রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪৪
পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও অন্য যে সকল লোককে সম্মান করা কাম্য তাদের প্রতি সদাচরণের ফযীলত
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি.-এর প্রতি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের গভীরতা
হাদীছ নং : ৩৪৪

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য কোনও স্ত্রীর প্রতি এমন ঈর্ষাবোধ করিনি, যেমনটা ঈর্ষাবোধ করেছি খাদীজা রাযি.-এর প্রতি। অথচ আমি তাকে কখনও দেখিনি। তবে তিনি তার কথা খুব বেশি বলতেন। কখনও কখনও বকরি জবাই করে তার অঙ্গগুলো কেটে আলাদা আলাদা করতেন, তারপর তা খাদীজার বান্ধবীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। কখনও কখনও আমি তাকে বলতাম, দুনিয়ায় যেন খাদীজা ছাড়া আর কোনও নারী ছিল না! তিনি বলতেন, সে তো এরকম ছিল, এরকম ছিল এবং তার গর্ভে আমার সন্তানও জন্মগ্রহণ করেছিল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বকরি জবাই করে তার গোশত যথেষ্ট পরিমাণে তার বান্ধবীদের কাছে হাদিয়া পাঠাতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি যখনই বকরি জবাই করতেন, তখন বলতেন, তোমরা এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের কাছে পাঠাও।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, খাদীজা রাযি.-এর বোন হালা: বিনত খুওয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাঁর খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ হলো। তিনি আনন্দোৎফুল্ল হলেন। বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! হালাঃ বিনত খুওয়ায়লিদ? -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৮২১,৬০০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪৩৫, ২৪৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৮৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৩১; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৫,১৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৯৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৯৫৫
42 - باب فضل بر أصدقاء الأب والأم والأقارب والزوجة وسائر من يندب إكرامه
344 - وعن عائشة رضي الله عنها، قَالَتْ: مَا غِرْتُ عَلَى أحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَة رضي الله عنها، وَمَا رَأيْتُهَا قَطُّ، وَلَكِنْ كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا، وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ، ثُمَّ يقَطِّعُهَا أعْضَاء، ثُمَّ يَبْعثُهَا في صَدَائِقِ خَديجَةَ، فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ: كَأَنْ لَمْ يَكُنْ في الدُّنْيَا إلاَّ خَديجَةَ! فَيَقُولُ: «إنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لي مِنْهَا وَلَدٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)

وفي رواية: وإنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاءَ، فَيُهْدِي في خَلاَئِلِهَا (2) مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ.

وفي رواية: كَانَ إِذَا ذبح الشاة، يقولُ: «أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَديجَةَ».

وفي رواية: قَالَت: اسْتَأذَنَتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِد أُخْتُ خَدِيجَةَ عَلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَعرَفَ اسْتِئذَانَ خَديجَةَ، فَارتَاحَ لِذَلِكَ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَالةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ».
قولُهَا: «فَارتَاحَ» هُوَ بالحاء، وفي الجمعِ بَيْنَ الصحيحين للحُميدِي (3): «فارتاع» بالعينِ ومعناه: اهتم بهِ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির বর্ণনায় আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এই বলে নিজ অনুভূতি প্রকাশ করেন যে- ما غرت على أحد من نساء النبي صلى الله عليه وسلم ما غرت على خديجة (আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য কোনও স্ত্রীর প্রতি এমন ঈর্ষাবোধ করিনি, যেমনটা ঈর্ষাবোধ করেছি খাদীজা রাযি.-এর প্রতি)। বলাবাহুল্য এই ঈর্ষা দোষের নয়। কেননা এর সঙ্গে দুনিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক ছিল নবীপ্রেমের সঙ্গে। নবীপ্রেম সম্পূর্ণই দীন। হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী প্রকৃত মুমিন সেই, যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবাসে, এমনকি নিজ প্রাণের চেয়েও। উম্মাহাতুল মুমিনীনের প্রত্যেকেই তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। তাঁর ভালোবাসাও যাতে সর্বাপেক্ষা বেশি অর্জিত হয়ে যায়, তাঁদের প্রত্যেকে সে আকাঙ্ক্ষাও লালন করতেন। সকলেরই জানা যে, মাদানী জীবনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে তাঁর ভালোবাসা সর্বাপেক্ষা বেশি লাভ করতে পেরেছিলেন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নিজেরও তা জানা ছিল। এ অবস্থায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও কথা দ্বারা যদি বুঝতে পারতেন যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি.-কে তিনি অনেক বেশি ভালোবাসেন, তবে তাঁর নবীপ্রেমে আপ্লুত অন্তরে কিছু না কিছু ঈর্ষা জন্মানোরই কথা।

