রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৪৩
পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও অন্য যে সকল লোককে সম্মান করা কাম্য তাদের প্রতি সদাচরণের ফযীলত
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর যা-কিছু করণীয়
হাদীছ নং : ৩৪৩
হযরত আবূ উসায়দ মালিক ইবন রাবী'আ সাইদী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় বনূ সালিমার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি করণীয় এমন কোনও সৎকর্ম আছে কি, যা দ্বারা আমি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে পারি? তিনি বললেন, হাঁ, তাদের জন্য দুআ করা, তাদের জন্য (আল্লাহ তা'আলার কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের (মৃত্যুর) পর তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা, তাদের ওই আত্মীয়স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, যাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক তাদের সূত্রেই এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা-আবূ দাউদ।
সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬০৫৯; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৮৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫১৪; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৭৯৭৬
হাদীছ নং : ৩৪৩
হযরত আবূ উসায়দ মালিক ইবন রাবী'আ সাইদী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় বনূ সালিমার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি করণীয় এমন কোনও সৎকর্ম আছে কি, যা দ্বারা আমি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে পারি? তিনি বললেন, হাঁ, তাদের জন্য দুআ করা, তাদের জন্য (আল্লাহ তা'আলার কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের (মৃত্যুর) পর তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা, তাদের ওই আত্মীয়স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, যাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক তাদের সূত্রেই এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা-আবূ দাউদ।
সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬০৫৯; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৮৯৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫১৪; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৭৯৭৬
42 - باب فضل بر أصدقاء الأب والأم والأقارب والزوجة وسائر من يندب إكرامه
343 - وعن أَبي أُسَيد - بضم الهمزة وفتح السين - مالك بن ربيعة الساعدي - رضي الله عنه - قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - إذ جَاءهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ،
فَقَالَ: يَا رسولَ اللهِ، هَلْ بَقِيَ مِنْ برِّ أَبَوَيَّ شَيءٌ أَبِرُّهُما بِهِ بَعْدَ مَوتِهمَا؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، الصَّلاةُ (1) عَلَيْهِمَا، والاِسْتغْفَارُ لَهُمَا، وَإنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِما، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتي لا تُوصَلُ إلاَّ بِهِمَا، وَإكرامُ صَدِيقهمَا». رواه أَبُو داود. (2)
فَقَالَ: يَا رسولَ اللهِ، هَلْ بَقِيَ مِنْ برِّ أَبَوَيَّ شَيءٌ أَبِرُّهُما بِهِ بَعْدَ مَوتِهمَا؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، الصَّلاةُ (1) عَلَيْهِمَا، والاِسْتغْفَارُ لَهُمَا، وَإنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِما، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتي لا تُوصَلُ إلاَّ بِهِمَا، وَإكرامُ صَدِيقهمَا». رواه أَبُو داود. (2)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের করণীয় কী, এ সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি পাঁচটি কাজের কথা বলে দেন।
তার মধ্যে প্রথম কাজ হচ্ছে- الصلاة عليهما (তাদের জন্য দুআ করা)।
