বেষ করা মুনাফিকী।২৯৬
আরও এক হাদীছে আছে-
لا يبغض الأنصار رجل يؤمن بالله واليوم الآخر
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, সে আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না।২৯৭
বস্তুত আনসারদের ভালোবাসা নবীপ্রেমেরও পরিচায়ক। যে আনসারগণ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করেছিলেন, কোনও নবীপ্রেমিক তাদের ভালো না বেসে পারে? তাই তো এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من أحب الأنصار، فبحبي أحبهم، ومن أبغض الأنصار فببغضي أبغضهم
'যে-কেউ আনসারদের ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসে বলেই তাদের ভালোবাসে। আর যে-কেউ আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে, সে আমার প্রতি বিদ্বিষ্ট বলেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে।২৯৮
এ হাদীছে আনসারদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করার পুরস্কার জানানো হয়েছে যে, যারা তাদেরকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে ভালোবাসবেন। বোঝা গেল আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের একটি বড় উপায় আনসারদের ভালোবাসা। অপরদিকে আনসারদের প্রতি ঘৃণা পোষণের পরিণতিও অত্যন্ত ভয়াবহ। কেননা এ হাদীছে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে-কেউ তাদেরকে ঘৃণা করবে, আল্লাহ তাআলাও তাকে ঘৃণা করবেন। বলাবাহুল্য, আল্লাহ তাআলার ঘৃণার পাত্র হওয়া অপেক্ষা নিকৃষ্ট পরিণাম আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা সে পরিণাম থেকে আমাদের হেফাজত করুন। তিনি আমাদের অন্তরে আনসারদের প্রতি গভীর মহব্বত দান করুন এবং সে মহব্বত নিয়েই কবরে যাওয়ার তাওফীক দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আনসারদের ভালোবাসা ঈমানের দাবি এবং এটা মুমিন হওয়ার পরিচায়কও বটে।
খ. আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ যেহেতু মুনাফিকীর পরিচায়ক, তাই কোনও অবস্থায়ই আনসারদের কারও প্রতি যাতে অন্তরে বীতশ্রদ্ধা না জন্মাতে পারে সে ব্যাপারে সাবধান থাকা চাই।
গ. আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে আমরা অবশ্যই মনেপ্রাণে আনসারদের ভালোবেসে যাব।
ঘ. কিছুতেই যাতে আল্লাহ তাআলার ঘৃণা ও গযবের পাত্রে পরিণত না হয়, সে লক্ষ্যে যে-কোনও আনসার সাহাবীকে অশ্রদ্ধা করা হতে বেঁচে থাকতে হবে আমৃত্যু।
২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৭, ৩৭৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫০১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৩১৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৪২৩, বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৯৬৬
২৯৬. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৬৬৮; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৩৯৬
২৯৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৯০৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৪০৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩২৩৭২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭২৭৪
২৯৮. তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৮৯; আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৯৯৯; আল মু'জামুস্ সগীর, হাদীছ নং ১১৭৬
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