ঈর্ষা দোষের হয় তখনই, যখন তার তাড়নায় ঈর্ষণীয় ব্যক্তির ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকে। লক্ষ্য যদি হয় কল্যাণ ও শুভতায় তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া, তবে সে দোষের তো নয়ই; বরং একান্ত কাম্য। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর কামনা তো এই হয়ে থাকবে যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে ভালোবাসা তিনি যেন হযরত খাদীজা রাযি.-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। তাঁর এ উদ্দেশ হাদীছটিতে বর্ণিত তার পরবর্তী কথাগুলো দ্বারাও পরিস্ফুট হয়। তিনি বলেন وما رأيتها قط ، ولكن كان يكثر ذكرها (অথচ আমি তাকে কখনও দেখিনি। তবে তিনি তার কথা খুব বেশি বলতেন)। তাঁকে না দেখার কারণ তাঁর মৃত্যুকালে হযরত আয়েশ রাযি. ছিলেন নিতান্তই শিশু। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের দুই বছর আগে তাঁকে বিবাহ করেছেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৬ বছর। তার দেড় বছর আগেই হযরত খাদীজা রাযি.-এর ওফাত হয়ে যায়। এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমার বিবাহের তিন বছর আগে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে।

যাহোক হযরত আয়েশা রাযি, তাঁকে না দেখলেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে তাঁর কথা খুব বেশি শুনতে পেতেন। বলা হয়ে থাকে, যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, সে তার কথা বেশি বেশি বলে। কাজেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খাদীজা রাযি.-কে বেশি বেশি স্মরণ করায় স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি তাঁকে অনেক ভালোবাসেন। তাই অনুরূপ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হযরত আয়েশা রাযি.-এর অন্তরও আকুল হয়ে উঠছিল। সে কথাই তিনি এভাবে ব্যক্ত করছেন যে- আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য কোনও স্ত্রীর প্রতি এমন ঈর্ষাবোধ করিনি, যেমনটা ঈর্ষাবোধ করেছি খাদীজা রাযি.-এর প্রতি।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খাদীজা রাযি.-এর কথা যে স্মরণ করেই ক্ষান্ত ছিলেন তা নয়; বরং কাজকর্ম দ্বারাও তাঁর প্রতি নিজ ভালোবাসার পরিচয় দিতেন। সুতরাং হযরত আয়েশা রাযি. বলেন وربما ذبح الشاة ، ثم يقطعها اعضاء ، ثم يبعثها في صدائق خديجة (কখনও কখনও বকরি জবাই করে তার অঙ্গগুলো কেটে আলাদা আলাদা করতেন, তারপর তা খাদীজার বান্ধবীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন)। বকরি জবাই করার কাজটি হয়তো নিজেই করতেন, কিংবা তাঁর আদেশে অন্য কেউ করত। কোনও কাজ যার আদেশে করা হয়, সে কাজটিকে আদেশদাতার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করেও বলা হয় যে, অমুকে করেছে, যদিও বাস্তবিকপক্ষে করেছে যাকে আদেশ করা হয়েছে সেই ব্যক্তি। অবশ্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের পক্ষেও তা করা অসম্ভব নয়। তিনি নিজ হাতে পশু জবাই অনেকবারই করেছেন। তাছাড়া তিনি সাধারণত নিজের কাজ নিজে করতেই অভ্যস্ত ছিলেন। যেমন হাদীছে আছে كان كان رسول الله ﷺ يخصف نعله، ويخيط ثوبه، ويعمل في بيته كما يعمل أحدكم 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জুতা সেলাই করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং ঘরের কাজকর্ম করতেন, যেমনটা তোমরা করে থাক।১৬৮

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খাদীজা রাযি.-এর সখী বান্ধবীদের কাছে এভাবে মাঝেমধ্যেই হাদিয়া পাঠাতেন। এটা হযরত খাদীজা রাযি.-এর প্রতি তাঁর মহব্বতের প্রকাশ। এ অবস্থা দেখে হযরত আয়েশা রাযি. মন্তব্য করেন كأن لم يكن في الدنيا إلا خديجة (দুনিয়ায় যেন খাদীজা ছাড়া আর কোনও নারী ছিল না!)। অর্থাৎ তাঁর সমতুল্য ও তাঁর সমগুণের বুঝি কেউ ছিল না, যে কারণে তাঁর প্রতি এমন বাড়তি খাতির যে, তাঁর বান্ধবীদের কাছে পর্যন্ত হাদিয়া পাঠানো হয়। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি এ কথাও বলতেন যে قد أبدلك الله خيرا منها ما تذكر من عجوز من عجائز قريش، حمراء الشدقين، هلكت في الدهر (আপনি কুরায়শের ওই বৃদ্ধা মহিলার কথা কী স্মরণ করেন, যার চোয়ালদু'টি হয়ে গিয়েছিল লাল (অর্থাৎ মুখে দাঁত ছিল না, ফলে কেবল লাল মাড়িই দেখা যেত), যে কিনা বহুকাল আগে দুনিয়া থেকে চলে গেছে, অথচ আল্লাহ তাআলা তার বদলে আপনাকে আরও উত্তম স্ত্রী দান করেছেন)।১৬৯