কুরআন মাজীদে পিতা-মাতার জন্য দুআ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে- وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (হে আমার প্রতিপালক ! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন)।১৬৫ এটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক দুআ। পিতা-মাতার জন্য প্রত্যেক সন্তানেরই এ দুআ করা উচিত। আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার শেখানো দুআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও তাদের সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সুখ-শান্তির জন্য যে-কোনও ভাষায়ই দুআ করা যেতে পারে। পিতা-মাতার জন্য দুআ করাও একরকম খেদমত। এর দ্বারা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি লাভ হয়, আল্লাহ তাআলাও খুশি হন। দুআ করা একটি ইবাদতও বটে।
দ্বিতীয় কাজ বলা হয়েছে- الاستغفار لهما (তাদের জন্য ইস্তিগফার করা)। ইস্তিগফার অর্থ আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এটাও একরকম দুআ। তবে এ দুআ যেহেতু গুনাহ মাফ সম্পর্কে, তাই অন্যান্য দুআ অপেক্ষা এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সেজন্য আলাদাভাবে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুর পর থেকেই বান্দাকে দুনিয়ায় করে যাওয়া নেক ও বদ্ আমলের সম্মুখীন হতে হয়। তাই মৃত্যুর পর বান্দার সবচে বড় প্রয়োজন গুনাহ থেকে মুক্তিলাভ করা। কাজেই যারা তার গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে, তারাই তার সবচে' বড় উপকার করে। এ উপকার যে-কেউ করতে পারে। তবে প্রত্যেক সন্তানের জন্য এটা অবশ্যকরণীয় কাজ। তাদের উচিত পিতা-মাতার গুনাহ মাফের জন্য নিয়মিত দুআ করতে থাকা।
তৃতীয় কাজ হলো- إنفاذ عهدهما من بعدهما ‘তাদের (মৃত্যুর) পর তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা’। অর্থাৎ পিতা-মাতা যদি কারও সম্পর্কে কিছু অসিয়ত করে যায়, সন্তানের কর্তব্য তা পূরণ করা। তারা যদি কোনও দীনী খাতে সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে যায়, সন্তানের কর্তব্য সেই খাতে তা প্রদান করা। তারা যদি কোনও দান-সদাকা করার ওয়াদা করে যায়, সন্তানের কর্তব্য সে ওয়াদা পূরণ করা।
উল্লেখ্য, পিতা-মাতার ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষাকালে সে ওয়াদা-অঙ্গীকার শরীআতসম্মত কি না তা যাচাই করে দেখা উচিত। অনেকের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার দিয়ে যাওয়া কথার এতবেশি গুরুত্ব যে, তারা সে কথাটি শরীআতসম্মত কি না তা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। শরীআতবিরোধী কোনও কথা বা ওয়াদা দেওয়া এমনিতেই গুনাহ। যেমন গান-বাদ্যের অনুষ্ঠানে চাঁদা দেওয়ার ওয়াদা, কোনও মাজারে শিরনী দেওয়ার মানত, মৃত্যুর পর যিয়াফত খাওয়ানোর অসিয়ত ইত্যাদি। এ জাতীয় ওয়াদা- অসিয়তের ক্ষেত্রে কর্তব্য হলো তা পূরণ না করে বরং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করা। এর পরিবর্তে সে ওয়াদা যদি রক্ষা করা হয়, তবে গুনাহ'র উপর গুনাহ হলো। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
চতুর্থ কাজ হলো- صلة الرحم التي لا توصل إلا بهما (তাদের ওই আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, যাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক তাদের সূত্রেই)। অর্থাৎ পিতার রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়স্বজন। যেমন নিজ ভাইবোন, ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগিনা-ভাগিনী ইত্যাদি। এদের সঙ্গে সম্পর্ক পিতা-মাতা উভয়ের সূত্রে। চাচা, ফুফু, দাদা-দাদী, চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোন ইত্যাদি। এরা পিতার দিককার আত্মীয়। আর মায়ের দিক থেকে আত্মীয় হলো নানা-নানী, মামা, খালা, মামাতো ও খালাতো ভাইবোন ইত্যাদি। পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তো বটেই, তাদের মৃত্যুর পরও এদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা চাই। তা করাও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লামা আকূলী রহ. বলেন, এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষার ফযীলত অর্জনের প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে। এর দ্বারা জানানো হয়েছে যে, আত্মীয়তা রক্ষা এমন এক ইবাদত, যা কেবল পিতা-মাতার সূত্রেই লাভ করা যায়। ধরে নিন কোনও ব্যক্তি সরাসরি মাটি দ্বারা সৃষ্ট হলো এবং তার কোনও সন্তান-সন্ততির জন্ম নিল না। তো এরূপ ব্যক্তির কোনও আত্মীয় থাকতে পারে না। ফলে আত্মীয়তা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতলাভের যে সুযোগ, তাও সে পাবে না। সুতরাং পিতা-মাতাই যখন এরূপ ইবাদত করতে পারার মাধ্যম, তখন সন্তানের অবশ্যকর্তব্য তাদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা এবং আত্মীয়তা রক্ষার মাধ্যমে তাদের সম্মান ও মর্যাদা হেফাজত করা।
