রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৪৫
পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও অন্য যে সকল লোককে সম্মান করা কাম্য তাদের প্রতি সদাচরণের ফযীলত
মহান ব্যক্তির খাদেমকেও সম্মান করা
হাদীছ নং : ৩৪৫
হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জারীর ইবন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাযি.-এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। তিনি আমার খেদমত করতে থাতেন। আমি তাকে বললাম, এমন করবেন না। তিনি বললেন, আমি আনসারদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু করতে দেখেছি। ফলে আমি নিজের সম্পর্কে প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাদের মধ্যে যারই সাহচর্য পাই আমি অবশ্যই তার খেদমত করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫১৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২২১৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৪৯০;
হাদীছ নং : ৩৪৫
হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জারীর ইবন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাযি.-এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। তিনি আমার খেদমত করতে থাতেন। আমি তাকে বললাম, এমন করবেন না। তিনি বললেন, আমি আনসারদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু করতে দেখেছি। ফলে আমি নিজের সম্পর্কে প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাদের মধ্যে যারই সাহচর্য পাই আমি অবশ্যই তার খেদমত করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫১৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২২১৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৪৯০;
42 - باب فضل بر أصدقاء الأب والأم والأقارب والزوجة وسائر من يندب إكرامه
345 - وعن أنس بن مالك - رضي الله عنه - قَالَ: خرجت مَعَ جرير بن عبد الله البَجَليّ - رضي الله عنه - في سَفَرٍ، فَكَانَ يَخْدُمُني، فَقُلْتُ لَهُ: لاَ تَفْعَل، فَقَالَ: إِنِّي قَدْ رَأيْتُ الأنْصَارَ تَصْنَعُ برسول الله - صلى الله عليه وسلم - شيئًا آلَيْتُ عَلَى نَفسِي أَنْ لا أصْحَبَ أحَدًا مِنْهُمْ إلاَّ خَدَمْتُهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাস খাদেম হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি.-কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. কী গভীর সম্মান দেখিয়েছিলেন তা বর্ণিত হয়েছে। হযরত জারীর রাযি.-এর পরিচয় ২২৭ নং হাদীছের অধীনে গত হয়েছে।
হযরত জারীর রাযি. বয়সে হযরত আনাস রাযি. অপেক্ষা বড় ছিলেন। তাঁরা উভয়ই কোনও এক সফরে ছিলেন। সম্ভবত সেটি জিহাদের সফর। ইমাম বুখারী রহ এ হাদীছটি 'জিহাদ' অধ্যায়েই উল্লেখ করেছেন।
হযরত আনাস রাযি. বয়সে ছোট হওয়া সত্ত্বেও জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাযি, সে সফরে নিয়মিত তাঁর খেদমত করে যাচ্ছিলেন। এতে হযরত আনাস রাযি.-এর সংকোচ বোধ হতো। তাই তিনি এরকম না করতে তাকে অনুরোধ করেন। তার উত্তরে হযরত জারীর রাযি. বলেছিলেন إني قد رأيت الأنصار تصنع برسول اللہ ﷺ شيئا أليت على نفسي أن لا أصحب أحدا منهم إلا خدمته (আমি আনসারদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু করতে দেখেছি। ফলে আমি নিজের সম্পর্কে প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাদের মধ্যে যারই সাহচর্য পাই আমি অবশ্যই তার খেদমত করব)। 'কিছু করতে দেখেছি' বলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আনসার সম্প্রদায়ের অবিস্মরণীয় ত্যাগ ও কুরবানীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যেন বলতে চাচ্ছেন, তাদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজেদের জান-মালের যে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করতে দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই আমি শপথ করেছি যে, আমি যখনই তাদের কারও সাহচর্যলাভের সুযোগ পাই, আমি অবশ্যই তাঁর খেদমত করব, তাতে তিনি বয়সে আমার ছোট হোন বা বড়। আর হে আনাস! আপনি যদিও বয়সে আমার ছোট, কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ সেবাযত্ন করার যে সৌভাগ্য আপনার লাভ হয়েছিল সে সৌভাগ্য আমার কোথায়? টানা ১০ বছর তাঁর খেদমত করে তাঁর খাস খাদেম হওয়ার যে উচ্চমর্যাদায় আপনি পৌঁছেছেন, সেজন্য যে-কারও পক্ষেই আপনার খেদমত করতে পারাটা বড়ই সৌভাগ্যের কথা। সুযোগ পেয়েও সে সৌভাগ্য আমি হাতছাড়া করব কেন? আপনার খেদমত করা তো প্রকারান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই খেদমত। আপনাকে সম্মান দেখানো প্রকৃতপক্ষে তাঁরই প্রতি সম্মানপ্রদর্শন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছটির মধ্যে বহু মূল্যবান শিক্ষা আছে। যেমন
ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পৃক্তজনদের প্রতি অন্তরে শ্রদ্ধা ভক্তি লালন করা নবীপ্রেমের দাবি।
খ. দীনী মহান ব্যক্তিত্বদের খাদেম-সেবকদেরও বিশেষ ভক্তি-ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখা চাই।
গ. দীনী ব্যক্তিত্ব বয়সে ছোট হলেও তাকে সম্মান করা উচিত।
ঘ. একই উস্তাযের ছাত্র বা একই শায়খের মুরীদদের পরস্পরে ঈর্ষান্বিত না হয়ে একের প্রতি অন্যের সম্মানজনক আচরণ করা উচিত।
ঙ. সফরকালে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সফরসঙ্গীদের খেদমত করা চাই।
চ. বিশেষ হিকমত ছাড়া কারও খেদমত গ্রহণ না করাই ভালো। কেউ খেদমত করতে চাইলে সসংকোচে বাধা দেওয়া উচিত। ওযরের কথা আলাদা।
ছ. যার খেদমত করা হয় বা কোনওভাবে উপকার করা হয়, তার উচিত উপকারকারীর উপকারের কথা প্রকাশ করা। এটাও একরকম কৃতজ্ঞতা ও মহত্ত্ব।
জ. বিনয় একটি মহৎ গুণ। বয়োজ্যেষ্ঠ'র পক্ষ থেকে কনিষ্ঠের প্রতিও এ গুণের চর্চা চলতে পারে।
ঝ. ব্যক্তিবিশেষের কাছে তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী বা তার সম্প্রদায়ের প্রশংসা ঔদার্যের পরিচায়ক।
ঞ. কোনও ভালো কাজ আকস্মিকভাবে করেই ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়; ভবিষ্যতেও তা চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প থাকা চাই।
হযরত জারীর রাযি. বয়সে হযরত আনাস রাযি. অপেক্ষা বড় ছিলেন। তাঁরা উভয়ই কোনও এক সফরে ছিলেন। সম্ভবত সেটি জিহাদের সফর। ইমাম বুখারী রহ এ হাদীছটি 'জিহাদ' অধ্যায়েই উল্লেখ করেছেন।
হযরত আনাস রাযি. বয়সে ছোট হওয়া সত্ত্বেও জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাযি, সে সফরে নিয়মিত তাঁর খেদমত করে যাচ্ছিলেন। এতে হযরত আনাস রাযি.-এর সংকোচ বোধ হতো। তাই তিনি এরকম না করতে তাকে অনুরোধ করেন। তার উত্তরে হযরত জারীর রাযি. বলেছিলেন إني قد رأيت الأنصار تصنع برسول اللہ ﷺ شيئا أليت على نفسي أن لا أصحب أحدا منهم إلا خدمته (আমি আনসারদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু করতে দেখেছি। ফলে আমি নিজের সম্পর্কে প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাদের মধ্যে যারই সাহচর্য পাই আমি অবশ্যই তার খেদমত করব)। 'কিছু করতে দেখেছি' বলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আনসার সম্প্রদায়ের অবিস্মরণীয় ত্যাগ ও কুরবানীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যেন বলতে চাচ্ছেন, তাদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজেদের জান-মালের যে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করতে দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই আমি শপথ করেছি যে, আমি যখনই তাদের কারও সাহচর্যলাভের সুযোগ পাই, আমি অবশ্যই তাঁর খেদমত করব, তাতে তিনি বয়সে আমার ছোট হোন বা বড়। আর হে আনাস! আপনি যদিও বয়সে আমার ছোট, কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ সেবাযত্ন করার যে সৌভাগ্য আপনার লাভ হয়েছিল সে সৌভাগ্য আমার কোথায়? টানা ১০ বছর তাঁর খেদমত করে তাঁর খাস খাদেম হওয়ার যে উচ্চমর্যাদায় আপনি পৌঁছেছেন, সেজন্য যে-কারও পক্ষেই আপনার খেদমত করতে পারাটা বড়ই সৌভাগ্যের কথা। সুযোগ পেয়েও সে সৌভাগ্য আমি হাতছাড়া করব কেন? আপনার খেদমত করা তো প্রকারান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই খেদমত। আপনাকে সম্মান দেখানো প্রকৃতপক্ষে তাঁরই প্রতি সম্মানপ্রদর্শন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছটির মধ্যে বহু মূল্যবান শিক্ষা আছে। যেমন
ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পৃক্তজনদের প্রতি অন্তরে শ্রদ্ধা ভক্তি লালন করা নবীপ্রেমের দাবি।
খ. দীনী মহান ব্যক্তিত্বদের খাদেম-সেবকদেরও বিশেষ ভক্তি-ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখা চাই।
গ. দীনী ব্যক্তিত্ব বয়সে ছোট হলেও তাকে সম্মান করা উচিত।
ঘ. একই উস্তাযের ছাত্র বা একই শায়খের মুরীদদের পরস্পরে ঈর্ষান্বিত না হয়ে একের প্রতি অন্যের সম্মানজনক আচরণ করা উচিত।
ঙ. সফরকালে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সফরসঙ্গীদের খেদমত করা চাই।
চ. বিশেষ হিকমত ছাড়া কারও খেদমত গ্রহণ না করাই ভালো। কেউ খেদমত করতে চাইলে সসংকোচে বাধা দেওয়া উচিত। ওযরের কথা আলাদা।
ছ. যার খেদমত করা হয় বা কোনওভাবে উপকার করা হয়, তার উচিত উপকারকারীর উপকারের কথা প্রকাশ করা। এটাও একরকম কৃতজ্ঞতা ও মহত্ত্ব।
জ. বিনয় একটি মহৎ গুণ। বয়োজ্যেষ্ঠ'র পক্ষ থেকে কনিষ্ঠের প্রতিও এ গুণের চর্চা চলতে পারে।
ঝ. ব্যক্তিবিশেষের কাছে তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী বা তার সম্প্রদায়ের প্রশংসা ঔদার্যের পরিচায়ক।
ঞ. কোনও ভালো কাজ আকস্মিকভাবে করেই ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়; ভবিষ্যতেও তা চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