এর জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন إنها كانت ، وكانت ، وكان لي منها ولد (সে তো এরকম ছিল, এরকম ছিল এবং তার গর্ভে আমার সন্তানও জন্মগ্রহণ করেছিল)। ‘এরকম এরকম ছিল' বলে তাঁর একেকটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতেন। যেমন এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি বলেছিলেন-

ما أبدلني الله عز وجل خيرا منها، قد آمنت بي إذ كفر بي الناس، وصدقتني إذ كذبني الناس، وواستني بمالها إذ حرمني الناس، ورزقني الله عز وجل ولدها إذ حرمني أولاد النساء

'আল্লাহ তাআলা আমাকে তার চেয়ে উত্তম স্ত্রী দেননি। লোকে যখন আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তখন সে আমার প্রতি ঈমান এনেছিল, লোকে যখন আমাকে মিথ্যুক ঠাওরিয়েছিল তখন সে আমাকে সত্যবাদী বলে গ্রহণ করেছিল, লোকে যখন আমাকে বঞ্চিত করেছিল তখন সে নিজ সম্পদ নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা তার গর্ভে আমাকে সন্তান দান করেছেন, যখন অন্য কোনও নারীর গর্ভে তিনি আমাকে সন্তান দেননি।১৭০

ইমাম নববী রহ. এ হাদীছটির সর্বশেষ যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তাতে আছে استأذنت هالة بنت خويلد أخت خديجة على رسول الله (খাদীজা রাযি.-এর বোন হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন)। হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় কন্যা হযরত যায়নাব রাযি.-এর শ্বাশুড়ি। অর্থাৎ নবী-জামাতা আবুল আস রাযি. ইবন রাবী'র মা। আবুল আস রাযি.-এর পিতার নাম রাবী' ইবন আব্দুল উয্যা। ঐতিহাসিকগণ হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি.-কে সাহাবীরূপে উল্লেখ করেছেন। আলোচ্য হাদীছ দ্বারাও তা অনুমিত হয়।

তিনি এসে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চিনতে পারলেন। এখানে বলা হয়েছে- فعرف استئذان خديجة (খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা তাঁর স্মরণ হলো)। সাধারণত এক বোনের কন্ঠস্বরের সঙ্গে অন্য বোনের কণ্ঠস্বরের মিল থাকে। হযরত খাদীজা রাযি.-এর কন্ঠস্বরের সঙ্গে বোন হালাঃ রাযি.-এর কন্ঠস্বরের মিল ছিল। সুতরাং তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হযরত খাদীজা রাযি.-এর কথা মনে পড়ে গেল। এ কণ্ঠস্বর যে তাঁর বড় পরিচিত! হুবহু এরকম স্বর ও সুরেই যে এককালে বহুদিনের জীবনসঙ্গিনী, দুর্দিনের সমব্যথিনী হযরত খাদীজা রাযি.-ও অনুমতি চাইতেন! পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়ে উঠল। অতীত দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যে দিনগুলোয় মহিয়সী আম্মাজান মনপ্রাণ উজাড় করে তাঁর খেদমতে নিয়োজিত থেকেছেন এবং নিজের সর্বস্ব তাঁর সেবাই উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং فارتاح لذلك ، فقال : اللهم هالة بنت خويلد (তিনি আনন্দোৎফুল্ল হলেন। বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! হালাঃ বিনত খুওয়ায়লিদ?)। অর্থাৎ এ যে খুওয়াইলিদের কন্যা হালাঃ! তোমরা একে অভ্যর্থনা জানাও। সম্মানজনকভাবে গ্রহণ কর। তাঁকে এ সম্মান দেখানো প্রকারান্তরে আম্মাজান খাদীজা রাযি.-এর প্রতিই সম্মানপ্রদর্শন। এভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মানিতা জান্নাতবাসিনী স্ত্রীর সম্মানার্থে তাঁর জীবিত বোনকে সম্মান দেখালেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্বামীর উচিত নয়—তার মরহুমা স্ত্রীকে সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া। বরং তার সদ্গুণাবলী ও সুকীর্তির কথা স্মরণ রাখা উচিত এবং অন্যদের সামনে তা আলোচনাও করা উচিত। একই কথা স্ত্রীর বেলায়ও প্রযোজ্য।

খ. মরহুমা স্ত্রীর সম্মানার্থে তার জীবিত আত্মীয়-স্বজনকেও সম্মান করা উচিত।

গ. সামর্থ্য অনুযায়ী মরহুমা স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও সখী বান্ধবীদের হাদিয়া-তোহফা দেওয়া চাই ।

ঘ. আগত অতিথিকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

ঙ. এ হাদীছটি দ্বারা আমরা আম্মাজান খাদীজাতুল কুবরা রাযি.-এর মর্যাদাও উপলব্ধি করতে পারি। মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের মতে উম্মাহাতুল মুমিনীনের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠতম।

১৬৮. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫৩৪১; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৫৩৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৪৪০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৬৭৫

১৬৯, সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৮২১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৮৬৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭৯৬

১৭০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৮৬৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ২১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৪৪ | মুসলিম বাংলা