পঞ্চম কাজ হলো- اكرام صديقهما (তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা)। এর আগের হাদীছটি, যা হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, এ সম্পর্কিতই। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
এ হাদীছটির কোনও কোনও বর্ণনায় সবশেষে আছে-
فَقَالَ : مَا أَكْثَرَ هُذَا وَأَطْيَبَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: فَاعْمَلْ بِهِ، فَإِنَّهُ يَصِلُ إِلَيْهِمَا
'ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতইনা বিশাল ও কতইনা উৎকৃষ্ট! তিনি বললেন, তুমি এর উপর আমল কর, কেননা তোমার সে আমল তাদের কাছে পৌঁছবে।১৬৬
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য জানা গেল ।
খ. এ হাদীছ দ্বারা পিতা-মাতার খেদমত ও সেবার প্রতি সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়। তারা পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সেবার ধারা অব্যাহত রাখার প্রতি কেমন যত্নবান ছিলেন।
গ. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য দুআ-ইস্তিগফার জারি রাখা সন্তানের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
ঘ. শরীআতের সীমারেখার ভেতর পিতা-মাতার করে যাওয়া ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষায় সন্তানের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঙ. পিতা-মাতার সূত্রে যারা আত্মীয়, পিতা-মাতার সম্মানার্থেই তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।
চ. পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করাও একটি সৎকর্ম বটে।
১৬৫. সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৪
১৬৬. বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৮৯৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৮
তার মধ্যে প্রথম কাজ হচ্ছে- الصلاة عليهما (তাদের জন্য দুআ করা)।
কুরআন মাজীদে পিতা-মাতার জন্য দুআ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে- وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (হে আমার প্রতিপালক ! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন)।১৬৫ এটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক দুআ। পিতা-মাতার জন্য প্রত্যেক সন্তানেরই এ দুআ করা উচিত। আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার শেখানো দুআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও তাদের সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সুখ-শান্তির জন্য যে-কোনও ভাষায়ই দুআ করা যেতে পারে। পিতা-মাতার জন্য দুআ করাও একরকম খেদমত। এর দ্বারা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি লাভ হয়, আল্লাহ তাআলাও খুশি হন। দুআ করা একটি ইবাদতও বটে।
দ্বিতীয় কাজ বলা হয়েছে- الاستغفار لهما (তাদের জন্য ইস্তিগফার করা)। ইস্তিগফার অর্থ আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এটাও একরকম দুআ। তবে এ দুআ যেহেতু গুনাহ মাফ সম্পর্কে, তাই অন্যান্য দুআ অপেক্ষা এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সেজন্য আলাদাভাবে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুর পর থেকেই বান্দাকে দুনিয়ায় করে যাওয়া নেক ও বদ্ আমলের সম্মুখীন হতে হয়। তাই মৃত্যুর পর বান্দার সবচে বড় প্রয়োজন গুনাহ থেকে মুক্তিলাভ করা। কাজেই যারা তার গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে, তারাই তার সবচে' বড় উপকার করে। এ উপকার যে-কেউ করতে পারে। তবে প্রত্যেক সন্তানের জন্য এটা অবশ্যকরণীয় কাজ। তাদের উচিত পিতা-মাতার গুনাহ মাফের জন্য নিয়মিত দুআ করতে থাকা।
তৃতীয় কাজ হলো- إنفاذ عهدهما من بعدهما ‘তাদের (মৃত্যুর) পর তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা’। অর্থাৎ পিতা-মাতা যদি কারও সম্পর্কে কিছু অসিয়ত করে যায়, সন্তানের কর্তব্য তা পূরণ করা। তারা যদি কোনও দীনী খাতে সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে যায়, সন্তানের কর্তব্য সেই খাতে তা প্রদান করা। তারা যদি কোনও দান-সদাকা করার ওয়াদা করে যায়, সন্তানের কর্তব্য সে ওয়াদা পূরণ করা।
উল্লেখ্য, পিতা-মাতার ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষাকালে সে ওয়াদা-অঙ্গীকার শরীআতসম্মত কি না তা যাচাই করে দেখা উচিত। অনেকের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার দিয়ে যাওয়া কথার এতবেশি গুরুত্ব যে, তারা সে কথাটি শরীআতসম্মত কি না তা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। শরীআতবিরোধী কোনও কথা বা ওয়াদা দেওয়া এমনিতেই গুনাহ। যেমন গান-বাদ্যের অনুষ্ঠানে চাঁদা দেওয়ার ওয়াদা, কোনও মাজারে শিরনী দেওয়ার মানত, মৃত্যুর পর যিয়াফত খাওয়ানোর অসিয়ত ইত্যাদি। এ জাতীয় ওয়াদা- অসিয়তের ক্ষেত্রে কর্তব্য হলো তা পূরণ না করে বরং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করা। এর পরিবর্তে সে ওয়াদা যদি রক্ষা করা হয়, তবে গুনাহ'র উপর গুনাহ হলো। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
চতুর্থ কাজ হলো- صلة الرحم التي لا توصل إلا بهما (তাদের ওই আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, যাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক তাদের সূত্রেই)। অর্থাৎ পিতার রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়স্বজন। যেমন নিজ ভাইবোন, ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগিনা-ভাগিনী ইত্যাদি। এদের সঙ্গে সম্পর্ক পিতা-মাতা উভয়ের সূত্রে। চাচা, ফুফু, দাদা-দাদী, চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোন ইত্যাদি। এরা পিতার দিককার আত্মীয়। আর মায়ের দিক থেকে আত্মীয় হলো নানা-নানী, মামা, খালা, মামাতো ও খালাতো ভাইবোন ইত্যাদি। পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তো বটেই, তাদের মৃত্যুর পরও এদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা চাই। তা করাও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লামা আকূলী রহ. বলেন, এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষার ফযীলত অর্জনের প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে। এর দ্বারা জানানো হয়েছে যে, আত্মীয়তা রক্ষা এমন এক ইবাদত, যা কেবল পিতা-মাতার সূত্রেই লাভ করা যায়। ধরে নিন কোনও ব্যক্তি সরাসরি মাটি দ্বারা সৃষ্ট হলো এবং তার কোনও সন্তান-সন্ততির জন্ম নিল না। তো এরূপ ব্যক্তির কোনও আত্মীয় থাকতে পারে না। ফলে আত্মীয়তা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতলাভের যে সুযোগ, তাও সে পাবে না। সুতরাং পিতা-মাতাই যখন এরূপ ইবাদত করতে পারার মাধ্যম, তখন সন্তানের অবশ্যকর্তব্য তাদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা এবং আত্মীয়তা রক্ষার মাধ্যমে তাদের সম্মান ও মর্যাদা হেফাজত করা।
পঞ্চম কাজ হলো- اكرام صديقهما (তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা)। এর আগের হাদীছটি, যা হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, এ সম্পর্কিতই। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
এ হাদীছটির কোনও কোনও বর্ণনায় সবশেষে আছে-
فَقَالَ : مَا أَكْثَرَ هُذَا وَأَطْيَبَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: فَاعْمَلْ بِهِ، فَإِنَّهُ يَصِلُ إِلَيْهِمَا
'ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কতইনা বিশাল ও কতইনা উৎকৃষ্ট! তিনি বললেন, তুমি এর উপর আমল কর, কেননা তোমার সে আমল তাদের কাছে পৌঁছবে।১৬৬
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য জানা গেল ।
খ. এ হাদীছ দ্বারা পিতা-মাতার খেদমত ও সেবার প্রতি সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়। তারা পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সেবার ধারা অব্যাহত রাখার প্রতি কেমন যত্নবান ছিলেন।
গ. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য দুআ-ইস্তিগফার জারি রাখা সন্তানের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
ঘ. শরীআতের সীমারেখার ভেতর পিতা-মাতার করে যাওয়া ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষায় সন্তানের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঙ. পিতা-মাতার সূত্রে যারা আত্মীয়, পিতা-মাতার সম্মানার্থেই তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।
চ. পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করাও একটি সৎকর্ম বটে।
১৬৫. সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৪
১৬৬. বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৮৯৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
